![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘুমাইলে চোখে দেখি না, জাইগা থাকলে ঘুম আসে না! টেনশনে থাকি ইদানিং কারন একটা জিনিস চিন্তা কইরা পাই না যে কি নিয়া চিন্তা করন যায়! আজব বিলা!
আকাশের চাঁদটাকে অনেকক্ষন ধরে দেখছি। বিদ্যূৎ নেই ঘরে। সারা দিন অফিসের এসিতে থেকে বাসায় ফ্যানের নীচে থাকলেও ঘামতে শুরু করি।
গতমাসে এখানে জয়েন করলাম, কাওরানবাজার অফিস। একটা বহুজাতিক কোম্পানী এবং অবশ্যই ইহুদী কোম্পানী।
ইন্টারভিউতে যেদিন ডাকলো সেদিন তারা কোম্পানীর নামটা বলেনি।
ঘটনার শুরু এভাবে:
ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে একটা ফোন আসে। আমি তখনও গাজীপুরে এসএম গার্মেন্টসের গোডাউনে শার্টের লটগুলো দেখছিলাম। কোয়ালিটি কন্ট্রোলতো করি না, নিজের গায়ের সাথে মানানসই শার্ট বেছে নেই। জলিল ভাই আমাকে আগেই বলে দিয়েছে প্রতি লটে ১০টা শার্ট আমার। ছুটির দিন কেউ অফিস করছে না, অথচ পরের দিন বিকেলে অর্ডার চালান করতে হবে। ১৫০০ টা শার্টের চালান চেক করা চারটি খানি কথা না। যদিও শার্ট আছে হাজার দুয়েক। ঠিক করলাম ১০ টা শার্ট নিবো। ৯ টা শার্ট বিক্রি করবো আরেকটা নিজের জন্য। ৯ টা শার্ট অলরেডী প্যাকেট করে ফেলেছি, এখন নিজের জন্য। এমন সময় রহমত ভাই ফোনটা নিয়ে এসে বললো," ফোনটা ধরেন। আপনের কপাল খুলতেছে!"
আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম,"গরীবের আবার কপাল। যৌবন যায় কপালের অভাবে আর বৃদ্ধকাল যায় পুরা মাথাটাই কপাল হবার কারনে !"
ফোনটা হাতে নিয়েই বললাম "হ্যালো"।
: হ্যালো, আশফাক সাহেব বলছেন?
: জ্বী, এখনও বেচে আছি। কে বলছেন?
: আপনি একটা সিভি জমা দিয়েছিলেন অনলাইনে আমাদের কোম্পানীতে। আপনি কি এ মাসের ৩০ তারিখ রবিবার ১২ টায় আমাদের অফিসে একটা ইন্টারভিউ দিতে পারবেন?
: অবশ্যই পারবো। কিছু নিয়ে আসতে হবে?
: কিছু নিয়ে আসতে হবে না, শুধু আপনার ভোটার আইডিটা নিয়ে আসবেন।
: একটা সমস্যা আছে ভাইয়া। আমার ভোটার আইডিটা পকেটমার নিয়ে গেছে।
: তাহলে অনার্সের সার্টিফিকেটটা ফটোকপি করে নিয়ে আসবেন।
: ভাইয়া এখানেও একটা সমস্যা, আমি অনার্স পাশ করিনি। জাতীয় থেকে বি কম পাশ। আপনি মনে হয় ভুল করে ফোন দিয়েছেন আমাকে।
: উমমমম..... আচ্ছা...(কিছুক্ষন চুপ করে থেকে)....আমি আপনাকে একটু পরে ফোন দিয়ে কনফার্ম করছি।
এই বলেই লাইনটা কেটে দিলো। আমি রহমত ভাইকে ডাক দিয়ে বললাম,"আমার কপালে চুল বেশী তাই সংবাদটা আর সু হলো না!"
রহমত ভাই ফোনটা হাতে নিয়ে বললো,"আপনের ভাবীর ফোনের জ্বালায় আর বাচি না। আমি এখন যাচ্ছি। আপনি যাবেন কখন?"
: আমি জলিল ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। উনি খাবার আনতে গেছেন। উনার সাথে খেয়েই বেরুবো।
উনি খোদা হাফেজ বলে চলে গেলেন। আমি সেদিন আমার কাজ সেরে বাসায় চলে আসি। তারপরের দুদিন ছুটি ছিলো বলে প্রায় ঘুমিয়েই কাটালাম। মাঝে রহিম ভাই দুটো বাংলা আরেকটা হিন্দি ছবি আনলো। আড্ডা দেয়া ছাড়া ঘর থেকে আর বেরোই না।
দুদিন পর অফিসে গিয়েই জলিল সাহেবের সাথে দেখা।
: আপনের একটা নিউজ আছে।
: (আমি চমকে গেলাম) কোনো সমস্যা হইছে? চাকরীটা কি গেছে?
: আরে নাহ মিয়া, আপনের একটা ইন্টারভিউ আছে মনে হয়, রহমত ভাইয়ের সাথে দেখা করেন।
"ও আচ্ছা" বলে কাজে ঢুকে যাই। রহমত ভাই হলো শিফট-ইন-চার্জ। নতুন অর্ডার আসলে তিনি নিজের নাম ভুলে যান। শিফটে যারা কাজ করে তখন দুয়েকজনের নাম বাদে হারাম জাদা, শালা হয়ে যায় সবার নাম। আমি উপরে উঠে ইস্ত্রি নিয়ে দাড়াতেই রহমত সাহেব হন্ত দন্ত হয়ে আসলেন।
: ঐ মিয়া, আপনের মোবাইল নাই?
: মোবাইল ছিলো, বেচে দিছি।
: এত টাকা দিয়ে কি করবেন? কবরে যাইবেন? আপনে কি চাকুরী খুজতেছেন?
: খুজতেছি তো।
: কেন এইখানে ভালা লাগে না?
: কেন ভালো লাগবে না?আর ইন্টারভিউ এর কল আসলেই কি চাকরী হয়? জাতীয় নাম শুনলেই মনে করে চাকর বাকর। ঐ দিন তো এই জন্যই আর ডাকে নাই আমাকে। আর আপনারাই তো আমার সব।
: ধুর মিয়া, এই কাগজে ঠিকানা লেখা আছে। ২৫ তারিখে বেলা ১০ টায় ইন্টারভিউ। ঐ দিন আপনার ছুটি। আপনার দরখাস্ত করা লাগবে না। পরের দিন অফিসে এসে কোন অফিসে ইন্টারভিউ দিছেন বইলেন। পরিচিত থাকলে লোক লাগামু।
: ধুরু, আপনি তো সিরিয়াস হয়ে গেলেন।
: পকেটে টাকা আছে?
: আছে।
কাছে এসে ৫০ টা টাকা পকেটে গুজে দিলেন। আমি তাকাতেই,"চোপ!" বলে ধমক দিয়ে চলে গেলেন।
২৫ তারিখ সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ৭ টায়। রহিম ভাই জাগালেন," অফিসার সাহেব, খাবার রেডী!" আমি বিছানায় বসে অনেকক্ষন হাসলাম,"ভাই, চাকরীটা হবে না এইটা শিওর কিন্তু আপনারা যা করছেন মনে হয় ইন্টারভিউ দিয়ে বাসা ছাড়তে হবে লোক লজ্জায়।"
: ফালতু কথা রাখেন, তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডী হোন। সেদিনের ঐ নতুন শার্টটা পড়েন আর আমার টাইটা দিয়া গেলাম।
যথা সম্ভব রেডী হলাম, ৫০ টাকা পকেটে ভরে লোকাল বাসে উঠলাম ৮:৩০ টার দিকে। মোটামুটি খালি ছিলো রাস্তা। কাওরানবাজারে আসতে আসতে মোটামুটি ৯:৫০ বেজে গেলো। অফিস খুজে ভিতরে ঢুকতেই দেখি চেয়ারে জায়গা নেই, আর যারা বসে আছে বাংলাদেশের সব সুন্দর সুন্দর মেয়ে মডেল। দুএকজন ছেলের মধ্যে আমি একজন। কিন্তু তাদের গেট আপ দেখে মাথা ঘুরে গেলো। মনে হচ্ছে এটা কোনো টিভি চ্যানেল। এমন সময় একজন স্মার্ট লোক আমাদের মধ্যে এসে আমার নাম ডাকলেন।
আমি ইন্টারভিউ রুমে ঢুকে দেখি বিশাল একটা টেবিল এবং টেবিলের চারপাশে বসে আছে ৬ জনের একটা প্যানেল- যার মধ্যে ৪ জনই নারী। অনুমতি নিয়ে বসলাম একটা চেয়ারে। প্রথমে এক ভদ্রলোক শুরু করলেন
: আপনার নাম আশফাক আহাম্মেদ?
: জ্বি।
: নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।
: আমি বি কম পাশ করেছি ২০০৮ এর দিকে। আমার বি কমের মেজর ছিলো ফিন্যান্সে। পাশ করবার পর আমি অনেকদিন চাকুরী খুজতে চেষ্টা করি। মাঝখানে আমি একটা বায়িং হাউজে কাজ করি। এখন একটা গার্মেন্টসে জুনিয়র কোয়ালিটি কন্ট্রোলে কাজ করি। তবে মাঝে মাঝে লেজারটা চেক করি। আর এলসি পেপার খোলা এবং সিএ অডিটের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। লিফো চার্ট এবং বাজেটারী পলিসি থেকে শুরু করে লাইসেন্সিং এর ব্যাপারে কাজটা জানি।
: হ্যা, আপনার সিভিতে আমি দেখছি। আপনি বেশ কিছু এজেন্টের নাম লিখেছেন। ওকে আপনার কি কিছু জানার আছে এই চাকুরীর বিষয়ে?
: একটা কথা জিজ্ঞেস করবার ছিলো, আসলে আমাকে কি ভুল করে ডাকা হয়েছে?
: কেন বলুনতো?
আমি কি বলবা ভাবছিলাম এমন সময় একজন শাড়ি পড়া খুব সুন্দর মহিলা বললেন,"দেখুন, আসলে আমরা চাচ্ছি এমন একজন কেউ যে ফিল্ডে কাজ করতে পারবে এবং এ সম্পর্কে কাজ জানে। আপনার সিভি দেখে মনে হয়েছিলো আপনি বেশ প্রোমিজিং। একটা কথা শুনুন, ডিগ্রী অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর কিন্তু এটাই সবকিছু না। আপনাকে যিনি প্রশ্ন করলেন এতক্ষন তিনিই আপনাকে কল করেছিলেন। আপনার সাথে তার কি কথা হয়েছে জানি না তবে আমরা আপনার ব্যাপারে একটু ইন্টারেস্টেড ছিলাম। যাই হোক, আপনাকে ফোন করে জানানো হবে পরবর্তীতে যদি আপনাকে সিলেক্ট করা হয়। আর কিছু জানার আছে?"
: না, আর কিছু জানার নেই।
ঠান্ডা এসিতেও আমি ঘামছিলাম। আমার শার্টের পিছনটা ভিজে গেছে। কেন যেনো মনে হলো চাকুরীটা হবে না। ইন্টারেস্ট ছিলো এখন নেই মনে হয়।
টাইটা খুলে অফিস থেকে বেরুলাম, আবার লোকাল বাসে চড়ে বাসা। সেদিন বাসায় ফিরে আবারও ঘুম। তারপর আবারও কারখানা রাতে বাসা। কোনো কোনো দিন রাতে ফ্যাক্টরীতেই থেকে যেতাম। পকেটে টাকা থাকতো না যে বাসায় যাবো। মাসের শেষে কোনো ভাবেই টাকা থাকে না পকেটে। টিউশনি করাইনা বলে অবস্হা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
জানুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহে আবারও একদিন রহমত ভাই আসলো। সেদিন আমার কাজ ছিলো ডাইং সেকশনে। স্বভাবতই গায়ের জামা নষ্ট হয়ে গেছে। এই কাজটা আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন এবং কষ্টকর মনে হয়। রহমত ভাই জানালো দু'দিন আগে ফোনে জানানো হয়েছে যে কাল সকাল ১০ টায় আবারও ঐ অফিসে যেতে। আর কিছু নাকি বলেনি।
তারপরের দিন যথারীতি ছুটি ছিলো না আমার। দিনের শিফটের কাজ রাতে পুষিয়ে দিতে হবে। একবার ভাবলাম যাবো না, হুদাই টাকা নষ্ট। বেতনটা তখনও হয়নি। রহিম ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম সেটাই শোধ করা হয়নি। তবু গেলাম কাওরানবাজারের সেই অফিসে। আজকে অফিসে ঢুকবার আগে লিফটে বসে থাকা দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম ৬ তলায় কিসের অফিস। সে এমন একটা কোম্পানীর নাম বললো যার নাম ঢাকা শহরের বড় বড় কর্পোরেট হাউজ এমনকি বিলবোর্ডে শোভা পায়। আমি তখন ১০০ ভাগ শিওর হয়ে গেলাম হবে না এই চাকুরী। সুধাই আরেকটা ইন্টারভিউ দিতে আসা।
যাই হোক অফিসে ঢুকে রিসেপশনে নিজের নামটা বলতেই বলা হলো একটা রীটেন এক্সাম দিতে হবে তারপর আরেকটা ইন্টারভিউ। রীটেন এক্সামের নাম শুনেই মাথা ঘুরতে লাগলো। ক্যালকুলেটর কলম কিছু আনিনি। পরীক্ষা দিতে বসে মাথা ঘুরতে লাগলো। ছোট ছোট হিসাব আর লিফো ফিফো আর ছোট্ট একটা স্ট্যাটসের হিসাব। পাশের টেবিলে ক্যালকুলেটর চাইতেই এক্সামিনার এসে বললো,"কোনো সাহায্য করতে পারি?"
: জ্বী আমি ক্যালকুলেটর আনিনি।
: কেন? আপনাকে কি বলে দেয়া হয়নি যে আজকে রীটেন দিতে হবে? ক্যালকুলেটর আর কলম তো আপনাদের সবাইকে আনতে বলা হয়েছিলো।
: আসলে আমার নিজের কোনো মোবাইল ফোন নেই। যার মোবাইল সে এতকিছু বুঝতে পারেনি।
: আচ্ছা।
এই বলে এক্সামিনার মেয়েটা সামনে চলে গেলো একটা ছোট্ট ৮ ডিজিটের ক্যালকুলেটর নিয়ে আসলো।
: এটা ইউজ করতে পারেন।
লিফোর হিসাবগুলো সব মিলিয়ন ডলারের ঘরে, ৮ ডিজিটের ক্যালকুলেটর দিয়ে এত অল্প সময়ে কিভাবে কাজ করবো জানি না। কোনো মতে খাতাটা জমা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলাম। বসে রইলাম অনেক ক্ষন। এদিকে আশে পাশে পরীক্ষার্থীনি আর পরীক্ষার্থীরা সবাই হাসি খুশি। মনে হচ্ছে সবার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে এবং সবাই গোল্ডেন এ প্লাস। এর পর শুরু হলো নাম ডাকা আর পূর্বের ইন্টারভিউ রুমে ঢুকতে থাকা আর বের হতে থাকা। সবার শেষে ডাক পড়লো আমার। ততক্ষনে করিডোর পুরো ফাকা। বোঝা গেলো আমি সবচেয়ে কম মার্ক পেয়েছি।
: আপনি আশফাক রহমান?
: জ্বী।
: হুমমম..... (খাতাটা বন্ধ করে) ওকে। আপনি যেখানে চাকুরী করছেন সেখানে কি আপনি চুক্তিবদ্ধ?
: না।
: আপনাকে যদি বলা হয় জয়েন করতে তবে কবে নাগাদ জয়েন করতে পারবেন?
: কালকেই।
: আপনি যদি সিলেক্টেড হন আপনাকে যেকোনো সময় ঢাকার বাইরে যেতে হতে পারে কোম্পানীর কাজে। এমনও হতে পারে ওখানে সপ্তাহ থেকে শুরু করে মাস খানেক হতে পারে। এমনও হতে পারে আপনাকে ওখানেই পোস্টিং হতে পারে। আপনার কি কোনো সমস্যা হবে?
: জ্বি না।
: আপনার পাসপোর্ট করা আছে?
: জ্বি না।
: হুমম (এই বলে সিভিটা আবারও দেখতে শুরু করলেন) লুক, এজ ফার এজ ইউ নো উই আর দ্যা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানী, আওয়ার এনভায়রমেন্ট ইজ টোটাল্লী ডিফারেন্ট। সো হোয়াট ডু ইউ থিঙক ক্যান ইউ কোপ আপ উইথ আওয়ার এনভায়রনম্যান্ট?
: (এই সেরেছে, ইংলিশে এনসার দিতে হবে) ওয়েল, দো দিস ইস মাই ফার্স্ট টাইম টু ক্যাচ আপ সাচ এন ইন্টারভিউ বোর্ড হু আর রিয়েলি রেসপেক্টফুল অল দ্য ওয়ে টু মি, আই হ্যাভ সিট বিফোর লটস অফ ইন্টারভিউ বোর্ড এন্ড সাম অফ দ্যাম অফার্ড মি দ্যা রিসেপশনিষ্ট পজিশন এন্ড ইভেন গা্র্ড পজিশন। মাই বডি ওয়াজেনট ফিট এনাফ টু ডু দ্যা গার্ড জব বাট আই ডিড দ্যা রিসেপশনিষ্ট জব। সাম ইন্টারভিউ বোর্ড আস্কড মি হোয়াই আই স্টাডিড ইন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, হোয়াই নট ইন মাদ্রাসা! আই থট আই এম বেটার স্যুটেড দোস পজিশন। কাপল অফ ইয়ারস আই ওয়াকড এলং দ্যা স্ট্রিট জাস্ট টু সেভ মানি ফর ডুয়িং টিউশনিস। বাট নাও আই এম দ্যা কোয়ালিটি কন্ট্রোলার অফ এ গার্মেন্টস এন্ড দো আই এম দ্যা কোয়ালিটি কন্ট্রোলার গাই, লটস অফ টাইমস আই হ্যাভ কারক্টেড দেয়ার লেজারস এন্ড হোল একাউন্টিং সেকশনস উইথ ট্যাক্স অডিটস। সো, ইয়েস, আই ক্যান ওয়াক লাইক ইউ এন্ড এজ দ্যা ডেস পাস বাই, আই ক্যান ডু দ্যা টাফেস্ট পার্ট। (যদিও এরকম ইন্টারভিউ বোর্ডের মুখোমুখি আমি প্রথম হচ্ছি যারা আমার প্রতি সত্যিকার ভাবেই শ্রদ্ধাশীল, এর আগে যত ইন্টারভিউ বোর্ডের মুখোমুখি হয়েছিলাম তাদের কেউ না কেউ আমাকে রিসেপশনিস্ট এর পজিশন এমনকি গার্ডের লজিশন অফার করেছিলো। আমার শরীরের ফিটনেসের অভাবে গার্ডের চাকরীটা পাইনি কিন্তু রিসেপশনিস্টের কাজও করেছি কিছুদিন। কিছু ইন্টারভিউ বোর্ড আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো আমি কেনো মাদ্রাসায় না পড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লাম। আমি মনে করা শুরু করেছিলাম আমি বোধ হয় এসব কাজেরই যোগ্য। বেশ কিছু বছর রাস্তায় হেটে হেটে টিউশনি করাতে যেতাম টাকা বাচানোর জন্য। কিন্তু এখন আমি একটা গার্মেনৎসের কোয়ালিটি কন্ট্রোলার এবং সে কোম্পানীর একাউন্টিং এর অনেক সমস্যারও সমাধান করেছি। তাই হ্যা, আমি আপনাদের পথে হাটতে পারি এবং দিন যত যাবে আমি সবচেয়ে কঠিন কাজটাও করতে পারবো ।)
আমার দিকে সবাই অনেক ক্ষন তাকিয়ে ছিলো। আমি মনে হয় এরকমই বলেছিলাম। ঐ ভদ্রলোক একটু মুচকি হাসিলেন। পাশের সেদিনকার আপুটা তার কানে কি যেনো বললেন। তাকে কি যেনো ইংলিশে ফিস ফিস করে উঠে গেলেন চেয়ার থেকে এবং চলে গেলেন রুমের বাইরে। রুমের আপুটা মাথা নীচু করে তার আইফোনে মনোযোগ দিলেন। আমি রুমের চারিদিকে তাকাতে থাকলাম। আমার সামনে একটা পানির গ্লাস। পানির গ্লাসটায় অর্ধেক পানি। তেষটা পেয়েছিলো প্রচন্ড। ভাবছিলাম খাবো কিনা। আবার খেলে যদি কিছু মনে করে, যদি কারো ঝুঠা খেয়ে ফেলি!
: এক্সকিউজ মি!
: বাইরে গিয়ে বা দিকে কীচেন আছে। উমমম....আচ্ছা আপনি বসুন। কফি খাবেন না চা?
: আমি ঠান্ডা পানি খাবো। তেষ্টা পেয়েছে। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
: করুন?
: কোনো ভুল হয়েছে কি?
: ও আচ্ছা আপনাকে তো বলা হয়নি। সরি আসলে .... ওকে, ইউ আর সিলেক্টেড। রহমান ইজ ব্রিঙ্গিং দ্য কন্টাক্ট পেপারস। ইউ হ্যাভ ওয়ান উইক টু জয়েন। ইফ ইউ ক্যান জয়েন টুমোরো ইট উইল বি গুড ফর আস।
তারপর কি হলো আমি জানি না। পানি আসলো কি আসলো আমি জানি না। কোনো কাগজে সাইন করেছি কি করিনি সেটাও জানি না। এমনকি এটাও জানি না যে আমি কবে জয়েন করার ডেট দিয়েছিলাম।
যখন সম্বিৎ ফিরে পেলাম তখন দেখলাম আমার সামনে রাস্তার ও পাশে বসুন্ধরার বিশাল দুটো চূড়া আর রাস্তা ভর্তি জ্যাম আর হাতে দুটো মোটা ফাইল।
বাসায় এসে লম্বা গোসল দেই। রহিম সাহেব পাশে এসে বসলেন," আশফাক ভাই, আজকা কি কিছু হবে?"
আমি কোনো কথা বললাম না। উনি বলতে থাকলেন," চুতিয়ার লাইফ নিয়া ভাইবা লাভ নাই। তিনটা এডাল্ট নামাইয়া রাইট করছি। যদি কন তো চলেন আজকা হোটেলে যাই। ভালো একটা হোটেল পাইছি। মিয়া আপনে তো ভদ্র মানুষ, যাইবার চান না। লন আজকা যাই। আরে ধুর, এই চাকুরি হয় নাই তো কি হইছে? এই যে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় লোক, বিল গেটস...ও তো পাশ করনের ১০ বছর পরও বেকার আছিলো। কেউ চাকুরী দেয় নাই। তারপর তো এই কম্পুটার বেইচ্যা এত টাকা কামাইলো...."
: রহিম ভাই, আমি যদি নতুন একটা বাসা নেই আপনি কি থাকবেন আমার সাথে? আপনার ভাড়া দিতে হবে না।
রহিম ভাই আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালেন,"মিয়া ছুপা রুস্তম.... ঐ মিলন শফিক তাড়াতাড়ি বিরানীর প্যাকেট আর কোকের ২ লিটার লইয়া আয়। আজকা কোনো ভাত হইবো না। বিরানীর প্যাকেট খাইয়া দোকান থিকা ডেক সেট লইয়া আয়। বাড়ি আলার মায়েরে বাপ। আজকা রাইত ভইরা গান বাজামু।"
সেদিন রাতে জেগেছিলাম, পুরো রাত গান শুনেছিলাম, রহিম ভাই আমার সাথে নতুন ফ্লাটে থাকবে না। তবে কথা দিছে প্রতি শুক্রবার আর শনিবার আমার বাসায় খাওয়া দাওয়া করবে।
সমস্যা হলো আমি এখনও ঐ মতিঝিলের ম্যাসেই আছি। আমার বাবা মা ঢাকায় আসতে চাননি। আর আমি রহিম ভাইকে ছাড়া একা থাকবো না। যদিও সে রাতের পর বাড়ি আলা এ মাসেই মেস ছাড়তে বলেছে। আর আমরা এখনও নতুন বাসা পাইনি এবং আরেকটু পর ভোর হলেই রাস্তায় নামতে হবে।
রহিম ভাই, তার স্বভাব মতো ঘুমাচ্ছে আর আমি আমার নতুন ল্যাপটপে ব্লগীং করছি আকাশের চাদের নীচে। জীবনটা অদ্ভুত, তাই না?
২| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৩৯
মোঃ জুলকার নাঈন বলেছেন: অনেক দিন আমি ব্লগে লিখি না। মাঝে মাঝে আসি। ২ একটা লেকাহা পড়ি। অনেক অনেক চমৎকার একটা লেখা পড়লাম। খুব ভাল লাগলো। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল। লেখাটা পড়ে আমি নিজেও অনু্প্রাণিত হলাম।
০১ লা মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৩৯
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। লেখাটা যে ভালো লেগেছে তাতেই আমি খুশী। দোয়া করবেন
৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৫১
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
এটা কি গল্প নাকি? কেমন আছেন?
০১ লা মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৫৪
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: এখন জানি না। হাওয়ায় ভাসছি।
হ্যা, এটা আমারি গল্প। তবে আগের সেই দিন গুলো মিস করি। মনে হয় কস্টে ছিলাম ভালোই তো ছিলাম। মানুষ আমাকে কত স্নেহ করতো। এখন সবাই কেমন যেনো ভয় পায়, যখন কথা বলে তখন সমীহ করে।
আমি এরজন্য প্রস্তুত ছিলাম না
৪| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:৪৩
খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনার লিখা পড়ে মনটা ভালো হয়ে গেলো। অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৩
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটা পড়বার জন্য। নিজের অনুভূতিগুলো নিয়েই এই ব্লগ আমার
৫| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:৫০
অসামাজিক সাব্বির বলেছেন: ভাই চারিদিকের এত গালাগালি , রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার মাঝে আপনার লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো । এই ধরণের লেখার জন্যই মাঝে মাঝে এই ব্লগে আসি । শুভ কামনা রইল ।
১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৪
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: এমন কমেন্ট সত্যি বড্ড অনুপ্রেরনা দেয়
৬| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৬
মনিরা সুলতানা বলেছেন: শুকনা মুখে ব্লগ এ এসে ঘুরে যাই , সব একধরনের লেখা।।
আপনার লেখা চোখে পরে নাই
অনেক ভাল লেগেছে লেখা...
শুভকামনা
১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৪
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: আমার লেখা চোখে পড়ার মতো কি?
৭| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:৫০
সামুর ভক্ত বলেছেন: শুভকামনা ।
১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৪
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: আপনাকেও
৮| ১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৫০
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনার লেখা অবশ্যই চোখে পড়ার মত
আমি অবশ্য এসছিলাম খেয়া ঘাট এর কমেন্ট অনুসরন করে, উনার মত সংবেদনশীল একজন লেখক যখন আপনার প্রশংসা করেছেন , আমি কিছু না বললে ও হবে ।
১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:২৫
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: খেয়াঘাট, মনিরা সুলতানা, কখনো মেঘ কখনো বৃস্টি, অপু স হ অনেকের লিংক আমি ফেভারিটসে রেখেছি। যদি তুলনা করতেই বলেন তাহলে বলবো আপনাদের কাছে আমি হলাম জ্যোষ্ঠ্যের ফজলী আমের সাথে মান্দার ফলের তুলনা।
আপনার নামটা দেখলেই ইদানিং সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রমনকাহিনীগুলো কেন কিনলাম তার জন্য আফসোস হয়।
অভিযোগ: আপনি লিখতে এতো কৃপনতা করেন কেন জানতে পারি?
৯| ১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:১৮
বাদশা নামদার বলেছেন: পড়ে ভাল লাগল ।আপনার জন্য শুভ কামনা
১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:২৬
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: আপনার জন্যও শুভ কামনা।
১০| ১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৩০
কুন্তল_এ বলেছেন: দারুণ ইন্সপায়ারিং। অনেক দূর যাবেন আশাকরি
১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৩৩
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: আপাতত কাওরান বাজার থেকে মতিঝিল খুব বেশী হলে রাজশাহী বা চট্টগ্রাম। এর বেশী যেতে পারছি না।
আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:১৩
ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: গরীবের পোস্টে কোনো কমেন্ট নেই