|  |  | 
| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
হাসান সাহেবের শরীর ঝিমঝিম করছে। তার দাদু নদীর পাড়ে বসে জাল টানছেন, মুখভর্তি সাদা দাড়ি, পরনে লুঙ্গি আর সাদা হাফহাতা গেঞ্জি। চোখেমুখে সেই পরিচিত কোমল হাসি। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? দাদু তো বহু বছর আগে মারা গেছেন! মৃত্যু মানুষগুলো সব জীবিত হয়ে উনার আসেপাশে ঘুরছে বাবা-মা,মিরাজ এখন আবার দাদু তাই এখন এসব উনি স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করলেও ভয় লাগছে। তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন—
- “দাদু...”
দাদু মাথা তুলে তাকালেন—
-“কিরে পাপ্পু? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? শরীর খারাপ নাকি?”
ওই কণ্ঠস্বর! এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, এগুলো কোন কল্পনা নয় তিনি সত্যিই ছোটবেলায় ফিরে গেছেন। হাসান সাহেব অনুভব করলেন, তার চোখ ভিজে আসছে। এই মানুষটার আদর, শাসন, গল্প... সবকিছু তো তিনি কত বছর ধরে মিস করছেন!
-"না দাদু কিছু হয় নি আমি ঠিক আছি। আমিও মাছ ধরবো, জাল মারবো।
-''ঐ দেখ কি বলে আমার ছোট পাপ্পুটা। এতো বড় জাল তুই ছোট মানুষ পারবি না। সেদিন জালসহ পানিতে পরে গিয়েছিলি মনে নেই? আমি জাল মারছি তুই জাল থেকে মাছ বের করে দিস ঠিক আছে?''
-''আচ্ছা''
মিরাজ তখন নদীর ধারে বসে মাছ ধরার আনন্দে ব্যস্ত। হাসান সাহেব হাঁটু গেড়ে বসে ধীরে ধীরে দাদুর জালের দিকে হাত বাড়ালেন। স্পর্শ করলেন—জালটা আসল! দাদুর হাতে কাটা দাগটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! এই দাগটা সাইকেল থেকে পরে হয়েছিল।
হাসান সাহেব চমকে গেলেন। দূর থেকে ভেসে আসছে একটা শব্দ মনে হচ্ছে কেউ একজন তার নাম ধরে ডাকছে? কিন্তু কে? তিনি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। আশেপাশে তাকালেন, কাউকে দেখতে পেলেন না। কয়েক সেকেন্ড পর আবারও ডাক শোনা গেল—
-“হাসান… হাসান…”
এই ডাকটা অচেনা, এই সময়ের সবাই তো পরিচিত অথচ এই ডাক অপরিচিত। ডাকটা আসছে পুরোনো বট গাছের পেছন থেকে৷ ঐ যে দূরে আসমানের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড় বটগাছটা। দেখতে কি সুন্দর লাগছে এখানে রবিঠাকুর বা জীবনানন্দ থাকলে নিশ্চিত কবিতা লিখে ফেলতো। হাসান সাহেব ধীরে ধীরে বটগাছের দিকে এগিয়ে গেলেন। চারপাশটা যেন হঠাৎ অস্বাভাবিক নীরব হয়ে গেছে। বাতাস থেমে গেছে, গাছের পাতাগুলো নড়ছে না, এমনকি নদীর ঢেউয়েরও কোনো শব্দ নেই। হঠাৎ করেই একটা ঠান্ডা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে শরীরজুড়ে।
"হাসান... হাসান..."
ডাকটা এবার আরও স্পষ্ট।
তিনি গলার কাছে একটা ভারী চাপ অনুভব করলেন। গাছের নিচে পৌঁছানোর আগেই, এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল, আর তখনই একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেলেন—
একটি পুরোনো, ধুলো ধরা বাড়ি! বাড়িটা তিনি চেনেন না, কিন্তু কোথাও যেন এই জায়গাটা আগে দেখেছেন বলে মনে হচ্ছে। তার মনে পড়ল—এই বাড়িটা তো সেই ভৌতিক বাড়ি! যেখানে একবার তিনি আর তার কয়েকজন বন্ধু গিয়েছিলেন এক অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়! ভৌতিক অভিজ্ঞতা ছিল সেই রাতে।
বছর কয়েক আগে, এক রাতে তিনি, শাহ-এমরান আর আরও দুই বন্ধু এক পুরোনো জমিদারবাড়িতে গিয়েছিলেন। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, ওখানে আত্মারা ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু তারা ভেবেছিল, সবই গুজব। বাড়ির ভেতরে ঢুকে প্রথমে কিছুই হয়নি। ধুলো জমে থাকা অন্ধকার ঘর, ছাদের ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই অদ্ভুত কিছু শুরু হলো—
সিঁড়ির পাশে একটা কাঠের বাক্স দেখা যাচ্ছে। হাসান সাহেব সিঁড়ির পাসের সেই বাক্সের দিকে এগিয়ে গেলেন। বাক্সের ভেতর কি আছে দেখার জন্য হাত বাড়ালেন। কাঠের বাক্সের ওপর হাত পড়তেই কোথাও থেকে ফিসফিস করে কেউ বলল, "তোমরা চলে যাও... এখনই..."
সবাই থমকে গেল।
শাহ-এমরান হেসে বলল, "ভূত-টুত কিছু না, বোধহয় বাতাসে আওয়াজ হয়েছে।"
কিন্তু তখনই একসঙ্গে সব দরজা-জানালা বিকট শব্দে বন্ধ হয়ে গেল! বাতাস বইতে শুরু করল, অথচ চারপাশে কোনো জানালা খোলাই ছিল না!
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটল পরের মুহূর্তে—
অন্ধকারের মধ্যে একজন লম্বা ছায়ামূর্তি দেখা গেল, যার চোখদুটো লালচে জ্বলজ্বল করছিল।
বট গাছের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হাসান সাহেবের এককের পর এক সব দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে, সেদিন ভয় পেয়ে সবাই পালিয়েছিল। আর কখনও সেদিকে যাওয়া হয় নি। উনার কানে আবার ভেসে আসলো কেউ একজন ডাকছে গাছের পেছন দিক থেকে—
''হাসান... হাসান..."
হঠাৎ একটা শীতল হাত তার কাঁধে এসে পড়ল!
তিনি আতঙ্কে পেছন ফিরতেই দেখলেন—একটা বিকৃত মুখ, গভীর ফাঁকা চোখ গর্তের মতো কালো, চওড়া হাসি তার দিকে তাকিয়ে আছে! হাতে সেই বাক্স যেই বাক্স তিনি পুরোনো বাড়িটাতে দেখেছিলেন। চোখ বড় বড় করে সেই লোকটা হাসান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো—
"তুমি সময়ের ফাঁদে আটকে পড়েছ। তুমি এখান থেকে কখনই যেতে পারবে না..."
তারপর একটা বিকট চিৎকারের সঙ্গে তার চারপাশ ঘুরতে লাগল! শরীরটা হালকা হয়ে আসতে লাগল, মাথার মধ্যে যেন এক প্রচণ্ড ধাক্কা লাগল! চোখে অন্ধকার দেখছে এই বুঝি তিনি মৃত্যুর দুয়ারে চলে যাবেন। সব কিছু ঝাপ্সা হয়ে গেল, সব অন্ধকার…
হাসান সাহেব চোখ খুললেন। তিনি বিছানায় পড়ে আছেন। মাথার ভেতর প্রচণ্ড ব্যথা, শরীর এখনও দুর্বল, জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছেন, খুব ঘাম দিচ্ছে শরিরে, বুক ধড়ফড় করছে। তিনি চারপাশে তাকালেন—এটা তার ফ্ল্যাটের শোবার ঘর! ঘরের ফ্যান ঘুরছে, জানালা দিয়ে দিনের আলো আসছে। পাসে শুয়ে আছে শাহ-এমরান। রাতে মদ খেয়ে সে আর বাসায় যায় নি এখানেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। তিনি উঠে বসলেন। সবকিছুই স্বাভাবিক!
"এটা শুধুই একটা স্বপ্ন ছিল"
কিন্তু ঠিক তখনই তার চোখ পড়ল বিছানার পাশে রাখা কাঠের বাক্সের ওপর! এ টা তো সেই পুরোনো বাক্স! যেটা তিনি জমিদারবাড়িতে দেখেছিলো এবং একটু আগে সপ্নে সেই অদ্ভুত লোকটার হাতে দেখেছিলো,ঠিক তখনই কানের কাছে কেউ একজন ফিসফিস করে বলে উঠলো-
"তুমি এই জাল থেকে কখনই বের হতে পারবে না...’’
---------------------------------------এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি-------------------
 ৭ টি
    	৭ টি    	 +১/-০
    	+১/-০  ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  দুপুর ২:৩২
০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  দুপুর ২:৩২
ডি এইচ তুহিন বলেছেন: ভয় কেন আপু?
২|  ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  সকাল ৯:২৫
০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  সকাল ৯:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প।
  ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  দুপুর ২:৩৩
০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  দুপুর ২:৩৩
ডি এইচ তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া ,ভালোবাসা
৩|  ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  দুপুর ২:৪৮
০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  দুপুর ২:৪৮
লোকমানুষ বলেছেন: দারুণ হচ্ছে!!
এক টানা তিনটা পর্বই পড়ে নিলাম। 
গল্পটার কি এখানেই সমাপ্তি? না, নতুন কোন মোড় নিয়ে সামনে এগুবে??
  ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  বিকাল ৩:০১
০৩ রা আগস্ট, ২০২৫  বিকাল ৩:০১
ডি এইচ তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, সময় নিয়ে পড়ার জন্য। নতুন মোড় নিয়ে আবার আসতে পারে ভাইয়া
৪|  ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫  সকাল ১১:১৪
০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫  সকাল ১১:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা আগস্ট, ২০২৫  সন্ধ্যা  ৭:২৩
০২ রা আগস্ট, ২০২৫  সন্ধ্যা  ৭:২৩
শায়মা বলেছেন: বাপরে!!!
সময়ের জাল শুনলেই ভয় লাগে ....