নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আজ বাংলাদেশের ৪৪তম বিজয় দিবসে আমরা আবারো প্রত্যক্ষ করলাম যে, পাকিস্তান সত্যি সত্যিই একটি বর্বর রাষ্ট্র। পাকিস্তানের পেশোয়ারে ওয়ারসাক রোডের স্কুলে আজ পাক-জঙ্গীরা যে নারকীয় শিশু হত্যায় মেতে উঠেছিল, তা দেখে গোটা বিশ্ববাসী নির্বাক হয়ে গেছে। তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। পাকিস্তানের ওই জঙ্গি সংগঠন টিটিপি দাবি করেছে, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তালেবানের ঘাঁটি জার্ব-ই-আজবে চলমান সেনা অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওই স্কুলে দীর্ঘ ছয় ঘণ্টার এক অভিযান চালিয়ে সাত অস্ত্রধারী জঙ্গিকে ঘায়েল করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, তার আগে ওই সাত জঙ্গিদের হামলায় স্কুলে ১৪১ জন মারা যায়। যাদের মধ্যে ১৩২ জন শিশু।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারে স্কুলটি পাকিস্তানের আর্মি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত। দেশজুড়ে এমন ১৪৬টি স্কুল আছে। সেনাসদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের সন্তানেরা এখানে পড়াশোনা করে। এখানে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের বয়স ১০-১৮ বছর। আর শিক্ষকদের বেশির ভাগ সেনাসদস্যদের স্ত্রী। নিহত শিশুদের সবার বয়স ১৬ বছরের নিচে। জঙ্গী হামলায় নিহত বাকি ৯ জন স্কুলের সেনা স্টাফ বা শিক্ষক। আজ দুপুরে সামরিক পোশাক পরা সাত জঙ্গি স্কুলে ঢুকে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে।
স্কুলটি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাযইবার-পাখতুনখোয়া অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে ক্ষমতায় আছে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। ইমরান খান খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খাত্তাকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জঙ্গিদের হামলার আধা ঘণ্টার মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জিম্মিদের উদ্ধার অভিযান তদারকি করতে স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া দুইটার দিকে পেশোয়ারের উদ্দেশে রওনা হন। এক বিবৃতিতে তিনি জিম্মি হওয়া শিশুদের নিজের সন্তান হিসেবে উল্লেখ করেন। উদ্ধারে চালানো অভিযান নিজেই তদারকি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিবৃতিতে তিনি জানান। গোটা বিশ্ব রক্ত শীতল হওয়া এই ভয়াবহ জঙ্গি হামলা দেখে নির্বাক হয়ে গেছে। জঙ্গিরা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়েই শিশুদের উপর গুলি ছুড়তে শুরু করে।
হামলার সময় দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ জীবনে বেঁচে যাওয়া এক শিশু হাসপাতালে জানায়, 'দেখলাম বড় একজোড়া বুট আমার দিকে এগিয়ে আসছিল। বেঞ্চের নিচে যেসব ছাত্ররা লুকিয়েছিল সে তাদের খুঁজছিল। এর আগে দুই পায়েরই ঠিক হাঁটুর নিচে গুলি লাগায় বেঞ্চের নিচে অন্য লাশের সঙ্গে পড়েছিলাম। ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছিল। তবু জীবন বাঁচাতে আমি মৃত মানুষের অভিনয় করি। গলার টাই ভাঁজ করে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিলাম যাতে মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের না হয়। কালো বুটজোড়া আমাদের খুঁজছিল আর গুলি করছিল। দুই চোখ বন্ধ করে মড়ার মতো আমি শুয়ে থাকি। আবারো গুলি খাওয়ার ভয় হচ্ছিল। থর থর কাঁপছিলাম। মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখেছি যে, এগিয়ে আসা সেই কালো বুটজোড়া জীবনেও ভুলব না। কিছু সময় পর ওই লোকটি চলে গেল। আমি কয়েক মুহূর্ত সেখানেই পড়ে রইলাম। এরপর আমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু আঘাতের কারণে মাটিতে পড়ে গেলাম। আমি যখন হামাগুড়ি দিয়ে পাশের ঘরে গেলাম, তখন এক ভয়ানক দৃশ্য দেখলাম। আমাদের অফিস সহকারীর লাশ আগুনে পুড়ছিল। তিনি একটা চেয়ারে বসেছিলেন আর পোড়া অবস্থাতেই তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল।’ এর পরই সে অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরে সে দেখতে পায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে।
পাকিস্তান একটি স্বীকৃত জঙ্গি রাষ্ট্র। শিশুদের জিম্মি করে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা করা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) পাকিস্তানের একটি জঙ্গি সংগঠন। ধর্মের নামে জঙ্গি সংগঠনটি শিশুদের উপর আজ এই ভয়াবহ হামলা চালাল। এই জঙ্গিরা নিজেদের মুসলমান দাবি করে। ধর্মের নামে কোথায় আছে এমন বর্বরতা? কোথায় কোন ধর্মে আছে এমন পাশবিকতা? জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। এরা সবাই বর্বর অসভ্য ইতর জানোয়ার।
জঙ্গি তালিবানের মুখপাত্র মুহাম্মদ উমর খোরাসানিকে উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানায়, তিনি বলেছেন, আমরা হামলার জন্য সেনাবাহিনীর স্কুলকে বেছে নিয়েছি। কারণ সরকার আমাদের পরিবার ও নারীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে। আমরা চাই, তারাও ওই ব্যথা অনুভব করুক।
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি ওই দুটি এলাকায় জঙ্গি দমনে সেনা অভিযানে কয়েক হাজার তালেবান নিহত হয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবর। পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসিত উপজাতীয় অঞ্চল ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে ২০০৭ সালে একটি জোট হিসেবে তেহরিক-ই তালিবান আত্মপ্রকাশ করে। এই তালেবানরা কুরআনের নির্দেশনার কঠোর ব্যাখ্যা দিয়ে গোটা পাকিস্তানজুড়ে তা বাস্তবায়ন করতে চায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথবাহিনীকে আফগানিস্তান থেকে হটাতে চায়। তালেবান আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলে। যাদের মধ্যে পাকিস্তানে আল কায়েদার সাবেক প্রধানও রয়েছে। টিটিপির প্রথম কমান্ডার বায়তুল্লাহ মেহসুদ ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট একটি বিস্ফোরণে নিহত হওয়ার পর, এই সন্ত্রাসি দলটির বর্তমানে নেতৃত্বে রয়েছেন হাকিমুল্লাহ মেহসুদ।
পাক-তালেবানদের এই নৃশংস ও কাপুরুষোচিত হামলায় গোটা বিশ্ব আজ নির্বাক হয়ে গেছে। এসব নিরহী শিশুদের কেন ধর্মের নামে রাজনীতির নামে বলি হতে হবে? এই জঙ্গি সংগঠন তাহলে কোন ধর্মের দোহাই দেয়? বিশ্ব মানবতার কোন ধর্মে এমন নারকীয় হামলার নির্দেশ আছে?
পাকিস্তান এমন এক বর্বর জাতি, যারা একাত্তরে বাঙালির উপর এমন বর্বর হামলা করেছিল। বাংলাদেশের বিজয় দিবসে আজ ওরা নিজেদের শিশুদের উপর এমন বর্বর হামলা চালাল। বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে এ এক জঘন্য ঘৃন্য হামলা।
২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪১
*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: বড়দের রাজনীতি আদর্শনীতির বলি যখন শিশুরা।
ভিয়েতনাম
বেসলান, রাশিয়া
ইরাক
প্যালেস্টাইন
পাকিস্তান
আমরা সবাই হচ্ছি গল্পের সেই সোহরাব। যারা প্রতিনিয়ত নিজের সন্তানদের হত্যা করে চলেছি।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
অেসন বলেছেন: বাংলাদেশের ৪৪তম বিজয় দিবসে পাকিস্তানের এমন বিপর্যয়ে আমাদের খুশী হওয়ার
কথা ছিল। কিন্তু কোন মানুষের তা সম্ভব না।
ধর্ম ও রাজনীতি মিশ্রিত হলে কত ভয়ংকর বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, তার জলন্ত
উদাহরন পাকিস্তান।