নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তা করো বেশি, বলো অল্প, লিখো তারচেয়ে কম।

অাসিফ কবির

Journalist.

অাসিফ কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান বনাম সামাজিক প্রতিদান

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৯

“উন্নয়নের পথে র্দূবার এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এটা এখন আর স্বপ্ন কিংবা কল্পনা নয়, বাস্তবতা। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় অর্থনীতিকে সর্বাধিক সহায়তা করছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্স। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি প্রবাসী বিশ্বের প্রায় ১৬০ টিরও অধিক দেশে কর্মরত আছেন। আর এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদশে ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৩১,৩৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশী। রিজার্ভের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আমাদের অর্থনীতিতে প্রবাসী-আয়ের অবদান মোট জিডিপির প্রায় ১১ শতাংশের মতো। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে চীনের স্থান দখল করবে বলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। প্রবাসী এসব শ্রমিক যে পরমিাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছেন, তা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় অর্ধেক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমাদের মোট বার্ষিক রেমিটেন্স এক হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারের ৬৩ শতাংশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আমাদের মোট বার্ষিক রেমিটেন্স এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার এসেছে। অবশ্য ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরের জুন পর্যন্ত এই পরিমাণ কমে হয়েছে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। গত ৬ বছরে এশিয়ার অন্যান্য দেশে রেমিটেন্সের পরিমাণ গড়ে যেখানে ছিল ৭.১ শতাংশ, সেখানে বাংলাদশে ছিল প্রায় ১১ শতাংশ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শীর্ষ ১০টি রেমিটেন্স অর্জণকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ১৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিদেশ থেকে রেমিটেন্স বাবদ পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। রেমিটেন্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে বিশাল বৃদ্ধি ঘটিয়ে প্রায় ৩১,৩৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছে, যা দেশের নয় মাসেরও বেশি আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে, ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে অনেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির প্রধান দু’টি ভিত্তি হচ্ছে গার্মেন্টস এবং প্রবাসী রেমিটেন্স। এই দুটি শক্তিশালী ভিত্তিকে পুঁজি করে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি “বাংলাদেশ”। বিগত কয়েক দশকে আমরা দেখেছি গার্মেন্টস সেক্টরের অবিস্মরণীয় সাফল্যের ফলে বাংলাদেশ মন্দা অর্থনীতি থেকে কিছুটা স্বাচ্ছ্যন্দের অর্থনীতির যুগে প্রবেশ করে। এর জন্য গার্মেন্টস সেক্টরের কল্যাণে সরকার বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে যা বর্তমান গার্মেন্টস ক্ষেত্রকে আরো সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করছে। যেভাবে গার্মেন্টস খাত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে ঠিক একইভাবে গত পাঁচ-দশ বছর ধরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দিন দিন অর্থনীতির চাকাকে আরো অধিকতর শক্তিশালী করছে। অথচ গার্মেন্টস খাতের মত প্রবাসীদের মূল্যায়ন করছে না সরকার। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রবাসীরা অর্থনীতিতে এত অবদান রাখার পরও তাঁরা আশানুরূপ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। বিভিন্নক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। যেখানে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য সরকার গার্মেন্টস খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, সেই সাথে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে, সেই তুলনায় প্রবাসীদের নিয়ে আজ অবধি কোন সরকারই সেভাবে কিছুই করেনি। প্রবাসীরা কোন অর্থ চায় না, তাঁরা সরকারের সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত, সহযোগিতা, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতা চায়, যাতে করে যে কোন সমস্যায় তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান পেতে পারে।752065994 বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু জাতীয় আয় প্রায় ১৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েেছ। জাতীয় আয়ের এ উন্নয়নে প্রবাসীদের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। আমাদের দেশের প্রবাসী-আয় বৃদ্ধি এবং তার কার্যকর বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যেমন, যেসব অদক্ষ শ্রমিক বৈধ-অবৈধ যেকোন উপায়ে বিদেশে পাড়ি দিতে মরিয়া, তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধা-দক্ষ করে বিদেশে পাঠাতে পারলে তাদের সম্মানজনক মজুরি পাওয়ার সুযোগ হয়, যা অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা অনায়াসে ভোগ করে থাকেন। আবার প্রবাসীদের পোষ্য বা সন্তানদের মানসম্মত শিক্ষার জন্য যদি জনশক্তি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক যৌথভাবে কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তাহলে প্রবাসী-আয়ের অর্থ সরাসরি মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে। এ ধরণের আরো বহু উদ্ভাবনী প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ রয়েছে এই খাতের সার্বিক উন্নয়নে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কে বা কারা নেবে এই দায়িত্ব?

নিজেদের ভোগ-বিলাস বির্সজন দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে প্রিয়জন তথা দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে এই প্রবাসীরা। কিন্তু দিশে ফিরে এসে এর কী প্রতিদান পাচ্ছে তাঁরা? বিমানবন্দর থেকেই শুরু হয় নানান ধরণের হয়রানি, যা সর্বত্র ভোগ করতে হয়। দেশের সুন্দর ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির কথা ভেবে সরকারের উচিত প্রবাসীদের জন্য এমন নীতিমালা প্রণয়ন করা, যে নীতিমালার ফলে প্রবাসীরা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে এবং দেশের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরিতে সর্বাধিক ভূমিকা পালন করতে পারবে। অন্যথায়, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা ফেরত এসে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে, যা কখনোই রাষ্ট্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে না।

সর্বশেষ বলা যায় যে, আমাদের দেশে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের পরিমাণ বাড়ছে, এরই সাথে বাড়ছে রেমিটেন্সের পরিমাণ। রেমিটেন্স আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে, তাই দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য রেমিটেন্সের টাকা শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় বা গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে। আর এ ব্যাপারে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.