নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডুবেরচরের নির্বাচন!!

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭

মোল্লা বাড়ির কুতুব মোড়লের সঙ্গে কেউ যেনো গাড়লের মতো তরল না খায়, সে বিয়ষে সবাইকে হুশিয়ার করেছিলেন এ বছরের এমপি কেনডিডেট মোসলেম মাতবর। পরিবর্তনের ধারায় নতুন রাজনীতি করার অঙ্গিকার নিয়ে ডুবেরচর হাইস্কুলে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় মোসলেম মাতবরের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন তার কুয়েত প্রবাসী মেজে ছেলে আলহাজ্ব গরিবে নেওয়াজ এবং ডুবেরচর হাইস্কুলের এসিসট্যান্ট হেডমাস্টার কোরাম ব্যাপারি। মোসলেম মাতবরের ছেলে গরিবে নেওয়াজ সভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, এলাকার মুরুব্বিদের নামাজ পড়ার সুবিধার জন্য একটি দোতলা মসজিদ তিনি নির্মাণ করে দেবেন। কোরাম মাস্টার বলেছিলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য আগামীতে আমরা মোসলেম মাতবরের মত যোগ্য প্রর্থীকেই এমপি নির্বাচিত করতে চাই। আর স্বয়ং মোসলেম মাতবর বলেছিলেন, আমার দুই ছেলে বিদেশে থাকে। দুই জন হজ্ব করেছে। আমারও হজ্ব করার নিয়ত আছে। আমার টাকা পয়সার কোনো অভাব নাই। এখন জীবন সায়ান্থে এলাকার জন সাধারণের উন্নয়নে বাকি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। ডুবেরচরের সাবেক এমপি কুতুব মোড়লকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, লোকটাকে আগে আমি পছন্দ করতাম। আমি নিজেও আগে তার নির্বাচনী প্রচারে কাজ করেছিলাম। কিন্তু গাড়লটা তরল ছাড়তে পারলো না। আমাদের ধর্মে যে জিনিস নিষিদ্ধ করা হয়েছে, উনি সেই জিনিস নিয়ে পড়ে থাকেন। তাই এখন ওনার সঙ্গ ছাড়ার সময় এসেছে।

ডুবেরচর হাইস্কুলের জনসভার খবর কে বা কারা যেনো কুতুব মোড়লের কানে দিল। কুতুব মোড়ল চিকন বুদ্ধির লোক। অনেক কাজের গোপন ভিডিও আর ছবি তুলে রাখেন সবার অজান্তে। মোসলেম মাতবর ইলেকশন করবে শুনে সেই পুরানা ভিডিও আর ছবির আড়ত নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। এক সময় পেয়ে গেলেন যুবক বয়সে মোসলেম মাতবরের সঙ্গে মদ্যপানের একটা পরম মুহূর্তের ছবি। ছবিটি কয়েক হাজার কপি ওয়াশ করার জন্য তিনি ব্যস্ত হয়ে গেলেন। শহর থেকে ফিরে ডুবেরচর বাজারে তিনিও একটা জনসভার আয়োজন করলেন। এলাকার বিশিষ্ট লোকজন সেই জনসভায় এসেছেন। কিছু উৎসাহী কর্মী সেই ছবি সবার মধ্যে বিতরণ করছেন।

কুতুব মোড়ল জনসভায় কয়েকটি মাত্র কথা বললেন। কিভাবে মোসলেম মাতবরের দুই ছেলে গরিবে নেওয়াজ আর শরীফে নেওয়াজকে পাসপোর্ট ভিসা করিয়ে কুয়েতে পাঠাতে সহয়তা করেছিলেন সেই ইতিহাস। আর মোসলেম মাতবরকে তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, বন্ধু মনে করেন, প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও তার কোনো উপকার লাগলে তা করতে রাজি বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কুতুব মোড়ল আরো জানালেন, মসজিদের পুরান ইমামকে হঠানো নিয়ে কে রাজনীতি করেছিল, তা আপনাদের মনে আছে। আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু মানুষের আসল সত্যটা জানার অধিকার আছে।



দুই মাস পর...

মোসলেম মাতবরের দুই ছেলে গরিবে নেওয়াজ আর শরীফে নেওয়াজ বাবার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করলেন। অনেককে শাড়ি লুঙ্গি কিনে দিলেন। অনেকের ঘরের ছাউনি তুলে দিলেন। অনেককে গরু ছাগল কিনে দিলেন। অনেককে পড়াশুনার খরচ দিলেন। অনেকের মেয়ের বিয়ের খরচ দিলেন। আরো অনেক অনেক জনহিতকর কাজ তারা করতে লাগলেন।



নির্বাচনের দিন...

সবাই খুব উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিলেন। মোসলেম মাতবর খুব হাসিখুশি। নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জিতবেন বলে সাংবাদিকদের জানালেন। কুতুব মোড়ল চুপচাপ। তিনি কর্মীদের বলে রেখেছেন, রেজাল্ট পাওয়ার পরে যেনো কোনো ধরনের পরিবেশ নষ্ট না হয়। জয় পরাজয় আমরা হাসিমুখে মেনে নেব।

ডুবেরচরের মানুষ সারা রাত ভারী উৎকণ্ঠা নিয়ে পার করলো। পরদিন সকাল সাড়ে দশটায় ডুবেরচরের রেজাল্ট ঘোষিত হল। এক লাখ উন সত্তর হাজার ছয়শো আঠাশ ভোট পেয়ে কুতুব মোড়ল বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোসলেম মাতবর পেয়েছেন তেপান্ন হাজার দুইশো বাহাত্তর ভোট।

মোল্লা বাড়ির ভেতর সবাই উল্লাসে ফেটে পড়ল। কিন্তু কুতুব মোড়ল চুপচাপ। তিনি তিন জন কর্মী নিয়ে মোসলেম মাতবরের বাড়িতে গেলেন। মোসলেম মাতবরকে বললেন, যা হবার হয়েছে। আমরা দুই বন্ধু আগের মতোই এক সাথে কাজ করব। চল, আমার বাড়ি।

তারপর একটি বিজয় মিছিল বের হল। সেই মিছিলের সামনে সদ্য নির্বাচিত এমপি কুতুব মোড়ল আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোসলেম মাতবর। দু'জনের গলায় ফুলের মালা। সবাই শ্লোগান দিচ্ছে- কুতুব ভাইয়ের জন্য, ডুবেরচর ধন্য। মোসলেম ভাইয়ের জন্য, ডুবেরচর ধন্য। আমার ভাই তোমার ভাই, কুতুব ভাই মোসলেম ভাই। মিছিলটি কুতুব মোড়লের উঠোনে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিলের অনেকেই ছিল মোসলেম মাতবরের দুই ছেলের দেওয়া শাড়ি লুঙ্গি পরা। সবাই খুব হাসিখুশি। কেবল সেই জয় উল্লাসে একজন মানুষের মুখের দিকে তাকানো যায় না। তিনি মোসলেম মাতবর।



দশ দিন পর...

কুতুব মোড়ল শপথ নিতে ঢাকায় গেলেন। মোসলেম মাতবরও গেলেন। শপথ নেবার পরে এয়ারপোর্ট যাবেন কুতুব মোড়ল। কেননা রাত দশটায় মোসলেম মাতবর ওমরা হজ্ব করতে যাবেন সৌদি আরব...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.