নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাস। ক্লাশ ফাইভের দুটো পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল। প্রথমটা স্কলারশিপ। দ্বিতীয়টা সেন্টার পরীক্ষা। আমাদের নাজিরপুর থানা থেকে ক্লাশ ফাইভে মোট ১৩ জন বৃত্তি পেল। মাত্র দুইজন ট্যালেন্টপুলে। সেই দুইজনের একজন আমি। আরেকজন আমার বন্ধু শিমুল। শিমুলের সঙ্গে তখনো আমার পরিচয় নেই। শিমুল শাঁখারীকাঠি স্কুলের ছাত্র। আর আমি চর বানিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। একই বছর আমার বড় ভাই বিয়ে করলেন শাঁখারীকাঠি মল্লিক বাড়িতে। শিমুল সম্পর্কে আমার বড় ভাবী'র চাচা। সেই সূত্রে পরে শিমুলের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের শুরু। শিমুল আমারে ডাকে মামু। আর আমি শিমুলকে ডাকি তালোই-মামু। সেই সম্পর্ক এখনো অটুট।
তো কয়েক দিন পরে সেন্টার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল। বরইবুনিয়া সেন্টারে আমাদের মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের সবগুলো প্রাইমারি স্কুলের ক্লাশ ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষা হয়েছিল একসঙ্গে। সেই পরীক্ষায় আমি সেন্টার ফার্স্ট হলাম। সেই বয়সে সারা গ্রামেই আমি বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলাম। এরপর ক্লাশ সিক্সে ভর্তি হলাম দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ১ লা ফেব্রুয়ারি ১৯৮০ সালে দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমাদের ক্লাশ সিক্সের প্রথম ক্লাশ। আমরা ক্লাশে তখন প্রায় ১৩৩ জন। ক্লাশ নিতে আসলেন দুই'জন স্যার। হেডস্যার বাবু মনীন্দ্র নাথ মজুমদার। আর বাংলার স্যার বাবু নির্মল কান্তি মিস্ত্রী। হেডস্যার সবার সঙ্গে পরিচিত হলেন। নিজেকে এবং নির্মল স্যারকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে স্কলারশিপ পেয়েছো কে কে? তারা দাঁড়াও?
গোটা ক্লাশে ১৩৩ জন। তার মধ্যে স্কলারশিপ পাওয়া ছাত্রছাত্রী দাঁড়ালো ৬ জন। ছেলেদের এপাশে একেবারে সামনের বেঞ্চ থেকে তাপস কুমার মল্লিক। সেকেন্ড বেঞ্চ থেকে বাবুলাল মিস্ত্রী। থার্ড বেঞ্চ থেকে স্বপন কৃমার করাতী। একেবারে পেছনের দিকের একটা বেঞ্চ থেকে আমিও দাঁড়ালাম। মেয়েদের পাশের রো থেকে দাঁড়ালো সেকেন্ড বেঞ্চ থেকে শাহনাজ খাতুন। আর পেছনের দিকের একটা বেঞ্চ থেকে দাঁড়ালো ঝর্না রানী ঢালী। কারো সঙ্গেই তখনো পরিচয় হয়নি। কেবল আমাদের স্কুল থেকে যারা ভর্তি হয়েছি তারা ছাড়া। আমাদের স্কুল থেকে তখন এসেছিলাম আমি, প্রকাশ কুমার মণ্ডল, জীবন কৃষ্ণ ঘরামী, সুনীল কুমার মণ্ডল, সুবোধ চন্দ্র মণ্ডল, শেখ মোঃ কামরুজ্জামান, কেরামত আলী শেখ, সুভাষিনী পাইক ও পারুল রানী ঘরামী। আমরা এই নয় জন ক্লাশ ওয়ান থেকে একই স্কুলে ছিলাম। আমরা পরম্পর পরিচিত। নতুন কারোর সঙ্গে তখনো পরিচয় হয়নি। হেডস্যার সবার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আর একটা ছোট্ট কাগজে আমাদের ৬ জনের নাম টুকে নিলেন। মনে মনে আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। হেডস্যার চলে যাবার পর নির্মল স্যার বললেন, হেডস্যার যাদের নাম লিখে নিলেন, তাদের জন্য একটা বিপদের খবর আছে! মুহূর্তে ভয়টা আরো বেড়ে গেল। আজকে বাড়িতে গিয়ে তোমাদের যিনি গার্ডিয়ান তাকে স্কুলে আসতে বলবা। বলবা, হেডস্যার যেতে বলেছেন। না আসলে পরে সেই বিপদের কথা বলবো। এটা এখন একটু রহস্য হয়েই থাকুক। কি বলো তোমরা? ক্লাশের বাকি ১২৭ জন সমস্বরে 'জি স্যার' বলে উঠলো। আর আমরা ৬ জন তখন বুক দুরুদুরু নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে।
পরবর্তীতে নির্মল স্যার আমাদের ক্লাশ টেন পর্যন্ত টানা বাংলা পড়াতেন। পরে বুঝেছিলাম নির্মল স্যার আসলে বাংলা'র স্যার। আর রহস্য নিয়ে কথা বলতেই তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। আমাদের স্কুলের আকারটি ছিল ঠিক এল সেভের। দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত সব ক্লাশরুম। এরমধ্যে একেবারে দক্ষিণের রুমটি ছাত্রাবাস। সেখানে ক্লাশ টেনের যারা পরীক্ষার্থী তারা তিন-চারজন একসঙ্গে থাকতেন। পরের কক্ষটি জীবেস স্যারে বাসা। তারপরেই আমাদের ক্লাশরুম। তারপর যথাক্রমে ক্লাশ সেভেন, ক্লাশ এইট, ক্লাশ নাইন ও ক্লাশ টেন পর পর। একেবারে উত্তর মাথার শেষ ক্লাশরুম হল ক্লাশ টেনের। এটা পুরোটা পূর্বমুখী। সামনে লম্বা বারান্দা। যেখানে আমরা ক্লাশ শুরুর আগে লাইনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত করতাম। তারপর একটু ফাঁকা। ডানদিকে ঘুরে লাইব্রেরি ও স্যারদের বসার রুম আর সায়েন্স ল্যাবরেটরি। তারপর একই লাইনে একটু ফাঁকা রেখেই দীঘিরজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। লাইব্রেরি ও প্রাইমারি স্কুল দক্ষিণমুখী। স্কুলের সামনে একটু ফাঁকা লম্বা মাঠের মতো। তারপরেই বিশাল দিঘী। স্কুলের দিঘীর একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব কোনে একটি তালগাছ। তালগাছের পাশে দাঁড়ালে গোটা স্কুল একসঙ্গে চোখে পড়বে। তালগাছ রেখেই বিশাল খেলার মাঠ। লাইব্রেরি ও প্রাইমারি স্কুলের পেছনে দীঘিরজান বাজারের স্থায়ী দোকানগুলো। আর মাঠের একেবারে উত্তর প্রান্তেও স্থায়ী দোকান। মাঠ ছাড়িয়ে একেবারে পূর্ব পার্শ্বে মরা বলেশ্বর নদী। নদীর সাথে পার ঘেঁষে ডিস্ট্রিক বোর্ডের বিশাল রাস্তা। প্রায় সাড়ে তিন একর জমির উপর আমাদের স্কুল অবস্থিত। এর মধ্যে শনিবার আর মঙ্গলবার খেলার মাঠে দীঘিরজানের হাট বসে।
আমাদের স্কুলে মোট ১১ জন স্যার। কোনো ম্যাডাম ছিল না। একজন দপ্তরি আর একজন ঘণ্টাবাদক। নারায়ন চন্দ্র রায় হল আমাদের স্কুলের দপ্তরি। ক্লাশে বেত চালান দেওয়া আর খাতাপত্র এগিয়ে দেঔযার পাশাপাশি কোনো নোটিশ থাকলে তা নিয়ে এসে ক্লাশ টিচারের হাতে দিতেন। আর সবার প্রিয় তালেব আলী নানা হল আমাদের ছুটির ঘণ্টার বাদক। স্কুলের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ। আমরা সবাই ডাকতাম নানা। এগারোজন স্যার হলেন, অনন্ত কুমার মজুমদার, শুকলাল হাওলাদার, ধীরেন্দ্র নাথ হালদার, সাহাদাত হোসেন, বেলায়েত হোসেন, স্বপন গোলাদার, নিত্যানন্দ গাইন, নির্মল কান্তি মিস্ত্রী, জীবেস চন্দ্র সমদ্দার, নরেন্দ্র নাথ হালদার ও মনীন্দ্র নাথ মজুমদার। মনীন্দ্র স্যার ছিলেন আমাদের হেডস্যার। নরেন স্যার ছিলেন এসিট্যান্ট হেডমাস্টার ও ইংরেজি'র শিক্ষক। জীবেস স্যার ছিলেন ইংরেজি ও একাউন্টিং শিক্ষক। নির্মল স্যার ছিলেন বাংলার শিক্ষক। মাঝে মাঝে ধর্মও পড়াতেন। নিতাই স্যার ছিলেন অংক ও বিজ্ঞানের শিক্ষক। স্বপন স্যার ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষক। ক্লাশ নাইনে আমরা স্বপন স্যারকে প্রথম পাই। বেলায়েত স্যার ছিলেন ভূগোল ও সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক। সাহাদাত স্যার ছিলেন অংক, বিজ্ঞান, ইসলাম ধর্ম ও আরবী'র শিক্ষক। ধীরেন স্যার ঠিলেন ইংরেজি ও ইতিহাসের শিক্ষক। শুকলাল স্যার হিন্দু ধর্ম আর সংস্কৃত পড়াতেন। এছাড়া স্কুলের দাপ্তরিক কাজ করতেন শুকলাল স্যার। আর অনন্ত স্যার বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান পড়াতেন।
আর কোনো ক্লাশে স্যারদের সংকট থাকলে তখন হেডস্যার প্রক্সি ক্লাশ নিতেন। হেডস্যার ছিলেন বাংলা সাহিত্যে এমএ ও এমএবিএড। ভাষা বিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সরাসরি ছাত্র। হেডস্যার ক্লাশে প্রায়ই আমাদের স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ নিয়ে খুব ঝামেলায় ফেলতেন। মাঝে মাঝে কঠিন কঠিন ট্রানস্লেশানও দিতেন। আবার হুট করে কখনো ভূগোল বা চলতি বিশ্ব থেকে জিজ্ঞাসা করতেন। আমার বাংলায় সত্যিকারের কুশলী হাতেখড়ি হয়েছিল নির্মল স্যারে কাছে। আর অংকে নিতাই স্যারের কাছে। এছাড়া ইংরেজি যা শেখার তার প্রায় সবটুকু অবদান জীবেস স্যারের। মাঝে মাঝে নরেন স্যারের কাছেও ইংরেজি'র অনেক নারী নক্ষত্রের শিক্ষা পেয়েছিলাম। বিশেষ করে ভয়েস চেইঞ্জ ও ন্যারেসান, ট্রানস্লেশান ও প্যারাগ্রাফ রাইটিংয়ে। আর সাহাদাত স্যারের কড়াকড়ি ইসলাম ধর্ম ও আরবী থেকে বাঁচতে আমি হিন্দু ধর্ম আর সংস্কৃত নিয়েছিলাম। পরে ক্লাশ টেনের ফাইনালের সময় ধর্মের বদলে একাউনিং নিয়ে এসএসসি দিয়েছিলাম।
হাইস্কুল লাইফের সেই সব হাজার হাজার ঘটনা থেকে এখানে কিছু কিছু মজার স্মৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করবো। একবার নির্মল স্যারের খুব প্রিয় ছাত্র হয়ে গেলাম কোনো এক ভাব-সম্প্রসারণে ভিন্ন স্বাদ দিয়ে। ক্লাশের প্রায় সবাই লিখেছিল- কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ভিতরে সবার সমান রাঙা। আর আমি লিখেছিলাম, নানান রঙের গাভীরে ভাই, একই রঙের দুধ। আর একটা মজার বিষয়ে কোথায় যেনো উদাহরণ দিয়েছিলাম- আগে কুটিয়াল, পরে অন্য। সেই হাইস্কুল জীবন মোর পুষ্পে ফলে ধন্য। গোটা হাইস্কুলে টানা ফার্স্টবয় হয়ে বলতে গেলে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলাম। সে কথা পরের পর্বে বলবো।
২১ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২১ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৫:০৭
নানাভাই বলেছেন: চালাইয়া যান।
পড়তাছি।
২১ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৪৬
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ নানাভাই
৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: আপনি একজন সুলেখক, তা বুঝা যায় বর্ণনার মুন্সিয়ানাতে। কিন্তু একদম প্রাইমারি স্কুল জীবন থেকে শুরু করে এতো বিস্তারিত তথ্য মনে রাখলেন কীভাবে? বিস্মিত হলাম। অবশ্য ভালো ছাত্র বলে সেটা হতেই পারে, না হয় আপনি ডায়েরি রেখেছিলেন।
“সাহাদাত স্যারের কড়াকড়ি ইসলাম ধর্ম ও আরবী থেকে বাঁচতে আমি হিন্দু ধর্ম আর সংস্কৃত নিয়েছিলাম।”
স্কুল জীবনে এভাবে বিধর্মী হওয়া যায়? মানে অন্য ধর্মের বিষয় নেবার সুযোগ ছিলো?
অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তি পর্বের। শুভেচ্ছা, প্রিয় রেজা ঘটক
২১ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৩১
রেজা ঘটক বলেছেন: আমার পাঠশালা ছিল দিনো'র মা'র পাঠশালা। তারপর প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল চর বানিয়ারী সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়। দুটোই হিন্দু প্রধান এলাকায়। আমার প্রাইমারি স্কুলে কোনো মুসলিম স্যার ছিলেন না। আমরা বাধ্য হয়ে তখন হিন্দু ধর্ম পড়তাম। আর হাইস্কুলে ওঠার পর হঠাৎ করেই আরবী আর ইসলাম ধর্ম আমার কাছে খুব খটকা লাগলো। এটা একটা কারণ। আর হ্যা, ধর্ম ছিল আমাদের অপশনাল সাবজেক্ট। ইচ্ছে করলেই অন্য সাবজেক্ট নেওয়া যেতো। আর সেই সুবিধায় আমি হিন্দু ধর্ম আর সংস্কৃত পড়েছিলাম ক্লাশ টেন পর্যন্ত। পরে এসএসসি দেবার তিন আগে আমাদের টেস্ট পরীক্ষার পর নিলাম একাউন্টিং। মানে বাণিজ্যিক গণিত। ওটা আমি তিন মাসেই রপ্ত করেছিলাম। আর রেজাল্টে পেয়েছিলাম ৯১। হ্যা, ছোটবেলা থেকেই আমি ডায়েরী লিখি। এলোমেলো ডায়েরী। আমার যা লিখতে ইচ্ছে করে তাই লিখে রাখি আরকি....
পরবর্তী সময়ে আমি অনার্সের সাবসিডিয়ারি হিসেবে স্টাটিসটিক্স ও ম্যাথমেটিক্সের বদলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত এবং ফিলোসফি নিয়েছিলাম। আর ১৭ তম বিএসএস পরীক্ষায়ও ইসলামের ইতিহাস নিয়েছিলাম। পরে ১৮ তম ও ২০তম বিসিএসএসে ফিলোসফি ও নগর উন্নয়ন নিয়েছিলাম....এ ধরনের খামখেয়ালি আমার ছিল বরাবর...
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৪৭
নষ্ট কাক বলেছেন: কপাল মন্দ, কোন দিনও ভালো ছাত্র ছিলাম না !
লিখা ভালো লেগেছে !