নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলস-খেয়ালি

Razib Abdullah

Razib Abdullah › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘ-পাহাড়ের দিনরাত্রি

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৫১

মেঘ-পাহাড়ের দিনরাত্রি
পর্ব-১: পাহাড়ি রাস্তার বাকে

পাহাড়ি রাস্তার বাকে হটাত প্রচন্ড্র গাড়ির ঝাকুনি। আধোঘুম আধো জাগরনে সারারাত জার্নির পর ঘুম ভাংগল চরম বিরক্তিতে। চোখ মেলে তাকাই চারপাশ, জানালার ফাক গলিয়ে হাল্কা ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপ্টায় সতেই হই। বাস যেন পাহাড়ের বুক চিরে সাপের মত আকাবাকা এগিয়ে চলে। দুপাশে উচু উচু পাহাড় আর সবুজঘেরা রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি অদ্ভুত এক ভাললাগায়। চোখ মেলতেই এত সুন্দর একটা সকাল! আসলেই মনটা ভাল হয়ে গেল, সারা রাতের কস্ট নিমিষেই ভুলে গেলাম। একধরনের ঘোরের মধ্যে আটকা পরে থাকি।

ঘোড় কাটে চান্দের ড্রাইভার সমর দা এর ফোনে। জানাল শাপলা চত্ত্বরে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। ততক্ষনে ঘড়ির কাটায় সকাল ৭:০০ টা। আশংকায় ছিলাম বাঘাইহাটে সকাল ১০:৩০ এর আর্মি এস্কর্ট পাব কিনা। এটা মিস করলেই আবার বিকাল ৩:৩০ পর্যন্ত বসে থাকতে হবে পরের এস্কর্টের জন্য।

নিরাপত্তাজনিত কারনে সাজেকে আর্মি এস্কর্টের সাথে যেতে হয়। প্রতিদিন দুইটা এস্কর্ট যায়। ১ম এস্কর্ট সকাল ১০:৩০ টায় আর ২য় টা বিকাল ৩:৩০ টায়। এছাড়া সারাদিন লোকাল চান্দের গাড়ি চলাচল করে কিন্তু তাতে শুধু আদিবাসি আর স্থানীয় লোকজন যাওয়া আসা করে। অগুলাতে ট্যুরিস্টদের যাওয়া নিষেধ।

রাস্তার দুপাশে আলুটিলা, বৌদ্ধমন্দির, বনবিহার, মাটিরাংগা বাজার সবকিছু পিছনে ফেলে সকাল প্রায় ৮:০০ টা নাগাদ শাপলা চত্ত্বর পৌছাই। বলে নেয়া ভাল যে এটা খাগড়াছড়ি শাপলা চত্ত্বর, মতিঝিল শাপলা চত্ত্বর নয়। বাস থেকে নামার সময় অবশ্য অবশ্য একজন ঠাট্টা করে ড্রাইভার কে বলছিল "সারা রাইত গাড়ি চালাইয়া আবার সেই শাপলা চত্ত্বরেই নামায়া দিলেন" ;-)

দুই ভাবী সহ আমরা ছিলাম ১৩ জন BACKPACKERS. শাপলা চত্ত্বর নামার পরে মোটামুটি সবাই পাব্লিক টয়লেটের দিকে উর্ধশ্বাসে ছুটল। আমি আর বন্ধু Md Mqminul Islam Biplob ছুটলাম রাস্তার উলটা দিকে সবার নাস্তার ব্যাবস্থা করতে। ১০:৩০ এ আর্মি এস্কর্ট মিস করার একটা আশংকা বার বার মনের মধ্যে খোচা দেয়। হোটেলে ১৩ জনের নাস্তার অর্ডার দিয়ে পাশের দোকানে যাই পানিসহ,সাবান, শ্যাম্পু, পেস্টসহ দরকারি কিছু কেনাকাটার জন্য। এর মধ্যেই চান্দের গাড়ির ড্রাইভার হাজির। হোটেলের বিল চুকিয়ে সবাইকে নিয়ে উঠে পরি চান্দের গাড়িতে। মনের ভিতরে একটা তারা কাজ করে already ১৫ মিনিট লেট। দুই senior BACKPACKERS মেঝ ভাই Mohammed Rashed Alam আর Jalal Islam Jalu ভাই আগে-ভাগে চান্দের গারিতে ড্রাইভারের পাশের সীট দখল করে বসল। সবাইকে চান্দের গারিতে উঠানোর পরে আমি, বিপ্লব, চান্দের গারির হেল্পার এই তিনজনের জায়গা হয় ছাদে। ব্যাগ পাহাড়া দেবার মহান দ্বায়িত্বে নিয়োজিত BACKPACKERS এর অতন্দ্র প্রহরি।

গান আর হইহুল্লো করতে করতে আমরা যখন বাঘাইহাট পৌছাই ঘড়িতে তখন ১০:১৫ টা। আর্মি এস্কর্টের তখনও ১৫/২০ মিনিট বাকি। অন্যান্য সব গ্রুপকে দেখলাম ভেজা কাপড়ে ঝর্না থেকে গোছল করে ফিরছিল। তারমানে কাছাকাছিই হাজছড়া ঝর্না। চান্দের গাড়ির হেল্পার ভাইজানকে সাথে নিয়া হাটা দিলাম। সবাইকে ত তাগাদা দিয়ে আমি বিপ্লব আর Mahabub Rahman (sobuj) রীতিমত ম্যারাথন শুরু করে দিলাম। মিনিট পাচেকের মধ্যেই কাংখিত হাজছড়া ঝর্নার ট্রেইল চোখে পড়ল আর ১০ মিনিটেই ঝর্নার নিচে। সময় অনেক কম মাত্র ৫ মিনিট হাতে আছে। ঝর্নায় গোছল করার মত কিছুই সাথে নেই নাই। কাধের ছোট গামছাটা কোন রকম কোমরে পেচিয়ে মান সম্মান ঢেকে নির্দিধায় ঝর্নার নিচে ঝাপিয়ে পড়লাম আজন্ম তৃষনা নিয়ে। অতিরিক্ত ভাললাগা গলা দিয়ে বেরিয়ে আসল জান্তব এক চিৎকার হয়ে। আমার চিতকারে আশে পাশে অনেকেই হয়ত একটু বিব্রত হয়ে তাকিয়ে ছিল। তাতে আমি থোরাই কেয়ার করি। আমাদের সেল্ফি বয় সবুজের সেল্ফি চলতে থাকে আর Muhammad Sazedul Alam Rubel ভাই যথারীতি তার DSLR নিয়ে ক্লিকবাজি করতে থাকেন। আমি বাদে আর সবাই ছিল হাজছড়া ঝর্নার দর্শক। সময় ছিল মাত্র ৫ মিনিট তাই সাধ্যের মাঝে সাধ পুরনের থিওরী মেনে ঝটপট গোছল সেরে আবারো Marathon to army escort.

সারে দশটার পর থেকে আর্মিরা চান্দের গারিগুলোকে সিরিয়াল দেয়া শুরু করল। ফেরার সময় এই সিরিয়াল নাম্বার বলতে হয় আর্মি ক্যাম্পে। অরা ট্যুরিস্ট দের সংখ্যা মিলিয়ে নেয়। আমাদের ড্রাইভার ফেরার সময় আর্মি ক্যাম্পের সামনে এসে সিরিয়াল নম্বার ভুলে গেসিল যা আমাদের মধ্যে কেউ একজন মনে করায়া দিসিল তাই কোন ঝামেলা হয় নাই। অবশ্য বলতে না পারলে কি ঝামেলা হইত এটা জানা নাই।

আর্মি এস্কর্টের যাত্রা শুরু করতে করতে প্রায় ১১ টা বেজে গেল। দুপাশে পাহাড় বন, জংগল,আকা-বাকা রাস্তা আর উচু নিচু ঢাল বেয়ে চান্দের গাড়ি চলতে থাকল। দিঘিনালা থেকে সাজেক এই ৩৫ কি:মি: রাস্তা ভয়াবহ। রাস্তা কোথাও খাড়া ৪৫ ডিগ্রি ঢালু হয়ে নেমে গেছে আবার কোথাও ৪৫ খাড়া উচু হয়ে উঠে গেছে। এর মধ্যেই আমি বিপ্লব আর সবুজ চান্দের গারির ছাদে আর গান, সেল্ফি হই হুল্লা ফাজলামি ত চলছেই। পাহারি রাস্তার ঢালে চান্দের গারি যখন আর শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে না পারে বিকট আওয়াজ করে আমাদের হেল্পার ভাইকে দেখি একটা টুকড়া কাঠের জাম হাতে প্রস্তুত হয়ে থাকে, যেন এই বুঝি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল। যদিও আল্লাহর অশেষ রহমতে পথে বড় ধরনের কোন ঝামেলা হয় নি। চান্দেত গাড়ির ছাদে কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়ে যখন মালচং বাজারে পৌছাইলাম তখন বেলা আনুমানিক ১২ টা। মেঝ ভাইয়ের আবার চায়ের নেশার উছিলায় আমরা সবাই মালচং বাজারে একটু বিরতি দিলাম। আদিবাসিরা পাহাড়ি পেপে, কলা, কমলা, সব্জির ডালা নিয়ে বসে আছে বিক্রির জন্য। মালচং বিক্রেতাই বেশি, ক্রেতা নাই বললেই চলে আমাদের মত না কেনার পাব্লিক বেশি। অদের পরিশ্রমি অসহায় মুখগুলো দেখলে খুব মায়া লাগে। ১০০ টাকায়য় একঝুরি কমলা আর ৫০ টাকায় ৩ টা বিশাল পেপে কিনলাম। চা বিরতি শেষে আবারো চান্দের গারির ছাদে।

সাজেকের পথে যেতে আদিবাসি বাচ্ছাদের হাতছানিকে আমরা অনেকেই অভ্যার্থনা ভেবে ভুল করি। আসলে ঐ অসহায় হাতছানিগুলোর মাঝে লুকিয়ে থাকে ট্যুরিস্টদের ছুরে দেয়া একটি দুটি চকলেটের ভালবাসা। সত্যিই কি নির্মম বাস্তবতা। অনেকেই হয়ত আদিবাসি বাচ্চাদের প্রতি ভালবাসা থেকেই চকলেট নিয়ে যান হয়ত এই নির্মম বাস্তবতা চিন্তা করেন না। তাদেরকে অনুরোধ করব দয়া করে গারি থেকে চকলেট ছুরে মারবেন না। কারন অনেক সময় বাচ্চারা চকলেটের জন্য রাস্তায় চলে আসে যা অনেক ঝুকিপুর্ন। আর এভাবে মাটিতে চকলেট ছুরে মারাটা অমানবিকও বটে। যদি দিতেই হয় তবে ভালবাসার চকলেগুলো ছুরে না দিয়ে হাতে হাতে দেয়াটাই শ্রেয়।

রাস্তার পাশে পাহারি ঢালে বেশ কিছু উচু উচু গাছ দেখা গেল বজ্রপাতে কয়লা হয়েও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারা গায়ে কালি মেখে। বজ্রপাত তার উচু মাথা এতটুকুও নোয়াতে পারে নাই। যেন কবিতার সেই লাইনের মর-
"জ্বলে পুরে মরে ছাড়খার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।"

একটা সময় দূর পাহারের চুরায় সাজেক রিসোর্ট দেখা যায়। বহুল কাংখিত সাজেক, গায়ে শিহরন দিয়ে ওঠে। সাজেকের গেটে গিয়ে গারি থামে অল্প সময়ের জন্য। ভাবিদের ফটোসেশান, Zahirul Islam Sumon রুবেল ভাইয়ের ক্লিকবাজি কিম্বা সবুজের সেল্ফ কোন কিছুই থথেমে থাকে না। আমি শুধু রাস্তার পাশে সবুজ ঘাসে সটান হয়ে শুয়ে পরি। আর দশ কদম পরেই সাজেক। আহ! স্বপ্নের সাজেক, স্বাজেক ভ্যালি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.