![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাউপ্টভানঅফ মেইন রেইল ষ্টেশনে বসে আছি; আমার গন্তব্য প্লুফেইঙ্গেন।
মাইকে ঘোষণা এলো ট্রেন আসছে। ট্রেন আসলো এস-৬...বসে পরলাম।
আহামরি কোন সাজের এসব ট্রেন না। তবে প্রযুক্তিতে সেরা। খুব সাধারণ
কিন্তু আরাম দায়ক আসন যেখানে কোন নাম্বার দেয়া নেই। তবে নাম্বার
দেয়া না থাকলে আসনে বসা নিয়ে আমাদের দেশের মত অবিশ্বাস্য
কামড়াকামড়িও নেই। এখানে টি টি এসে ভাব নেয়না...উল্টা আগে নিজের পরিচয় পত্র দেখিয়ে বিনিতভাবে বলে, ‘আপনার টিকিট দেখতে পারি?’
টিকিট না কেটে ট্রেনে উঠেছে এমন লোক কমই পাওয়া যায় তো সেদিন
একজন কে পাওয়া গেলো। যে ধরা খেয়েছে সেও
হাসি মুখে মেনে নিলো...যে ধরেছে সেও বিনিতভাবে যাত্রীর ব্যাংক কার্ড
নিয়ে তার সাথে থাকা মেশিনে ঘষে ৪০ ইউরো কেটে নিলো। ঠিক ২১
মিনিটে ঘোষণা এলো আমি আমার গন্তব্যে নেমে যেতে পারি। আমাকে নামিয়ে দিয়ে লাল রংয়ের জার্মানীর গর্ব ডয়েচে ভান
চলে গেলো তার গন্তব্যে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি...মনে পরে যায় হলুদ
অক্ষরে বি আর লেখা ইঞ্জিনওয়ালা আমার স্বপ্নের ট্রেন। কোন একবার আমাদের গণতন্ত্রের মানস কন্যা তার পিতার দেশে তের
দিনের অসহযোগ আন্দোলন দিলেন। আমাকে আমার পরিবার
নিয়ে ঢাকা যেতেই হবে। পোড়াদহ রেলষ্টেশনে আমার অসুস্থ্য মেয়ে, ভাই
আর ভাবিকে নিয়ে কাঙ্গাল হয়ে বসে আছি। রাত বারটার ট্রেন
ধরতে ষ্টেশনে এলাম রাত সাতটায়। রাত দুইটায় আপাদমস্তক মানুষ
নিয়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস আসল। এক সেকেন্ডের নাই ভরসা তাই লাগেজের দায়িত্ব আমার কাছে। অবশ্য বুদ্ধিকরে ভাইয়ের বউকে আগেই
গয়ণা খুলে ব্যাগে রাখতে বলেছি। আমার ভাই সাপের মত
আঁকাবাকা হয়ে জানালা দিয়ে ট্রেনের বগিতে ঢুকে গেলো। কি অবাক কান্ড
ভেতরের লোক বাইরের কাউকে ঢুকতে দেবেনা !!! অনেকটা কুংফু ক্যারাত
করে ট্রেনে ঢুকলাম। আমার হাটূর বয়সী এক মেয়ে তিন
সিটে পা মেলে বসে ছিলো...আমরা শত শত লোক বগির ভেতরে গরমে আলু সেধ্য হচ্চি তার কোন বিকার নেই। এসির বাতাসে উৎপাদিত সেই
মামনিকে বললাম একটু জায়গা দিতে যেন আমার মেয়েটা বসতে পারে; সেই
মেয়ে উত্তর দিলো, ‘আমার পায়ে ব্যাথা’ এরপর আশপাশ থেকে যে সকল
বাণী উড়ে আসল তাতে সেই মামনি সুবিধা করতে না পেরে একটা আসন
ফাঁকা করে দিলো। ঈশ্বরদী রেইল ষ্টেশনে পৌছালাম; পরিস্থিতি আগের
মতই। কাউকে অনুরোধ করে দরজা খোলা গেলো না। কিছুক্ষণবাদেই এলাকাবাসীর নিজস্ব ট্রেন কে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করতে মন চাইলো।
সমানে বাঁশ, লোহা দিয়ে ভেঙ্গে চুড়মার করা হলো সুন্দরবন এক্সপ্রেস কে।
আমার বাপের টাকায় কেনা সম্পত্তি আমি ভাঙ্গব...তোর কি?
আমরা এবারে মৌচাকে...হঠাৎ ট্রেন থেমে গেলো। লোক মুখে কারণ জানলাম
রাসেল বাহিনী আলটিমেটাম দিয়েছিলো সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে ট্রেন
যেন মৌচাক ক্রস করে। বেচারা ট্রেন চালক আধা ঘন্টা দেরি করে ফেলেছে। চোখের সামনে মধ্যযুগীয় কায়দায় পেটাতে পেটাতে সেই
চালককে নিয়ে যেতে দেখলাম। কিছুক্ষণ পরে বেরসিক প্রকৃতির ডাক
আমাকে পাগল করে তুলল। ট্রেনে পানি নেই। আমাদের প্রকৃতির ডাক
সেরে যদি এক বদনা পানি লাগে তো সরকারী পানি বলে আমরা প্রায় গোসল
করে বের হই...অন্যসময় কিভাবে কি করি সেটা ব্যাপার না ট্রেনে উঠলেই
পাক সাফ হবার কথা বেশি মনে পরে। আমি খাবার পানির বোতল হাতে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। কিছুদুর যেতেই দেখি লোকজন
উর্ধশ্বাসে ট্রেনেদিকের বোতল হাতে দৌড়াচ্ছে।
মুহুর্তে আমি আঠারো বছরের বালকে পরিণত হলাম...ভোঁ দৌড় ট্রেনের
দিকে...কারণ মানুষ দিয়ে বিশ্বাস নেই যদি আগুন লাগিয়ে দেয়? পর্বত সমান
উঁচু ট্রেনে উঠে ঘুমন্ত মেয়েকে টেনে তুলে বললাম, ‘তাড়াতড়ি নামো’ ।
মেয়েরা বাড়িতে আগুন লাগলে দুইটা জিনিষ জীবন বাজি রেখে নেবে...১) তার অবুঝ সন্তান ২) তার গয়না। আমার মেয়েও কম যায় কেনো? সে তার দুই মণ
ওজনের ভারী ব্যাগ নিয়ে টানাটানি শুরু করলো। আমি বললাম, ‘সব
কিনে দেবো আগে নামো’ অবস্থ্যা দেখে এক ভদ্রলোক বলল, ‘ভয় পাবেন না,
চালক কে ছেড়ে দিয়েছে তাই লোকজন ট্রেন ধরতে দৌড়াচ্ছে' হতাশায়
বসে পরলাম ট্রেনের আসনে। কিভাবে পৌছালাম বাসায় সে কাহিনী আর
বলব না। সিরাজগঞ্জে বিশাল জনসভার জন্যে বি এন পি জায়গা পেলো না। তাদের
জায়গা করতে মন চাইলো রেল লাইন পাশে। অন্ত্যন্ত বিপদজ্জনক সেই
জায়গায় সভা করার ফল এলো মারাত্বক দুর্ঘটনা। আমরা ট্রেন চালক
কে নেমে ইদুর পিটানো পিটালাম। প্রজাতন্ত্রের একজন
কর্মাচারী যে কিনা আমাদের রাজস্বের টাকা আমাদের সেবা দেয়
তাকে পশুর মত শুধু পেটামালই না...সুযোগে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া থেকে শুরু করে লুটপাট করলাম। গণতন্ত্রের আরেক বধুর পরিচালিত দল
তার স্বামীর টাকায় কেনা ঝকঝকে আন্তঃনগর ট্রেনকে আগুন
লাগিয়ে ছাইয়ে পরিণত করলেন। যারা বি এন
পি পন্থী তারা দয়া করে আবেগের কথা টানবেন না। আপনাদের সস্তা আবেগ
আমাদের আপামর মানুষকে ভোগায়। এরশাদ সাহেব একটা আন্তঃনগর ট্রেন চালু করেছিলেন অনেক আগে যার নাম
ছিলো তিতুমীর এক্সপ্রেস। অনেক সুনামের এই ট্রেন দক্ষিণ অঞ্চলের
মানুষের সেই সময় স্বপ্নের বাহন ছিলো। আমাদের যা অভ্যাস
তাহলো সরকারী গাড়ি বা ট্রেন আমার টাকায় চলে সুতরাং আমি যা বলব
তাই হবে; প্রয়োজন পরলে আমার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াবে। একটা ট্রেন
কে একটা ষ্টেশনে দাঁড়ানোর জন্যে অনুমতি দেয়া হয় সেইখানে দাঁড়ালে ট্রেনটা বাণিজ্যিকভাবে কতটা লাভবান
হবে তারজন্যে। কোন একদিন হাল্সা ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি; আধা ঘন্টা পার
হয়ে গেলেও তিতুমীর ট্রেন ষ্টেশনে বাঁশের কেল্লা স্থাপন
করে দাঁড়িয়ে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো দুইজন কলেজ ছাত্রের
দেরি হবে তাই ট্রেনের হোস পাইপ খুলে সাথে নিয়ে গেছে;
পাছে তৈরি হতে গেলে যদি ট্রেন ছেড়ে দেয়? এই ট্রেনেই একবার এক টি টি টিকেট চেক করতে যেয়ে তর্কাতর্কি করেছিলো বলে তাকে ট্রেন
থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। এই হলো আমাদের অবস্থ্যা। এক সুরঞ্জিত সেন বাবু, মৃধা বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে চলে গেছেন
বলে বগল বাজিয়ে লাভ নেই। আমরা নিজেরাও কিন্তু কম খারাপ না।
আমরা এখনো টিকেট কেটে রেলভ্রমণ করতে শিখিনাই। আমরা এখনও রেলের
সম্পদ নিজেদের ভেবে ব্যবহার করি। আমরা এখনও টিকিট
না কেটে রেলে আত্মীয় আছে বলে পার পেয়ে যাবার চেষ্টা করি। এখনও
টিকিটে উল্ল্যেখ করা আসনে না বসে অন্যের আসনে বসি এবং সেই ব্যাক্তিকে হেনস্থ্যা করি। সুযোগ পেলেই আমরা দুই
নাম্বারি করে রেলভ্রমণের সুযোগ মিস করিনা। আসলে গুপ্ত বাবুর বহুল
আলোচিত কালো বিড়ালের মাঝে কিন্তু আমরাও পরে যাই। নিজেরা পরিবর্তন
না হয়ে অযথাই চেচায় কোন লাভ নেই।
পরবর্তিতে যে আসবে সে সাবধানে চুরি করবে এটাই হবে পার্থক্য। ট্রেন আমার প্রিয় বাহন। ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতাম ট্রেন চালক
হয়ে ট্রেন চালাচ্ছি। ঘুমাতে যাবার সময় কত্ত যে পু ঝিক ঝিক করে মুখের
ছিটানো লালায় বালিশ ভিজিয়েছি তা মনে করতে পারিনা...তাই ট্রেনের
এই ঘটনাগুলা আমাকে ভীষণ ব্যাথিত করে। হয়তবা জার্মানীর এই রাজকীয়
বাহনের মতই আমার প্রিয় সুন্দরবন এক্সপ্রেস সময়মত এসে দাঁড়াবে...ঠিক
সময়ে খুলনা এসে দাঁড়ানোর আগে আমাকে বলবে, ‘প্রিয় যাত্রী মহোদয়গণ, আর কিছুক্ষণ পরেই আমরা খুলনা রেলষ্টেশনে এসে পৌছাবো...আপনারা আপনাদের
ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিন। ট্রেন সম্পুর্ন থামলে তবেই প্লাটফর্মে নামুন...!!!
©somewhere in net ltd.