নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঁচ মিনিটে সাঈদীর রায় !!!

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২৩

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪) আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

আসামি পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিল সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে আংশিক মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ বুধবার সাঈদীর বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণা করেন।

বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

আজ সকাল ১০টা পাঁচ মিনিটে এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতিসহ বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি। সকাল ১০টা সাত মিনিটে রায় দেওয়া শুরু হয়। শেষ হয় ১০টা ১০ মিনিটে।

আপিলে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। মামলায় ১০ নম্বর অভিযোগ ছিল বিসাবালিকে হত্যার, ১৬ নম্বর অভিযোগ ছিল তিন নারীকে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণের এবং ১৯ নম্বর অভিযোগ ছিল প্রভাব খাটিয়ে ১০০-১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করার।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে মামলার ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলার ৬ নম্বর অভিযোগ ছিল লুণ্ঠনের, ১১ নম্বর অভিযোগ ছিল হামলা ও লুণ্ঠনের এবং ১৪ নম্বর অভিযোগ ছিল ধর্ষণের।

৮ নম্বর অভিযোগের অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে সাঈদীকে খালাস দেওয়া হয়। একই অভিযোগের অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে তাঁকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। মামলায় অষ্টম অভিযোগটি ছিল হত্যা ও অগ্নিসংযোগের।

এ ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে মামলার ৭ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। মামলার সপ্তম অভিযোগ ছিল নির্যাতন ও বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ।

মামলায় ৮ নম্বর অভিযোগ ছিল ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করা ও ১০ নম্বর অভিযোগ ছিল বিসাবালি হত্যা। এই দুই অভিযোগে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুন্যাল এর আগে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়:

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দিয়েছিলেন।

ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল। এগুলো ছিল: ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগ।

এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগ হত্যার, ১৪ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ ধর্ষণের এবং ১৯ নম্বর অভিযোগ ধর্মান্তরিত করার। বাকিগুলো নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন এবং এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতার অভিযোগ।

সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় ৬ নম্বর অভিযোগ ছিল মাখনলাল সাহার ২২ সের স্বর্ণ লুট করা।

মামলায় ৭ নম্বর অভিযোগ ছিল মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম সেলিমকে নির্যাতন ও তাঁর বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ।

মামলায় ৮ নম্বর অভিযোগ ছিল একাত্তরের ৮ মে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা এবং পিরোজপুরের পারেরহাট এলাকায় হিন্দুদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ।

মামলায় ১০ নম্বর অভিযোগ ছিল একাত্তরের ২ জুন বিসাবালিকে হত্যা এবং উমেদপুর হিন্দুপাড়ার ২৪টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।

মামলায় ১১ নম্বর অভিযোগ ছিল মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে হামলা ও লুণ্ঠন।

মামলায় ১৪ নম্বর অভিযোগ ছিল মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় এক নারীকে ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ।

মামলায় ১৬ নম্বর অভিযোগ ছিল তিন নারীকে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণ।

মামলায় ১৯ নম্বর অভিযোগ ছিল ধর্মান্তরিত করার, প্রভাব খাটিয়ে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ হিন্দুকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা।

মামলায় ইব্রাহিম কুট্টি (৮ নম্বর অভিযোগ) ও বিসাবালিকে হত্যার (১০ নম্বর অভিযোগ) দায়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের দুটি, ধর্মান্তরিত করার একটি এবং লুটপাট, অগ্নিসংযোগ নির্যাতনের তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় অন্য অভিযোগগুলোতে তখন আলাদা করে কোনো দণ্ড দেওয়া হয়নি।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ১ থেকে ৫ এবং ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮ ও ২০ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এর মধ্যে গণহত্যার চারটি (২, ৪, ১২, ১৫), ধর্ষণের দুটি (১৭ ও ২০) ও হত্যার (১, ৫, ১৩ ও ১৮) চারটি অভিযোগ। বাকি দুটি অভিযোগ ছিল লুটপাটের।

রায়ে বলা হয়েছিল, প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ, নথি ও যুক্তির ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তরিত করা এবং এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও দশম অভিযোগে বিসাবালি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অপরাধের গভীরতা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।

চূড়ান্ত আদেশে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলো। বাকি ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতো নয়। তাই এগুলোতে তাঁকে আলাদা কোনো শাস্তি দেওয়া হলো না। প্রমাণিত না হওয়া ১২টি অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেওয়া হলো।

এর আগে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয় । পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাঈদীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এর আগে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়েছিল। রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তখন তাণ্ডব চালিয়েছিল জামায়াত-শিবির। তখনকার সহিংসতায় প্রথম তিন দিনেই অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছিল।

এই মামলায় আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় অপেক্ষমাণ রাখেন। এর ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় আজ রায় ঘোষণা করা হলো। এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হলো।



মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার:

১৯৭১ সালের মুক্তযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত দুইটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এখন পর্যন্ত নয়টি মামলার রায় দিয়েছেন। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১০। তাঁদের মধ্যে আবুল কালাম আযাদ এবং চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় আপিল করেননি। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর সাতজন আপিল করেছেন। শুধুমাত্র আপিল নিষ্পত্তি হওয়া একটি মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ।

এছাড়া মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে আজ বুধবার সাঈদীর রায় হওয়ায় পরেও আরো চারটি মামলা আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকছে। এগুলো হলো জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম (৯০ বছর কারাদণ্ড), সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ (মৃত্যুদণ্ড), সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদণ্ড) ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (মৃত্যুদণ্ড) আপিল। এর মধ্যে কামারুজ্জামানের করা আপিলের শুনানি চলছে।

বিএনপির নেতা আবদুল আলীমের আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তিনি আপিল করলেও মারা যাওয়ার কারণে গতকাল মামলা বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৮

অর্বাচীন পথিক বলেছেন: ভাই দেশের সম্পদ কে বাঁচালো সরকার :P
তাই ফাঁসি থেকে নামিয়ে কারাদণ্ড হল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.