নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলস-খেয়ালি

Razib Abdullah

Razib Abdullah › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুয়াকাটায় সুমুদ্দ্রস্নান-৫ম পর্ব

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৩

কুয়াকাটায় সুমুদ্দ্রস্নান
পর্ব-৫: সুর্যদয়ে গংগামতি

কুয়াকাটায় হোটেল সী ভিউ ছিল আমাদের এক রাত্রির বাসস্থান। আমাদের মত বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য মাঝারি মানের হোটেল হিসেবে বেশ ভালই ছিল। তিন তলার কমন বেলকনি থেকে সুমুদ্দ্রের অসাধারন একটা ভিউ পাওয়া যায়। হোটেলের সামনের দিকটায় বেড়ি বাধের ওপাড়ে গাছ গাছালির ফাক দিয়ে তাকালে সুমুদ্দ্রের সাথে একদম চোখাচোখি, সব ক্লান্তি ভুলে যাই আমি আর বউ পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসে সুমুদ্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকি আপলক। হটাঠ বেরসিক বউ আমার উঠে পড়ে আমাকে একা রেখেই। রুমের চাবি নিয়ে চলে যায় একাকি। একটু পর বন্ধু মাসিম এসে যোগ দেয় আমার সাথে, দুই বন্ধু আবারো সুমুদ্দ্র প্রেমে মশগুল হই, রাতেই নির্জনতা চিরে বেড়িয়ে আসা গর্জন শুনি মুগ্ধ হয়ে। আবারো ছন্দ পতন হয় বেরসিক বউয়ের ডাকে, সবাইকে রুবেল ভাইয়ের রুমে ডাকা হল। গিয়া দেখি Birthday Cake. উপরে লেখা Happy birthday Razib. ঘটনার আকষ্মিকতায় কয়েক সেকেন্ড নির্বাক রই। এটাই সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে surprized birthday. বউটারে যতটা বেরসিক ভাবসিলাম আসলে তা না। Thanks a lot শাকিলা সুলতানা ইতি। সারপ্রাইজ আরো বাকী ছিল, BACKPACKERS দের মধ্যে আরো একজনের জন্মদিন ছিল একই দিনে। সে হল বন্ধু M A Gofur Shovon. ডাবল মজা। এইবার বন্ধু গফুরের রুমে গিয়া দরজা নক করলে দরজা লহুলে দিল ওর বউ সীমা। গফুর তখন বিছানায় শোয়া, ঘুম ঘুম নয়নে রাজ্যের বিষ্ময় (নাকি বিরক্তি) নিয়ে আমার দিলে তাকিয়ে ছিল। কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। দোস্তের গায়ের উপরে ঝাপিয়ে পড়ে বললাম happy birthday dosto. এরপরে দুই দোস্ত একসাথে কেক কাটলাম। কেক, কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রীম দিয়ে ডাবল বার্থ ডে পর্ব শেষ হল। পায়ের মাংসপেশীতে টান খাওয়ায় রাতে মেঝভাই এর গায়ে জ্বর চলে আসে। জোড়া জন্মদিনের পার্টিতে মেঝ ভাইকে আমরা মিস করলাম। ভোরে সুর্যদয়, তাই তারাতারি ঘুমানোর কথা ছিল, হল না ঘুমাতে ঘুমাতে রাত প্রায় দুইটা।

ভোর সারে চারটার মধ্যেই বাইকার ভাইজানেরা সবাই হাজির। আমরা আবারো লেট। তরিঘরি করে শর্টকাট রেডি হয়ে পড়ি। উদ্দেশ্য গংগামতির চ্রে সুর্যদয়। ভেবেছিলাম মেঝভাই হয়ত যেতে পারবে না, সেই মেঝ ভাই সবার আগেই রেডি হয়ে বাইরে আসে। আমরা আগের মতই দুজন করে একেকটা বাইকে চেপে বসি। বেড়িবাধের উপর দিয়ে পুর্ব দিক ধরে আমরা চলতে থাকি। কিছুখন পরে বাইক গুলো রাস্তা ছেড়ে আড়ায়াড়ি জংগলের মধ্যে ঢোকে। গাছ পালা, জংগল, ঝোপ ঝাড় পেড়িয়ে অন্ধকারের মধ্যে আমরা এগোতে থাকি। এরমাঝে বাইকসহ এমনসব নড়বড়ে কাঠের সাকো পাড়ি দিতে হয়েছে যা আমরা সাধারন ভাবে কোন কিছু না ধরে হেটেও পাড় হঅয়ার কথা চিন্তা করি না। জংগল পেড়িয়ে এবার আমাদের বাইকগুলা সুমুদ্দ্রের তীর ধরে এগোতে থাকে। তীর ধরে চলতে চলতে আমরা ছোট্ট একটা নদীর মোহনায় চলে আসি। আমরা ১০ জন BBACKPACKERS অধীর আগ্রহে আকাশের পুব পানে তাকিয়ে থাকি এক রক্তিম সুর্য দেখব বলে। আকাশে মেঘের আধিক্যে সুর্যদয় পুরাপুরি দেখা হয় না। সুর্যকে আঢ়াল করা মেঘের যে লাল্টে আভা সেটাও অসাধারন। সুর্যদয় শেষ করে বাইকসহ আমরা সবাই নাম না জানা সেই খাল পাড়ি দেই স্থানিয় নৌকায়। গাছের ডালপালা থেকে মাথা বাচিয়ে, সাগরের তীর ধরে আমরা এসে পড়ি গংগামতির চর।স্থানীয়রা এটাকে বলে ছেড়া দ্বীপ। আসলেই এটা ছেড়া দ্বীপ, যেন এক টুকরো জমি ছিড়ে সাগর তার একান্তই নিজের করে নিয়েছে। দূরে জেলেদের মাছ ধরার নৌকা দেখা যায়, আরো দূরে দেখা যায় পায়ড়া বন্দর, বংগপসাগর। আমাদের জামাল ভাইয়ের কথা অনুযায়ী আর একটু পাশেই নাকি কক্সবাজার, কি জানি হতেও পারে হয়ত। সাগরের তীর থেকে দূরে তাকিয়ে রোমাঞ্চিত হই, মনে সাধ জাগে একদিন কোন এক মাছ ধরা নৌকায় নাম না জানা জেলে ভাইদের সাথে বংগপসাগর পাড়ি দিব।

সময় গড়াতে থাকে, একে একে জেলে নৌকা তীরে ভিরতে থাকে। আমরা দৌরে যাই নৌকার কাছে মাছ দেখতে। গিয়ে অবাক হই বিশাল ইলিশ দেখে। সবচেয়ে বড় যে ইলিশ সেটা দামদর করব কিনে ফেলি। সোয়া কেজির একটা আস্ত ইলিশ মাত্র ১০০০/- টাকায়। জেলেগুলো তাতেই খুশি, হয়ত আড়তে এর চেয়ে কমে বিক্রি করতে হয়। আমাদের ইলিশের রসনা বিলাসের পেছনে যে কত নির্ঘুম রাত কাটে আর কতখানি জীবনঝুকি নেয় এই মেহনতি মানুষগুলো তার কতখানিই বা আমরা অনুভব করতে পারি। সবাই ফেরার তাগাদা দেয়।

ফেরার পথে লালা কাকড়ার চড়ে একটু থামি। লাল কাকড়া ধরার ব্যর্থ চেষ্টায় কিছুটা সময় পাড় করি, ফটোসেশান চলে এরি ফাকে। বিচে বাইক চালানোর লোভ সামলাতে পারি না। বাইকের চাবি নিয়ে বউকে পিছনে বসিয়ে কিছুটা সসময় সাগরের তীরে এলোমেলো ঘোরাঘুরি করি। ঘোরাঘুরি শেষে এবার গন্তব্য রাখাইন পল্লি। ফ্রেস হওয়া, নাস্তা পানি করা এমনকি প্রকৃতির ডাকে সারা দেয়া এইসব কর্ম সব ওখানেই সারতে হবে। প্রকৃতি ডাক দেয় বেশ তীব্র ভাবেই। জামাল ভাই দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে আমাদের রাখাইন পল্লিতে নিয়ে আসে। ফ্রেস হবার পর আহ শান্তি। feels heavenly. ডাব খেয়ে সবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি সবাই আসলে একসাথে নাস্তা করব। এর মাঝেই দু:সংবাদ পাই যে Md Mqminul Islam Biplob আর Sazedul Alam Rubel ভাই যে বাইকে ছিল ওটা চাকা পাঞ্চার হয়ে accident করছে। বিপ্লবের হাল্কা পা ছিলে যাওয়া ছাড়া আর কারো তেমন কোন ক্ষতি হয় নাই। সবাই রাখাইন পল্লিতে আসলে নাস্তার জন্য টং দোকানে বলে আমরা রাখাইন পল্লি, স্কুল, বৌদ্ধ মন্দির ঘুরতে যাই। ঘোরাঘুরি শেষ করে সবাই একসাথে নাসতা করি। এবার যাত্রা রাখাইন মারকেট, কুয়াকাটার বিখ্যাত কুয়া, বৌদ্ধ মন্দিন। একটা একটা করে সবগুলো জায়গা ঘুরে হোটেলে ফিরি সকাল সারে দশটায়। দুপুরে খাবার জন্য হোটেল ম্যানেজার সুলেমান ভাইকে ইলিশ মাছ খানা রান্নার মহান দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে দেই।

ঢাকায় ফেরার গাড়ি রাত ৮:০০ টায়। সকাল ১০:৩০ থেকে রাত ৮:০০ টা এই সময়টা পুরাই বিশ্রাম। শুয়ে বসে সময় নস্ট করার কোন মানে হয় না। মাথায় নতুন চিন্তা ঘুরপাক খায়। চোখ বুজলেই আগের দিন সন্ধ্যার দৃশ্য ভেসে ওঠে। সুন্দরবন হাতছানি দেয় বার বার।
....to be continued as "ফাতরার বন"....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.