নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
স্থল সীমান্ত চুক্তির সফলতা তাহলে এভাবে শুরু হল? বিডিনিউজ২৪ডটকম এক সংবাদে বলছে যে, নওগাঁর সাপাহার সীমান্ত থেকে এক বাংলাদেশি যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যাকে বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী)'র সদস্যরা ‘গলায় কোপ দিয়ে’ হত্যা করেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। নওগাঁ ১৪ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কলমুডাঙ্গা সীমান্তের ২৩৭ নম্বর পিলারের কাছে এই ঘটনা ঘটেছে।
নিহত শহীদুল ইসলাম (২৮) কলমুডাঙ্গা গ্রামের বলদিয়াঘাট এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে। বুধবার রাতে শহীদুলসহ ১০/১২ জন মিলে গরু আনতে সীমান্তের ওপারে গিয়েছিলেন বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছে। নিহতের সঙ্গীদের বরাত দিয়ে বিজিবি কর্মকর্তা রফিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গরু নিয়ে ফেরার পথে বিএসএফের একটি টহলদল তাদের ধাওয়া করে। অন্যরা পালাতে পারলেও শহীদুল ধরা পড়েন। তার সঙ্গীরা বলছে, বিএসএফ সদস্যরা শহীদুলকে ধরে হাসুয়া দিয়ে গলায় কোপ মারে এবং ওই পিলারের পাশে ফেলে রেখে যায়। পরে বিজিবি সদস্যরা সেখানে গিয়ে শহীদুলের লাশ পায় এবং পুলিশে খবর দেয় বলে রফিকুল হাসান জানান।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল হাসান বলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিএসএফের কাছে মৌখিক প্রতিবাদ জানিয়েছি। তবে তাদের দাবি, এ হত্যাকাণ্ড বিএসএফ ঘটায়নি। চোরাকারবারীদের নিজেদের দ্বন্দ্বে এটা ঘটতে পারে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য পতাকা বৈঠক ডেকেছি।
স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের প্রধান শর্ত হল সীমান্তে নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে হবে। সীমান্তে যদি বিএসএফ-এর গুলিতে বা হাসুয়ার কোপে বাংলাদেশীদের প্রাণ যেতেই থাকে, তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিস্টার নরেন্দ্র মোদি কি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েই ট্রানজিট বাগিয়ে নিলেন? মিস্টার মোদি ঢাকা থেকে দিল্লী ফেরত গেছেন ৭ জুন। আর মাত্র তিন দিন না যেতেই বিএসএফ তাদের দক্ষতা ও সামর্থ্য জাহির করলো?
বাংলাদেশের সরকার বাহাদুর এখন সীমান্তে এই হত্যার কী জবাব দেবে? এমনিতে দেশে হাজার হাজার হত্যা, খুন, গুম নিয়ে সরকার বাহাদুর চুপচাপ নীতি পালন করছেন। চুপেচামে হত্যা-খুন-গুম এসব অবাধে চলছে। দেশের কোথাও নিরাপত্তা নেই। কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী-এমপিদের নিরাপত্তা দিয়ে একটা দেশ চলতে পারে না। আওয়ামী লীগের এক মহিলা সাংসদের ছেলে মদ খেয়ে ট্রাফিক জ্যামে গুলি করে দুই জন গরিব মানুষ মেরে ফেললো। যাদের একজন রিক্সাওয়ালা আরেকজন সিএনজি চালক। কী অপরাধ করেছিল ওই দুই গরিবের পোলা? কই ওই মহিলা এমপি'র পোলার তো এখনো ক্রোসফায়ার হল না। উল্টো অসুস্থ ভান করে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ এড়ানোর কৌশল নিয়েছে ওই মওদুদী যুবরাজ।
স্থল সীমান্ত চুক্তির নিরাপত্তার শ্রী যদি এই হয় যে সপ্তাহ না গড়াতেই যথারীতি বিএসএফ আবারো সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করা শুরু করেছে, তাহলে বুঝতে হবে ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার আড়ালে আসল বিষয় ছিল ওদের ট্রানজিট পাওয়া। বাংলাদেশ আসলে কিছুই পায় নাই। এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেহারা দেখে আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তার বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় মুখে কুলুপ এটে ছিল। হু ইজ মমতা? বাংলাদেশ বিশ্বের যে কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে আন্তর্জাতিক সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি নিয়ে লড়াই করতে পারা উচিত। ভারতের সঙ্গে তো নদী নিয়ে কোনো ছাড় হতে পারে না। অথচ সরকার বাহাদুর স্থল সীমান্ত চুক্তির দোহাই দিয়ে তিস্তা ও ফেনী নদীর কথা আলোচনায় তুলতেই ভুলে গেল। পানি নিয়ে কথা বলতে গেলে আওয়ামী লীগের ভাসুরের নাম মমতা এসে যায়। তাই এ বিষয়ে নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতেই সরকার বাহাদুর খুশিতে গদগদ।
তো এবার সীমান্তে আবার বিএসএফ বাংলাদেশীকে হত্যা করলো কেন? এর জবাব ভারতের চেয়েও আগে দিতে হবে নতজানু ভারতনীতিতে টইটম্বুর বর্তমান সরকার বাহাদুরকেই। মোদি সীমান্তে যে নিরাপত্তার কথা বলে গেলেন, তার নমুনা যদি এই হয়, তাহলে বুঝতে হবে ভারত মূলা দেখিয়ে কাম যা ভাগিয়ে নেবার লিয়ে লিয়েছে গো।
সরকার বাহাদুরের উচিত হবে এখন ট্রানজিটের সকল বিষয় স্থগিত করে দেওয়া। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নিহতের ব্যাপারে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো ট্রানজিট দিতে পারে না। এমন কি জাহাজ চলাচল ও নৌ চলাচল সহ দুই প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় সকল কানেকটিভিটি বন্ধ ঘোষণা করা হোক। এই বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের ঢিলেমি মানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বলে আর কিছু থাকলো না।
কোথায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ সরন? তাঁকে কেন এখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রোণালয় ডেকে নিয়ে সীমান্তে এই হত্যার প্রতিবাদ করলো না? নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় ভারতের সঙ্গে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশ যে দল গঠন করেছে, তা দেখে মনে হয়েছে, পরানের জান বন্ধু ভারতের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলায়ও কোনো আক্রমন করা উচিত হবে না। নইলে চারজন স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে বাংলাদেশ দল গঠিত হয় কোন আক্কেলে? ভারতকে কোনো আক্রমন করা যাবে না, কিন্তু ভারত সময় হলেই মেরে কেটে ভাসিয়ে দেবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না।
যদি পররাষ্ট্রনীতিতে এতো নতজানু ভারত নীতিই প্রধান বিষয় হবে, তার চেয়ে বরং ঘোষণা দিয়ে ভারতের লগে আমরা একিভূত হয়ে গেলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। তখন বরং আমাদের সুযোগ সুবিধা অনেক বাড়বে। বিনা ভিসায় মুম্বাই-দিল্লী আমরাও দাপিয়ে বেড়াব। নতজানু ভারত নীতির চেয়ে ভারতের প্রদেশ বনে যাওয়া কি ভালো না? সরকার বাহাদুর কী বলতে চায়? আমরা সীমান্তে বিএসএফ-এর বাংলাদেশী হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করছি। পাশাপাশি সরকার বাহাদুরকে এই বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ নেবার অনুরোধ করছি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বসে বসে আঙুল চুষুক এটা আমরা মানতে চাই না।
ধন্যবাদ জানাই ১৪ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল হাসানকে। বিএসএফ-এর কাছে এই হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করুন। ১৬ কোটি বাংলাদেশী আপনাদের সঙ্গে আছে।
..................................
১১ জুন ২০১৫
ঢাকা
©somewhere in net ltd.