| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুয়াকাটায় সুমুদ্দ্রেস্নান
পর্ব-৩: প্যারাময় ১২৫ কি:মি:
আলো ঝলমলে সুন্দর সকালে আমরা সবাই যখন বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালে নামলাম তখন আমাদের সামান্যতম ধারনাও ছিল না যে সামনে কি প্যারাময় যাত্রা অপেক্ষা করছে। যাইহোক রাত্রি জাগা ক্লান্ত দেহ আর রাক্ষুসে ক্ষুধা নিয়ে সবাই লঞ্চটার্মিনালের সামনে প্রথম যে হোটেলটা পেলাম সেটাতেই ঢুকে পড়লাম। বরিশাল শহরে নেমে প্রথম হোটেল- হোটেল চিটাগাং। নিজ শহরে হোটেলের নাম হোটেল চিটাগাং নামটা ঠিক হজম হল না, যদিও রাজধানীর বুকে হোটেল বরিশাল কিম্বা বরিশাল প্লাজা দেখে আনন্দিত হই, গর্বিত হই। নাম হজম না হলেও হোটেল চিটাগাং এর পরোটা, সবজি, ডাল, ডিম গোগ্রাসে গিলে ফেললাম। বিল দেয়া শেষ চলে আসব এই সময় মেঝ ভাই Mohammed Rashed Alam এর চা খাবার আবদার। চা চক্র শেষ করে ইলেক্টিক ইজি বাইকে করে রুপাতলি বাসস্ট্যান্ডে আসলাম উদ্দেশ্য কুয়াকাটার বাস ধরা। এখান থেকে আরো একজন লেডি BACKPACKER শাকিলা সুলতানা ইতি আমাদের সাথে যোগ দেবেন। আমরা যথারীতি তার অপেক্ষায় থাকি, উনি ঘন্টা দেড়েক আমাদের অপেক্ষা করিয়ে, কুয়াকাটার প্রথম গাড়িটি মিস করিয়ে আমাদের কাছে ওনার লেডি লেট লতিফ পরিচয় খানা উন্মচোন করলেন। সৌভাগ্যক্রমে(?) এই মহামান্য লেডি BACKPACKER আমার সহধর্মিনী। এজন্য আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই Sazedul Alam Rubel আমাকে তিরস্কার করতে বিন্দু মাত্র ছাড় দেন নাই। সকাল ৮:০০ টার পরে বাস ছাড়ল। বরিশাল-কুয়াকাটা বাস সার্ভিস পুরাই একটা friendly সার্ভিস। আমরা যেমন সিংগাল বেডে তিন জন বন্ধু অনায়াশে ঘুমাতে পারি বাস খানাও ঠিক তেমনি ৪০ জনের ধারন ক্ষমতা স্বত্তেও ১০০ জনকে জায়গা দিয়েছে , যাত্রি সেবায়ও অতুলনিয়, কাউকেই হতাশ করে নি, শেষ মুহুর্তেও যে হাত উচু করে ইশারা করেছে তাকেও জায়গা দিয়েছে হোক না সে ছাদে কিম্বা দাড় করিয়ে। বাসের সীট গুলোও অতি মাত্রায় রোমান্টিক, আমি হাল্কা পাতলা মানুষ আর পাশের সীটে যেহেতু বউ বসা তাই বাসের এই রোমান্টিসিজম না হয় সহ্য করলাম। কিন্তু সারা রাত জাগার পর নিজের ছয় ফুট হাইট নিয়ে বাসের সামনে পিছে চাপাচাপির এই রোমান্টিসিজম আর সহ্য হল না। আর সবার কি অবস্থা জানি না কিন্তু ১৫/২০ মিনিট যেতে না যেতেই আমার অবস্থা বেগতিক। কোমড় পিঠ আর হাটু ব্যাথা করতে লাগল। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাকেরগঞ্জ, দপদপিয়া সেতু পার হয়ে ঘন্টা খানেক পর বাস যখন লেবুখালি ফেরি ঘাটে আস্অল ভাবলাম সোজা হয়ে দ্বাড়াই আর নিচে নেমে একটু হাটাহাটি করি। নির্ঘুম রাত, ক্ষুধার্ত পেট আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে মনে হল কিসের কুয়াকাটা, কিসের সুমুদ্দ্রস্নান সামনের নদিতে ঝাপ দেই, ক্লান্তিগুলো নদীর জলে ধুয়ে ফেলি। পরিবেশ পরিস্থিতির বিবেচনায় মনের সেই ইচ্ছায় লাগাম দিলাম, টং দোকান থেকে পানি নিয়ে চোখ, মুখ ভিজিয়ে নিলাম। মিনিট দশেকের মধ্যে ফেরি ঘাটে ভিরল, পরবর্তি ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা লেবুখালি ফেরীঘাট পাড় হলাম। পটুয়াখালি চৌরাস্তা পার হবার কিছুক্ষন পর বাসের চাকা পাঞ্চার হল। আমরা সবাই আতংকিত কিন্তু ড্রাইভার বাবাজির দেখলাম ন্যুনতম কোন বিকার নাই। ঐ অবস্থায় নির্দিধায় আরো ৫০/৬০ কি:মি: রাস্রা পাড়ি দিয়া ক্ষান্ত হল। আমরা তখন ক্ষেপুপাড়া, এর পরেই কলাপাড়া থানা, মনে মনে ভাবলাম কাছাকাছি চলে এসেছি হয়ত। বাসের চাকা পরিবর্তন কথা বলে কন্টাকটার সবাইকে বাস থেকে নামতে বলল। যাক, এতক্ষনে ওনাদের সুবুদ্ধি হল। ২/৩ মিনিটেড় মধ্যেই এই সুবুদ্ধির পেছনের রহস্যের জট খুলল। ওনারা বাসের চাকা পরিবর্তনের নামে বাসে আরো কিছু যাত্রি উঠাল, আমরাও সীট হারাবার আশংকায় তারাতারি বাসে উঠে পড়লাম। ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে আবারো বাস ছাড়ল। মহিপুর আলিপুর নাম না জানা আরো অনেক গ্রাম, বাজার, সেতু পার হয়ে যখন কুয়াকাটা নামলাম তখন দুপুর ১২:০০ টা। হোটেল খুজে বের করে রুমে চেক ইন করে ব্যাগ রেখে সবাই একসাথে সুমুদ্দ্রে নামলাম। সব কস্ট, ক্লান্তি সাগরের লোনা জলে ধুয়ে নিজেদের যেন আবার এক নতুন উদ্যোমে ফিরে পেলাম।
আহ "Life is beautiful"
....to be continued.....
©somewhere in net ltd.