নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলস-খেয়ালি

Razib Abdullah

Razib Abdullah › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুয়াকাটায় সুমুদ্দ্রস্নান-শেষ পর্ব

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০২

কুয়াকাটায় সুমুদ্দ্রস্নান
পর্ব-৬: সুন্দরবনে ঝটিকা সফর
(শেষ পর্ব-আপাতত)

ট্যুর শুরুর আগে যখন অভিজ্ঞদের মতামত চেয়েছিলাম ফাতরার বনের ব্যাপারে তখন অনেকেই Negetive Opinion দিয়েছিল যে ওয়েদার ভাল না, জোয়ার-ভাটা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের এই ট্যুরের অনেকগুলা অনিশ্চয়তার মধ্যে এই ফাতরার বন ও ছিল। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালি এই পাচটি জেলায় সুন্দরবনের ব্যাপ্তি। ফাতরার বন সুন্দরবনের বরগুনা অংশ।

ট্যুর শেষে আমাদের ফেরার কথা ছিল ২য় দিন রাতের গাড়িতে। ২য় দিন যখন সকাল ১০:০০ টার মধ্যেই কুয়াকাটার মোটামুটি সব ঘুরে দেখা শেষ হাতে দেখি তখন অনেক সময়। রাতের বাস ৮:০০ টায়। বিশ্রাম আর লোকাল মার্কেট ঘুরে কেনাকাটার ব্যাপারটা বিসর্জন দিলে ফাতরার বন ঘুরে আসার সময় টা বের করা যায়। ফোন দিলাম লোকাল ট্যুর এজেন্ট শাহিন ভাইকে। জানাল সকালে ১০:০০ টায় আর দুপুর ২:০০ টায় ট্রলার আছে ফাতরার বনে যাবার। আবারো চিন্তায় পরে গেলাম। ঐ দিন ছিল শুক্রবার, নামাজের দিন। নামায, লাঞ্চ সবকিছুরর পরে দুপুর ২:০০ টার মধ্যে আলিপুর গিয়ে ট্রলার ঘাটে গিয়ে ট্রলার ধরতে পারব কিনা সন্ধেহ আছে, আর সাথে ত তিনজন লেডি BACKPACKERS আছেনই, যত ভয় ওনাদের নিয়াই। আবার দিলাম শাহিন ভাইকে ফোন, জিজ্ঞাসা করলাম যে ফাতরার বনের ট্রলার একটু দেরি করে ছাড়া যায় কিনা। উনি পালটা জিজ্ঞাসা করল যে আমরা কয়জন যাব। আমরা ১০ জন শুনে আমাদের আলাদা একটা রিজার্ভ ট্রলার দেবার কথা বলল। যাক একটু হাফ ছেড়ে বাক্সা গেল। বেলা ১১:০০ টা নাগাদ সবাই হোটেলে ফিরলাম। মাসুম, বিপ্লব, শোভন হোটেলের সামনে ডাব খাওয়ায় ব্যাস্ত। হটাঠ খেয়াল করলাম অস্বাভাবিক রকমের হাত কাপাকাপি করছে। খুব আতংকিত হয়ে পড়লাম। বন্ধু বিপ্লব ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিল। ডাব শেষ করে হোটেলে ফিরলাম। সবাই গোছলের জন্য আবার সৈকতে গেল, আমি হোটেলেই রয়ে গেলাম। শরীরের অবস্তা খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিল না। শুয়ে শুয়ে ফাতরার বনে যাত্রার হিসাব কিতাব মেলাচ্ছিলাম। সময় টাকা দুটোই শেষের দিকে।

কিছুক্ষন পরে লাঞ্চের সময় হলে সবাই নিচতলায় ডাইনিং এ জড়ো হই। সকালে জেলেদের কাছ থেকে কেনা ইলিশ রান্না করতে দেয়া হয়েছিল হোটেলের বাবুর্চিকে। ডাইনিং এ বসে ধোয়া ওঠা গরম ভাত, ইলিশের দোপেয়াজা, আলু ভর্তা আর ঘন ডাল দেখেই জিভে জল পড়ে। খেতে বসব খেয়াল করে দেখি মেঝভাই Mohammed Rashed Alam, Sazedul Alam Rubel vai আর Abdul Aowal Choudhury ভাই নামায থেকে তখনো আসে নি। এত সাধের ইলিশ তাদের রেখে খাই কিভাবে। একেত বিশ্রামহীন ছোটাছুটি তারউপর আবার পেটে চরম ক্ষুধা। আমাদের মধ্যেই কেউ বলে খাবার শুরু করে দেই আবার কেউ বলে অপেক্ষা করি। মাসুম আর বিপ্লব ততক্ষনে আলু ভর্তা আর ডাল দিয়া খাওয়া শুরু করে দিসে। কিছুক্ষন পর ভাইজানেরা আসলে আমাদের ভোজন পর্ব শুরু হয়। পেটে ক্ষুধা ছিল রান্নাটাও অসাধারন ছিল আর সোয়া কেজির ইলিশের কথা নাইবা বললাম। সবাই বেশ আয়েস করেই খেলাম। শেষমেষ ইলিশের ঝোলেও যখন টান পড়ল, তখন লাজ শরমের মাথা খেয়ে ইলিশের ট্রের উপর ভাত মাখায়ে নিলাম। ভাবখানা এমন যেন "ইলিশের শেষ বিন্দু ঝোল থাকা পর্যন্ত চাটিয়া পুটিয়া খাইব"। অবশ্য ওখানেও কয়েকজনকে ভাগ দিতে হয়েছিল। আমি ভদ্রতা করে সবাইকে ইলিশের ঝোলে মাখা ভাত অফার করলেও কেউ ই ভদ্রতা করে না করে নি।

খানাপিনা পর্ব শেষ করে জিরো পয়েন্টে চলে গেলাম। একটা মাহেন্দ্রতে (থ্রি হুইলার) আমরা দশ জন উঠে পরলাম উদ্দেশ্য আলিপুর ট্রলারঘাট। ১৫/২০ মিনিটের মধ্যেই আমরা ট্রলার ঘাট পৌছে গেলাম। আমাদের ট্রলার তখনো ঘাটে এসে পৌছায় নাই। কাঠফাটা রোদের মধ্যে সবাইকে আধা ঘন্টা দ্বাড় করিয়ে তারপর ট্রলার আসল। আমরা ট্রলারে উঠে পড়লে ট্রলার ছাড়ল। আমরা আন্ধারমানিক নদী ধরে চলতে থাকি। চোখে পড়ে নদীর পাড় ঘেষে গড়ে ওঠা জেলে পাড়া, মাছের আড়ত, শুটকি পল্লি আরও কত কি!! এভাবে ২০/৩০ মিনিট চলার পর আমরা চলে আসি তিন নদির মোহনায়। এদিকে সুমুদ্দ্র আর দুই দিকে দুই নদী। এখানে সুমুদ্দ্রের উন্মত্ত ঢেউ যেন কলিজার মধ্যে আছড়ে পড়ে, বুকটা ধরফর করে ওঠে, আবার ভিতরে ভিতরে একক ধরনের শিহরন টের পাই, এক ধরনের আনন্দ উত্তেজনা অনুভব করি। দুইপাশে দুই নদী, এক পাশে সুমুদ্দ্র আর বাকি পাশটায় ফাত্রার বন। এই উত্তাল ঢেউয়ের মাঝেও ওপাড়ে জংগলের টান অনুভব করি, মনে হয় অদ্ভুদ এক মায়া আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। একটু পর ঢেউ কমতে থাকে আমাদের ট্রলার সাগড় পাড়ি দিয়ে সুন্দরবনের নাম না জানা কোন এক খালের মধ্যে ঢুকে পড়ে। যতই বনের ভিতরে যেতে থাকি ঠিক ততটাই মুগ্ধ হতে থাকি। একসময় ট্রলার ফাতরার বনে ভিড়ায়, আমরা একে একে নেমে পড়ি।

সুন্দরবনে বাঘের পরিবর্তে এক বাঘা কুকুর আমাদের অভ্যার্থনা জানায়। আমাদের নৌকার মাঝি ইদ্রিস ভাই বনবিভাগের অনুমুতির ব্যাপার সারে আর আমরা সময় নষ্ট না করে বনের একদম ভিতরে ঢুকে পড়ি। ফাতরার বনে বাঘের ভয় নাই, রাস্তাও অদিকে একটাই দেখলাম তাই হারাবার ও ভয় নাই।সবাইকে পিছনে ফেলে নির্দিধায় বউয়ের হাত ধরে বনের পথে হেটে চলি। বনের শুনশান নিরবতায় মাঝে মাঝে গায়ে শিহরন জাগে। মাঝপথে কাদা দেখে জুতা মোজা খুলে হাতে নেই। তারপরেও নিস্তার নাই, কাদায় পা রাখতেই এক বিঘত কাদার মধ্যে পা ঢুকে যায়। who cares???? জুতা যখন খুলে নিছি কাদায় আর ভয় কিসে?? আর একটু সামনে যেতেই বন জংগলের রাজ্য শেষে সুমুদ্দ্রের পাড়ে এসে পড়লাম। এখান থেকে অপাড়ে কুয়াকাটার লেবুর বন দেখা যায় ঠিক যেখান থেকে গতকাল সুর্যাস্ত দেখেছিলাম, গতকাল এই সময়টা ঠিক ওপাড়েই ছিলাম। একটু পরে সবাই চলে আসলে একসাথে ফটোসেশন, হই হুল্লা করে সময় কাটাই। এবার ফেরার পালা, অদ্ভুদ এক প্রশান্তি নিয়ে ফিরতি পথ ধরি।

ফিরতি পথে আবারো লাল কাকড়া চর (লেবুর বনে) নামি। নামতে গিয়ে আউয়াল ভাইয়ের আছাড় খাওয়া,বউয়ের হোচট কিম্বা বউরে পাব্লিকলি কোলে করে নৌকায় তোলা আরো কত স্মৃতি। অস্তগামী সুর্যের সাথে লাল কাকড়ার চরে আরো কিছুটা সময় কাটিয়ে ট্রলারে করেই ফিরে আসি আলিপুর। ওখান থেকে রিজার্ভ মাহেন্দ্রতেই হোটেলে ফিরি যখন তখন সন্ধ্যা। ঢাকা ফেরার তাগিদে আবারো তড়িঘড়ি করে BACKPACK গুছিয়ে, হোটেলের বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে পরি রাতের গাড়ি ধরার জন্য। ফেরার গাড়ি কুয়াকাটা এক্সপ্রেস যখন জিরো পয়েন্ট ছেড়ে যাচ্ছিল আশ্চর্য এক পিছু টান অনুভব করছিলাম। মনে মনে বলছিলাম ভাল থেকো সাগরকন্যা, আবারো দেখা হবে কোন এক পুর্নিমাতে, ভরা জোতস্নায়, ভাল থেকো কুয়াকাটা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.