| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুয়াকাটায় সুমুদ্দ্রস্নান
পর্ব-২: নির্ঘুম রাত্রিবিলাস
নির্ধারিত সময় অনুযায়ি সন্ধ্যা ৮:০০ টার মধ্যেই সবার সদরঘাটে উপস্থিত থাকার কথা। Tour এর organizer হিসেবে আমি ভেবেছিলাম সবার আগেই গিয়ে উপস্থিত থাকব। কিন্তু বললেই ত আর আগে পোয়ছানো যায় না, এত বছরের অভ্যাস। ছোটবেলায় ক্লাসে লেট, প্রাইভেটে লেট, ক্যাম্পাস লাইফে টিউশানিতে লেট(এর কারনে টিউশানিও চলে গেছে একবার), পরীক্ষার হলে লেট, আজকাল আবার অফিসেও লেট (শোকজ ও খাইছি একবার), এত বছর ধরে সবকিছুতে লেট করে এখন আমার মস্তিস্কে আলসেমির এক অদ্ভুত বিলাসিতা কাজ করে। সেই বিলাসিতার কারনেই কিনা জানি না, প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও সবার আগে আগে লঞ্চ টার্মিনালে যেতে পারি নাই। অবশ্য এই লেট হবার দোষটা সম্পুর্ন ভাবে Sejuti Farjana এর ঘাড়ে গচানো যায়। বোনরে, শেষ মুহুর্তে নিজ হাতে বানানো কেক আর বায়লা মাছ ভুনার এই লোভটা না দেখাইলেও পারতি। এককিস্তি খাইয়া আর এক কিস্তি টিফিন বক্স ভইরা আম্মাকে সাথে লইয়া রিক্সাযোগে চললাম উদ্দেশ্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। এর মধ্যে বন্ধু Md Mqminul Islam Biplob এর ফোন, সেও নাকি সুমুদ্দ্রযাত্রায় আমাদের সংগী হবে। যাক ভালই হল backpakers সংখায় আরো একটু ভারি হল। লঞ্চ ঘাটে পৌছে নির্ধারিত লঞ্চ পারাবার-১১ খুজে বের করলাম। কেরানির কাছে গিয়া দেখি আমার নামের কেবিন গুলার কোন চাবিই আর বাকি নাই। ভাই Sazedul Alam Rubel আগেই সবগুলা কেবিনের চাবি বুঝে নিয়েছে। Abdul Aowal Choudhury, Mohammed Rashed Alam, Masum, Tithi সবাই আমার আগেই এসে হাজির। আম্মাকে নিয়া কেবিনে backpack সব রেখে সবাই ফ্রন্টডেকে একসাথে আড্ডা গল্প আর লেট লতিফদের ফোনে তাগাদা দিতে থাকি। M A Gofur Shovon আর ওর বঊ ট্রাফিকে আটকা পরে আছে। বন্ধু বিপ্লবকে ফোন দিলাম যে কতদুর এসে পৌছাল। জানলাম সেও ট্রাফিকে আটকা পড়ছিল। অবশ্য একলা মানুষ, ট্রাফিক জামকে বৃদ্ধাংগুল দেখিয়ে বাস রিক্সা সব ছেড়ে দিয়ে অবশেষে ইংলিশ রোড থেকে হেটে সদরঘাট এসে পৌছাইল। বন্ধু গফুর তখনো জামে আটকা। লঞ্চের ফ্রন্ট ডেকে আমাদের আড্ডা চলতে লাগল। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এইটাই প্রথম লঞ্চে জার্নি। উহারা চোখে মুখে বুশাল এক আশ্চর্যবোদক চিহ্ন নিয়া টার্মিনালে ভেরানো লঞ্চগুলার বিশালতা পরিমাপ করছে। বন্ধু গফুর অর বউকে নিয়া আসতে আসতে প্রায় রাত্রি ৮:৩০ বাজাইল। কেবিনে ব্যাকগুলা রেখে তার প্রথম কথাই হইল দোস্ত ক্ষিধা লাগসে খাবার ব্যাবস্থা কর। ;-)
লঞ্চ ছাড়তে ছাড়তে রাত প্রায় ৯:৩০ বাজল। একটু একটু করে টার্মিনাল দূরে সরতে থাকল। আমাদের লঞ্চ পারাবাত-১১ নদীর মাঝ বরাবর চলতে থাকল। ১০:০০ টার পরে যার যার কেবিনে খাবারের ব্যবস্থা করা হল। দেশি মুরগী, সবজি আর ডাল চচ্চড়ি। খেতে আহামরি কিছুই না শুধু মাত্র ঠেকা কাম চালানো। খাবার শেষে আবারো যথারীতি ফ্রন্ট ডেকে সবাই একসাথে আড্ডা, গল্প, হেরে গলায় গান কিম্বা ফ্রন্ট ডেকে শুয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে অহেতুক তারা গোনা এভাবে সময় পেরিয়ে যায়। পুরোপুরি পুর্নিমা ছিল না কিন্তু আকাশের একপাশটায় আধখাওয়া চাঁদ ছিল, সাথে নাম না জানা হাজারো তারা। রাতের নদী, নদীর বুকে পারাবাত-১১, তার উপরে আমরা আর আমমাদের মাথার উপর হাজারো তারায় খচিত খোলা আকাশ। খুব নষ্টালজিক হয়ে পরি। ঢেউয়ের তালে তালে লঞ্চ তার আপন গতিতে চলতে থাকে, মুন্সিগঞ্জ-পদ্মা হয়ে চাদপুর-মেঘনায় পৌছায়। মেঘমার বুকে দুলতে থাকা মাছ ধরার নৌকা গুলোকে আরো দুলিয়ে পারাবাত-১১ সামনের দিকে এগিয়ে চলে। দূরে মাছ ধরার ছোট নৌকার আলো গুলো আরো ছোট হতে থাকে। যতই রাত বাড়তে থাকে মেঘনার দুই পাড়ের গাছপালার আবছা অবয়ব গুলো যেন আরো জীবন্ত আর রহস্যময় হয়ে ওঠে। রাতের নি:স্তব্ধতা সবসময়ই রহস্যময়, আর নদীর বুকে রাত ত আরো রহস্যময়। এই রহস্যময় রাত্রি আমাদের ঘুমাতে দেয় না। মনে হয় অনন্তকাল ধরে এই রাত চলতে থাকুক, বহমান নদীর মত, সাথে আমরাও জেগে থাকি না ঘুমানোর দল হয়ে, রহস্যময়ী রাতের পুজারী হয়ে।
এরমাঝে হটাৎ তাস খেলার পোকা মাথায় চাপে। রুবেল ভাইয়ের কেবিনে তাসের আড্ডা বসে। মেঝ ভাই (রাশেদ) আর মা আগেই ঘুমায়া পড়ছিল। আর আমরা বাকি ৮ জনের ৪ জন তাস খেলি, ২ জন দর্শক আর দুই জন ঘুমায়। রাত আনুমানিক ৪ টার দিকে খেলা বন্ধ হয়। সবাইকে একটু রেস্ট নিতে বলি কারন সকালে আবার বরিশাল থেকে কুয়াকাটা ১২৫ কি: মি: পথ পাড়ি দিতে হবে। হঠাৎ কি মনে হলো, আর একটু আড্ডা দেই ফ্রন্ট ডেকে। আমি, তিথি, মাসুম, বিপ্লব, গফুর সবাই অদ্ভুদ এক ভাললাগা নিয়ে তাকিয়ে থাকি রাতের তারা খচিত আকাশের দিকে। নাম না জানা অনেক গ্রাম একের পর পেরিয়ে সামনে এগিয়ে চলতে থেকে পারাবাত-১১। কিভাবে সময় চলে যায় টের পাই না, কিছুক্ষন পর হটাৎ সামনে একটা ঘাট দেখে জাহাজের সারেংকে জায়গার নাম জিজ্ঞাসা করলে বলে বরিশাল। আমরা সবাই হটাৎ আকাশ থেকে পড়ি-এত তারাতারি বরিশাল! এখনোত রাত ভোর হয় নাই। আর এই শেষরাতে কুয়াকাটা যাবার কোন গাড়ি পাওয়া যাবে না। আমরা সবাই পরস্পরের দিকে তাকাই। কারো মাঝেই রাতজাগার কোন ক্লান্তি খুজে পাই না। পাপারাবাত-১১ হুইছেল বাজিয়ে ঘাটে তার আগমনের জানান দেয়, রাতজাগা শারিরিক ক্লান্তি আর অদ্ভুদ এক মানষিক প্রশান্তি নিয়া আমরা নতুন দিনের নতুন আলোর অপেক্ষায় থাকি............
(to be continued as "প্যারাময় ১২৫ কি: মি:")
©somewhere in net ltd.