![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘পোঁড়াকপালী’। মাদার্শা গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে চলা একটি ব্যস্ত খাল। যেমন নাম তার ঠিক তেমনি কাম থাকার কথা। তাও হলো। এ-নিয়ে অনেক কিছু রটলেও, বিশ্বাস করা যায় এমন সব জনশ্রুতিতে পোঁড়াকপালীর গল্পটি এখনো টিকে আছে।
কােনো এক দুঃখীনীর এই খালের পাশে বিরাট ঘর ছিল। বিবাহিত ছেলেপুলেরা সবাই গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমিয়েছে। গ্রামের খালের পাড়ে বিশাল একরের আবাদি জমি। এদিকে দুঃখীনীটির স্বামী অল্প বয়সেই মারা গেলে, তার সব সম্পত্তি দেখভারের দায়িত্ব পড়ে দুঃখীনীটির কাঁধে। বর্গা চাষ করাতো সে। একসময় বাড়ির সামনের বিশাল একর যে জায়গাটিতে ধান, আখ ও মৌসুমী ফলের চাষ হতো, সেখানে এখন খালের বিদগ্ধ স্রোতেরা দর্পভরে এগিয়ে চলে।
খালটি আমাদের যেমন-তেমন খালের মতো নয়। ধরা যায়-এক নদীরই নামন্তর। ঠিক যেন উপ-নদী। পাড় ভাঙতে-ভাঙতে উঠোনে চলে এলে, দুঃখীনিটি ঘর আরো কয়েক মিটার পিছিয়ে নেয়। এভাবে আবারো কয়েকমাস পর খালের করাল গ্রাসে দুঃখীনিটির ফসলী জমির মত তার ঘরটুকুও গ্রাস করে নেয়। এরকম পিছিয়ে যেতে-যেতে আর জায়গা নেই মাথা-গুজার মতো। সবটুকু যেন কালের অতলে ভেসে যাওয়া সময়ের মতো।
যত দিন যায় মহিলাটি পাগলপ্রায় হয়ে উঠে। তার প্রতিষ্টিত ছেলেরা তাদের মায়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেনি। হন্ন হয়ে এ-ঘর ও-ঘর থেকে দিন যাপন করে মহিলাটি। কঙ্কালসার দেহটি সারাক্ষণ বিস্তির্ণ খালের প্রবল স্রোতের দিকে উম্মুখ হয়ে থাকে। সারাদিন রুদ্ধশ্বাসে তাঁকিয়ে থাকে খালের প্রতিটি পাড়ের দিকে। যে দিন যে-পাড় ভাঙবে বলে মনে হয়, সে-পাড়ের সামনে গিয়ে কান্নাকাটি করে। কী সব আজগুবি কথা বলে। তুই-তুকারি করে খালের সাথে। আর বলে ‘খবরদার আর এক পা সামনে এগুবিনা। এক্কেবারে টেং ভাইঙা দিমু...’ বলে, প্রচন্ড শব্দে হাসতে থাকে। সে হাসিটা প্রতিধ্বনীহীন খালের ওপারের বিস্তৃর্ণভূমিতে মিশে যায়। মহিলাটি মাঝে মধ্যে ‘আমার পােলরা আইব আইজ আমার পােলরা আইব’ বলে খালের পাড়ে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। অথবা পাড় ভেঙে মাটির মাঝারী সাইজের টুকরো নিয়ে খালের দিকে ছুঁড়তে থাকে। আর সামনে আইবি ক, আর কত মাটি খাবি , বলে গালাগাল দিতে থাকে। মহিলাটির কাণ্ড দেখে গ্রামের সবাই অনুতপ্ত হয়। এ-বলে সান্তনা দেয় যে, প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই। কিন্তু মহিলাটি বুঝবে কেমনে, সে তাে এখন মানসিক ভারসাম্যহীন।
হঠাৎ একদিন গ্রামের মানুষজনের স্মীতস্রোতে ভাটার সময় খালে ভেসে থাকা শাদা শাড়ির একাংশ চােখে পড়ে। কারো বুঝতে বাকী রইল না এ লাশটি দুঃখীনী মা’টির। অবশেষে এই হিংস্র খালটি মহিলার জমি-জামা, ফসলের জমি, ক্ষেত-খামার, ঘর-বাড়ি খেয়ে তো নিলই, এমনকি মহিলাটিকেও ছাড়লনা। গ্রামের মানুষেরা বলাবলি করতে লাগল, দুঃখীনী মহিলাটি নিশ্চয় পোঁড়াকপালী। পোঁড়াকপালে জন্ম নিয়েই জিবনসহ সঁপিয়ে দিতে হলো প্রকৃতির ইচ্ছার কাছে। সেই থেকে খালটির নাম পোঁড়াকপালী।
©somewhere in net ltd.