নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কি নিয়া চিন্তা করা যায় আপাতত সেইটা নিয়া চিন্তা করতাছি!

বাধ ভাইঙ্গা যায় আওয়াজের ঠেলায়!

ঘুমাইলে চোখে দেখি না!

ঘুমাইলে চোখে দেখি না, জাইগা থাকলে ঘুম আসে না! টেনশনে থাকি ইদানিং কারন একটা জিনিস চিন্তা কইরা পাই না যে কি নিয়া চিন্তা করন যায়! আজব বিলা!

ঘুমাইলে চোখে দেখি না! › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের পটরেখা।

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১০

রহিম ভাই সকালে উঠেই গরম চা করলেন। আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বললেন,"স্যারজী, গরম গরম চা। বড় চাকুরী করেন, গরম গরম চা খান।"

আমি চোখ খুলেই দেখি মগে ধোয়া ওঠা চা। হাতে নিয়ে বললাম,"ভাই, বাসা ঠিক হয়েছে?"

: বাসা নিয়া চিন্তা কইরেন না। ব্যবস্হা হইয়া গেছে।

: ভালো খবর শুনালেন। মিলনকে এই নম্বরে একটু ফোন দিতে বইলেন। কাঁচপুরের ওদিকে একাউন্টিং এর কাজ। বললো নতুন হলেই চলবে, বেতন ভালো দিবে।

: বাপরে, একাউন্টিং! টাকা পয়সার ব্যাপার।



রহিম ভাই চা হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে নাম্বারটা দেখতে লাগলো। মনে হলো সে বিয়ের জন্য কন্যা নির্বাচন করছে।

: ভাই, মানুষের সবকিছু জানা সত্বেও তাকে আপনি আপনার বাড়িতে রেখেছেন। জানি একসময় চুরি করতো, কিন্তু সবারই একটা সুযোগ দেয়া দরকার। আমি কিন্তু এটা আপনার কাছ থেকেই শিখেছি।

: আচ্ছা আমি দেখতেছি।



রহিম ভাই উঠে চলে গেলো। অফিসের যাবার জন্য রেডী হলাম। কয়েকদিন আগে অবশ্য আমার রুম থেকে দুটো শার্ট হারিয়ে গেছে। এসএম গার্মেন্টস থেকে শেষদিন ১০ টা এনেছিলাম। ৮ টা বিক্রি করে চলেছিলাম কিছুদিন। দুটো রেখে দিয়েছিলাম বাবাকে দিবো বলে। কাল রাতে খুজে পেলাম না আলমারীটায়। রহিম ভাইকে বলিনি, বললে হয়তো বাসা মাথায় তুলবে।



ইদানিং অফিস টাইমের শুরুতে সিএনজি খুব স হজেই পাওয়া যায়। তবে মিটারটা এরা কিভাবে বন্ধ রেখে চালায় সেটা বুঝি না। কাজটা অবৈধ, পুলিশ ট্রাফি জনতা সবাই দেখছে, মিটারের চেয়ে বেশীই টাকা দিচ্ছে বৈকি। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না, এমনকি আমিও না। প্রতিদিন সকালে ১২০ টাকা দিয়ে যাই, যতক্ষন না এর মধ্যে না পাই ততক্ষন দাড়িয়ে থাকি। অন্যায়কে এভাবেই প্রশ্রয় দেয়ার কারনেই সরকার কিছু বাজে কাজ সরকারী ভাবেই করে ফেলছে আর পারও পেয়ে যাচ্ছে।



অফিসে ঢুকতেই সায়মা ম্যাডামের কল এল।তার ডেস্কটা অফিসের এক কোনায়। কোয়ালিটি এন্ড ইনভেন্টরীর ম্যানেজার, বয়স কত চেহারা দেখে উপায় নেই। অফিস যখন করতে আসেন তখন মনে হয় কোনো নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করতে এসেছেন।

: আশফাক সাহেব, বসুন। কাজ কর্ম কেমন লাগছে?

: ভালো ম্যাম। তবে দুটো শিপম্যান্টের মাঝে খুব বেশী কিছু করার নেই।



কম্পিউটারে কি যেনো করছিলেন, সেটা থামিয়ে আমার দিকে ঘুরে বসলেন। মুখে একটা স্মিত হাসি নিয়ে বললেন," রেসপন্সিবিলিটি চাচ্ছেন? প্রেশার নিতে পারবেন? শুধু কাজ করলেই তো হয় না, কোয়ালিটি একটা বড় ব্যাপার।"

: জ্বি, আমি চেষ্টা করি নির্ভুল ভাবে কাজগুলো করতে।

: হুমম.....আচ্ছা গত সপ্তাহে বরিশাল জোনের কি হয়েছিলো?

: ডিস্ট্রিবিউটর আগে লগ পেয়ে ছিলো, চালান যেতে দেরী করেছিলো ভেন্ডর।

: এই ভেন্ডর এর আগেও সমস্যা করেছে। শুনেছি হাসান সাহেবের ছোট ভাইয়ের কোম্পানী এটা।

: আপা ভেন্ডরের সমস্যা না ওটা। হরতাল রাস্তা ব্লকের জন্য তারা বেশ কিছু লোকাল স্পেস ভাড়া নিয়ে সেখানে রেখেছিলো। আমি নিজে খোজ খবর নিয়েছি।

: কিন্তু এগুলো তো বাইরে শুনবে না।

: একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আমার মনে হয় ভেন্ডরের লোকাল স্পেস কনসেপ্টটা ভালোই। হাসান সাহেবের সাথে কথা বলিনি আমি, তবে ফরিদপুর, নেত্রকোনা, ঝিনাইদ হের যে লোকাল স্পেস সেগুলো হলো বড় বড় আড়ত আর নামকরা পাইকারী ব্যাবসায়ী। কোম্পানী যদি নিজের জন্য এভাবে কিছু ভেবে দেখে....

: ২০০৭ এর দিকে করেছিলাম কিন্তু পরে দেখা গিয়েছিলো সেগুলো সেনাবাহিনী উচ্ছেদ করে ফেলে। ফলে অনেক লস যায় সে বছর।

: কিন্তু সে পরিস্হিতি তো প্রতিবার হয় না। আর দেশ যে ভাবে যাচ্ছে সামনে পলিটিক্যাল সরকারই থাকবে। লোকাল স্পেসগুলোর সাথে টেম্পোরারী কোনো কন্টাক্টে যাওয়া যায় আর এসব ভেন্ডরের উপর রেসপন্সিবিলিটি দিলে লায়েবিলিটিজ সাথে খরচের ব্যাপারটাো কমে আসবে।

: উমমম.....স্বর্নাকে বলুন একটা মিটিং কল করতে, আপনি ফারজানাকে পাঠিয়ে দিন আমার এখানে, আর আপনি একটা বুলেট পয়েন্টে আমাকে মেইল ফরোওয়ার্ড করুন। আপনি বৃহস্পতিবার মিটিং এটেন্ড করে শুক্রবার খুলনা যাবার ডেট ফেলুন। আমি জাকির সাহেবের সাথে কথা বলছি শিডিউল নিয়ে।



পুরোটা দিন এই একটা মেইল করা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিলো না আমার। সারাটা দিন এমপায়ার আর্থ খেললাম অফিসে বসেই। আটিলা দ্যা হুনকে নিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে সবকটা মিশনেই হারলাম। আর সকালে এসে যেই মেইলটা করলাম সেটার উপর মোট ২৩ টার মতো মেইল হলো। বিকেল ৫ টা বাজে ইংল্যান্ড থেকে একজন সেই মেইলের উপর লাস্ট মেইলটা করে যেখানে সে জানায় টেলিকনফারেন্সের কথা। স্বর্না আর ফারাজানা সারা দিন মেকআপ আর মিটিং। মাঝখানে লান্ঞ্চ ব্রেকে এসে স্বর্না ঝাড়ি দিলো,"আপনার বোমা মারার আর কোনো সময় ছিলো না? মিশকাতে সাথে ফারজানার আজ শপিং এ যাবার কথা ছিলো। সামনের শুক্রবার ও কানাডা ফিরে যাচ্ছে।"

: এটা নিয়ে তো দেখলাম মেইলের উপর মেইল আসছে।

: আসলে বসদের কোনো কাজ নেই, বিশেষ করে এই সায়মা স্লাটের। পার্টি আর লংড্রাইভ। আপনার কাজটা ঠিকই দেখবেন নিজের ক্রেডিটে নিয়ে নিবে।



৫ টার পর দেখলাম পুরো অফিসে একা আমারি কোনো কাজ নেই। সবাই মহাব্যাস্ত। জাকির স্যার অফিসে নেই, তাই কাউকে বলতেও হয় না যাচ্ছি বা যাই। স্বর্না ফারজানা কেয়া কেউ ডেস্কে নেই।



রুমে ঢুকেই দেখি রহিম ভাই বসে আছে মুখ কালো করে।

: কি খবর? জমিদার সাহেবের সাথে ঝগড়া হলো নাকি?

: আমার বালিশের নীচে থাকা ৫০০ টা টাকা সকাল থেকে খুজে পাচ্ছি না। মিলনকে জিজ্ঞেস করলাম, বেচারা সেই যে দুপুরে বের হলো আর আসে নি।

: ভালো করে খুজেছেন টাকাটা কোথায় রেখেছেন?

: ভালো করে খুজছি মানে? আলমারী সরাইছি, রোদে কাপড় শুকাতে দেয়া হয়েছিলো, সেইখানে খুজছি। কাজের বুয়ারে জিজ্ঞেস করছি। দোকানে খুজছি। আজকা বিল দিমু ভাবছিলাম, টাকা বড় কথা না। এতকিছু করলাম তারপরও ৫০০ টা টাকার নোট সামলাতে পারলো না। শুক্রবার রাতে টাকাটা বালিশের নীচে রেখেছিলাম বিলের কাগজের সাথে।

: দাড়ান, আপনি আমাকে রবিবার সিএনজি ভাড়া ভাংতি ছিলো না। তখন আপনি আমাকে একটা পেনড্রাইভ আর সিএনজি ভাড়া দিয়েছিলেন। আমি এখনো প্যানড্রাইভ কিনিনি।



রহিম ভাই দাড়িয়ে গেলো, কেমন যেনো অস্হির মনে হচ্ছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে কার নম্বরে কল দিলো। হঠাৎ আলমারীর এক কোনায় মোবাইল বাজার শব্দ আসলো।



"হারামজাদা মোবাইলটাও নেয় নাই, ওর মারে*****" এই বলে লুঙ্গির উপরেই প্যান্ট পড়লেন, আমার হাত ধরে কাপা গলায় বললেন,"ভাইরে, পোলাটারে মুখের ভুলে 'চোউরার পো' বইলা ফেলাইছি। আমি আসার আগে যদি ও বাসায় আসে, ও আইবো, জামা কাপড় নেয় নাই।" এই বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।



আমি কিছু বলার আগেই সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। পুরো রুমে জামা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আরে ঐ তো আমার দুটো শার্ট। এবার মনে পড়েছে, কয়েক সপ্তাহ আগে আমি এই শার্ট ভুলে রহিম ভাইয়ের সাথে রেখে দিয়াছিলাম প্যাকেট খুলে। আনবো আনবো করে আনা হয়নি।



একটা বিশ্রি পরিস্হিতি নিয়ে পুরো বাসায় একা বসে আছি এখন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার একেছেন সময়ের পটরেখা।

সত্যি করে বলেন মিলন আপনাদের কে ভুল প্রমানিত করায় , ভাললেগেছে না ।

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৪

ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: রহিম ভাই একটু আগে বাসায় ফিরেছেন মদ খেয়ে। শফিক নিয়ে এসেছে।

আমি এখন বের হবো ভেবেছিলাম কিন্তু রহিম ভাই প্রায় অচেতন। আমার এখনও মন বলছে ও আসবে ফিরে।

কিরকম লাগছে জানি না, তবে আয়নার সামনে দাড়ানো হবে না কিছুদিন

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

কুন্তল_এ বলেছেন: +++ :)

১৫ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৪:১০

ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.