নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অক্সিজেন বিনষ্টকারী দু\'পেয়ে দৈত্যটির পৃথিবী ভিন্ন।

রাশেদুল বিজয়

পরিচয়হীন

রাশেদুল বিজয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিয়ম সমাচার

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৮


গুলিস্তান টু মৌচাক। সিটি বাসের ডান পাশে সামনের সারিতেই বসলাম আমরা দু’জন। সাথে রিয়ন। আমার অফিসের কর্লিগ। শুনেছিলাম কর্লিগরা খুব একটা আপন হতে পারে না। এক ধরনের দুরত্ব থেকেই যায়। মনে হয় ধারণাটি ভুল। বেশ মিশুক প্রকৃতির লোক রিয়ন। অনেকটা সমবয়সী তাই তাকে রনু বলেই ডাকি।

দিনটি রবিবার ছিল হয়তো। সমসাময়িক গল্প-গুজব করে সিটি বাসে করে অফিসে দিকে যাচ্ছিলাম। গল্পের এক পর্যায়ে ‘জন্ম থেকেই জ্বলছি’ বাক্যটি আনমনে মুখ ফসকে বের হয়ে এলো। মনে হলো, শব্দটি বেশ ক্রিয়েটিভ। ভগ্নবাক্যটি শুনে রিয়ন তার চিরচেনা চিপা চোখদুটো অদ্ভুত রকমের বড় করে ফেলল।
মুহুর্তে ঘোর কাটিয়ে রিয়ন আমায় জিজ্ঞেস করলো, ‘এইটা কী কথা আবার? ’
আমি শান্ত গলায় বললাম, ’জন্ম থেকে জ্বলা এমন জিনিসের কথা।’
ক্ষণিক অন্যমনষ্ক হয়ে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলল সে, ‘আরে.. রহস্য না করে আগে বলবিতো ব্যাপারটা কী, শুনে তৃপ্ত হই। এতো চিন্তা-টিন্তা করার ইচ্ছা নেই আমার। না-বললে খটকা লেগে থাকবে সারাদিন- বলতো..’
অামি বললাম, ‘রনু এতো তাড়াহুড়ো কিসের! এটাতো জ্বালানী আধাঁরের গায়ে লেখা সাহিত্য। হয়তো, কোন জ্বালানী বিষয়ক সাহিত্যকার তার প্রতিভার উন্মেষ ঘঠাতে গিয়ে জ্বালানীর ট্যাংকটি একেবারে জ্বালিয়ে দিয়েছেন।’
রিয়ন ভ্রু কুঁচকে সুবোধ বালকের ন্যায় জবাব দিল, ‘হুম তাই তো! অনেক গাড়ির জ্বালানী ট্যাংকেই দেখলাম এই ধরণের লেখা...’

কথাগুলো বলতে যেয়ে হাসার এক পর্যায়ে আঁচ করলাম, নাকের ভিতর সিগারেটের ধোঁয়া বাধাহীন প্রবেশ করছে। দেখলাম ড্রাইভার সাহেব মনের সুখে সিগারেট টানছে। বিস্মিত হবার কিছুই নেই। আজকাল প্রায়শই দেখা যায় সিটি সার্ভিসে অবাধ ধুমসেবন। তাদের গাড়ি, তারা যেমনে খুশি এমনে করবে, যাত্রীরা কে নাক গলানোর!। ধুমপানের মাঝপর্যায়ে হঠাৎ হেল্পার বলে উঠলো, “ওস্তাদ!! ফার্স্ট কল!!!”
ড্রাইভার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তার দিকে তাকিয়ে সিগারেট আঁটসাট ধরে লম্বা টান দিল। তারপর বাম হাত বাড়িয়ে দিলো সিগার কলারের কাছে। অতঃপর হেল্পারটি ধুম ছড়িয়ে চলন্ত গাড়ির নৈমিত্তিক শব্দগুলো আওড়াতে লাগল। বিষয়গুলো দেখে বিস্মিত হওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলোনা অামাদের।
ব্যাপারটি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলাম। কী যেন ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ দুটো উচিয়ে ধরলাম। দেখতে লাগলাম, ‘বডি কাউল প্যানেল’এ কোন সাহিত্যিক উপদেশ আছে কী না। আছেই তো..‘গাড়িতে ধুমপান করবেন না’। এর পাশেই লেখা দেখলাম ’ আপনার সকল অভিযোগ চালককে জানান’। চালকের দিকে চােখ দিতেই সিটের পিছনের লেখা দেখে চরম হতাশ হলাম। ওখানে লেখা আছে , ‘গাড়ি চলা অবস্থায় চালকের সাথে কথা বলবেন না।’
আমরা যাত্রীরা এমন অবস্থার মধ্যে যাচ্ছি যেখানে কোন সমস্যাই প্রকাশ করা যাবেনা। যা-ঘঠছে শুধু চুপ করে তাকিয়ে থাকতে হবে।

‘ড্রাইভার সাহেব শুনুন, গাড়ি ধুমপান করার জায়গা না। যাত্রীরা কষ্ট পাচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। আপনিও মরবেন সাথে যাত্রীদেরও মারবেন।’ কিন্তু আমাদের এইসব কথাগুলো বলার অধিকার খর্ব করল চালকের পিছনের লেখাটি।

মৌচাকের কাছাকাছি এলে হেল্পার ভাড়া নেওয়ার জন্য সামনে আসল। পকেটে ভাংতি টাকা থাকার সত্তেও হেল্পারকে পাঁচশত টাকা তুলে দিলাম। মনে করলাম, হয়তো টাকাটি ভাংতি দিতে অসম্মতি জানাবে। যেহেতু প্যানেল সাহিত্যে লেখা আছে একশ ও পাঁচশ টাকা ভাংতি হইবেনা। কিন্তু একি..বাতাস ঘুরলো বিপরীত। হেল্পারটি স্বাভাবিকভাবেই পকেট থেকে টাকার ভাংতি তোলে দিল।
অামি মৃদু হেসে রিয়নের দিকে তাকালাম। সে ব্যাপারগুলো ভালই উপভোগ করছে। তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ‘অতঃপর এই নিয়মটাও ফেল।’
`কাজির গরু কিতাবে আছে অথচ গােয়ালে নেই'। নিয়মিত অফিসে যেতে গিয়ে এ-সব ঘঠনাগুলো দেখতে-দেখতে দুধ-ভাত হয়ে গেলো আমাদের জন্য।
এখন নিয়মের মােতাবেক কিছু ঘঠলে হতবাক হই। সবাই চলুক সবার মতো করে। দেশ’টাতো সবার। সবাই যে-যার মতো করে ব্যবহার করুক। হতবাকীয় নাগরিকরা শুধু আমাদের মতো এভাবে হতবাক হয়ে থাকুক আজিবন।





মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

পোস্টে এ +++

২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০৯

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: অনিয়মই এখন ''নিয়ম'' হয়ে দাড়িয়েছে।

৩| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২

রাশেদুল বিজয় বলেছেন: সহমত @ভূত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.