নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাড্ডি খিজিরের মত ঠোঁটকাটা হইতে চাই শেষমেশ ওসমান অরফে রঞ্জু হয়াই দিন কাটে। রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছা কী আছিলো সেইটা অনুভব করার খুব শখ আছিলো, জীবনদা তো আর নাই। তার কথা মনে হইলেই শোভনার ব্যর্থ প্রেমিক, লাবণ্যের ব্যার্থ স্বামী মনে হয়।

রেজাউল করিম সাগর

একজন লক্ষ্যহীন পথিক, পথে নেমেই পথকে চিনি - লক্ষ্যকেও।

রেজাউল করিম সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুদ্ধিজীবীদের কাছে সময়ের দাবীঃ আহমদ ছফা, ঋত্বিক ঘটক এবং সাদাত হাসান মান্টো

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৮




শিল্পের উদ্দেশ্য কী? শিল্পের জন্য শিল্প, নাকি মানুষের জন্য শিল্প? আমার ধারণা যারা ভাবেন যে শিল্পের জন্যই শিল্প সৃষ্টি হয়, এখানে যিনি শিল্পী তিনি তাঁর নিজস্ব মতবাদ প্রকাশ ও প্রচার করতে পারবেন না, আমার মনে হয় তাঁরা ভন্ড। কেননা শিল্প যদি মানবিক না হয়, সমাজ সভ্যতা সম্পর্কে নিজের চিন্তাভাবনা প্রকাশের মাধ্যমে না হয় তাহলে শুধু শুধু শিল্পীর কাজে মানুষ সময় নষ্ট করবে কেন? একজন শিল্পী, কবি, ঔপন্যাসিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীর কাছে সমাজের এবং তাঁর সময়ের দাবী কী? তাঁরা অতীত-বর্তমানের ভুল এবং সাফল্য সাধারণের কাছে তুলে ধরবেন এবং এর বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে আমাদের সমাজ , সভ্যতা, রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দিবেন । এই ধারণার উপর ভিত্তি করে সমাজের অন্যান্য মানুষ তাঁদের নীতি নিরধারণ করবে। এখন বুদ্ধিজীবীরা যদি সময়ের দাবী না মেটাতে পারেন সেই সময় হয়ে যাবে অথর্ব। তাই এই সময়ে এসে আমাদের নতুন করে ভাবা উচিত, যাদের আমরা বুদ্ধিজীবী হিসেবে সমাজের মাথায় বসিয়ে রেখেছি তাঁরা আসলে কতটা যোগ্য? তাঁরা কী বুদ্ধিজীবী নাকি বুদ্ধিবেশ্যা? নিজের মস্তিষ্ক বিক্রি করে বিরাট কী কী ফায়দা তাঁরা লুটছেন তাঁর খোঁজ নিয়ে দেখুন। আহমদ ছফা, ঋত্বিক ঘটক এবং সাদাত হাসান মান্টো ছিলেন বুদ্ধিজীবী সমাজের জন্য অনুসরণের যোগ্য লোক।
আহমদ ছফা, ঋত্বিক ঘটক এবং সাদাত হাসান মান্টো এই তিনজনের মধ্যেই নিজস্ব মতবাদ, চিন্তাধারা তাদের সকল সৃষ্টির মাঝেই একদম সরাসরি আছে। প্রতি মুহূর্তে পাঠক-দর্শকদের hammer করে বোঝানোর প্রচুর উপাদান আছে তাঁদের সৃষ্টিতে। আর দশটা গৃহপালিত বুদ্ধিজীবির মত করে বাতাস বুঝে পাল তুলতে না পারায় গোটা জীবনটাই তাঁদের খুব সুখে কাটেনি। ছন্নছাড়া, পাগলের মত দিন কেটেছে, তবুও নিজেদের কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করে ক্ষমতার কাছাকাছি গিয়ে বা কোন নির্দিষ্ট দলভুক্ত হয়ে পোষা বুদ্ধিজীবী হয়ে নিজেদের সৃষ্টির অমর্যাদা করেননি, তাঁদের সমসাময়িক অনেক পা চাটারা তখনকার সময়ে সব সুযোগ সুবিধা, বিভিন্ন ক্ষমতাবানদের সুদৃষ্টি পেলেও , মহাকাল তাঁদের মনে রাখেনি। মনে রেখেছে সেই ছফা, ঋত্বিক, মান্টোদেরই। তাঁদের এই আপোষহীন শিল্পসৃষ্টিই তাঁদের বিশেষত্ব। এবং বর্তমানের ভন্ডামির যুগে এই নিজের কথা কাউকে ভয় না পেয়ে বলতে পারাটাই সবচেয়ে বড় যোগ্যতার নিদর্শন। তাঁদের তিনজনের সৃষ্টির পরতে পরতে দেশবিভাগ, দেশবিভাগের ফলাফল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, সংগ্রাম পরবর্তী অবস্থা এত বাস্তব হয়ে, এত প্রাণবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে যে যেকোন সচেতন পাঠক-দর্শক এগুলো থেকে গত শতাব্দীর ভারতবর্ষে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনার ভেতর বাহির বুঝতে পারবেন, অনুধাবন করতে পারবেন। হয়তো কখনো তাঁদের রচনায় অনেক দালাল, ভন্ডদের মুখোশ খুলে পরে যেতে দেখবেন। তাঁদের সৃষ্টির চর্চা করা এই সময়ে অনেক বেশি জরুরি। মুমূর্ষু বুদ্ধিবৃত্তিকে বাঁচাতে চাইলে, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় চামচাদের উৎখাত করতে চাইলে এই তিনজনের মত পাগলের খুব বেশিই প্রয়োজন।
ঋত্বিক ঘটকের নিচের উক্তিটি এই তিনজনের শিল্পসৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্যকে প্রতিফলন করে। যারা ভাবেন শিল্পসৃষ্টি আর নিজেদের মতামত, ধারণা পুরোপুরি আলাদা রাখা উচিত তাঁরা সময়ের দাবীকে অগ্রাহ্য করছেন। সময় তাঁদের মনে রাখেনা, মহাকালের গহ্বরে তাঁদের হারাতেই হবে।

"আমি কোন সময়ই একটা সাধারণ লুতুপুতু মার্কা গল্প বলিনা - যে একটি ছেলে একটি মেয়ে প্রেমে পড়েছে প্রথমে মিলতে পারছে না, তাই কষ্ট পাচ্ছে। পরে মিলে গেল বা একজন পটল তুলল - এমন বস্তাপচা সাজানো গল্প লিখে বা ছবি করে নির্বোধ দর্শকদের খুব হাসিয়ে - কাঁদিয়ে ঐ গল্পের মধ্যে involve করিয়ে দিলাম। দু মিনিটেই তারা ছবির কথা ভুলে গেল, খুব খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল - এর মধ্যে আমি নেই।
আমি প্রতি মুহূর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বোঝাব it is not an imaginary story. বা আমি আপনাকে সস্তা আনন্দ দিতে আসিনি। প্রতি মুহূর্তে আপনাকে hammer করে বোঝাব , যা দেখছেন তা একটি কাল্পনিক ঘটনা, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে যেটা বোঝাতে চাইছি সেই thesis টা বুঝুন। সেটা সম্পূর্ণ সত্যি। সেটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্যই আমি আপনাকে alienate করবো প্রতি মুহূর্তে।
যদি আপনি সচেতন হয়ে ওঠেন, ছবি দেখে বেরিয়ে এসে বাইরের সেই সামাজিক বাধা বা দুর্নীতি বদলানোর কাজে লিপ্ত হয় ওঠেন, আমার protest কে যদি আপনার মধ্যে চারিয়ে দিতে পারি, তবেই শিল্পী হিসেবে আমার সার্থকতা।
এইজন্যই বলছি involvement হচ্ছে শিল্পীর alienation হচ্ছে audience দের। আমি যে কতগুলো কল্পিত ঘটনা ও চরিত্র সাজিয়ে গল্প বলছি, তার মধ্যে কিছু বক্তব্য রাখছি সেগুলো দেখে আপনারা আবার ভুল কি ঠিক , ভালো কি মন্দ তা বিচার করুন। যদি ভালো বোধ করেন তবে বাইরে গিয়ে বাস্তবকে বদলানোর কাজে নিযুক্ত হোন। এই alienation সকল আধুনিক শিল্প বা অন্য সব শিল্পেরও লক্ষ্য।"
--------- ঋত্বিক ঘটক ( নিজের পায়ে নিজের পথে)(১)


ঋত্বিক প্রথমে নাটক,গল্প এগুলো লিখতেন, পরে নাটক করলেন, অভিনয় করলেন। শেষে চলচ্চিত্রে এলেন। তার এই বারবার মাধ্যম পরিবর্তনের কারণ হল তাঁর মতবাদ নিয়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌছানোর চেষ্টা। তিনি বলেছিলেন যদি চলচ্চিত্রের চেয়েও কোন ভালো মাধ্যম আসে তাহলে তিনি চলচ্চিত্রকে লাথি মেরে ফেলে ওই মাধ্যমে চলে যাবেন। আসলে শিল্পীর আসল উদ্দেশ্য শিল্পসৃষ্টি নয়, সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে পথ প্রদর্শন করা। এখানে শিল্প শুধুই একটি মাধ্যম।
ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা, সুবর্ণরেখা, কোমল গান্ধার, অযান্ত্রিক, নাগরিক, যুক্তি তক্কো গপ্পোসহ যতগুলো চলচ্চিত্র আছে সবগুলোতেই তাঁর অন্তর্গত দহনকে দর্শকদের মধ্যে চারিয়ে দেবার চেষ্টাটি আছে। এবং তাতে তিনি সফলও হয়েছেন। কিন্তু সমাজের ক্ষমতাবানরা তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণের পথকে সুগম রাখেননি। রাখলে যে তাঁদের ভদ্রতার মুখোশ আর থাকবেনা! সত্যজিত রায় সরাসরি প্রতিবাদ না করে বেশি সুযোগ পেয়েছিলেন, জনপ্রিয় হয়েছেন, ঋত্বিক সরাসরি প্রতিবাদ করে বাধার মুখোমুখি হয়েছেন। এখন দুই দিক থেকে দুইজনকেই সফল বা অসফল বলা যেতে পারে। সত্যিকার অর্থেই কে সফল তা সময়ই বলে দেবে।

ঋত্বিক আরেকটা জায়গায় বলছেন -

" Career ! ক্যারিয়ার! কার Career ! কীসের ক্যারিয়ার? সমস্ত দেশটাই খাপরিখানা হয়ে গেল - ক্যারিয়ার-টেরিয়ার ওসব ভাঁওতাবাজির কথা।" (২)


এই যে দেশবিভাগ এবং তাঁর ফলশ্রুতিতে সারা ভারত উপমহাদেশে নানারকম সংকট চলছিলো তার প্রতি কতটা ক্ষোভ ছিলো তার মনে এই কথাই তার প্রমাণ। আবার সাদাত হাসান মান্টোর গল্পগুলো পড়ূন দেখবেন দেশবিভাগের নানারকম বীভৎস ফলাফল।
দেশবিভাগ ঋত্বিক, মান্টোর মত লোকদের ক্ষ্যাপা পাগলের মত করে দিয়েছিলো, অনেককেই করে করেনি। সেইসব বুদ্ধিজীবী যাদের দেশবিভাগে ফায়দা লুটতে আরও অনেক সুবিধা হয় তাঁদের মানুষ মরলো কি বাচলো তাতে কিছুই আসে যায়না। কিন্তু যারা সমাজের মানুষের ভেতর-বাহির দেখেন, দেখতে চান তাঁদের পাগল না হয়ে উপায় থাকেনা।

আবার যদি আহমদ ছফার দিকে তাকান দেখবেন তার প্রবন্ধে তিনি যেসব সমস্যার কথা চিৎকার করে বলছেন সেগুলো তার উপন্যাসেও তিনি তীব্রনিনাদে বলেছেন, আরো হৃদয়গ্রাহী করে বলেছেন। তার নিহত নক্ষত্র, গাভী বিত্তান্ত, অলাতচক্র, মরণবিলাস, একজন আলী কেনানের উত্থান পতন, পুষ্প-বৃক্ষ-বিহঙ্গ পুরাণ , যদ্যপি আমার গুরু, সূর্য তুমি সাথী পড়ে দেখুন। মুক্তিযুদ্ধ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ, বাঙালি মোসলমান, হিন্দু সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ, লেখক, শিল্পী , রাজনীতিবিদ সবার সম্পর্কে তার প্রবন্ধে তিনি যেমন বিশ্লেষণ করেছেন, তেমনি উপন্যাসেও লুতুপুতু গল্প না বলে সেই কথাগুলোকেই বাস্তব হিসেবে চোখের সামনে দৃশ্যমান করেছেন।
এগুলো পড়ে দেখলে বুঝবেন কত ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা মানুষের মুখোশ খসে গেছে আহমদ ছফার শাণিত কলমে।
আহমদ ছফা তাঁর 'সাম্প্রতিক বিবেচনা ও বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস' বইয়ে বলছেন-

" এখনো পর্যন্ত কোন বাঙালি মুসলমান লেখক তাঁর সমাজের প্রাণহীন আচার পদ্ধতি, মূঢ়তা, স্থুল বিশ্বাস এসবকে চ্যালেঞ্জ করেননি। রাজনৈতিক উপন্যাস কেউ কেউ লিখেছেন, লিখতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত অর্থে রাজনীতি বলতে যা বোঝায়, তা তো এক ধরণের ক্ষমতালোভী মানুষের ক্ষমতা দখলের ফন্দি মাত্র। তাঁর বেশি কিছু নয়। রাজনীতি মানবসমাজের সর্বাঙ্গীণ পরিণতি নির্ধারণের নিয়তি, যারা রাজনীতি করেন তাঁরা বিশ্বাস করলেও লেখকেরা, কবিরা, সাহিত্যিকেরা রাজনীতি এবং সংস্কৃতির কোন মানসিক মেলবন্ধন সাধনা করতে পারেননি বললেই চলে। অথচ মোস্তফা কামাল পাশার তুর্কিতে এই রাজনীতিই ধর্মীয় জাড্য, সামাজিক কু-রীতি খেদিয়ে তাড়িয়েছে। সে তো অনেক আগের কথা। তুর্কিতে অনেক আগে যা হয়েছে আমাদের দেশে এখন তা হওয়া সম্ভব নয় কেন? এই প্রতিবাদের অভাবে আমাদের দেশে জ্ঞানী-গুণী মানুষকেও অন্ধ তামসিকতাসম্পন্ন মানুষের দাস হয়ে থাকতে হয়। যে দু'একজন মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করেন তাঁরা বাচাল। তাঁদের সঙ্গে সে শল্য-চিকিৎসকের তুলনা করা যায়, যে রোগ দূর করার বদলে রোগী মারে। মনুষ্যত্বের প্রতি শ্রদ্ধাহীন এবং মানুষের প্রতি মমতাহীন কবি, সাহিত্যিক কিংবা সমাজসংস্কারক কারো কোন দাম নেই।" (৩)


তুর্কির কথা অনেকেই জানেন। বাংলার কথাওতো জানেন। কেন পিছিয়ে আছি আমরা ভাবুন তো? তিনি একই বইয়ের অন্য এক জায়গায় বলছেন -

" আধুনিক বাংলা সংস্কৃতি বলতে যা বোঝায় তা পুরপুরি প্রতিবাদেরই সংস্কৃতি। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও, মাইকেল,দেবেন্দ্রনাথ, কেশব সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে কাজী নজরুল ইসলাম, মানিক বন্দোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য পর্যন্ত সকলে প্রচলিত সমাজ, ধর্ম এবং লোকাচারের বিরোধিতা একদিকে, অন্যদিকে কেউ স্পষ্টভাবে, কেউ আভাসে ইঙ্গিতে আরেকটি মহত্তর, সুন্দরতর সমাজের ছবি শিল্পরূপে ফুটিয়ে তুলেছেন। বাংলার গৌরবময় সাহিত্য স্রষ্টাদের সৃষ্টি থেকে যদি সামাজিক বিদ্রোহ, নতুন মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার বিদ্রোহ আলাদা করে ফেলা হয় তাহলে কি বাংলা ভাষা বিশ্বের সমৃদ্ধ ভাববাহী ভাষাপুঞ্জের আসন থেকে রাতারাতি প্রাদেশিক ভাষা হয়ে দাড়ায় না? রামমোহনের ধর্মীয় এবং সামাজিক মতবাদ ছাড়া তাঁর সাহিত্যের কতটুকু মূল্য? বিদ্যাসাগরের সৃষ্টিকর্ম থেকে তাঁর বৈপ্লবিক চিন্তাধারা ছেঁকে আলাদা করে যদি ফেলা হয়, তাহলে তো তিনি টোলের ব্রাহ্মণ পন্ডিত হয়ে দাঁড়ান। রামমোহনের ধর্মীয় এবং সামাজিক বিপ্লব বাদ দিলে অমন সূর্য-সঙ্কাশ প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথের গর্ব বাঙালি কীভাবে করত? ভারতের জাতীয় আন্দোলনের জান দেয়া-নেয়ার মহৎ খেলা এবং রুশ-বিপ্লবের অভিনব জঙ্গী মানবতার ডাকাতিয়া বাঁশির ডাকেই তো কাজী নজরুলের কণ্ঠ নিনাদিত হয়েছে। তাঁর কবিতায় যে তীব্র আবেগ বিচ্ছুরিত হয়েছে, যে কূল ছাপানো ভালোবাসা লহরিত হয়েছে তা কি প্রচলিত সমাজকে ভেঙ্গে-চুরে নতুন করে বানানোর, নতুন মানব সম্বন্ধ রচনার ঐকান্তিক হার্দ্য প্রয়াস নয়?" (৪)

এই চিন্তাধারাই আহমদ ছফার উপন্যাস , গল্পগুলোকেও তাঁর নিজস্ব মতামত, চিন্তাধারা, সমাজবিশ্লেষণের মাধ্যম করে তুলেছে।

মান্টো একবার বলছেন -
“এটা বোলো না যে এক লাখ হিন্দু ও এক লাখ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। বল, দুই লাখ মানুষকে খুন করা হয়েছে।” -সাদাত হাসান মান্টো

দেশবিভাগের সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে এই উক্তিটি শুধু মান্টোর সৃষ্টির সারকথা। তাঁর গল্পগুলো পড়লে তাঁর চমৎকার হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যায়ন দেখতে পাবেন। তাঁর তোবা টেক সিং, ঠান্ডা গোশত, লতিকা রাণী, গাঞ্জে ফেরেশ্‌তে সহ আরো বিভিন্ন রচনা পড়ে মাথায় হাত দিয়ে ভাববেন ," হায়, এত নিষ্ঠুর ছিলো সেই সময়!" নিষ্টুর সময়ের বর্ণনার মাঝে লেখকের কোমল, ক্ষতবিক্ষত মনের হদিশ পাবেন।

সৃজিত মুখার্জির দেশবিভাগ নিয়ে বানানো রাজকাহিনীতে চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে সাদাত হোসেন মান্টোর একটি গল্প ব্যবহার করেছেন। গল্পটি হচ্ছে এমন -
" দাঙ্গার সময় ধর্ষিত এক মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। মেয়েটি শারিরিক এবং মানসিক দিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। ডাক্তার দেখতে আসলেন তাকে, যে ঘরে রাখা হয়েছিলো তার জানালা ছিল বন্ধ , আলো বাতাস কম ছিলো সে কক্ষে। সেজন্য ডাক্তার তার সহকারীকে বললেন 'খোল দো'। মেয়েটি সে কথা শুনে তার পাজামার ফিতা খুলে দিলো!"

তাঁর সরাসরি প্রতিবাদের জন্য ৪৭ এর আগে ভারতে এবং ৪৭ এর পরে পাকিস্তানের আদালত থেকে শাস্তি পেতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদী কণ্ঠ থেমে থাকেনি। সম্প্রতি সাদাত হাসান মান্টোকে নিয়ে তাঁর জীবনীভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র হয়েছে " মান্টো" নামে।
অবশ্য মানিক বন্দোপাধ্যায়ের নামও এই কাতারে আসতে পারত। লেখা অনেক বেশি বড় হয়ে যাবে বলে উনার কথা অন্য কোন লেখার জন্য তুলে রাখলাম।

শিল্পের জন্য মানুষ নাকি মানুষের জন্য শিল্প? অবশ্যই মানুষের জন্যই শিল্প। যে শিল্প মানুষের কথা বলেনা সে শিল্প অথর্ব। বর্তমানের বুদ্ধিজীবীরা কতটা মানুষের কথা বলতে পারছেন, শিল্প-সমাজ-সময়ের দায় মেটাতে পারছেন তা চারপাশে খোলাচোখে তাকালেই বুঝতে পারবেন। এই সময়ে ছফা, ঋত্বিক এবং মান্টো অনেক বেশিই প্রাসঙ্গিক। তাঁদের সৃষ্টি আরো বেশি করে চর্চা করতে হবে। নাহলে সামনে ভীষণ অন্ধকার, ঘটায় যে কোন ঘটনা!

তথ্যসূত্র -
১। নিজের পায়ে নিজের পথে - ঋত্বিক ঘটক
২। নিজের পায়ে নিজের পথে - ঋত্বিক ঘটক
৩। সাম্প্রতিক বিবেচনাঃ বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস - আহমদ ছফা
৪। সাম্প্রতিক বিবেচনাঃ বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস - আহমদ ছফা


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০০

স্রাঞ্জি সে বলেছেন: লিখাটি দুবার এসেছে। ঠিক করে দেন_____

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫২

রেজাউল করিম সাগর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্য।

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট।
লেখাটি দুবার এসেছে। এডিট করে ঠিক করে নিন।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৪

রেজাউল করিম সাগর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই । ঠিক করে দিয়েছি।

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৫

Ariyan বলেছেন: অসাধারন লেখা।ভাল লাগলো।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০১

রেজাউল করিম সাগর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: অসাধারণ!! অসাধারণ !!অসাধারণ!! এত ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে যে বলে বোঝাতে পারবো না। মান্টোকে আমার অন্তরের শ্রদ্ধা। ঠিকই তো এক লাখ হিন্দু বা এক লাখ মুসলিমকে খুন করা হয়নি। বরং আমরা বলতে শিখি যে দু লাখ মানুষকে খুন করা হয়েছে। আমাদের মধ্য থেকে এই বিভাজন, সাম্প্রদায়িক হানাহানি দূর হোক। মনুষ্য সমাজের মধ্যে থেকে পশুত্বের অবসান ঘটুক।
+++++

শ্রদ্ধা ও শুভকামনা জানবেন।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩১

রেজাউল করিম সাগর বলেছেন: পশুত্বের অবসানের জন্য বুদ্ধিজীবী সমাজের কর্তব্য অনেক বেশি। ধন্যবাদ অনেক। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.