নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাড্ডি খিজিরের মত ঠোঁটকাটা হইতে চাই শেষমেশ ওসমান অরফে রঞ্জু হয়াই দিন কাটে। রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছা কী আছিলো সেইটা অনুভব করার খুব শখ আছিলো, জীবনদা তো আর নাই। তার কথা মনে হইলেই শোভনার ব্যর্থ প্রেমিক, লাবণ্যের ব্যার্থ স্বামী মনে হয়।

রেজাউল করিম সাগর

একজন লক্ষ্যহীন পথিক, পথে নেমেই পথকে চিনি - লক্ষ্যকেও।

রেজাউল করিম সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

" একজন দ্বিজেন শর্মা,স্মৃতিচারণ ও কিছু নিসর্গ স্বপ্ন "

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১৬



দ্বিজেন স্যারের সাথে একটি দিন লালবাগ কেল্লায় কাটানোর সুযোগ হয়েছিলো আমার। তখনআমি ফার্স্ট ইয়ারে,তরুপল্লবের প্রোগ্রামগুলোতে তখনও যেতাম (কিংবা যাওয়ার সময় পেতাম) স্যার প্রত্নতত্ত বিভাগের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন কেল্লার ভেতরে বাগান পরিকল্পনার জন্য।
তরুপল্লবের কাজে আমিও গিয়েছিলাম ওখানে। মোকারম ভাই (মোকারম হোসেন) ছিলেন সাথে। তাঁর মাধ্যমেই যাওয়া । গাছ দেখা,গাছ নিয়ে গল্প করা,লালবাগের পরিচালকের অফিসে লাঞ্চ করতে করতে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে আলোচনা করে কেটেছিলো দিনটা। গাছ,প্রকৃতি নিয়ে কথা বলতে গেলেই তার মত একজন অশিতীপর বৃদ্ধের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছিলো সেদিন। কোথায় কি গাছ লাগাতে হবে,কেন,কোন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম কী,বাংলাদেশে এর কী কী জাত পাওয়া যায়,চেনা যায় কীভাবে ... গল্পের যেন শেষ নেই। জীবনের শেষ আছে। আসলেই কি আছে! কেন জানি বিশ্বাস হয়না,মৃত্যুর পর কিছু নেই ভাবলেই তো পরকালের জীবনকে আকড়ে ধরে মানুষ।

(২)
দ্বিজেন স্যারের সাথে প্রথম সরাসরি দেখা উনার জন্মদিনের উৎসবে ২০১৫ সালে, সুফিযা কামাল গ্রন্থাগারের সামনে। ছবিও তুলেছিলাম একটা। তারপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্যারের সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় যাই তরুপল্লবের কাজে। তখন তিনি অনেক বেশি অসুস্থ্য ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর সাথেও দেখা হয়। সাজানো-গোছানো একটা ছিমছাম ফ্ল্যাটবাড়ি। দুজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একাই থাকেন তারা। বিছানার পাশেই লেখার টেবিল,দেয়ালের পাশে আলমারিভর্তি বই। তাড়া ছিলো বলে চলে আসি ।
তারপর আবার দেখা হয়েছিলো সম্ভবত বায়োলজি অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ডারউইনের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে।
তারপর আর দেখা হয়নি। ওই শেষ দেখা। দুই-তিনদিন আগে এক বান্ধবী বললো দ্বিজেন স্যার নাকি অসুস্থ্য,রক্তের জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছে টিভিতে। তারপর মৃত্যুসংবাদ শুনলাম।

(৩)
ছোটবেলায় বড়-ছোট সবারই বাংলা বইয়ের গল্পগুলো পড়ে ফেলতাম নেশার মত। একদিন ক্লাস এইটে পড়া ছোট ভাই সৌরভের বাংলা বইটা নিয়ে একটা স্মৃতিচারণমূলক লেখা দেখলাম ' গাছের সঙ্গে জীবন ' নামে,লেখক দ্বিজেন শর্মা। পড়ার পর আরো অনেকবার পড়েছি ৩ পৃষ্ঠাব্যাপি ছড়ানো সেই গাছ-প্রকৃতির সুন্দর বর্ণনা।
এখানে 'ক্যারোফাইটা' খুঁজে বেড়ানোর বর্ণনা,বুনো ম্যাগনোলিয়া,দুলিচাপাকে খুঁজে বেড়ানোর ভিতর খুব গভীর একটি হাহাকার আমাকে তাড়িয়ে ফিরেছে অনেকদিন।স্যার এখানে বলেছিলেন " আমি হয়তো ক্যারোফাইটার নতুন কোন প্রজাতি খুঁজে পাইনি,কিন্তু ভবিষ্যতে হয়তো কেউ পাবে"। আমি সেই 'হয়তো কেউ' হতে চাইতাম । দুলিচাপা চিনতাম না,কিন্তু থোকায় থোকায় সাদা ফুল ফোটা কোন একটি বুনো ফুল দেখলেই মনে হত ,'এইটাই কি দুলিচাপা?'
আরেকটা নেশা ছিলো গাছপালা। ঝোপঝাড়ে,নদীর পাড়ে ঘোরে ঘোরে শৈশব-কৈশোর কেটেছে,গ্রামে জন্ম হয়েছে সেই সুবাদে গাছের প্রতি আদিম মানুষের মতই একটা ভালোলাগা ছিলো। সেই ইচ্ছা থেকেই ভাবলাম এই বিষয়েই পড়বো। স্যারের প্রবন্ধটা সেই ইচ্ছের আগুনে ঘি ঢেলেছিলো।

(৪)
বাসার পাশে এক টুকরো জমি ছিলো ৩ শতাংশ মত হবে। কুমিল্লার একজন লোক কিনেছিলেন,আমরা আঙ্কেল ডাকি। জায়গাটা অব্যবহৃত হয়ে পরে ছিলো,তাই আমি আর আম্মু মিলে প্রথমবার পাট শাক লাগিয়েছিলাম। একপাশে অনেকগুলো অর্জুনের চারাও করি। অর্জুনের বীজ থেকে যখন কচি চারা বের হয় সেই দৃশ্যটা আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর অঙ্কুরোদগম।
৩০-৪০টা চারা হয় তখন,অবশ্য এখনমাত্র ৫টা গাছ আছে। এগুলো এখন মাঝারি বৃক্ষ।
স্যারের "গাছের সঙ্গে জীবন" পড়ে পড়ে আমিও ভাবতাম নতুন কোন প্রজাতি বের করে ফেলতে তো আমিও পারি!
তখন ঝোপঝাড়ে ঘোরাফেরা বেড়েই যেতো।
এই জমির চারিদিকে বিভিন্ন বুনো,অপ্রয়োজনীয় গাছ লাগিয়ে ভরে ফেলেছিলাম ,মাঝখানে লাগাতাম সবজি। লালশাক,ডাটা,শীম,লাউ,মুলা,ফুলকপি,বাধাকপি,শালগম,গাজর,পুইশাক,রাই,মরিচ,টমেটো,বেগুন,ঢেড়শ.... সবগুলো অবশ্য ভালো হয়নি। কিছু কিছু হত। কয়েকটা তো শুধু গাছটা কেমন সেটা চেনার জন্যই লাগিয়েছি। গাজর গাছটা খুব সুন্দর!

এক্ষেত্রে আম্মা আমার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। আমার পরিবারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ,কেননা আমার ভালোলাগাগুলোকে তারাও সমান মর্যাদা দিয়ে দেখেছেন। নিজের লক্ষ্য নিজের মতই বাছাই করার সুযোগ আমি পেয়েছি। গাছ এবং বই এই দুটোর প্রতিই আম্মার প্রচন্ড আগ্রহ দেখতাম ছোটবেলা থেকেই। আমার মধ্যে সেই আগ্রহ আসাটা হয়তো স্বাভাবিকই ছিলো। নতুন কোন বই বা গাছ নিয়ে আম্মার সাথেই আলোচনা করতাম। আম্মার কাছে কাঁঠালচাপার গল্প শুনেই একে দেখার জন্য পাগল হয়েছিলাম। এখও শুনি অনেক অনেক গল্প,গাছের গল্প,গুইসাপ,পাখিদের গল্প!

(৫)
তারপর কলেজে ভর্তি হই,ক্লাস-প্রাইভেটের ফাকে ফাকে পাবলিক লাইব্রেরীতে যাই। সেখানে দ্বিজেন স্যারের তিনটার মত বই পড়ি। সবচেয়ে ভালো লাগে ' ডারউইন - বিগল যাত্রীর ভ্রমণকথা' তারপর ' হিমালয়ের উদ্ভিদরাজ্যে স্যার জোসেফ ডাল্টন হুকার'। গাছ ও প্রকৃতি নিয়ে স্বপ্নের পরিধি বাড়তেই থাকে।
তারপর ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে।
কি বলবো! স্বপ্নপূরণ! এখন মনে হচ্ছেনা তেমন। প্রিয় বিভাগটাকে এখন আর ভালো লাগছেনা তেমন। মনে হচ্ছে পছন্দের জিনিসকে বাধ্যতামূলক করে ফেলতে নেই। তাহলে পছন্দ মরে যায়।
এখন আগের মত গাছের চেনার প্রতি কোন আগ্রহ বোধ করিনা।
যে শিক্ষা আগ্রহকে মেরে ফেলে তাকে আমি ঘেন্না করি। (বিভাগের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি)
যারা স্বপ্ন দেখায় তারা সম্মান,টাকা পয়সা পায়না এদেশে,যারা হতাশ করে দিতে পারে প্রতিনিয়ত তারাই অর্থ-বিত্তশালী!
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞা নিয়ে আবারো বেশ ভালোমত ভেবে দেখা উচিত আমাদের।

নিসর্গী দ্বিজেন শর্মা,তোমার মৃত্যুতে নিসর্গ কেমন
বেদনা বিহ্বল হয়েছে একবার এসে দেখে যাও!
নষ্টদের সময়ে একজন বিশুদ্ধ মানুষের মৃত্যু
বড় বেশি শূন্য করে দিয়ে যায়!

রেজাউল করিম সাগর
উদ্ভিদবিজ্ঞান ৩য় বর্ষ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.