নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজিয়া কচড়া

রাফিদ চৌধুরী

নিতান্ত সহজ ও সরল আমার এই পৃথিবীর পথচলা

রাফিদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিরোনামহীনি অনুগল্প-৪

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:০৯

ঘড়ির কাটায় তখন রাত মাত্র সাড়ে ন'টা। কিন্তু চা বাগানের পরিবেশ তখন নিস্তব্ধ। মনে হচ্ছিল নিশীথ রাত। আমি হেটে চলেছি আপন মনে। ঠিক তখনই এলো বৃষ্টি। বৃষ্টির মাত্রাটা বেড়েছে কিন্তু ধীরে ধীরে। প্রথমে সামান্য গুড়িগুড়ি। তারপর মুষলধার। কাছে একটা ছাউনি ছিল। আমি ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। এরকম ছাউনি চা বাগানে অসংখ্য আছে। যেখানে বসে চা বাগানের টিলাবাবুরা শ্রমিকদের হাজরী নেন সেখানেই এরকম ছাউনি আছে। তবে দুই একটা যায়গা ব্যতিক্রম থাকে। ছাউনির নিচে পিলারে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। আঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। আমি তখন রবী ঠাকুরের "আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা" গলা ছেড়ে গাইতে লাগলাম।
গান গাওয়া শেষ। বৃষ্টির মাত্রা বেড়েই চলেছে। কিছুতেই থামতে চাইছে না। কতক্ষণ আর বসে থাকা যায়! তাই একটা সিগারেট ধরালাম। সিগারেট ধরিয়ে নিকোটিন এর ধোয়ায় ছাড়তে ছাড়তে হারিয়ে গেলাম শৈশবে।
আমি যে ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছি, সেটা মালনীছড়া চা বাগানের হিলুয়া ডিভিশনের ৩ নং সেক্টরের ছাউনি। চা বাগানের কয়েকটা ডিভিশন থাকে। সেই ডিভিশনগুলো আবার কয়েকটা সেক্টরে ভাগ করা হয়ে থাকে।
আমি যে ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে সেটার পাশ দিয়ে একটা রাস্তা গেছে। এই রাস্তা ধরে আমি আর লাবণ্য স্কুলে যেতাম। ওয়াহাব আলী নামে একজন লোক আমাদেরকে প্রতিদিন আনা নেয়া করতো। আমার চোখের সামনে যেন সেগুলি ভেসে উঠলো! প্রতিদিন দুই বেলা এই রাস্তায় আমাদের পায়ের চিহ্ন পড়তো। খুব উপভোগ করতাম সময়টা। একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো, আমি কিন্তু ছোটবেলায় এমন খোলে রাজা মানে সবকিছু খুলাখুলি বলতাম না। খুবই চাপা স্বভাবের ছিলাম। তবে চাপাবাজও কম ছিলাম না। কোনোকিছু জানি বা না জানি সেটা নিয়ে আমি আমার লজিক দিয়ে পাণ্ডিত্য জাহির করতামই। লাবণ্য অবশ্য লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতো। লুকিয়ে লুকিয়ে বলতে অট্টহাসি তে ফেটে না পড়া আর কি! হা হা হা হা! মাঝেমাঝে ও বিড়বিড় করে বলতো, পারে না কিচ্ছু, আবার পাণ্ডিত্য। বলেই একটা হাসি দিত। নিশ্চয়ই বাসায় ফিরে গিয়ে আমার এইসব কথা ভাবতে ভাবতে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো। তবে তিনি যে আমার এই গুণটি উপভোগ করতেন তা আমি বেশ ভালো করেই বুঝতাম। তাই প্রতিদিনই আমি নতুন নতুন গল্প বানাতাম। বলা যেতে পারে তার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিলাম আমি।
একদিনের একটা ঘটনা বলি। আমরা প্রায় সময়ই গল্প করতাম কার কোন ধরণের গান ভাল লাগে। আমার অবশ্য নচিকেতা সর্বদাই প্রিয় ছিল। কেননা বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতো সে তার গানে। আর হিন্দি গানও শুনতাম। তবে দূর থাকতাম ইংলিশ গান থেকে, কারণ ইংরেজদের উচ্চারণ গুলো আমি তখন বুঝতাম না! হা হা হা! কিন্তু ও আমায় বলেছিল যে মাইকেল জেকসনের থ্রিলার সহ আরো কয়েকটা গানের নাম যেগুলার নাম এই পেটে কিংবা মুখে কোথাও আসছে না। বিকেলবেলা সাইফুর আংকেল (যার ডাক নাম ছিলো দাড়িওয়ালা বাবু) এর বাসায় গেলাম কি একটা দরকারে। ছোটবোন পিয়া জিজ্ঞেস করলো ঠিক এই গানগুলোর কথাই যেগুলো লাবণ্য বলেছিল শুনেছি কি না। পিয়াও সেই একই কথা। এদের দুজনার আবার গলায় গলায় মিল ছিল। পিয়া যখন বলেছিল তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম আমায় নিয়া কতো কথা হতো। এই মেয়ে দুইটা যখন একসাথে হয় তখন কথা বলার যতোগুলো সাব্জেক্টই থাকুক, একটা সাব্জেক্ট থাকতো রাফিদ! হা হা হা হা!
হঠাৎ হাতে কারেন্ট এর শক লাগার মতো অনুভব হতেই লাফিয়ে উঠলাম। দেখলাম সিগারেট জ্বলতে জ্বলতে শেষ হয়ে গিয়েছে।
সিগারেট শেষ হতেই আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো, আর দেখলাম বৃষ্টিও ফুরিয়ে গেল। তাই আরেকটা সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে হনহন করে নেমে গেলাম রাস্তায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.