নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাড্ডি খিজিরের মত ঠোঁটকাটা হইতে চাই শেষমেশ ওসমান অরফে রঞ্জু হয়াই দিন কাটে। রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছা কী আছিলো সেইটা অনুভব করার খুব শখ আছিলো, জীবনদা তো আর নাই। তার কথা মনে হইলেই শোভনার ব্যর্থ প্রেমিক, লাবণ্যের ব্যার্থ স্বামী মনে হয়।

রেজাউল করিম সাগর

একজন লক্ষ্যহীন পথিক, পথে নেমেই পথকে চিনি - লক্ষ্যকেও।

রেজাউল করিম সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতার সঙ্গে জীবনযাপন

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:২০

আমার মনের ভেতর একটি ঘর বেঁধেছি যেখানে আমার ও কবিতার সংসারে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল কবিকে স্থান দিতে চাই।
কিন্তু নিতান্ত কম সঞ্চয় নিয়ে চলেছি্। অল্প অল্প পাথেয় জমাই ।
কবিতা ভালো লাগে বলেই বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও কবিতা নামের পরনারীর সাথে একপেশে প্রেম করে যাই। জানিনা কবিতা আমায় ভালোবাসবে কি-না। মহাকালই ভালো বলতে পারবে।
এখানে আমার লেখা ১০ টি কবিতা আছে, এখন এগুলো পড়ে আপনারাই বলুন কবিতা আমায় আদৌ ভালোবাসবে কি-না!






১। " সোডিয়াম বাতি নিবেদিত "


আমি জগতের প্রত্যেক সোডিয়াম বাতিতে বাঁচি;
উর্ধ্বমুখে তাকিয়ে গাছ হয়ে সোডিয়াম আলোয়
ঠায় দাড়িয়ে থাকি,
এই আলোতেই সিন্থেসিস করি আনন্দ-বিষাদ,
ভালোবাসা ও প্রাণের নির্যাস।

হা করে ক্রমাগত গিলতে থাকি সোডিয়ামের হলদে মধ্যরশ্মি ,
ওষ্ঠভরে পান করি সোডিয়াম অমৃত।

তুমি এই জগতে এমন কোনো
সোডিয়ামধারী ল্যাম্পপোস্ট কিংবা ফোটন কণা পাবেনা
-যেখানে আমি নেই।
ফুলার রোডের আশ্চর্য রোমান্টিক হলুদ সুবাতাসে,
শহরের প্রতিটি রাজপথে। বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে গিয়ে ,
একা একা কাটানো নিঃস্বঙ্গ সন্ধ্যা এবং
মধ্যরাত্রির একদল পাগলাটে তরুণের
গানের সুরে গলা ভিজিয়ে সোডিয়াম অমৃতপানের মুহূর্তগুলো
আঁকা থাকবে আমার এপিটাফে ।

মৃত্যুর সহস্র বছর কেটে গেলে
যাবে,তবুও আমার ফসিলে
নিরন্তর চলতে থাকবে,
সোডিয়াম আলোয় অনুভূতি সিন্থেসিস ।

এমনকি আমার ফসিলভুক কীটের মাঝেও
জোনাকি পোকার মত জ্বলজ্বল করবে আমার ভালোবাসার
অপার্থিব সোডিয়াম রাত্রি ও সন্ধ্যাগুলো।।

ভালো থেকো নিঃসঙ্গতার সোডিয়াম সন্ধ্যা,
ভালো রাখার, সঙ্গী হবার দিন ফুরিয়েছে
রাতের জমজমাট আড্ডাদের ম্লান করে
চলে যাও ,হারাও প্রয়োজনের গভীরে
তোমার ফসিল হয়ে বেঁচে থাক-মায়াবী অনুভূতিগুলো।
যারা একদিন বাঁচতে শেখাতো , বাঁচার মত করে ,
কোমল স্পর্শে হৃদয়ে জাগাতো ভবঘুরে নেশা।।
২৮-০৬-১৬ইং
ঢাকা।



২।
" প্রিয়ংবদা কবিতারা,,,,"


ঐ পূর্ণিমা রাতের তন্দ্রাচ্ছন্ন আকাশ বলেছিলো,
"মেঘবালিকার জন্য প্রতীক্ষায় আছি!"
চাঁদের দিকে চেয়ে প্রণয়ানত সাগর ও নদী
গেয়ে চলেছে সুমধুর প্রেমগীতি;
সমুদ্র নদীর কানে কানে বলে," তোমার ভালোবাসাই আমার মহীমা ।"
ওরা পরস্পর আলীঙ্গনাবদ্ধ হয় ,
মোহনাতে মিলিত হয় দুজনে।
ফুলে বসে তৃষ্ণার্ত ভ্রমর মধুপানে প্রশান্তি পায়,
ফুলের পরাগ মেখে গায়ে ভালোলাগার চাদর জড়ায়;
ভালোবাসাহীন পৃথিবীতে বাঁচেনা কেউ ।

প্রিয়তমা কবিতা, তোমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো
আমার কাছে স্বর্গীয়, অপার্থিব।

স্বপ্ন ও চিন্তাগুলোগুলো বর্ণের আকৃতি নিয়ে
লাফিয়ে নামে আমার খাতায়,
ধীরে ধীরে জন্ম নাও তুমি প্রিয়তমা - কবিতা,
আর চোখের সামনে ক্রমে ক্রমে উন্মোচিত হয় পুরো বিশ্বব্রহ্মান্ড।

আমিও অন্য সবার মতই -
শহুরে যান্ত্রিকতায় মানুষের মাঝে হারিয়ে যেতে থাকি,
বাতাসের অভাবে ভুগতে থাকি দমবদ্ধতায়,
আলোয় ভরা পৃথিবীও চোখে আলোহীন হয়ে যায়।

অথচ তোমার জন্মমুহূর্তে-
শহুরে মানবজটে থেকেই পাই অন্যমনষ্ক নির্জনতা,
এই নাগরিক ভীড়বাট্টা ছেড়ে হারিয়ে যাই বহুদূরে,
চুলগুলো আশ্চর্য স্বর্গীয় কোমল বাতাসে উড়তে থাকে,
পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে উদাসীনতা জমতে জমতে উদাসীন
বালুবেলা গড়ে তোলে ; প্রচন্ড অন্ধকারে চোখের ভেতরে
জ্বলতে থাকে নক্ষত্র-আলোক!
তোমার ভালোবাসার সুতীব্র অনুভূতি এসে মনটাকে ছেয়ে দেয় ,
তখন অন্য সব কিছুর প্রতি অনুভূতিহীন অনুভূতিতে
-হৃদয়ে স্থবিরতা আসে ।

তোমার প্রতি আমার প্রেমটুকু জমিয়ে রাখছি ভালোবাসার ব্যাংকে,
ভবিষ্যত ভালোবাসাহীন পৃথিবীকে ভালোবাসাময় করে দিতে-
এই প্রেমটুকুই যথেষ্ট হবে।
।।৩১-০৭-১৬ইং
শহীদুল্লাহ হল,ঢাবি।।




৩।
"অপ্রকাশিত দেয়ালিকা"


পলেস্তারার আচ্ছাদন খোলে ক্রমশ বিবস্ত্র হয়ে যাচ্ছে,
শহুরে রাস্তার অজস্র শোকার্ত দেয়াল;
ইট খসে গিয়ে এখানে ওখানে গর্ত হয়ে যায়,
গর্তগুলোতে দাঁত বের করে হাসে জটাধারী উদ্বাস্তু অশত্থ বট।
এরা দেয়ালের ভেতর শেকড় ছড়িয়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলে,
মাঝে মাঝে ফার্ন-লাইকেনের সাথে যুদ্ধ বাধে,
ওরা সন্ধিচুক্তিও করে কখনো
এভাবেই এক একটি দেয়ালের গায়ে সাম্রাজ্য বসায় এপিফাইটরা।

বিদ্ধস্ত দেয়ালের অক্ষত কিছু জায়গায় লেখা রয়েছে
অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু নাম,
গানের কয়েকটি লাইন,
রাজপথের গনগনে স্লোগান,
ইটের সুরকি কিংবা কয়লা দিয়ে আঁকা
কারো অস্পষ্ট প্রিয়মুখ;
ওগুলোও পলেস্তারার সাথে খসে পড়ে।
গায়ে জড়ানো স্মৃতিময় পলেস্তারা খসাতে গিয়ে
তৈরি ক্ষত থেকে বাষ্প ওড়ে,
আকাশে জমে উঠে নস্টালজিয়ার মেঘ;
মেঘে ঢাকা আকাশ থেকে বৃষ্টির সাথে
ঝরে পড়ে অজস্র স্মৃতিবিন্দু,
ভিজিয়ে দিয়ে যায় শহুরে নির্লিপ্ত অনুভূতির প্রান্তর।

শহুরে রাজপথে অজস্র দেয়ালিকায় জমে থাকা দেয়ালকাব্যগুলো
চোখের জলে ভিজে ভিজে চুপসে যায়,
মধ্যরাতে সুর করে কাঁদে মোড়ের ল্যাম্পপোস্ট,
একটা দুটো কুকুর ঘেউ ঘেউ করে রাত বাড়িয়ে চলে,
নৈশট্রাকগুলো কাঁপিয়ে তোলে জনশূন্য রাজপথ ।

নিশি পাওয়া দুই একজন পাগল দেয়াল ধরে
শুয়ে শুয়ে প্রলাপ বকে,
ফুটপাতে সঙ্গম সারে,
সঙ্গীনিহীন রাত্রিতে ইট-কাঠই স্বাচ্ছন্দে ওদের
অঙ্কশায়িনী হতে রাজি থাকে ।
আর নাগরিক প্রমোদশালাগুলোতে পার্টির নামে
চলে স্বজাতির রক্ত পানোৎসব;
তবে ওরা ড্রাকুলা কিংবা এলিয়েন,
ক্যাপিটালিস্ট কিংবা সোশালিস্ট, তাতে কিছু আসে যায়না ।
ওরা চারদেয়ালে বন্দি কি-না সেটাই আসল প্রশ্ন,
ওরা দেয়াল ধরে বাড়ে কি-না সেটাই প্রগাঢ় সত্য।
১১/০৮/১৬ইং
শহীদুল্লাহ হল, ঢাবি




৪।
" মানুষিক জীবনযাপন এবং,,,, "


চারিদিকে তাকিয়ে ভিন্ন কাউকে দেখিনা,
প্রত্যেকের দিকে তাকিয়ে এক একটি প্রবল আমিত্ব দেখি।
সহস্র মুখস্ত মানুষে গিজগিজ করছে এই শহরের সবগুলো গলি-ঘুপছি।
'আমিত্বগুলোর' দ্বন্দ্বে চাপা পড়ে যায় জীবনযাপনের আনন্দটুকু।
এদের সংঘাত দেখে দেখে বুড়িয়ে যায় সুন্দর সময়।
যৌবনের উচ্ছ্বাসটুকুকে সময়ের স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে,
বিজয়ের আশায় ইদুরদৌড়ে নামে শহরের জ্যেষ্ঠ ইদুর,
যা কিছুই হোক-
সবকিছুর বিনিময়ে বিজয়ই তাদের একমাত্র লক্ষ্য ।
ওরা জিতে যায়,কিন্তু বাঁচার মত বাঁচেনা-
সাফল্যের এপিটাফের সামনে ওরা বারবার নতজানু হয়ে
সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়- ' দেখো, আমরাই সেরা।'
ওদের চোখে আঁকা থাকে বিজয়ীর মানচিত্র,
সেটা জ্বলজ্বল করতে থাকে আলোকের ছটায়।
তা দেখে অন্ধকারের আলোকযাত্রীর উজ্জ্বল চোখ নিষ্প্রভ হয়ে
নিভুনিভু,কখনওবা দপ করে জ্বলে উঠে আচমকা,
তাতেই প্রচন্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে
সাফল্যের আত্মতৃপ্তিতে গড়া মিথ্যে অহংকারের অজস্র ভাস্কর্য।

ওরা-
জীবনকে যুদ্ধ ভেবে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে থাকে
সাফল্য নামের মরীচিকা লক্ষ্য করে,
শত্রু ভেবে নেয় সবাইকেই,
বন্ধুর বুকে ছুরি বসাতে এতটুকু দ্বিধা নেই ,
সাফল্যের প্রশ্নের কাছে কোনো আচরণই অবৈধ নয়,নয় প্রশ্নবিদ্ধ ;
কারণ ওরা শুধুই একা একা জিততে জানে,
বাঁচতে জানে বন্ধুর শবের উপরে ।

সবে মিলে ভালো থাকাকে নির্বাসন দিতে চাইনা ,
তাই তথাকথিত সাফল্যের প্রশ্নে খোলসবন্দি হই শামুকের মত;
এবং যখনই জীবনের স্বাদ, বিপন্ন বিস্ময়ের গন্ধ পাই
তখনই বের হয়ে দেখি আশ্চর্য উদার পৃথিবীর
অসীম সংখ্যক উদার স্রোত হাতছানি দিয়ে ডাকছে
ওই উদার আকাশ-অতল সমুদ্র-আকাশচুম্বি পাহাড়
আমাকে আলিঙ্গন করে,
কানে কানে জানিয়ে দেয় ,
"তুমি অমৃতের সন্তান,এভাবেই বুক চিতিয়ে বাঁচতে হয়।
নতমস্তকে ইদুর হয়ে বাঁচার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়।"

এভাবেই হাসতে হাসতে যান্ত্রিক ইদুর হয়ে নয়,
মানুষিক জীবনযাপন শেষে একদিন মানুষের মতই মরে যেতে চাই,
এর বেশি কিছুই চাওয়ার নেই মহাকালের কাছে।
১৬/০৮/১৬ইং
শহীদুল্লাহ হল, ঢাবি।




৫।
" ভালোবাসা চাইনা, বাঁচতে দাও"


ভালোবাসতে হবেনা,
আমার খাতার শুভ্র পাতায় একটি অমর কবিতা হয়ে ঝরে যেয়ো,
আমার কন্ঠে এনে দিয়ো একটি বেদনার্ত কালজয়ী সঙ্গীত।
তাতেই আমি কোটি বছর বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত সঞ্চয় পেয়ে যাবো,
ভালোবাসাটুকু অন্য কারো জন্যে সযত্নে মনের তোরঙ্গে তুলে রাখো,
যে চায় তাকেই দিয়ে দাও,
কিংবা চাইলে তা দিয়েই কিনে নিতে পারো অজস্র ক্রীতদাস ।
আমার জন্য একবিন্দু ভালোবাসাও নিষ্প্রয়োজন ,
ওসব আমার কাছে বিষবৎ - জীবিত মৃত্যুর পরোয়ানা ।
কথা দিচ্ছি আমার লেখার অক্ষরে অক্ষরে ,
তোমার জন্য জ্বেলে দিবো অসংখ্য মঙ্গলপ্রদীপ,
মহাকাব্যের পুরো শরীর জুড়ে শুধুমাত্র তোমারই স্তুতি করবো,
সনেট, লিমেরিক এমনকি জাপানী হাইকুগুলোও তোমাকেই উৎসর্গ করবো ,
তবুও ভালোবাসার গিলোটিনে শিরঃচ্ছেদ করোনা আমার।
দোহাই তোমার আমায় কবিতা-গানের মাঝেই
বেঁচে থাকতে দাও,
ভালোবাসা নামের হেমলক বিষে নীল করে দিয়োনা!
ক্ষুদ্রতার মাঝে বৃহত্তের ডাকে আমাকে যেতে দিয়ো ,
বন্দি করে ফেলোনা তোমার ওই আগ্রাসী অক্ষিগোলকে ।
ঠোঁটের মধ্যে গোলাপ ফোটাও কিংবা অপরাজিতা ,
তাতে আমার কি?
বেদনা জমিয়ে জমিয়ে কাব্যের পটভূমি সাজাতে ব্যতিব্যস্ত
এই আমাকে
নিজের ভূবনে
নিজের মতই
থাকতে দিয়ো,
প্লিজ!
১৬/০৮/১৬ ইং
শহীদুল্লাহ হল, ঢাবি।


৬।
" আবির্ভাব "

( ১২ই জানুয়ারি ১৯৯৬ স্মরণে )

প্রার্থনায় নত সব এপিটাফগুলো এইবার ভালোবাসায় নত হবে,
বেড়ে উঠবে ভবিষ্যত সময়ের গর্ভে ।
তখনও আকাশ জানেনা কিছু ,
বাতাসে নেই শব্দের কানাকানি ,
অর্কেস্ট্রায় বাজতে থাকে তুমুল ঐকতান।
ঝপ করে নেমে আসা সন্ধ্যা ও রাত্রিগুলো
জমা থাকে আমাদের দুচোখে;
তাই অন্ধত্বের চশমা ফুঁড়ে কেউই দেখতে পাইনা ;
তবুও তারারা জ্বলে,
চাঁদ চুরি করে সূর্যের উত্তপ্ত আলো,
ধূমকেতুর লেজ ধরে ঝুলে থাকে অসভ্য সভ্যতা
তবুও যাদের মস্তিষ্কের রাডারে ধরা পরে
অনাগত সময়ের সাইরেন,
তারা সবকিছুই দেখতে পায়,
এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিটা তাদের কাছেই হয়ে থাকে জ্বলজ্বলে ভবিষ্যত ।
একদিন তারাকালোকের সবকিছুই পুড়ে যায়
হাইড্রোজেন-হিলিয়ামেই ফুরিয়ে
যায় অন্তর্গত দহন ।
তখনও পালসারের মত স্পন্দিত হতে থাকে কারো কারো জ্বলন্ত হৃৎপিন্ড,
উড়ে উড়ে চলে যায় অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে,
নক্ষত্র সঙ্গীত সন্ধানে,
হাউই চড়ে ,কিংবা অন্য কোনো যানে ।
২৭-০৮-১৬ইং।
শহীদুল্লাহ হল ।



৭।
" বিনিময়পত্র "


আমার যা কিছু সব তোমায় দিতে রাজি ,
কিন্তু বিনিময়ে কিছুই চাইবোনা
এতটা নিঃস্বার্থ আমি নই।

তুমি তো জানো সময়ের অন্য নামই জীবন;
অনেকগুলো খুচরো সময় জমেই
তবে হয় একটি জীবন।
তোমাকে দিলাম কয়েক টুকরো জীবন,
বিনিময়ে ব্যার্থতা দিয়ো ।

বৃষ্টি নামা বিকেলের শেষ কদমফুল,
শরতের শুভ্র কাশফুল, নীল অপরাজিতা,
সপ্তবর্ণা রঙধনু, পাকা ধান,
বিদায়ী সূর্যসহ অন্য অনেকেই আমারি চেতনার রঙে রঙিন;
যদি চাও আমার চেতনার সবগুলো রঙ,
তবে মনের দলিলে বিনিময়ের শর্তগুলো খুব ভালোভাবে গুছিয়ে লিখো;
অবশ্য হতাশাই হবে এর উৎকৃষ্ট বিনিময়।

তুমি তো জানো আমার কণ্ঠে গান নেই,
কিন্তু জানোনা যে , আমার গানগুলো আত্মসাৎ করেই
কোকিল,দোয়েল,শ্যামা,বুলবুলি, বসন্তবৌরি সহ অন্য সব শিল্পী গান পেয়েছে;
গান চাও?
তবে তার বিনিময়ে বিষাদের মাল্য দাও,
আমার বিষাদের সঞ্চয় তাতে বাড়বে।

কালো মেঘের ব্যাথাশ্রুতে ভিজতে চাও?
সাদা মেঘগুলোর রাজত্বে ,
সবগুলো দুঃখ বন্ধক রেখেই এনে দিবো
মেঘ মেঘ রুদ্দুরে জমা কালো মেঘের অপার্থিব কান্না;
এর জন্য কি দেবে?
এক পৃথিবী সুখ, এক সমুদ্র হাসি?
ওসব প্রয়োজন নেই আমার,
আমায় একহৃদয় দুঃখকে চোখের জলে মুক্তি দাও ।

আর যা না দিলেই নয় তা হচ্ছে-
মনের অবহেলার সঞ্চয় সাম্রাজ্যে
কয়েক ট্রিলিয়ন অবহেলা;
তাহলেই মেটাতে পারি তোমার সব দাবী।

হয়তো জানোনা তুমি-
ব্যার্থতাগুলোই কবিতার ভাষা দেয়,
হতাশাগুলো এক একটি অনবদ্য শব্দ হয়ে ঝরে পরে সস্তা খাতায়,
বিষাদ এনে দেয় ছন্দের বৈচিত্র্যের সাথে সাবলিল অন্ত্যমিল ।
দুঃখেরা বিরামহীনভাবে চিত্রকল্প জোগান দেয়,
অশ্রুর প্রতিটি ফোঁটা থেকে জন্মায় উপমা,রুপকসহ কাব্যের অলঙ্কারসামগ্রী।

অবহেলাগুলো আমায় বাংলার জীবনানন্দ
এবং ফ্রান্সের বোদলেয়ারের কাছে নিয়ে যায়,
তাঁরা কবিতাকে আশীর্বাদ করে
আবৃত্তি করে ফেলেন আমাকেই!
তাঁদের মেঘদল ঘৃণা করে
লাশকাটা ঘরে শুয়ে পরতে বলি।
অথচ দুজনেই মিশে যান কাব্যের চাদর ঢাকা আকাশে,
আমি দাড়িয়ে থাকি অপক্ক কবিতা হাতে।

যদি পাই অজর কিছু কবিতা,
তবে আমি আমার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব
হতে রাজি আছি।
মৃত্যুর কাছে আজন্ম ক্রীতদাস হয় থাকতে চাইবো।
তাহলে প্রিয়তমা, দেবে কি একটি কবিতা?
০২-০৯-১৬ইং।
শহীদুল্লাহ্ হল , ঢাবি।




৮।
"বৃক্ষ ও পৌরাণিক অসুখ "
----- রেজাউল করিম।

অস্ফুট পুষ্পের মর্মবেদনা,
অস্পষ্টভাবে বাজতে থাকে ক্রমাগত,
বৃক্ষ,হে শ্যামল বৃক্ষ তুমি ফলভারে নত হয়ে
আকাশের সীমাকে অতিক্রম করতে থাকো ক্রমাগত;
উন্মনা মেঘেদের অধক্ষিপ্ত স্ফটিকে জমে থাকা সব
উড়ন্ত অনুভূতিরা কানাকানি জুড়ে দেয় কি ভীষণ!

পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে হেটে যায়
ওরা সবাই;অগ্রাহ্য করোনা ওদের,
হেলাফেলায় ফুরিয়োনা সুনীল, যুবতী আকাশ।
বাতাসের মাঝে স্পন্দিত হৃৎপিন্ডে তুষারের
শীতল মাদকতা ভর করে- অগ্নিস্ফুলিঙ্গকে নির্বাসন দেয়।
এমনও নির্বাসন আছে যা,বাতাসের জমাট দমবন্ধতাকে
মুক্তি দিতে জানে,
এমনও মুক্তির গান বাজে যার সুর-তাল-লয় জুড়ে
শুধুই শৃঙ্খলিত অর্কেস্ট্রা;
এবং সেখানে বাজতে থাকে বিষন্ণতার বেসুরো করুণ সুর।
মুক্তিকে নির্বাসন দিতে এসে অশ্রুবাষ্পে বিলীন সব সুখ,
পত্রপল্লব জুড়ে বেড়ে ওঠে পৌরাণিক যত নষ্ট অসুখ।
২০-০৯-১৬



৯।
" একজন তৃষ্ণার্ত-ভিতু প্রেমিক "

তোমার নাম উচ্চারণ করতেই-
উত্তর থেকে দক্ষিণমেরু বিস্তৃত ঝড়ে সবকিছু বিদ্ধস্ত হলো ,
এরপর থেকেই তোমাকে স্বনামে ডাকিনা আর!

চোখের ভেতরে তাকাতে গেলাম-
মনে হলো সময় সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে সবকিছু,
তুমি,আমি,আমরা সবাই; আমি সভয়ে সরিয়ে নিলাম চোখ।

স্পর্শ করতে গিয়ে প্রচন্ড বৈদ্যুতিক শকে
দুমড়ে-মুচড়ে যেতে থাকি, তাই স্পর্শ-দূরত্ব সব সময়ই
এড়িয়ে চলি;
তুমি আমার কাছে চিরদিনই স্পর্শাতিত।

ওষ্ঠের দিকে ঢলঢলে তৃষ্ণা নিয়ে তাকাতেই-
হেমলক,সায়ানাইডসহ যতসব অব্যর্থ কূটবিষ চোখ রাঙায় আমাকে;
মৃত্যু হাত বাড়িয়ে টেনে নিতে চায় তার গহ্বরে;
আমি তৃষাতুর দৃষ্টিকে বারংবার
যতই সংযত করি,ততই বেড়ে ওঠে অবাধ্য অসুখ।

গাঢ় আলিঙ্গনে জড়াতে চেয়ে আঁকড়ে ধরি চঞ্চল বাতাসের
শরীর; বার বার হাত গলে বেড়িয়ে যায় তোমার বাষ্পিভূত অস্তিত্ব,
প্রকৃত তোমায় কোনোদিন আলিঙ্গনে বাধতে চেয়েছি কিনা
-সেটা বাতাস জানে;
আমি আপাতত তোমার স্বপ্নে বিভোর হয়ে জন্মাতে চাই বারবার;
তোমার অনাগত শত-সহস্র অস্তিত্বের মোহে।
।।২১-০৯-১৬ ইং
সায়েন্স লাইব্রেরি,ঢাবি।।



১০।
" এলিয়েনেশনের ব্যাকরণ "

আমার প্রতি তুমি, তোমরা কিংবা তোমাদের কেউই অনুভূতিসম্পন্ন নও।
নিষ্প্রাণ চোখ বেয়ে নামতে দেখি অবহেলার করাল স্রোত,
অথচ আমি মানুষিকভাবেই বেঁচে থাকি, বেঁচে আছি তোমাদের এই নগরে।
সকলেই মরে যায় তবুও,
গলিত সব শবের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হিংসার লাভাস্রোত ।
বিজয়ের নেশায় উদ্বাহু নই, আনন্দ ও সুখের আমিই একনিষ্ঠ কৃষক।

অথচ মাঝে মাঝে বুকের মধ্যে তুমুল ভাঙচুর চলতে থাকে;
তখন কষ্ট ও বিষাদের সাম্রাজ্যে একনিষ্ঠ প্রজা হয়ে,
দলিত হতে থাকি হিংসার স্টিমরোলারে,
ওরা অবজ্ঞার গিলোটিনে শিরোচ্ছেদ করে প্রতিনিয়ত,
সবার বিস্মৃতির মাঝে বসবাস করে করে
বিস্মৃত হই - আমার অস্তিত্বটুকুও।

নিতান্ত সাধারণ মানুষের মতই অসাধারণত্বের পেছনে ছুটি,
কিন্তু তার জন্য অস্তিত্বটুকু বিলিয়ে দিইনি
পূঁজিবাদের লকলকে জিভের মাঝে;
আমার মৌল উপাদানে গড়া খোলসটুকু
ঝেড়ে ফেলিনা ইচ্ছেমত,
তোমাদের আধুনিকতার স্রোতে গা-না ভাসিয়েও
নিজেই নিজের সাথে দিব্যি বেঁচেবর্তে আছি,
ভালো আছি নিজেরই মতন।
তাতে আমায় ভাবতে পারো এলিয়েন কিংবা যা ইচ্ছে তাই;
এলিয়েনেশনের সবগুলো ধাপ ধরে হাটো,টের পাবে আমার অস্তিত্ব;
তোমাদের এই দমবন্ধ নগরে আমি একজন এলিয়েন,
অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে আমি খুবই নিঃসঙ্গ;
সবাই-ই বহিরঙ্গের খোঁজ পায় ,
অন্তরঙ্গের আমিটা এখনও অনাবিষ্কৃত,
এখনও পাললিক শিলায় চাপা পড়ে আছি।
২৫/০৯/১৬ইং
শহীদুল্লাহ্ হল, ঢাবি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.