নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলস-খেয়ালি

Razib Abdullah

Razib Abdullah › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুয়াকাটায় সুমুদ্দ্রস্নান-৪র্থ পর্ব

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭

কুয়াকাটায় সুমুদ্দ্রস্নান
পর্ব-৪: জোড়াখালে সুর্যাস্ত

(দুপুরে খাবার পর শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করসিলাম। ট্রাউজারের পকেটে চাবির জন্য হাত দিতেই দেখি হাতে বালু কিচকিচ করছে। জীবিকার তাগিদে কুয়াকাটা পেছনে ফেলে এসেছি, সুমদ্দ্রস্নান গত হয়েছে তাও প্রায় গত ১০ দিন। সুমুদ্রস্নানের বালুগুলো রয়ে গেসে ট্রাউজারের পকেটে। হঠাৎ খুব নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। ভাবলাম লেখাটা শেষ করে ফেলি।)

সুমুদ্দ্রের সামনে দাড়ালে আসলেই মনের সব ক্লান্তি নিমিশেই দূর হয়ে যায়। এর বিশালতায় বাস্তবতার ছোট খাট সব দু:খ কষ্ট বিলীন হয়ে যায়। সুমুদ্দ্রে ঝাপাঝাপি করার এক পর্যায়ে বন্ধু বিপ্লবের মাথায় বল খেলবার আইডিয়া আসল। যেই কথা সেই কাজ, সুমুদ্দ্র সৈকতের পাশেই কিছু দোকান ছিল। ওখান থেকেই একটা বল কিনে সুমুদ্দের মধ্যে আমরা একেক জন মেসি নেইমাই হয়ে উঠলাম। হঠাৎ পায়ের মাংস পেশিতে টান পড়ায় মেঝভাই Mohammed Rashed Alam ইনজুরিতে পড়ে। মেঝভাই সহ আমরা সবাই হোটেলে ফেরৎ যাই। যাবার আগে ভেজা জামা কাপড়েই কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টে হোটেল বৈশাখীতে দুপুরের খাবার সারি। হোটেলে রুমে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেই।

ঘুম ভাংগে বিকাল পাচটায়, বাইকার জামাল ভাইয়ের ফোনে। বাইকার ভাইদের সাথে আগেই কন্টাক্ট ছিল ওরা বিকাল পাচটার মধ্যেই হোটেলের সামনে এসে হাজির। ৫ টা বাইকে আহত মেঝভাই সহ আমরা ১০ জন BACKPACKERS, উদ্দেশ্য লেবুর বন, তিন নদীর মোহনা, সুর্যাস্ত। হোটেলের সামনে বেড়িবাধ ধরে সোজা পশ্চিম বরাবর আমাদের মোটরসাইকেল বাহিনী চলতে থাকল। ৫০/১০০ গজ যেতে না যেতেই একটু খানি পিচঢালা পথ নিমিষেই শেষ হয়ে গেল, এরপর একদম উচু নিচু মেঠোপথ ধরে যখন বাইক গুলো এগোতে লাগল, তখন মনে হল আমরা সবাই স্টারস্পোর্টসের ডার্ট বাইক রেসে আছি, বাইকার ভাইজানদের কারিশমায় আমরা রীতিমত হতবাক। এরমধ্যে বাইকার জামাল ভাইকে দেখলাম দুই তিনবার ফোন রিসিভ করল বাইক না থামিয়েই। কলিজার পানি শুকিয়ে অর্ধেকে নেমে এল। এরপরে যখন কাদা থেকে বাচতে গিয়ে বাইক বেড়িবাধের সিমেন্ট ব্লকের উপর দিয়ে চলতে লাগল, তখন কলিজার পানি বাকি অর্ধেকও নাই হয়ে গেল। আমাদের বাইকাররা তখনও নির্বিকার, খুব সাবলিল ভাবে ব্লকের রাস্তা শেষ করে সৈকতের তীর ঘেষে চলতে লাগল, এরপরে আমরা গিয়ে থামলাম লেবুর বনে। লেবুর বনের গাছগুলো খুব অদ্ভুত লাগ্ল আমার কাছে, গাছের গায়ে সাদা সাদা মাকড়সার আশের মত। জামাল ভাইয়ের কাছ বলল অগুলো দিয়ে নাকি টিসু পেপারের মন্ড বানানো হয়। গাছগুলো পাশ দিয়ে যিখন যাচ্ছিলাম মনে হল অসহায়ভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন কিছু বলতে চায়। লেবুর বাগানে ফটোসুট আর ঘোরাঘুরি শেষ করে চলে আমরা গেলাম তিন নদীর (আসলে দুই নদী)মোহনায় সুর্যাস্ত দেখতে। স্থানীয়ভাবে জায়গাটার নাম জোড়া খাল। দুটো নদী যেন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সুমুদ্দ্রস্নানে নেমেছে। সময় গড়িয়ে চলে সুর্য্যটা আরো লাল হতে থেকে, তার রক্তিম আভা চারপাশে ছড়িয়ে দিতে থাকে। একটু একটু করে পুরো আকাশ টা লাল হতে থাকে। মাঝখানে তিন নদির মোহনা, এপাড়ে আমরা আর ওপাড়ে সুন্দরবন (ফাতরার বন)। সুর্য্য টা একটু একটু করে সুন্দরবনের মধ্যে আড়াল হতে থাকে, তার সাথে গাঢ় লালা আকাশ টাও অন্ধকারে ঢেকে যায়। আমরা ১০ জন BACKPACKERS অদ্ভুদ এক ভাল লাগার রেশ নিয়ে তাকিয়ে থাকি অপলক।

একটু পরে আমাদের বাইকার জামাল ভাই তাগাদা দেয় ফেরার জন্য। আমরা ফিরতি পথ ধরি। মাঝে লেবুর বনের মাঝে মাছ ভাজা খাওয়ার জন্য থামি। ফেরার পথে সবাই এখানে মাছ খাবার জন্য থামে। কিন্তু কাকাড়া দেখে লোভ সামলাতে পারি না। কাকড়া আর টুনা ফিস অর্ডার করে বসে থাকি, মানুষের খাওয়া দেখে জিভে জল আসে, খাবার টেবিলে অপেক্ষা করাটাই বোধ হয় আইনস্টাইনের কাল আপেক্ষিকতার (কাল দীর্ঘায়নের) আদর্শ উদহারন। যাইহোক অপেক্ষার পর্ব শেষে কাকড়া ফ্রাই টেবিলে হাজির। মেঝ ভাই আর Abdul Aowal Choudhury ভাই বাদে আমরা সবাই দেদারসে কটর মটর শব্দ করে কাকড়া বংশ ধ্বংস করতে লাগলাম। খাবার মাঝে হটাঠ একবার মেঝভাই আর আউয়াল ভাই এর দিকে তাকালাম, উনারা উদাস নাকি হতাশ হয়ে কাকড়া ফ্রাই এর দিকে তাকিয়ে আছেন বোঝা গেল না। ততক্ষনাৎ আবার হুশ হইল, ধুর খাবার সময় এতদিকে মনযোগ দেয়া ঠিক না পরে আবার ভাগে টান পড়ে যাবে। একটু পরে কটর মটর শব্দ কমে আসতে লাগল। প্লেটের কাকড়া গুলোও সংখ্যায় কমতে থাকল। নিজের সামনের খালি প্লেট রেখে এখন আশে পাশের প্লেটের দিকে নজর দিতে থাকলাম। খুব একটা লাভ হল না। একখানা ঠ্যাং ছাড়া কপালে আর কিছু জুটল না। সবগুলার কাকড়া খাওয়া দেখে মনে হল এগুলা সব by born কাকড়া খোড় (সাথে আমিও)। কাকড়া পর্ব শেষ করে আবারো অপেক্ষা। বেশ খানিক টা বিরতির পর ধৈর্যের সীমা ছাড়াবার পর টুনা ফিস ফ্রাই অবশেষে টেবিলে পৌছাল। এই বিরতির ফাকে ধৈর্য্য হারা হয়ে সবাই খালি প্লেটের ঝোল মশলা ফ্রাই চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। BACKPACKERS টুনা ফিস ফ্রাইও খুব দ্রুততার সাথে ফিনিস করল, মনে হল T-20 match এর গেইলের ঝড়ো ইনিংস। হাজার খানেকের মত বিল চুকিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। বলা যায় না আর ঘন্টা খানেক থাকিলে হয়ত ঢাকা ফেরার টাকায় টান পড়িত। :-)

জিরো পয়েন্টে রাতের খাবার সেরে হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ১০:০০ টা। পরদিন সুর্যদয় দেখতে চাইলে খুব ভোরে উঠতে হবে তাই তারাতারি ঘুমের প্রস্তুতি নেয়া।
....to be continued....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.