![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নতুন সর্বদা----
ভারতে কেন্দ্রীয় মধ্যশিক্ষা বোর্ড বা সিবিএসই তাদের অনুমোদিত সব স্কুলে আগামী মাসে ‘সংস্কৃত ভাষা সপ্তাহ’ পালন করার যে নির্দেশ দিয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।
দক্ষিণ ভারতের অনেক রাজনীতিকই বলছেন, এটা জোর করে সংস্কৃত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা – আর বামপন্থীরা সন্দেহ করছেন এটা শাসক দল বিজেপি ও তাদের ঘনিষ্ঠ আরএসএসের সাংস্কৃতিক এজেন্ডারই অংশ।
বিজেপি অবশ্য দাবি করছে, দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যমন্ডিত একটি ভাষাকে তুলে ধরার চেষ্টার মধ্যে মোটেই অন্যায় কিছু নেই।
সিবিএসই-র যে সার্কুলারকে ঘিরে এই বিতর্ক, সেটি ৩০শে জুন তারিখের – আর তাতে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে সারা দেশে তাদের অনুমোদিত সব স্কুলে এক সপ্তাহ জুড়ে সংস্কৃত সপ্তাহ পালন করতে হবে।
সেখানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সংস্কৃতকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নানা অনুষ্ঠান, কর্মশালার আয়োজন করতে হবে, শেখাতে হবে নানা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহারও।
আর এখন এই সার্কুলারকেই সংস্কৃত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বলে অভিযোগ করছে কংগ্রেস-সহ অনেক বিরোধী দল। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে প্রতিবাদের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি, সেখানে বিজেপি-র মিত্র শরিক দল এমডিএমকে নেতা ভাইকো-ও প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
ওই রাজ্যের অন্যতম প্রধান দল ডিএমকে-র নেত্রী কানিমোঝি বলছেন, আরও অনেক ভাষাই এধরনের গুরুত্ব পাওয়ার দাবিদার। তাঁর যুক্তি, সংস্কৃত ছাড়াও দেশে আরও অনেক ভাষারই খুব সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে। যেমন, তামিল বা উর্দুও খুব ধ্রুপদী ভাষা।
‘ফলে এই ধরনের কোনও কর্মসূচী নিলে প্রতিটি অঞ্চলভেদে আলাদা উদ্যোগ নিতে হবে, যেমন তামিলনাড়ুতে সংস্কৃতর পাশাপাশি তামিলকেও গুরুত্ব দিতে হবে’, বলছেন কানিমোঝি।
বামপন্থীরা আবার মনে করছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ইশারাতেই সিবিএসই এই সার্কুলার জারি করেছে – যা বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদেরই প্রতিফলন।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত সিপিএমের লোকসভা সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘ভারতবর্ষ যে নানা ভাষা-নানা সংস্কৃতির মিলনস্থল সেটাই তো বিজেপি-আরএসএস স্বীকার করে না। তারা মনে করে আর্য সভ্যতাই কেবল ভারতীয় সংস্কৃতির ভিত – আর এর বিরুদ্ধে তাই দক্ষিণ ভারতে এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রতিবাদ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলছেন, ‘সংস্কৃত যে একটি ধ্রুপদী ভাষা ও ভারতে এর অনেক অবদান আছে তা আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু সংস্কৃতকে যারা দেবভাষা বলেন, দেবতারা এ ভাষায় কথা বলেন বলে দাবি করেন – তারা তো এর মাধ্যমে দেশকে বৈদিক যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান বলেই মনে হচ্ছে।’
বিরোধী দলগুলির এই তীব্র আক্রমণের মুখেও বিজেপি অবশ্য দাবি করছে সংস্কৃতর প্রসার ঘটানোর চেষ্টায় অন্যায় কিছু নেই। দলের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র নলিন কোহলি দাবি করছেন, সংস্কৃত ভাষা শুধু বিজেপি-র নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মি. কোহলির প্রশ্ন, প্রত্যেক ভারতীয় যে ভাষার উত্তরাধিকার বহন করছেন – পেছনে ফিরে সেই ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টায় রাজনীতি কীভাবে আসে?
তাঁর কথায়, ‘সংস্কৃত ভারতের অগাধ জ্ঞানভান্ডার আর ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত। যারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাদের ভাবনা অতি সঙ্কীর্ণ, তারা শুধু রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান।’
সংস্কৃত সপ্তাহের উদযাপনকে ঘিরে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষাবিদদের মধ্যেও পরিষ্কার দ্বিমত দেখা যাচ্ছে। তবে দিল্লির প্রথম সারির সিবিএসই স্কুল লক্ষ্মণ পাবলিক স্কুলের প্রিন্সিপাল ড: ঊষা রামনের এই উদ্যোগে তার সমর্থন আছে।
তাঁর কথায়, ‘একটা মৃতপ্রায় ভাষাকে আবার জিইয়ে তোলার চেষ্টা তো খুবই ভাল পদক্ষেপ। তবে হ্যাঁ, সংস্কৃতকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে – এই ভাষায় মতবিনিময়টা সহজ করে তুলতে হবে। ব্যাকরণের গোঁড়ামি আঁকড়ে থাকলোম, কেউ ভাষাটা বুঝলই না – তাতে লাভ হবে না।’
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সংস্কৃত যে আজকের ভারতে যে একটা মৃত ভাষা, তা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই।
কিন্তু দেশের অনেকগুলো ভাষার উৎপত্তি যে মূল ভাষা থেকে – সেটাকে আবার নতুন করে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা আদৌ করা উচিত কি না, সেই প্রশ্নটাই এখন ভারতের রাজনীতি ও শিক্ষাজগৎকে দুভাগ করে দিয়েছে। সুত্রঃ বিবিসিView this link
©somewhere in net ltd.