নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধেয়ে আসছে বিশ্বমহামন্দা: পরিত্রাণের উপায়- ধর্মবিশ্বাস

০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৩

ঋণ সঙ্কটে চরমভাবে বিপর্যস্ত ইউরোপের প্রতিটি দেশের অর্থনীতি। ইউরোপের দেশগুলো এত বেশি ঋণ করেছে যে সেটা আর শোধ করার ক্ষমতা তাদের নেই। শুধু তাই নয় ঋণ করে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করতে শেখানো হয়েছে জনগণকে। তাদের অভ্যস্ত করা হয়েছে ধার করে ঘি খেতে। এখন সেই ঋণের পরিমাণ এত বেশি জমা হয়েছে যে সেটা আর শোধ করার ক্ষমতা নেই তাদের। যার ফলে অনেক দেশই এখন দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেউলিয়া হয়ে গেছে আয়ারল্যান্ড। দেউলিয়ার পথে গ্রিস। ইতালি ও পতুর্গালের অর্থনীতিরও টালমাটাল অবস্থা। আসলে ইউরোপের প্রতিটি দেশই ঋণ সঙ্কটে আক্রান্ত। কিন্তু অন্যান্য দেশগুলো যাদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো তারা কোনো রকমে এই সঙ্কট মোকাবেলা করছে বা এক রকম সামাল দিতে পেরেছে। কিন্তু আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল যেমন গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, পর্তুগাল তারা রয়েছে মহাবিপদে। আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে না পারার অভিযোগে ইতালির প্রধানমন্ত্রী বার্লোসকুনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর সঙ্গে তার সরকারেরও পতন ঘটেছিল। আর্থিক সঙ্কটের কারণে এটাই সম্ভাবত প্রথম কোনো সরকার পতনের ঘটনা। এখন সরকার পতনের আন্দোলন চলছে গ্রিসে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে গ্রিস। গত ১ জুলাই শেষ হওয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় গ্রিস এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণ-খেলাপি। উন্নত বিশ্বের কোনও দেশের এমন ঋণখেলাপী হবার ঘটনা এই প্রথম। এসব দিয়ে এই সঙ্কটের তীব্রতা বোঝা যায়। এ ছাড়াও সমগ্র ইউরোপে দেউলিয়া হয়ে গেছে শত শত ব্যাংক, বীমা ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান। কারণ তারা যে ঋণ বিতরণ করেছে সেটা আর ফিরে আসেনি।


অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই সঙ্কট শুরু হলেও এখন এটা রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঋণ সঙ্কট ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অস্তিত্ব। চেষ্টা তদবির কম হচ্ছে না কিন্তু কোনোভাবেই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। পুঁজিবাদী অর্থনীতি ইতিহাসে এত বড় সঙ্কটে আর পড়েনি।


সার্বিক পরিস্থিতি বিচারে আশঙ্কা করা হচ্ছে ১৯৩০ সালের মতো বিশ্বব্যাপী আর একটা মহামন্দা আসন্ন। এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর ড. রঘুরাম রাজন। যাকে কিনা ভারতের আর্থিক ক্ষেত্রের “জেমস বন্ড” ডাকা হয়। ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দার ভবিষ্যৎ বাণীটিও কিন্তু তিনিই করেছিলেন ২০০৫ সালে লেখা তার একটা গবেষণাপত্রে। তখন তিনি কর্মরত ছিলেন আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে। তার সেদিনের ভবিষ্যৎ বাণীকে তখন কেউই পাত্তা দেয়নি কিন্তু পরবর্তীতে ড. রাজনের ধারনাই অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় এবং আমেরিকা তথা বিশ্ব অর্থনীতি এক এক করে ধসে যেতে থাকে।


সব মিলিয়ে এটা প্রায় নিশ্চিত যে একটা মহামন্দা পৃথিবীবাসীর জন্য অপেক্ষা করে আছে। আর এটাও নিশ্চিত যে আমরা যেহেতু পৃথিবী নামক এই গ্রহেরই একটি ক্ষুদ্র অংশ, বিশাল জনসংখ্যার কিন্তু ক্ষুদ্র অর্থনীতির একটি উন্নয়নশীল দেশ, কাজেই এই মন্দার রেখা আমাদেরকেও আঁচড় দেবে। এখন প্রশ্ন হলো আমরা কীভাবে এই আসন্ন মহামন্দাসহ যেকোনো অর্থনীতিক সঙ্কটকে মোকাবেলা করতে পারি?


এর জন্য আমাদেরকে আগে বুঝতে হবে সাধারণত অর্থনীতিক সঙ্কট কেন দেখা দেয়, এটা খুঁজে বের করতে পারলে এ থেকে পরিত্রাণের উপায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপে যে সঙ্কট চলছে তার কেন্দ্রে যে বিষয়টি আছে তাহলো লোভ। অতি মুনাফা, অর্থ, বিত্ত, আর ভোগবিলাসের লোভ। অতি মুনাফার জন্য ব্যাংক, বীমা আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মনীতি না মেনে সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করেছে। আর যারা ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য হারিয়েছে তারা অতি মাত্রায় ভোগ-বিলাসিতা ও বেহিসাবী অপচয়ের কারণে তা হারিয়েছে। এছাড়া অর্থনীতিক সঙ্কটের অন্যতম প্রধান কারণ হলো সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনীতি। এই ভোগবাদী, বস্তুবাদী, আত্মাহীন দাজ্জালীয় ব্যবস্থার কারণে আজ অর্থনীতিক বৈষম্য এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, একদিকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী চরম দারিদ্র্যক্লিষ্ট হয়ে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছে আর অন্যদিকে গুটিকয় মানুষ সম্পদের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে চরম ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে পিশাচের হাসি হাসছে। ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনকারীরা এটাকে বলছে ‘We are 99% & you are 1%’ এই ১% এর হাতে বিশ্বের প্রায় সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত। পৃথিবীর সম্পদ সীমিত, কাজেই এই সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন না হলে মানুষ অর্থনীতিক অবিচারের শিকার হবে। নির্দিষ্ট কিছু দেশে, নির্দিষ্ট কিছু মানুষের হাতে এই সীমিত সম্পদ যত বেশি কুক্ষিগত হতে থাকবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তত বেশি বঞ্চিত হবে ও চরম দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হতে থাকবে। আবার এই সম্পদের অপচয়ও মানুষকে চরম অভাবে পতিত করে। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজে, অস্ত্র তৈরিতে সম্পদের যে অপচয় হয়েছিল তা পরবর্তীতে অর্থনীতিক মন্দা ডেকে আনে। বর্তমানে পরাশক্তিধর দেশগুলি আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে, অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা করে যে ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ অপচয় করে যাচ্ছে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ডেকে আনার অন্যতম কারণ।


এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হলো সকল প্রকার অর্থনীতিক মন্দা থেকে রক্ষা করতে পারে আমাদের ধর্মবিশ্বাস। ধর্মবিশ্বাস আমাদের বিরাট একটি শক্তি। আমাদের সমাজ বস্তুবাদী সমাজ নয়, আমাদের সমাজ বিশ্বাসভিত্তিক সমাজ। ধর্ম থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা অর্থনীতিক এই মন্দাসহ সকল প্রকার সমস্যার সমাধান করতে পারি।


যেমন প্রতিটি ধর্মে পাশবিক ভোগ-বিলাস ও সম্পদের অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। ধর্মের এই দিকটি মানুষের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে সম্পদের অপচয় কমানো যাবে। ইসলাম ধর্মে এ বিষয়ে অনেক উপদেশ, নির্দেশনা রয়েছে। ইসলাম অপচয় ও ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকতে শিক্ষা দিয়েছে। ছোটখাটো অপচয়ের বিরুদ্ধেও রসুলাল্লাহ সতর্ক থাকতে বলেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ।” (বনি ইসরাঈল-২৭)। ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলাল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সোনা অথবা রুপার পাত্রে বা সোনা-রুপা মিশ্রিত পাত্রে পান করে, সে নিজের পেটে জাহান্নামের আগুন ঢালে (দারু কুতনি থেকে মিশকাত)। ভোগবাদী মানসিকতার প্রদর্শনী থেকে মানবসমাজকে পবিত্র রাখাই এ হাদিসের উদ্দেশ্য।


ভোগ-বিলাসিতার ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন, “আর যারা কাফের, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মতো আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম।” (মুহাম্মদ- ১২)। তিনি আরও বলেন, “আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার ভোগবিলাস অতীব নগণ্য” (তওবা- ৩৮)। সকল ধর্মেই অপচয় ও ভোগ-বিলাসিতার বিরুদ্ধে নির্দেশনা রয়েছে। ঈসা (আ.) বলেন, “তোমাদের শরীরটা বানাও ঘোড়ার মতো আর এতেই তোমাদের নিরাপত্তা। কারণ ঘোড়ার আহার খুব পরিমিত কিন্তু শ্রম অপরিমিত।” তিনি আরও বলেন, “সঞ্চয় যত বাড়ে আগ্রহ ততই বেড়ে যায়। অতএব একটি পোশাকই বিধেয় গণ্য করো, টাকার ব্যাগটি দূরে নিক্ষেপ করো, থলিয়াটা বাদ দাও, পায়ে চপ্পল নেই বলে ভাবতে বসো না- হায় আমাদের কী হবে? বরং লেগে যাও আল্লাহর ইচ্ছা পূরণের কাজে।” (বার্নাবাসের বাইবেল, অধ্যায়- ২৫)।


সনাতন ধর্মে একটি শাস্ত্রই আছে আয়ুর্বেদ। সেখানে পরিমিত খাবার গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও খাদ্য অপচয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যোগ ব্যায়াম ও ব্রহ্মচার্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘অপরিগ্রহ’। দেহরক্ষার প্রয়োজন ব্যতীত অতিরিক্ত কোন বস্তুর আরাধনায় (ভোগবিলাসিতায়) নিরত না থাকার নাম ‘অপরিগ্রহ’। শ্রীরামকৃষ্ণ পাঁকাল মাছের উদাহরন দিয়ে বলেছেন “সংসারে বাস করবে পাঁকাল মাছের মতো, গায়ে কাদা লাগবে না। সংসারের ভোগ বিলাস যেন আচ্ছন্ন না করে।”


এই বিষয়গুলি যখন মানুষ মেনে চলবে তখন খদ্য ঘাটতি অনেকাংশেই কমে যাবে। মানুষ নিজে অল্প আহার করে অন্যকে অন্ন দানের চেষ্টা করবে।


সম্পদ যত বেশি সঞ্চালিত হয় সামষ্টিক অর্থনীতি তত চাঙ্গা হয় আর সম্পদ যত বেশি পুঞ্জীভূত হবে সামষ্টিক অর্থনীতি ততই ভেঙ্গে পড়বে, বৃহত্তর জনসাধারণ বঞ্চিত হবে। বর্তমানে সম্পদকে সঞ্চালিত করার পন্থা হিসাবে সুদভিত্তিক ঋণব্যবস্থাকে গ্রহণ করা হলেও এর ফলে মূলত সম্পদ পুঞ্জীভূতই হয়। সম্পদ দ্রুত থেকে দ্রুততর সঞ্চালনের সর্বোত্তম পন্থা হলো দান। প্রতিটা ধর্মে এই দানের ব্যাপারে অত্যধিক জোর দেওয়া হয়েছে। সম্পদ পুঞ্জীভূত করকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ পাক মো’মেনের সংজ্ঞার মধ্যেই বলেছেন, “মো’মেন শুধুমাত্র তারা যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনে, পরে কোনো সন্দেহ পোষণ করে না, সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে অর্থাৎ মানুষের কল্যাণে সম্পদ ও জীবন ব্যয় করে সেই সত্যনিষ্ঠ।” (সুরা হুজরাত- ১৫)। দান করার জন্য আল্লাহ সরাসরি হুকুম দিয়েছেন (সুরা নাহল- ৯০), যার মাধ্যমে দান করা মো’মেনের জন্য ফরদ হয়ে যায়। রসুলাল্লাহ দানের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে দ্ব্যার্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, “আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান কর, আমি তোমাকে দান করব [আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বোখারী ও মুসলিম]।” হাদীসে আরও উল্লেখিত যে, হাশরের মাঠে দান মো’মেনের জন্য ছায়াস্বরূপ হবে। অন্যান্য ধর্মেও দানের ব্যাপারে অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহাভারতে বলা হয়েছে, “দানই শুদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায়। দান করলে আত্মা বিশুদ্ধ হয়ে যায়।” দানের বিষয়ে ঈসা (আ.) বলেছেন, “অর্থলিপ্সাকে দান-খয়রাতের প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা বাঞ্ছনীয়, যা অন্যায়ভাবে জমা করা হয়েছে তা ন্যায়্যভাবে বিলিয়ে দেওয়া দরকার। আর তার লক্ষ রাখা উচিত যে তার দক্ষিণ হস্ত যা দান করছে তার বাম হস্ত যেন তা টের না পায়। কারণ কপট লোকেরা চায়, দুনিয়া দেখুক ও প্রশংসা করুক যে তারা দান-খয়রাত করছে।” (বার্নাবাসের বাইবেল, অধ্যায়-১২৫)।


মানুষকে যদি ধর্ম দ্বারা উদ্বুদ্ধ করা যায় তখন অর্থ-বিত্তশালী লোকজন নিজেদের অর্থের একটা বিরাট অংশ দরিদ্র মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেবে। ফলে সামষ্টিক অর্থনীতি এমনভাবে উপচে পড়বে যে মানুষের আর অভাব থাকবে না।


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলাল্লাহ (সা.) কে এ কথা বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তৃপ্তিসহকারে পেট পুরে ভক্ষণ করে, আর তারই পার্শ্বে তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে, সে ঈমানদার নয়। (বাইহাকী)। এছাড়াও প্রতিটা মানুষের মধ্যে যদি ধর্মের এই চেতনাটি জাগ্রত করা যায় যে নিজের উদরপূর্তি করলেই হবে না, অন্যের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ই মানুষের জীবনের স্বার্থকতা তবে কোনো অর্থনীতিক মন্দাই আমাদের কিছু করতে পারবে না। একটি উদাহরণ দেওয়া যায়- ধরি একশ’ জন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ১ কেজি চাউলের ভাত খায়, এখন সঙ্কট জেনে তারা প্রত্যেকে অন্যের জন্য ২০০ গ্রাম চাউল উঠিয়ে রাখলো, এতে কিন্তু শারীরিকভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবার কথা নয়। এর ফলে প্রতি একশ’ জন মানুষের নিকট থেকে ২০ কেজি চাউল উদ্বৃত্ত হয়। এই ২০ কেজি আবার বিশ জনকে ভাগ করে দিলে তারাও ২০০ গ্রাম করে রেখে দিলে পুনরায় ৪ কেজি চাউল উদ্বৃত্ত থাকবে। এভাবে যে কোনো মন্দাই ধর্মবিশ্বাস দ্বারা মোকাবেলা করা সম্ভব। তাই আসুন ধর্মবিশ্বাসকে আর ভুল খাতে ব্যবহৃত হতে না দিয়ে দেশ জাতির উন্নয়নে ব্যবহার করি, যে কোনো সমস্যাকে রুখে দিই, ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনের কল্যাণ সাধন করি। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে গত কয়েক শতাব্দী যাবৎ বস্তুবাদী সভ্যতার প্রভাবে মানুষগুলি নিতান্তই আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর পশুতে পরিণত হয়েছে। এখন মানুষকে যদি তার ধর্মবিশ্বাস দ্বারা উদ্বুদ্ধ করা যায় তবে এই জাতীয় সঙ্কট থেকে আমরা অন্তত রেহাই পাব, ফলে অন্যরাও আমাদের দেখা-দেখি এ থেকে পত্রিাণের পথ পাবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:১৯

ভয়ংকর বিশু বলেছেন: ধর্মবিশ্বাস আইসিস, আল কায়দা আর তালেবান সমাজের বিস্তার ঘটাবে।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৫৪

বিদ্রহীসূত বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার কথা অত্যন্ত বাস্তব সম্মত। আমরা চোখের সামনে অবশ্য এটাই দেখছি। কিন্তু এবিষয়ে আমার কিছু বক্তব্য রয়েছে-
প্রকৃত অর্থে আমার দৃষ্টিতে ধর্মের সংজ্ঞা ভিন্ন। আর বর্তমানে ধর্ম মনেকরে উপাসনা ও আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব যে রীতি-নীতি পালন করা হয় তা ধর্মের বিকৃত একটি রূপ। ধর্ম যদি এই সমস্যার সমাধান দিতে নাই পারে তবে তো সেটা ধর্মই নয়। ধর্ম সম্পর্কে আমার আলাদা লেখা আছে, তার কিছু অংশ এখানে আলোচনা করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি।

ধর্ম ও ধারণ একই শব্দ থেকে এসেছে। যে গুণ বা বৈশিষ্ট ধারণ করে কোনো বস্তু তার স্বকীয়তা, নিজস্বতা পায় তাকেই ঐ বস্তুর ধর্ম বলে। যেমন একটি লৌহদণ্ড আকর্ষণ করার গুণ ধারণ করে চুম্বকে পরিণত হয়। এই আকর্ষণ করার গুণটিই হলো ঐ চুম্বকের ধর্ম। যদি কোনো কারণে চুম্বক তার ধর্ম তথা আকর্ষণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তবে সেটি পুনরায় লৌহে পরিণত হয়, সেটি আর চুম্বক থাকে না।

পানির ধর্ম হলো সে নিজে পবিত্র এবং সমস্ত কিছুকে ধৌত করে পবিত্র করে দেয়, তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা দূর করে নতুন জীবন দান করে। কিন্তু পানি যদি অপবিত্র, বিষাক্ত হয়ে যায় তবে সে অন্যকে না পবিত্র করতে পারে, না কারো তৃষ্ণা দূর করতে পারে। ধর্মহীন তথা বিষাক্ত, অপবিত্র পানি মানুষের জীবনের কারণ না হয়ে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

মানুষও একটি সাধারণ প্রাণী হিসাবে জন্মগ্রহণ করে আস্তে আস্তে মনুষ্য ধর্ম প্রাপ্ত হয়ে মানুষের স্তরে ওঠে। এই মনুষ্য ধর্ম হলো মানবতা। এক পিতার মধ্যে সন্তানের প্রতি যে ভালোবাসা থাকে তা পিতৃধর্ম, ছেলে-মেয়ের প্রতি মায়ের মমতা হলো মাতৃধর্ম, ভায়ের প্রতি ভায়ের যে প্রেম তা ভ্রাতৃধর্ম। আর মানুষের প্রতি মানুষের যে প্রেম, ভালোবাসা, মায়া, মমতা সেটি হলো মনুষ্যধর্ম। যার মধ্যে অন্য মানুষের প্রতি যত বেশি ভালোবাসা সে তত বড় ধার্মিক। সন্তান কষ্টে থাকলে মা-বাবার মনেও সুখ থাকে না, সন্তানের কষ্ট দূর করার জন্য সে আপ্রাণ চেষ্ট করে। বাবা-মা হিসাবে এটা তাদের কর্তব্য। মানুষ কষ্টে থাকলে অপর মানুষও কষ্টে থাকবে, অপরের কষ্ট দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে- এটা মানুষ হিসাবে তার কর্তব্য, এটাই তার এবাদত। এই এবাদতের জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের প্রতি ভালোবাসাই স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসা। সন্তানকে কষ্ট দিয়ে কি কখনো তার বাবা-মায়ের ভালোবাসা পাওয়া যায়? ঠিক একইভাবে আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে কষ্টে রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব নয়।

বর্তমান সকল ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা অর্থাৎ যে শিক্ষা একজন প্রাণিকে মানুষে পরিণত করবে তা বাদ দিয়ে কিছু বিকৃত আনুষ্ঠানিকতাকে ধর্ম বলে পালন করা হয়। একে আমি ধর্ম বলি না বরং অধর্ম বলি।

২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:১৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫১

বিদ্রহীসূত বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.