নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সরাসরি

সরাসরি কথা বলি। যুক্তি, তর্ক আর গল্পে মশগুল থাকি।

সরাসরি

সাদাসিধা মানুষ। তাই কথা বলি সরাসরি।

সরাসরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রেণী সংগ্রাম, পলিটিক্যাল ইসলাম, এবং ফরহাদ মজহার (সংগৃহীত )

১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৫

বাংলাদেশের চলমান সংকট নিয়ে ফরহাদ মজহারের বিভিন্ন লেখালেখির যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এদেশের অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক সৈনিক ব্যাপক ফরহাদোফোবিয়ায় আক্রান্ত যা তাদেরকে প্ররোচিত করছে ফরহাদকে বস্তুনিষ্ঠ ভাবে পর্যালোচনা না করে ফরহাদ বিদ্বেষী বয়ান তৈরির কাজে। আমার কাছে মনে হয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ফরহাদ মজহার কনক্রিট এনালাইসিসে যান, মানে পূর্বনির্ধারিত ভ্যালু নিয়ে জাজ করেন না, বরং বিদ্যমান ফেনোমেনন এর নানান উপাদানের মাঝে যে ডায়ালেকটিকস তাই তিনি তুলে ধরেন।যারা তার সমালোচনায় মুখর তাদের অনেকেই অনেকটাই পূর্ব নির্ধারিত মূল্যবোধ বা নৈতিকতার জায়গা থেকে বর্তমানের বিশ্লেষণ করেন।যেমন যারা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদকেই বাংলাদেশের একমাত্র মূল্যবোধ ধরে নেন তারা সমাজের অন্য মূল্যবোধের সাথে বর্তমানে যে দ্বান্দ্বিক অবস্থা তাকে ব্যাখ্যা না করেই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান চান বলেই ফরহাদের বিশ্লেষণ তাদের কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক চালাকি মনে হয়।

“আপনি যদি মনে করেন, সংস্কৃতি এবং ভাষাকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করবেন, যদি তার দ্বারাই বাংলাদেশের শত্রুমিত্র ঠিক করেন, তখন যারা নিজেদের বাঙালি ভাববার চেয়েও মুসলমান ভাবতে চান -- আর সেই সামাজিক অধিকার তার অবশ্যই আছে – তখন তারাও রাজনৈতিক ভাবে আপনার বাঙালি জাতীয়তাবাদ মোকাবিলার জন্য ইসলামের পতাকা নিয়ে মাঠে নামবেন।“



ফরহাদের বিশ্লেষণ এর একটা বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে, তার সাথে কেউ এক মত নাও হতে পারেন, কিন্তু সেই পদ্ধতির ভিত্তিতে ফরহাদকে পাঠ না করলে ফরহাদের চিন্তার রাজ্যে বিভিন্ন উপাদানের দ্বন্দ্ব এবং সম্মিলনকে বুঝা যাবে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন ধর্মী মতাদর্শ এবং বিভিন্ন ঘরানার যে দ্বন্দ্ব সুস্পষ্ট তাকে ব্যাখ্যা করবার ক্ষেত্রে ফরহাদ কিন্তু মার্কস এর পথেই হাঁটছেন, ফরহাদের লেখাতেই তা সুস্পষ্ট -“বিভিন্ন শ্রেণি ও শক্তির লড়াই কিভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ে, কিভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য নানাভাবে নিজেকে ব্যক্ত ও প্রতিষ্ঠা করে সেটা বোঝার বিজ্ঞান আলাদা। যারা মার্কস ভাল করে পড়েছেন তাদের কাছে মার্কস নিছক আদর্শ মাত্র নয়। চোখের সামনে বাস্তবে কি ঘটছে, এবং সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে তা পাঠ ও বিশ্লেষণের বিজ্ঞানও বটে। বাংলাদেশ যারা নিজেদের মার্কসের ছাত্র মনে করেন, তারা বাস্তবতার প্রতি মনোযোগী না হয়ে, মতাদর্শিক ভাবে কতোটা কারেক্ট বা সঠিক সেটা সামাজিক ভাবে প্রমাণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন”।



ফরহাদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক অভিযোগ নামা



অভিযোগ ১”ঃ ফরহাদ মজ হারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে বুদ্ধিবৃত্তিক অপপ্রচার চলছে তা হচ্ছে তিনি নাকি পলিটিক্যাল ইসলামের তাত্ত্বিক।



এই অভিযোগ যারা তুলেছেন তাদের কিছু কমেন্ট তুলে ধরলাম-



“কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি সুফি ইসলামের প্রায় বিপরীত মতাদর্শ রাজনৈতিক ইসলামের তাত্ত্বিক ও রক্ষাকর্তা হিসেবে হাজির করেছেন"



“ফরহাদ মজাহার মনে করেন পলিটিক্যাল ইসলাম নিয়ে উনি সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে লড়বেন। এটা এক ধরণের ইন্টেলেকচুয়াল ফটোশপ। কিছুটা মউদুদিবাদ, কিছুটা ইরান বিপ্লবের সাথে কিছুটা মার্কসবাদ মিলিয়ে তিনি নব্য নিটসে হওয়ার কোশেশ করছেন। উনি যখনই পলিটিক্যাল ইসলামের কথা বলেন তখনই এটাকে শ্রেণী সংগ্রাম বলে পরিচিত করানোর চেষ্টা করেন"



“ জামায়াতপন্থী তাত্ত্বিকদের কেউ কেউ গত কিছুদিনের সহিংসতা ও সংঘাতকে গরিব মানুষের লড়াই বলছেন। বলছেন ইসলামপন্থী রাজনীতি বর্তমান বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে, সাম্রাজ্যবাদ ইসলামকে ধ্বংস করতে চাইছে সে কারণেই”।



পলিটিকাল ইসলাম নিয়ে ফরহাদের অবস্থান কি তা নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার লক্ষণীয়।উপরের প্রত্যেকটি বক্তব্যে ফরহাদকে ভুল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ফরহাদ মজহার পলিটিক্যাল ইসলামের কথা বলেননি তার প্রমান তার বয়ান থেকেই শুনুনঃ " নিঃসন্দেহে নবী করিমের ইজ্জত ও ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এ লড়াইয়ের প্রধান বিষয়, কিন্তু এটা নয় যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মতোই আমরা ইসলাম ধর্মকে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেমেছি। আমরা লড়ছি আত্মমর্যাদার জন্য, শেখ হাসিনা আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। আমরা লড়ছি গণতন্ত্রের জন্য—যেখানে ইসলাম, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তো অবশ্যই, একই সঙ্গে অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। Click This Link

অর্থাৎ ফরহাদ ইসলাম ধর্মকে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পক্ষে নন, তারপরও যারা ফরহাদ মজহারকে জোর করে পলিটিকাল ইসলামপন্থী বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছেন তারা যে বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাস করছেন তা বলাই বাহুল্য।



তাহলে ইসলাম প্রশ্নকে কিভাবে মোকাবিলার কথা বলছেন ফরহাদ? মূলত এখানেই ফরহাদের সাথে অন্য তাত্ত্বিকদের বিরোধ চরমে উঠে যায়।



“কিন্তু এ লড়াইকে সুন্দর পথে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে। যদি গ্রিকো-খ্রিস্টিয়ান ধর্ম ও সংস্কৃতি ইয়োরোপীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা হয় তাহলে এই দেশের মানুষের ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতিও নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক প্রেরণা হিশাবে কাজ করবে। ইউরোপের রাষ্ট্রের চেয়েও এই রাষ্ট্র হবে আরও বিকশিত, উন্নত ও অগ্রসর। এই ক্ষেত্রে ইসলাম অবশ্যই আমাদের পথ দেখাতে পারে। এই রাষ্ট্রে মানুষের মর্যাদা ও অধিকারকে মহিয়ান করা হবে, কারণ ইসলাম মানুষকে আল্লার খলিফা বা প্রতিনিধি হিশাবে স্বীকার করে মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত গণ্য করে। নিজেদের ইশতিহারে বলতে হবে আমাদের ইনসাফ কায়েম করতে হবে। মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং একই সঙ্গে মানুষের রিজিক বা জীবনধারনের নিশ্চয়তা দেওয়া এই রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হবে। ‘ইনসাফ’ যে অর্থ ও দ্যোতনা তৈরী করে তার সমার্থক শব্দ পাশ্চাত্যে নাই। আমরা এমন এক ইনসাফ ভিত্তিক গণতন্ত্র চাই যেখানে ব্যক্তি স্বাধীন, কিন্তুই সে সমাজের সামষ্টিক স্বার্থের উর্ধে নয়। রাষ্ট্র যেখানে জালিমের হাতিয়ার হয়ে গরিব ও মেহনতি মানুষকে নিপীড়ন করবে না”- ফরহাদ মজহার Click This Link



ফরহাদ রেডিক্যাল ইসলামের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার বিরোধী হলেও ইসলামের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বয়ানকে প্রেরনা হিসেবে ব্যাবহারের পক্ষপাতি, ফরহাদ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন সংগ্রামে এবং প্রক্রিয়ায় ইসলামের ইনসাফ ভিত্তিক মতাদর্শকে অনুঘটক হিসেবে ব্যাবহারের উপর আস্থা রাখতে চান। ফরহাদ কিন্তু ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন না, বলছেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা এবং গ্রিকো-খ্রিস্টিয়ান ধর্ম ও সংস্কৃতি ইয়োরোপীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা হিসেবে যেভাবে ভূমিকা রেখেছে সেভাবেই এই দেশের মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সাথে ধর্মকেও নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক প্রেরণা হিশাবে কাজ করতে সক্ষম বলে অভিমত দেন। ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সাথে ধর্ম বিশেষ করে ইসলামের ইনসাফ ভিত্তিক মতাদর্শকে গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের উপাদান বলার কারনেই অনেকেই তাকে জামাতি তাত্ত্বিক, জামাতি মার্ক্সবাদী বলে অভিহিত করে মিথ্যাচার করছেন। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানিও জুলুম নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ইসলামের মতাদর্শিক অবস্থানকে তাঁর গণমুখী রাজনীতিতে মৌলিক প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সাথে সাথে তিনি নিজেও ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শের সংগঠক। ভাসানির মতাদর্শে যুগপৎ ইসলামের ইনসাফ ভিত্তিক বয়ান এবং সমাজতন্ত্রের সাম্যবাদী চেতনার মেলবন্ধন আমরা দেখতে পাই। মাওলানা এমনকি “হুকুমতে রব্বানির” রাজনৈতিক বয়ান ও প্রচার করতেন। তার মানে এই না যে মাওলানা জামাতি মার্ক্সবাদী/জামাতি তাত্ত্বিক হয়ে গেলেন! তার মানে এই না যে ভাসানি মউদুদিবাদ আর মার্কসবাদ মিলিয়ে ইন্টেলেকচুয়াল ফটোশপ করছেন।



ভেনেজুয়েলার বিপ্লবী নেতা কমরেড হুগো শাভেজকেও আমরা দেখি তিনি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে খ্রিস্ট ধর্মের অবস্থানকে ‘লিবারেশন থিওলজি’র তত্ত্ব আকারে সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণের পথে উপাদান হিসেবে ব্যাবহার করেছেন [মধ্য যুগের গির্জার অত্যাচারী ভূমিকা নয় জুলুম নির্যাতন আর শোষণের বিরুদ্ধে যিশু খ্রিষ্টের মহান আদর্শের ভিত্তিতেই গড়ে উঠে ‘লিবারেশন থিওলজি’র খ্রিস্টীয় তত্ত্ব । “শ্যাভেজের সাফল্যের একটা বড় অনুঘটক ছিল সংগঠন শক্তির পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে স্বৈরশাসনবিরোধী গণজাগরণের সমর্থনে ক্যাথলিক চার্চের এগিয়ে আসা। ‘লিবারেশন থিওলজি’র তত্ত্ব ধারণ করে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা গণমানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠায় সেখানকার স্বৈরশাসকদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল”। এ কারনেই আনু মুহাম্মদ বলেন “বুশের গড ইরাকে হামলার নির্দেশ দেয়, শাভেজের গড তাকে রুখে দাঁড়াতে বলে” । ইসলামের ইনসাফ ভিত্তিক মতাদর্শকে গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের উপাদান বলার কারনে ফরহাদকে জামাতি মার্কসবাদী বলতে চান যারা, তারা কি ‘লিবারেশন থিওলজি’র খ্রিস্টীয় তত্ত্বকে উপাদান হিসেবে ব্যাবহারের অপরাধে শাভেজকেও খ্রিষ্টীয় মার্কসবাদী বলে অভিহিত করবেন? তাঁর বিরুদ্ধেও কি মার্ক্সবাদ আর খ্রিস্টবাদের ইন্টেলেকচুয়াল ফটোশপ এর অভিযোগ তুলবেন?



ফরহাদ মজহারকে জামাতি তাত্ত্বিক বলে যারা মিথ্যাচার করেছেন, মজহার এর লেখা থেকেই তার জবাব দিব। “একাত্তরে জামাতের ভূমিকা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। মানবতার বিরুদ্ধে তাদের অনেকে জড়িত ছিল এবং তার বিচার হওয়া দরকার, এব্যাপারে কোনই সংশয় বা সন্দেহ নাই। জামাতের মতাদর্শের বিরুদ্ধে অবশ্যই মতাদর্শিক ভাবে লড়বার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই কাজটি রাজনৈতিক কাজ, চিন্তা দিয়ে মোকাবিলা করবার কাজ, বুদ্ধি দিয়ে পরাস্ত করবার কর্তব্য”। জামাতের মতাদর্শের বিরুদ্ধে মতাদর্শিকভাবে যিনি লড়বার কথা বলেন, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার কথা বলেন তাকে জামতি তাত্ত্বিক বলে চালিয়ে দেয়া হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়।



অনেকেই বলছেন ফরহাদ জামাত এর চলমান সহিংস আন্দোলনকে গরিব মানুষের লড়াই বলেছেন। ফরহাদের মতে “জামাত-শিবির আওয়ামী লীগের মতোই মধ্যবিত্ত শ্রেণির দল। এই লড়াইটা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত এবং এতে জামাতশিবিরের পরাজয় ছাড়া অন্য কোন সম্ভাবনা ছিল বলে আমার মনে হয় নি। কিন্তু আমার দেশ পত্রিকা নিষিদ্ধের দাবি ও তার সম্পাদক মাহমুদ রহমানের ওপর শেখ হাসিনার দমন পীড়নের কারনে মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশ এবং ইসলামপ্রিয় বিশাল একটি জনগোষ্ঠিকে সরকার বিরূপ করে ফেলেছিল। “ জামাত-শিবির মধ্যবিত্ত শ্রেণির দল, দরিদ্রদের দল নয় এ কথা ফরহাদের লেখায় উঠে আসার পরও অনেকেই দোষ চাপাচ্ছেন তিনি নাকি জামাতের আন্দোলনকে গরিবের সংগ্রাম বলেছেন।



অনেকেই ফরহাদকে ক্রিটিক করেছেন তিনি নাকি পলিটিক্যাল ইসলাম নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে লড়বেন।সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে ইসলাম যে প্রেরণা হতে পারে তা ফরহাদ তার নিজের বিভিন্ন লেখায় তুলে ধরেছেন, কিন্তু তা আন্দোলনের প্রেরনা আকারেই এসেছে, পলিটিক্যাল ইসলামের রেডিকেল ব্যাখ্যা আকারে নয়। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার লড়াইয়ে ইসলাম যে উপাদান হতে পারে ফরহাদের এই বয়ানের প্রতিক্রিয়ায় অনেক বিশুদ্ধবাদি বুদ্ধিজীবী তার বিরুদ্ধে মার্কসবাদের শ্রেণী সংগ্রাম এবং ইসলামের জিহাদি এক্টিভিজমের সমন্বয়ের অভিযোগ এনেছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে ইসলাম শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্বে বিশ্বাসী না, তাই এই দুয়ের মাঝে সমন্বয়ের চেষ্টা ফরহাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চালাকি! প্রথমত বলে নেয়া দরকার ইসলামের সংগ্রামের বয়ান জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই আকারে হাজির হয়েছে ফলে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক সব ধরনের জুলুমের বিরুদ্ধে আদর্শিক প্রতিরোধের আহবান রয়েছে-এই দিক বিবেচনায় ইসলাম মার্কসীয় শ্রেণী (যা উৎপাদন সম্পর্ক ভিত্তিক) সংগ্রামের ধারনায় বিশ্বাসী নয়, অন্যদিকে মার্ক্সবাদে রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, ভাবাদর্শ ইত্যাদি অর্থনৈতিক উৎপাদন সম্পর্কের বিশেষ রূপের সাথে সম্পর্কিত বলে শ্রেণী সংগ্রাম বিদ্যমান উৎপাদন সম্পর্কের আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শুধু যে অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে লড়তে চায় তা নয়, একি সাথে রাজনৈতিক ও সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধেও লড়াবার চেতনা জারি রাখে। ফলে পদ্ধতিগত পার্থক্য প্রকট হলেও প্রেরনাগত মিল লক্ষ্য করা যায় উভয় মতাদর্শে, তাই বোধ করি ফরহাদ ইসলামের ইনসাফ ভিত্তিক ভাবাদর্শকেও গণমুখি সংগ্রামে প্রেরনা হিসেবে গ্রহনের পক্ষপাতি, যেমনটা মাওলানা ভাসানির মাঝেও আমরা লক্ষ্য করেছি।এক্ষেত্রে রিফাত হাসানের একটা স্ট্যাটাস প্রণিধানযোগ্য ঃ



“রাষ্ট্রে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রশ্নে কথা বলবার কালে যারা ইসলামের জিহাদ এবং মার্কসের শ্রেণী সংগ্রাম নিয়ে সমস্যায় পড়তেছেন, তাদেরে কই, মার্কস যেমন বলছিলেন, জগতের সকল ইতিহাসই শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস, ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রস্তাবনা ছিল, মানুষের লড়াই হল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের, ইনসাফের লড়াই। জিহাদ মানে সাম্প্রদায়িক অর্থে কোন ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার জেহাদ নয়, মুহাম্মদ (স.) বলছেন, অত্যাচারীর মুখের উপর সত্য উচ্চারণ করাটাই জিহাদ। পবিত্র কুরআন মতে, হজরত মুসা, হযরত ঈসা, আরো অসংখ্য নবী-রসুল এই জেহাদের মর্মবাণী প্রচার করেছেন দুনিয়ায়, এর জন্য সম্প্রদায় অর্থে এদের কাউরেই মুসলমান হতে হয় নাই।“



ইসলামের ইনসাফ ভিত্তিক ভাবাদর্শকে শ্রেণী সংগ্রামে প্রেরনা হিসেবে গ্রহনের ফরহাদ মজহারের বয়ানকে যারা ইন্টেলেকচুয়াল ফটোশপ বলে তিরস্কার করছেন তারা চিন্তার ক্ষেত্রে মানব সমাজের বিভিন্ন মত ও পথের মিথস্ক্রিয়াকে কিভাবে বিবেচনা করেন আমি জানি না। যারা মার্কসবাদের বিশুদ্ধতার জিগির তোলেন তারা কি মার্ক্স কেও বিশুদ্ধবাদি দাবি করেন? মার্কসের শ্রেণি সংগ্রামের তত্ত্ব তাঁর Dialectic materialism এর উপর ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে, তো মার্কস কিন্তু হেগেলের দ্বান্দ্বিক মতবাদ (Dialectics) এবং ফয়েরবাখের বস্তুবাদের সমন্বয়েই Dialectic materialism দাড় করান, কিন্তু তিনি ভাববাদী হেগেলের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়াকে ইতিহাস ও সমাজের বস্তুগত প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ করেন অর্থাৎ ভাববাদী হেগেল এবং বস্তুবাদী ফয়েরবাখের ভাবাদরশিক প্রভাব মার্কসের চিন্তায় লক্ষ্য করা যায়। এটাকেও কি ইন্টেলেকচুয়াল ফটোশপ বলে চালিয়ে দিবেন না কি বাঙলার বুদ্ধিজীবী মহল। এরাই কিন্তু আবার হুগো শাভেজের Modified socialism কে একুশ শতকের সমাজতন্ত্র বলে প্রশংসা করেন, আমিও করি। শাভেজ মার্কসের যুগের লোক না যে তাকে বিশুদ্ধ মার্কসবাদী হতে হবে। শ্যাভেজ কিন্তু প্রথমে সামরিক কায়দায় ক্ষমতা দখল করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, তারপর তিনি নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তিতেই অগ্রসর হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তাঁর Modified socialism এর ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করেন। হাঙ্গেরিয়ান কম্যুনিস্ট পার্টির সাধারন সম্পাদক লুকাত তো মার্কসের সাথে দ্বিমত পোষণ করে মানবিক সম্পর্ক বিকাশে আত্মার (স্পিরিট)ধারনা নিয়ে আসেন, তিনি বলেন, “ বুর্জোয়ার মত প্রলেতারিয়েতও মনস্তাত্ত্বিকভাবে বুর্জোয়া ধারনা ধারন করতে পারে”। এখন বস্তুবাদের সাথে আত্মা ধারনা সাংঘর্ষিক দাবি করে কেউ যদি লুকাতের চিন্তাকে বিশুদ্ধবাদের লঙ্ঘন দাবি করেন তাহলে তিনি মানুষের চিন্তার বিকাশের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেন। এ কালের ব্রাজিলিয়ান সাম্যবাদী লেখক পাওলো প্রেইরেও বিমানবিকীকরন রোধে মানুষের আত্মিক শক্তির বিকাশের উপর জোর দেন। এখন আপনি যদি তার চিন্তার উপযোগিতা যাচাই না করেই তাকে ভাববাদী মার্ক্সবাদী বলে গালি দিয়ে তার চিন্তাকে খারিজ করে দেন, তাহলে আমি বলব আপনি চিন্তার ক্ষেত্রে স্থবিরতাকেই সমর্থন করছেন।



অভিযোগ ২ঃ “জনাব ফরহাদ মজহার, আপনি দেশ স্বাধীন হবার কথা তুলে লেখা শেষ করেছেন; আপনি যুদ্ধাপরাধের বিচারের গুরুত্বের কথাও মেনে নিয়েছেন। আপনার তো জানা আছে মজহার, জামায়াত ১৯৭১ সালে সাংগঠনিকভাবে এদেশের মানুষকে হত্যা, গুম, খুন,ধর্ষণ, লুটপাটের সাথে জড়িত ছিল। তারা আজ অব্দি কখনোই সেই ভূমিকার জন্যে এইদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চায়নি; বরং একাত্তর প্রসঙ্গে ধারাবাহিক মিথ্যাচার করে গেছে নানান সময়ে। আপনার লেখায় সে বিষয়ে একটি বাক্যও নাই কেন?”



ফরহাদের লেখা থেকেই জবাব”ঃ "একাত্তরে জামাতের ভূমিকা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। মানবতার বিরুদ্ধে তাদের অনেকে জড়িত ছিল এবং তার বিচার হওয়া দরকার, এব্যাপারে কোনই সংশয় বা সন্দেহ নাই।"- লিখেছেন ফরহাদ মজহার। Click This Link



"তরুণরা মুক্তিযুদ্ধ করেননি, কিন্তু তার গল্প শুনেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের নিখাদ ভালোবাসা আমাদের অনায়াসেই বিশাল এক উল্লম্ফনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার হয়নি—এ ক্ষোভ ন্যায়সঙ্গত। এতে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়ে আছে। আমাদের এগিয়ে যেতে হলে অবশ্যই এ ক্ষত নিরাময় করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।" ফরহাদ ভাইয়ের এসব লেখায় বুঝতে কষ্ট হয়ার কথা না যে তিনি বিচার এর ন্যায়সঙ্গত দাবির পক্ষ নিয়েছেন।



অভিযোগ ৩ঃ জামাতের সহিংস অবস্থানের নিন্দা করেননি



ফরহাদের লেখা থেকেই জবাব”ঃ "এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই, অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। পুলিশও নিহত হয়েছে। একেও আমাদের নিন্দা করতে হবে। "- ফরহাদ মজহার। যারা বলছেন ফরহাদ ভাই পুলিশের উপর হামলার প্রতিবাদ করেননি তারা তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছেন।



অভিযোগ ৪ঃ “ জামায়াত কেন সহিংস হলো তিনি সেটা সহানুভূতির সঙ্গে বুঝতে পারছেন, কিন্তু সেই সহিংসতার অংশ হিসেবে কেন হিন্দু বাড়ি-উপাসনালয়ে হামলা করা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা তো দূরের কথা, উল্লেখ পর্যন্ত করছেন না।“



ফরহাদের লেখা থেকেই জবাব”ঃ এই লেখায় উল্লেখ আছে, দেখতে পারেন- প্রথমে একটি কথা স্পষ্ট ভাবে বলা দরকার। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের নাগরিকদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করা হয়েছে, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে, অনেক বাড়ি জ্বালিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়েছে। যারা এই হামলার স্বীকার হয়েছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই গরিব ও নিপীড়িত শ্রেণির মানুষ। তাঁদের অপরাধ তারা হিন্দু। মনে রাখতে হবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণমানুষের পালটা ক্ষমতা যদি কেউ তৈরী করতে চায় তাহলে তার প্রথম কাজ হচ্ছে মাঠে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। এটা স্রেফ বিএনপি বা জামাতের একটি কি দুটি বিবৃতি দিয়ে দায় সারার ব্যাপার নয়। মাঠে করে দেখানোর বিষয়।http://www.chintaa.com/index.php/chinta/showAerticle/186/bangla

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.