নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে বলার মত তেমন কিছুই এখনও অর্জন করতে পারি নি।

ডি এইচ তুহিন

মোঃ দেলোয়ার হোসেন তুহিন

ডি এইচ তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোপন স্রোতের গল্প(দ্বিতীয়া)

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯

মেহদি উঠে দাঁড়ায়, চারপাশে তাকিয়ে দেখে নদীর পাড়ে কেউ নেই। বাতাসে কাঁশফুল দুলছে, কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করতেই তার নিশ্বাস আটকে যায়। কোথাও কোনো শব্দ নেই! নেই নদীর ঢেউ-এর শব্দ, নেই বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ, না আছে পাখির ডাক, চারপাশে একটা বিভীষিকাময় নিস্তব্ধতা। যেন পুরো পৃথিবী এক মুহূর্তের জন্য শব্দশূন্য হয়ে গেছে।
ফোনের লাইনটা কেটে যায়, ফোনটা কান থেকে নামিয়ে পকেটে রাখতে যাওয়ার সময় স্ক্রিনে লক্ষ্য করে আবার একটু লিখা ভেসে আসে—
"তুমি কি নিশ্চিত যে একা আছো?" মেহদীর বুক ধরফর করে ওঠে। সে পাগলের মতো চারপাশে খুজতে থাকে শুভ্রাকে কিন্তু কোথাও কেউ নেই আর ঠিক তখনই, পিছন থেকে একটি ঠান্ডা হিমশীতল নিশ্বাস অনুভব করে, এই নিশ্বাস খুব পরিচিত মনে হচ্ছে ঠিক যেন শুভ্রা। ধীরে ধীরে পেছনে দিকে তাকায়ে দেখে নদীর ধারের কাশবন ঘেষে কেউ দাঁড়িয়ে আছে..
-কে ওখানে কে? এটা কি শুভ্রা?
শরীর পানির মতো বেয়ে পড়ছে, গায়ের কাপড় ভেজা, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কাঁধে লেপ্টে আছে। মুখে একটা অদ্ভুত হাসি—না এটা আনন্দ কিংবা দুঃখের হাসি নয় হয়তো শূন্যতার বা না পাওয়ার বেদনা মিশ্রিত হাসি। এমন অদ্ভুত হাসি মেহদী আগে কখনও দেখে নি সেই হাসি নিয়ে শুভ্রা বলল-
"তুমি কি জানো, মেহদি? আমি কখনো নদীর তল থেকে উঠিনি..."
মেহদীর দিকে একটি হাত এগিয়ে আসে, ধীরে ধীরে মেহদির হাতের ওপর রাখে। এই তো শুভ্রার হাত। মেহদীর মাথা এখন ঝিমঝিম করছে, শরীর নড়াতে পারছে না, চিৎকার করতে পারছে না। মেহদী অনুভব করে, শুভ্রার হাত একদম বরফের মতো ঠান্ডা… আর মনে হচ্ছে সেটা আস্তে আস্তে মেহদির হাতের মাংস হাড়ের ভেতরে ঢুকে যাবে!
মেহদী ব্যথায় কাতর হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে একটু পর সব শান্ত হয়ে যায়, মেহদী চোখ খুলে দেখে চারপাশে কিছু নেই। শুভ্রা নেই, কাশফুলগুলো আগের মতোই দুলছে, নদীর শব্দও, পাখির কিচিরমিচির ডাক সব কিছু স্বাভাবিক। কিন্তু তার হাতটা সম্পূর্ণ বরফের মত এখনও জমে গেছে, সেখানে আঙুলের ছাপ স্পষ্ট হয়ে আছে। মেহদী চিৎকার করে উঠে- শুভ্রাআআআ...
মেহদি ধপ করে বসে পড়ে। মোবাইল বের করে স্ক্রিনের দিকে তাকায়। কল লিস্টে শুভ্রার কোনো নাম নেই। যেন কিছুই হয়নি!
ডিম পোচ পছন্দ না, তবুও খেতে হচ্ছে পেটে প্রচন্ড খিদে। গতরাতে পেটে খাবার পরে নি, মনে হচ্ছে পেটের ভেতর ইদুরগুলো খিদের সহ্য করতে না পেরে নাড়িভুড়ি খেয়ে ফেলছে হাতে। এখনও হালকা ব্যথা রয়ে গেছে। হাতের দিকে গভীরভাবে তাকালে আঙুলের দাগগুলো দেখা যায় আছে।
কাল রাতের ঘটনা কি সত্যি ছিল নাকি নিছক কল্পনা মাত্র।
ঘুম হয় নি রাতে চোখ বন্ধ করলেই মনে হচ্ছিলো কেউ পাশে দাঁড়িয়ে আবার কখনো জানালার পর্দা অকারণ নড়ে ওঠে, বাতাসে হতে পারে যদিও রুমের ফ্যান বন্ধ। কখনো পানির ট্যাপ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ে, অথচ বেসিনে গিয়ে দেখে পুরোপুরি শুকনো থাকে। সে নাস্তা শেষ করে ধীরে ধীরে হাত ধুয়ে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে মোবাইল বের করে আরেকবার কল হিস্টরি চেক করে।
সেখানে এখন কোনো আননোন নাম্বার নেই! টেক্সট মেসেজগুলো নেই।
সিগারেট শেষ করে রুমে যায় নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করায়। নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে
শুভ্রার প্রতিবিম্ব তার পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছে! আর শুভ্রা ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বলছে—
"আমি তো বলেছিলাম, মেহদী আমি হারাইনি…"
প্যাকেট ভরা সিগারেট সাথে ফ্লাস্কে ভর্তি চা নিয়ে নদীর পাড়ে বসে আছে মেহদী ঠিক সেখানে যেখানে শুভ্রা গতকাল এসেছিলো। তন্ময় আসবে একটু পর। ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে নিয়ে কাপে চুমুক দেয়। সিগারেট ও চা-এর ধোঁয়া যেন দুই মিশে এক হয়ে গেছে। দূরে একটা নৌকায় কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে হয়তো নৌকা ভ্রমণ করছে। ঐ নৌকাটা চলে যাওয়ার পর নদীর পানির ওপরে কিছু একটা দুলতে দেখে মেহদী। প্রথমে মনে হচ্ছিলো কাঠের টুকরো। কিন্তু বাতাসে যখন সেটা একটু উল্টে যায় দেখে ওটা একটা স্কুল ড্রেস! সাদা-নীল রঙের সেই চেনা পোশাক, শুভ্রার স্কুল জামার মত। মেহিদী উঠে দাঁড়াতে যাবে তখনই তার মনে হলো, তার পায়ের নিচে কিছু একটা নড়ছে!
ধীরে ধীরে নিচে তাকাতেই বুকে চিনচিনিয়ে ব্যথা করে উঠে-
বালুর নিচ থেকে কারও হাত বেরিয়ে আসছে!
একটা কালচে, ফ্যাকাশে হাত, মৃত হাতের মতো আঙুলগুলো ধীরে ধীরে নড়ছে, যেন কিছু ধরতে চাইছে। মেহদী পেছনে হটতে চায়, কিন্তু তার পা যেন মাটির সঙ্গে আটকে গেছে। কানে ভেসে আসে সেই চেনা কন্ঠ—
"তুমি কি জানো, মেহদি? আমি কখনো হারাইনি…"
মেহদির চোখের বন্ধ করে রাখে। মনে হলো কেউ তার কাঁধে হাত রেখেছে। মেহদী চোখ খুলে না, হাতটা জোরে ঝাকুনি দিয়ে মেহদীকে ডাক দেয়
-কি রে বেটা চোখ মুখ বন্ধ করে রাখছোস ক্যান, মাল-মুল খাইছোস নি?
- তন্ময় বন্ধু কখন আসছিস।
- -বিরি দে বেটা, আইছি তো একটু আগে। তোরে ডাকি তুই হালা গাঞ্জুটির মত চোখ বন্ধ কইরা খারাইয়া আসছোস ক্যান?
- কিছু না, মাথা ব্যথা করছিলো, নে চা খা....

(চলবে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: শুভ্রা আর মেহেদির গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.