আব্বুর সঙ্গে বসবাস

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫২

চোখ মুদলেই পেছনে ফেলে আসা জীবনের পথটা স্পষ্ট দেখতে পাই। সেখানে হাসি-কান্নার ছড়াছড়ি দেখি। কোনদিন হয়ত আব্বুর কাছে বায়না ধরেছি, শিকারে যাব। শত কাজ ফেলে আব্বু আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন। কোন শীতের রাতে আব্বুর বুকে মাথা রেখে ঘুমাব বলে বিছানা ছেড়েছি। গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠে আব্বু আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। কনকনে ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে আমার জমে যাওয়া হাত-পা গরম করতে মেতে উঠলেন। বর্ষার দিনে কখনো হয়ত বাগানে বেড়াতে বেরিয়েছি। বৃষ্টি নামতেই ছাতা উঠল মাথার উপর। আমার আব্বু শত চেষ্টায় আমাকে বাঁচিয়ে রাখলেন বৃষ্টির ফোঁটা থেকে। কখনো জ্বরের প্রকোপে হয়ত প্রলাপ বকতে শুরু করেছি। আব্বু জায়নামাজে বসে দোয়া শুরু করলেন, হে আল্লাহ আমার ছেলের অসুখটা আমাকে দিয়ে হলেও তাকে সুস্থ করে দাও। এত ভালবাসা ধারণ করার ক্ষমতা আমার ছিল?

সত্যিই কি অসহায়ই না হয়ে গেলাম! আমার চোখের সামনে ভেসে থাকা স্মৃতিগুলো আমাকে বড্ড কাঁদায়। আব্বুর বুকে মাথা রাখার অনুভূতি আমি ভুলতে পারি না। তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার স্মৃতি আমি ভুলতে পারি না।

আব্বু, তুমি তো চলে গেছ। কিন্তু জান কি, আমাকেও নিয়ে গেছ সঙ্গে করে? তোমার সঙ্গে আমিও যে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে এসেছি। আমার সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে আব্বুর বসবাস। আমি জানি, আব্বুকে এই চর্ম চক্ষে বেঁচে থাকতে আর কখনো দেখব না। কিন্তু এও জানি, শেষদিন পর্যন্ত আমার মধ্যেই বেঁচে থাকবেন আমার প্রাণপ্রিয় আব্বু।

দুনিয়া থেকে কেউ যখন বিদায় নেয়, তার সঙ্গে আরও অনেকের আত্নার কিছুটা অংশও বিদায় নেয়। মৃত্যূর দিন পর্যন্ত সেই আত্না দুই পৃথিবীতে বসবাস করে। আমাকেও হয়ত তাই করতে হবে।

০ টি +০/-০