নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসে কিচির মিচির

হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ

মো রেজাউল করিম

যুক্তি আর পাল্টা যুক্তির কাটাকুটিতে জন্ম হোক বিশুদ্ধ স্বপ্নের !

মো রেজাউল করিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা দিবসে মাকে নিয়ে কয়েকটি কবিতার সংগ্রহ

১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:১৩

প্রথমেই

মা দিবসে পৃথিবীর সকল মাকে জানাই অনেক অনেক অনেক শুভেচ্ছা !





মা

_ কাজী নজরুল ইসলাম



যেখানেতে দেখি যাহা

মায়ের মতন আহা

একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,

মায়ের যতন এত

আদর সোহাগ সে তো

আর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই।



হেরিলে মায়ের মুখ

দূরে যায় সব দুখ,

মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,

মায়ের শীতল কোলে

সকল যাতনা ভোলে

কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।



কত করি উৎপাত

আব্দার দিন রাত,

সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!

আমাদের মুখ চেয়ে

নিজে র’ন নাহি খেয়ে,

শত দোষে দোষী তবু মা তো ত্যাজে না।







পল্লী জননী

_জসীম উদ্দীন



রাত থম থম স্তব্ধ নিঝুম, ঘোর- ঘোর-আন্ধার,

নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।

রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,

করুণ চাহনি ঘুম্ ঘুম্ যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।

শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,

তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।

ভন্ ভন্ ভন্ জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান,

এঁদো ডোবা হতে বহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ?

ছোট কুঁড়ে ঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,

শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।







জননী জন্মভূমি

_সুভাষ মখোপাধ্যায়



আমি ভীষণ ভালবাসতাম আমার মা-কে

-কখনও মুখ ফুটে বলি নি।

টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে

কখনও কখনও কিনে আনতাম কমলালেবু

-শুয়ে শুয়ে মা-র চোখ জলে ভ’রে উঠত

আমার ভালাবাসার কথা

মা-কে কখনও আমি মুখ ফুটে বলতে পারি নি।



হে দেশ, হে আমার জননী-

কেমন ক’রে তোমাকে আমি বলি!







বীরপুরুষ

_রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে

মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।



তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ'ড়ে

দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক'রে,

আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে

টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।

রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে

রাঙা ধূলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।



সন্ধ্যে হল, সূর্য নামে পাটে,

এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।

ধূ ধূ করে যে দিক-পানে চাই,

কোনোখানে জনমানব নাই,

তুমি যেন আপন-মনে তাই

ভয় পেয়েছ-ভাবছ, ‘এলেম কোথা।’

আমি বলছি, ‘ভয় কোরো না মা গো,

ওই দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা।’



আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে-

অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো।

তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,

‘দিঘির ধারে ওই-যে কিসের আলো!’

এমন সময় ‘হাঁরে রে রে রে রে’



ওই - যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে!

তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে

ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করছ মনে,

বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে

আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,

‘আমি আছি, ভয় কেন, মা, করো!’



তুমি বললে, ‘যাস নে খোকা ওরে,’

আমি বলি, ‘দেখো-নাচুপ করে।’

ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,

কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে

শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।

কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,

কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।।



এত লোকের সঙ্গে লড়াই ক'রে,

ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।

আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে

বলছি এসে, ‘লড়াই গেছে থেমে,’

তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে

চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে

বলছ, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল’

কী দুর্দশাই হত তা না হলে!’







কোথায় ছিলাম আমি

_কাজী নজরুল ইসলাম



মা গো! আমায় বল্তে পারিস কোথায় ছিলাম আমি-

কোন্ না-জানা দেশ থেকে তোর কোলে এলাম নামি?

আমি যখন আসিনি, মা তুই কি আঁখি মেলে

চাঁদকে বুঝি বল্তিস-ঐ ঘর-ছাড়া মোর ছেলে?

শুকতারাকে বল্তিস কি, আয় রে নেমে আয়-

তোর রূপ যে মায়ের কোলে বেশি শোভা পায়।

কাজলা দিঘির নাইতে গিয়ে পদ্মফুলের মুখে

দেখ্তিস কি আমার ছায়া, উঠ্ত কাঁদন বুকে?

গাঙে যখন বান আস্ত, জান্ত না মা কেউ-

তোর বুকে কি আসতাম আমি হয়ে স্নেহের ঢেউ?







কখনো আমার মাকে

_শামসুর রাহমান



কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।

সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে

আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না।

যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি,

যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো

বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান

লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়,

পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর

সংসারে এসেও মা আমার সারাক্ষণ

ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর

জানা আছে, টপ্পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল

কোনোদিন। মাছ কোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে

অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন

ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন

সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়,

ছেঁড়া শার্টে রিফু কর্মে মেতে

আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে

অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না

এতকাল কাছাকাছি আছি তবু জানতে পারিনি।

যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে

রেখেছেন বন্ধ ক’রে আজীবন, এখন তাদের

গ্রন্থিল শরীর থেকে কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু

ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে !







আমাদের মা

_ হুমায়ুন আজাদ



আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি বাবাকে আপনি।

আমাদের মা গরিব প্রজার মতো দাঁড়াতো বাবার সামনে

কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক'রে উঠতে পারতো না

আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে

মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয় নি।

আমাদের মা আমাদের থেকে বড়ো ছিলো, কিন্তু ছিল আমাদের সমান,

আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেণীর, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।

বাবা ছিলেন অনেকটা আল্লার মতো, তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম

বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো, তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম

বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়ল বিলের প্রচণ্ড চিলের মতো, তার ছায়া দেখলেই

মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।

ছায়া স'রে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।

আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু_দিনরাত টলমল করতো

আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;_সারাদিন ঝ'রে ঝ'রে পড়তো

আমাদের মা ছিলো ধানখেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো

আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো

আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর - আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।

আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কি না আমরা জানি না

আমাদের মাকে আমি কখনো বাবার বাহুতে দেখি নি

আমি জানি না মাকে জড়িয়ে ধ'রে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কি না

চুমো খেলে মার ঠোঁট রকম শুকনো থাকতো না।

আমরা ছোটো ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড়ো হ'তে থাকি

আমাদের মা বড়ো ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হ'তে থাকে।

ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।

সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।

আমাদের মা দিন দিন ছোটো হ'তে থাকে

আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।

আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝ'রে ঝ'রে পড়ে না

আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না

আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করি না

আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি

কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত

আমাদের মা আজো টলমর করে।







মা

_কাজী কাদের নেওয়াজ



মা কথাটি ছোট্ট অতি

কিন্তু জেনো ভাই

ইহার চেয়ে নাম যে মধুর

ত্রিভূবনে নাই।









[মাকে নিয়ে আপনাদের কাছে যদি ভালো আরও কোন কবিতার সন্ধান থাকে তাহলে কমেন্টে জানান, আপডেট করে নিবো । ধন্যবাদ ।]



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪

সুফিয়া বলেছেন: মাকে নিয়ে আমার লেখা আছে বেশ কিছু। তার একটি শেয়ার করলাম এখানে।


মা ডাকে না বলে



শহর ছেড়ে গ্রাম
গ্রামের শেষে বাড়ি
বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ে
মা ঘুমিয়ে আছে মাটির ঘরে
চারটি বছর ধরে।
আমি ঘুমাই দালান কোঠার ঘরে
নরম বিছানার পরে।

ভেবে পাই না তাই
আন্ধার ঘরে কঠিন মাটির তলে
মায়ের দিন কাটে কেমন করে
একা নির্জনে, নিঃশব্দ আগ্রাসনে।

গাঁয়ের বাড়ির ঘরে
মা থাকে আর জেগে
আমার পথ চেয়ে।
আমার তাই পথ হাঁটা হয়না আর
গাঁয়ের বাড়ির পাণে
আগের মতো করে
মা ডাকে না বলে।

২| ২৪ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৩৪

~মাইনাচ~ বলেছেন: সুন্দর একটা পোষ্ট। এখানে জুড়ে দিলাম :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.