![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় আকাশে উড়ার স্বপ্নকে বলা হয়েছিলো ইকারাসের কাহিনিতে, যেখানে মোমের তৈরি পাখির পাখনায় আকাশে উড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রচন্ড সূর্যের তাপ তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। তার কাহিনী থেকেই শিক্ষা হয়েছিল যে, মানুষের সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের চেষ্টা তাদের পতন ডেকে আনে প্রবাদে আছে- "পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে"। তবে এই কল্পনার মধ্যে ছিল আকাশে উড়ার বিশেষ ধরনের আকাঙ্ক্ষা, যা শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে মানব মনের গভীরে লুকিয়ে ছিল।
আকাশে উড়ার ইতিহাস টানলে রাইট ব্রাদার্স-এর কথা সবার আগে মাথায় আসে। ১৯০৩ সালে "রাইট ব্রাদার্স" উইলবার রাইট এবং আরভিল রাইট প্রথম উড়োজাহাজ অবিষ্কার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো।। "রাইট ফ্লাইয়ার" নামক তাদের বিমানটি প্রথম সফলভাবে আকাশে উড়েছিল, যা ছিল আকাশে উড়ার স্বপ্নের এক নতুন বাস্তবতা। এর আগে মানুষ চেষ্টা করেছে বিভিন্ন ধরণের প্যারাশুট, হালকা বিমানের আকারে, এমনকি গরম বায়ু ব্যবহার করে আকাশে উড়তে, কিন্তু রাইট ভাইয়ের উদ্ভাবন ছিল প্রথম সফল পদক্ষেপ।
আকাশে উঠার স্বপ্ন বহু পুরোনো। সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে প্রায় ১২০ বছরেও বেশি সময় পূর্বে। আমরা আলিফ লায়লা দেখে বড় হয়েছি। গালিচার উপর দাঁড়িয়ে হাত উপর দিকে করলেই দেখতাম গালিচা আকাশের উড়াল দিতো। তখন আমরাও গালিচার মত দেখতে কোন একটা চাদরের উপর দাঁড়িয়ে উড়ার চেষ্টা করতাম। মাইকেল জর্ডান বলেছেন…
"The sky is not the limit. It’s just the beginning."
আমরা গালিচায় দাঁড়িয়ে উড়ার স্বপ্ন দেখতাম অন্যদিকে কিছু মানুষ আকাশে উড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টায় মগ্ন ছিল—
আব্বাস ইবনে ফিরনাস আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখা প্রথম দিকের বিজ্ঞানীদের একজন। ইবনে ফিরনাস (৯ম শতক) – আন্দালুসিয়ান বিজ্ঞানী, যিনি গ্লাইডারের মতো যন্ত্র তৈরি করে আকাশে উড়েছিলেন। অবতরণটা যদিও একদম নিখুঁত হয়নি!
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (১৫শ শতক) উনাকে আমরা কম বেশি সবাই চিনি। উনি শুধু মোনালিসা কিংবা দ্য লাস্ট সাপার চিত্রকর্মের জন্যই বিখ্যাত নন, তিনি ছিলেন একজন প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, স্থপতি, গণিতজ্ঞ, দার্শনিক ও উদ্ভাবক। তার বহুমুখী প্রতিভার জন্য তাকে "সত্যিকারের রেনেসাঁ মানব" বলা হয়। দা ভিঞ্চির ডিজাইন করা Ornithopter ছিল এক ধরনের উড়ার যন্ত্র, যা পাখির মতো ডানা নাড়ানোর নকশা অনুযায়ী তৈরি হয়েছিল।
লাগারি হাসান চেলেবি (১৭শ শতক) অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম রকেটম্যান। অটোমান সাম্রাজ্যের এই বিজ্ঞানী বারুদচালিত রকেট ব্যবহার করে আকাশে উঠেছিলেন! শোনা যায়, প্যারাশুট দিয়ে তিনি নিরাপদে নেমেও এসেছিলেন।
মন্টগলফিয়ে ভ্রাতৃদ্বয় (১৮শ শতক) প্রথম গরম বায়ুর বেলুন উদ্ভাবক। ফ্রান্সের এই দুই ভাই প্রথম হট এয়ার বেলুন বানিয়ে মানুষকে আকাশে ওড়ানোর ব্যবস্থা করেন।
অটো লিলিয়েন্থাল (১৯শ শতক) – আধুনিক গ্লাইডারের জনক বলা হয় তাকে। রাইট ব্রাদার্সও তার গবেষণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
মানুষ যুগে যুগে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা করে গেছে, আর শেষ পর্যন্ত "রাইট ব্রাদার্স" সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়ে ইতিহাস গড়েছিল।
আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন আমাদের দেশেও কিছু মানুষ দেখছে অনেক আগে থেকে। ইদানিং জুলহাস মোল্লা একটি নাম খুব চর্চায় আছে। শৈশব থেকে আকাশে উড়তে চাওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে ইউটিউব দেখে দেখে শিখে, সীমিত উপকরণ ও রিসোর্স দিয়ে ৩২ ফুট লম্বা এবং ১১ ফুট উচ্চতার এক আসনের একটি বিমান তৈরি করেছেন তিনি, যা সফলভাবে আকাশে উড়েছে। অনেকে এর আলোচনা সমালোচনা করেলেও আমার কাছে ব্যপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। ১২০ বছর আগে আবিষ্কার হওয়া জিনিস নিয়ে লাফালাফির কিছু নেই হয়তো কিন্তু এই চ্যালেঞ্জটা কয়জনই নিয়েছে বা নিতে পেরেছে? আবার এভাবেও ভাবতে পারেন বাংলাদেশে নিজস্ব ব্রান্ডের বিমান আছে কয়টা? বিমান বাদ দিন বাইক/কার কোম্পানি আছে হাতে গোনা কয়েকটা! ওয়ালটন, রানার অটোমোবাইলস, রোডমাস্টার মোটরস, যমুনা অটোমোবাইলস এসব প্রতিষ্টান মোটরবাইক তৈরি করে থাকলেও খুব বেশি জনপ্রিয় নয়।
ইথিওপিয়ার অমলেশ জেফরি থেকে মানিকগঞ্জের জুলহাস মোল্লা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন বিমান তৈরির চেষ্টা ও তৈরি করা হয়েছে। এশিয়ার দেশ যেমন চীন, ভারত, পাকিস্তান, জাপান - তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমান তৈরি করছে। কিন্তু আমাদের কাছে জুলহাস সেরা।
তবে জুলহাস সফলভাবে বিমান উড়াতে পারলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে এই বিমানে। বিমানটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত দিক উন্নত করা প্রয়োজন। ইঞ্জিনের ক্ষমতা বাড়ানো, উন্নত অ্যারোডাইনামিক ডিজাইন এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হলে বিমানটি আরও কার্যকরী হতে পারে। এখন, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স জুলহাস সরকারের উদ্ভাবনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে শুধু তার প্রচেষ্টার সম্মান জানানো হয়নি, বরং এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তির প্রতি বিশ্বাসেরও নিদর্শন। এটি যদি আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং সরকারি সহায়তা পায়, তাহলে একদিন বাংলাদেশেও নিজের প্রযুক্তিতে তৈরি বিমান আকাশে উড়বে, যা বিশ্বের সামনে আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ হবে।
ধন্যবাদ জুলহাস সরকার, এই উদ্ভাবন কেবল আপনার একার নয়, আমাদের সবার গর্বের বিষয়। আপনি আমাদের সবাইকে শিখিয়ে দিয়েছেন যে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবকিছু সম্ভব! আর যারা সমালোচনা করার তারা করবে ওদের কাজ সমালোচনা করা। আপনি এগিয়ে যান...
"Pilots take no special joy in walking. Pilots like flying." — Neil Armstrong
১৩ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৫
ডি এইচ তুহিন বলেছেন: স্বপ্ন এখন ছুয়ে দেখতে পারি
২| ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৬
কামাল১৮ বলেছেন: নতুন কিছু করা দরকার।যেটা অলরেডি আকিস্কার হয়ে গেছে সেখানে শ্রম দেয়া মানে পশুশ্রম।
৩| ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: গল্প সত্যি করার গল্প