![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আমাদের নিশ্চয়ই অস্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলংকা'র মধ্যেকার ক্যান্ডি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডারদের মধ্যে সেই ঐতিহাসিক মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা মনে আছে? অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের যারা ভক্ত তাদের নিশ্চয়ই সেই ঘটনা দিনের আলোর মত এখনো মনে থাকার কথা। ১৯৯৯ সালের ৯ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর শ্রীলংকার ক্যান্ডিতে ছিল সফরকারী অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীংলকার মধ্যে তিন টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট। ক্যান্ডি টেস্ট গোটা ক্রিকেটের ইতিহাসেই অনেক ঘটনা, অঘটন ও বিতর্কপূর্ণ একটি বিরল টেস্ট। যদিও ওই টেস্টে মাত্র তিন দিনেই শ্রীলংকা ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিল। কিন্তু ওই টেস্টে অনেকগুলো ঘটনা ও অঘটন জন্ম হবার কারণে ইতিহাসে এটি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য একটি স্মরণীয় টেস্ট। টেস্ট ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য চূড়ান্ত বিভিষিকাময় ক্যান্ডি টেস্ট। কী ঘটেছিল ক্যান্ডি টেস্টে?
৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯। সকালে টস করতে নামেন লংকান ক্যাপ্টেন সনৎ জয়সুরিয়া ও অসি ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ। টস জিতে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ট্রেলিয়ান দুই ওপেনার মাইকেল জনাথন স্লাটার ও গ্রেগ স্কট ব্লিওয়েট ব্যাট করতে নামেন। ওপাশে বল হাতে শ্রীলংকান ফাস্ট বোলার বামহাতি চামিন্দা ভাস। ভাসের প্রথম বলটি স্লাটার ছেড়ে দিলেন। ভাসের দ্বিতীয় বলে মাইকেল স্লাটার এলবিডব্লিউ আউট। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর শূন্য রানে ১ উইকেট। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে আসেন আরেক শ্রীলংকান ফাস্ট বোলার নুয়ান জয়সা। ব্যাটিং প্রান্তে গ্রেগ ব্লিওয়েট আর বোলিং প্রান্তে জাস্টিন ল্যাঙ্গার। জয়সার চতুর্থ বলে ব্লিওয়েট এলবিডব্লিউ আউট। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ২ উইকেটে ৪ রান। অস্ট্রেলিয়ান দুই ওপেনার করলেন জোড়া ডাক। জোড়া শূন্য।
চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের নির্ভরতার প্রতীক মার্ক ওয়াহ। পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য জয়সাকে পরপর দুই বলে একটি চার ও একটি দুই মারেন মার্ক ওয়াহ। কিন্তু দিনটি যে আজ শ্রীলংকার। দিনের সপ্তম ওভারে আবারো ভাস শ্রীলংকাকে সাফল্য এনে দিলেন। এবার ভাসের দ্বিতীয় শিকার হন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। ওটা ছিল ওভারের তৃতীয় বল। ল্যাঙ্গার ৭ রান করে ভাসের বলে মিড-অফে অরবিন্দ ডি-সিলভার কাছে ক্যাচ দিলেন। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৩ উইকেটে ৯ রান। ভয়ংকর সংকটে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং। ক্যান্ডির আকাশে তখন ঘন মেঘের ঘনঘটা। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান প্যাভেলিয়ানে তখন ভয়ংকর কবরের নিরবতা। এরপর পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসেন অস্ট্রেলিয়ার আরেক নির্ভরতার প্রতীক, মার্কের চেয়ে আড়াই মিনিটের বড়, অন্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ।
দিনের অষ্টম ওভার মানে জয়সার চতুর্থ ওভারটি দুই ওয়াহ সহোদর কোনো মতে সামাল দিলেন। পরের ওভারে আবার বল হাতে চামিন্দা ভাস। দিনের নবম ওভার। ভাসের ব্যক্তিগত পঞ্চম ওভার। এবার ভাসের করা ওভারের দ্বিতীয় লো ডেলিভারিকে মার্ক সরাসরি ভাসের হাতেই সরাসরি ক্যাচ তুলে দিলেন। কট অ্যান্ড বোল্ড ভাস হয়ে প্যাভেলিয়ানের পথ ধরলেন মার্ক ওয়াহ। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ৪ উইকেটে ১৬ রান। ভাসের ওটা তৃতীয় শিকার। ক্রিজে আসলেন ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ডিপেন্ডম্যান রিকি পন্টিং।
টানা দশ ওভার স্টিভ আর পন্টিং বেশ ভালোভাবে সামাল দিলেন। ক্যান্ডির সকালের ঘোর হয়তো কাটতে শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রায় এক ঘণ্টা (৫৫ মিনিট) অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন স্টিভ, রিকি পন্টিংকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে টেনে তোলার চেষ্টা করলেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনে যোগ করেলন মূল্যবান ২৪টি রান। তারপর আবারো সেই অঘটন। এবার জয়সার দ্বিতীয় শিকার স্বয়ং অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ। ১৯তম ওভারে জয়সার করা পঞ্চম বলটি স্টিভ মিড-অফে অরবিন্দ ডি-সিলাভার হাতে ক্যাচ দিলেন। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৫ উইকেটে ৪০ রান। ক্রিজে আসলেন সপ্তম ব্যাটসম্যান অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইয়ান হিলি।
রিকি পন্টিং ইয়ান হিলিকে নিয়ে আবার চেষ্টা করলেন অস্ট্রেলিয়াকে টেনে তুলতে। ততক্ষণে ভাস আর জয়সা একটু রেস্ট নিতে বোলিং করতে এলেন দুই স্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরন ও সনৎ জয়সুরিয়া। চার ওভার পন্টিং-হিলি সামাল দিলেন। দিনের তখন ২৪তম ওভার। মুরলিধরনের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বল। বলটি এমন ভাবে ঘুরে হিলিকে বোকা বানালো যে, ওই বল যে ব্যাটে আসবে না, তা হিলি কল্পনাও করতে পারেন নি। হিলি'র ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল তখন শ্রীলংকান উইকেটরক্ষক কালুভিথারানার বিশ্বস্ত হাতে। হিলিকে স্ট্যাম্পিং করতে কালু একটুও সময় নিলেন না। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ৬ উইকেটে ৫৯ রান। ক্রিজে আসলেন অষ্টম ব্যাটসম্যান শেন ওয়ার্ন।
কী হতে যাচ্ছে ক্যান্ডি টেস্টে? অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইন কী ৭০ বা ৮০ রানে গুটিয়ে যাবে? দিনের পঁচিশতম ওভারে শ্রীংলংকান ক্যাপ্টেন সনৎ জয়সুরিয়া আবার নুয়ান জয়সাকে ফিরিয়ে আনলেন। জয়সার চারটি বল ঠেকালেন শেন ওয়ার্ন। জয়সার পঞ্চম বলে ওয়ার্ন সিলিতে দাঁড়ানো আতাপাত্তুকে ক্যাচ দিলেন। অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে রানের খাতা না খুলেই ওয়ার্ন আউট। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ৭ উইকেটে ৬০ রান। এবার ওয়ার্নের পেছন পেছন রিকি পন্টিংও প্যাভেলিয়নের পথে হাঁটা ধরলেন। কারণ ততক্ষণে মাঠের দুই আম্পায়ার শ্রীলংকার পিটার ম্যানুয়েল ও ভারতের শ্রীনিবাসরাঘবন ভেংকটরাঘবন লাঞ্চ বিরতি ঘোষণা করলেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে লাঞ্চের আগে অস্ট্রেলিয়া ১৮৮৮ সালের ১৬ জুলাই লর্ডসে ৬০ রানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একবার অলআউট হয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ড অবশ্য এরচেয়েও জঘন্য। ১৯০২ সালের ২৯ মে বার্মিংহামে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ৩৬ রানে অলআউট করেছিল। তবে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ড এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের। ১৯৫৫ সালের ২৫ মার্চ অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ২৬ রানে অলআউট করেছিল ইংল্যান্ড।
টেস্ট ক্রিকেটে সর্বনিম্ন ৩০ রানে দুইবার অলআউট হবার রেকর্ড আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। দুবারের প্রতিপক্ষই ইংল্যান্ড। প্রথমবার ১৮৮৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পোর্ট এলিজাবেথে। দ্বিতীয়বার ১৯২৪ সালের ২৪ জুন বার্মিংহামে। ১৮৮৯ সালের ১ এপ্রিল কেপটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৫ রানে একবার এবং ১৯৩২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৬ রানে আরেকবার অলআউট হবারও রেকর্ড আছে। ১৯৭৪ সালের ২০ জুন লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত মাত্র ৪২ রানে অলআউট হয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটে এটা ভারতের এক ইনিংসে সর্বনিম্ন স্কোর। ১৮৮৭ সালের ২৮ জানুয়ারি সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সর্বনিম্ন স্কোরটি হল ৪৫ রানে অলআউট। ২০০৪ সালের ১১ মার্চ কিংস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বনিম্ন স্কোর ৪৭। ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন স্কোর হল ৪৯। ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি নাপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের সর্বনিম্ন স্কোর হল ৫১। ২০০৭ সালের ৩ জুলাই কলম্বোতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৬২ রানে অলআউট এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বনিম্ন টেস্ট স্কোর।
লাঞ্চ বিরতির পর রিকি পন্টিং-এর সঙ্গে যোগ দেন জেসন গিলেস্পি। পন্টিং-গিলেস্পি জুটি অস্ট্রেলিয়াকে সেদিনের লজ্বার হাত থেকে রক্ষা করেন। অষ্টম উইকেট জুটিতে এই জুটি ১০৭ রান যোগ করেন। ৬০ রানে ৭ উইকেট থেকে এই জুটি দলকে নিয়ে যান ১৬৭ রানে। দিনের ৬০তম ওভারে শেষ বলে মুরলিধরন গিলেস্পিকে এলবিডব্লিউ করলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১৬৭। পন্টিং-এর সঙ্গে যোগ দেন কলিন মিলার। ৬২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মুরলিধরন আবারো আঘাত করেন। এবার মিলারের ক্যাচটি ধরেন আতাপাত্তু। অস্ট্রেলিয়া পরিনত হয় ৯ উইকেটে ১৭১। পন্টিং-এর সঙ্গে যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাকগ্রা। এরপর এই জুটি আরো ৫ ওভার টিকে ছিল। পন্টিং তখন ৯৬ রানে অপরাজিত। ৬৮তম ওভারের প্রথম বলেই মুরলিধরন পন্টিংকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে অস্ট্রেলিয়াকে ১৮৮ রানে বেধে ফেলেন। ৬৭.১ওভারে ১৮৮ রানে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের সমাপ্তি। শ্রীলংকার চামিন্দা ভাস ৪৩ রানে ৩টি, নুয়ান জয়সা ৩৮ রানে ৩টি ও মুত্তিয়া মুরলিধরন ৬৩ রানে ৪টি উইকেট দখল করেন। অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ স্কোর করেন রিকি পন্টিং ৯৬। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জেসন গিলেস্পির ৪১ রান। প্রথম দিনের খেলা বাকি তখনো ২৩ ওভার। অর্থ্যাৎ শ্রীলংকা ২৩ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পাবে।
শ্রীলংকা ব্যাট করতে নেমে সপ্তম ওভারের প্রথম বলে ১৮ রানে লংকান ক্যাপ্টেন জয়সুরিয়া গ্লেন ম্যাকগ্রার এলবিডব্লিউ'র শিকার হন। শ্রীলংকার দলীয় রান তখন ২২। আতাপাত্তু'র সঙ্গে যোগ দেন রাসেল আরনল্ড। ২১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আরনল্ড এবার মিলারের এলবিডব্লিউ'র ফাঁদে পড়েন। শ্রীলংকার স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৬৯। প্রথম দিনের খেলা যখন শেষ হয়, তখনো শ্রীলংকা অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের চেয়ে ১১৯ রানে পিছিয়ে। দিন শেষে আতাপাত্তু ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন।
১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সাল। ক্যান্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিন। সকালে অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার কলিন মিলার আগের দিনের অবশিষ্ট চার বলের কোটা পূরণ করতে এসেই অসমাপ্ত সেই ওভারের শেষ বলটিতে সাফল্য পেলেন। মিলারের করা ক্যান্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ বলেই আতাপাত্তু আউট। আর কোনো রান যোগ না করেই আগের দিনের ২৫ রানেই আউট আতাপাত্তু। মিলারের বলে সেকেন্ড স্লিপে ল্যাঙ্গারকে ক্যাচ দেন আতাপাত্তু। ম্যাচে ফিরে আশার চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়া। পাশাপাশি ৭০ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর অরবিন্দ ডি-সিলভা ও মহেলা জয়বর্ধনা জুটি পাল্টা শ্রীলংকাকেও বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন।
ঠিক এই সময় দ্বিতীয় দিনের ১৬ তম ওভার করছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার কলিন মিলার। মহেলা জয়বর্ধনা সজোরে ব্যাট হাঁকালে বলটি স্কয়ার লেগ ও বাউন্ডারির মাঝামাঝিতে ক্যাচ ওঠে। বল তখনো আকাশে। স্কয়ার লেগ থেকে বলকে লক্ষ্য করে ছুটছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ। বাউন্ডারি সীমানা থেকে বলের উদ্দেশ্য ছুটছেন জেসন গিলেস্পি। দু'জন অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডারের-ই টার্গেট মহেলার ক্যাচটি ধরা। এই ক্যাচটি ধরতে পারলেই শ্রীলংকা খেলায় আবারো চাপে পড়বে। খেলায় দারুণভাবে ফিরবে অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু স্টিভ বা গিলেস্টি কেউ কাউকে মুখোমুখি দৌড়ে আসতে দেখেননি। দু'জনেরই চোখ ছিল আকাশের বলের দিকে। বলটি যখন ফিল্ডারদের নাগালের মধ্যে আসল, ঠিক তখনই সেই ঐতিহাসিক বেদনাদায়ক সংঘর্ষ। মুখোমুখি ওই সংঘর্ষে স্টিভ ওয়াহ'র নাক ভেঙ্গে গেল। আর ফাস্ট বোলার জেসন গিলেস্টি'র পা ও বাম কাঁধের একটি হাড় ভাঙ্গল। স্টিভ ও গিলেস্পিকে মাঠ থেকেই জরুরী ভিত্তিতে শ্রীলংকান সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হল। অবশ্য স্টিভ হেলিকপ্টার পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে পেরেছিলেন। কিন্তু গিলেস্পিকে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়রা স্ট্রেচারে করে হেলিকপ্টার পর্যন্ত নিয়ে যান। স্টিভ ওয়াহ মাঠের দায়িত্ব দিয়ে যান শেন ওয়ার্নকে।
দুইজন খেলোয়াড় ইনজুরি নিয়ে মাঠ ত্যাগ করায় অস্ট্রেলিয়া কার্যত ক্যান্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই পরিনত হয় ৯ জনের টিমে। তখন শ্রীলংকা ব্যাট করায় অবশ্য দুইজন অস্ট্রেলিয়ান সাব-ফিল্ডার ফিল্ডিং করার সুযোগ পান। ক্যান্ডি'র আসগিরিয়া স্টেডিয়ামে সেই রক্তাক্ত সকালের মুখোমুখি ভয়াবহ সংঘর্ষের পর অস্ট্রেলিয়ানরা জানপ্রাণ বাজি রেখে খেলতে শুরু করল। কিন্তু ডি-সিলভা ও মহেলা মিলে শ্রীলংকার স্কোর বোর্ড সচল রাখলেন। শেষ পর্যন্ত লাঞ্চের পর দ্বিতীয় সেশনে অস্ট্রেলিয়া সাফল্যের দেখা পেল। ওয়ার্নের করা ৪৮তম ওভারের তৃতীয় বলটি সেকেন্ড স্লিপে পন্টিং ক্যাচ নেন। মহেলার ইনিংসটি থামল ৪৬ রানে। শ্রীলংকার স্কোর তখন ৪ উইকেটে ১৭৭। ডি-সিলভা-মহেলা জুটি ১০৭ রানের জুটি গড়েন। মহেলার আউটের পর ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসেন শ্রীলংকার ব্যাটিং নির্ভরতার আরেক প্রতীক অর্জুনা রানাতুঙ্গা।
৫০তম ওভারের প্রথম বলে আবারো শ্রীলংকান শিবিরে আঘাত হানেন ওয়ার্ন। ওয়ার্নের এবারের শিকার রানাতুঙ্গা। এরপর শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আগ্রাসন। একপ্রান্ত ডি-সিলভা আগলে রাখেন। অপর প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকল। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে মাত্র ৪টি বল কম খেলে ৬৭.৩ ওভারে শ্রীলংকা ২৩৪ রানে অলআউট হয়। ডি-সিলভা করেন দলীয় সর্বোচ্চ ৭৮ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মহেলার ৪৬ রান। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ওয়ার্ন ৫২ রানে ৫ উইকেট দখল করেন। ৪টি উইকেট নেন কলিন মিলার। আর ম্যাকগ্রা নেন বাকি একটি উইকেট। শ্রীলংকা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ৪ বল কম খেললে কি হবে। প্রথম ইনিংসে শ্রীলংকা ৪৬ রানের লিড পায়। দ্বিতীয় দিনের খেলা তখনো ৩৮ ওভার বাকি। মানে অস্ট্রেলিয়া ৩৮ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পাবে। কারণ প্রথম দিন ৩ ওভার খেলা কম হয়েছিল।
এবার কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে ওপেনিং জুটি খুব সতর্কের সঙ্গে খেলতে থাকেন। ১৫ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনিং জুটি ৩৭ রান তোলার পর শ্রীলংকা আবারো সাফল্যের শুরু। এবার মুরলিধরন শিকার করেন মাইকেল স্লাটারকে। ১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লাটার ২৭ রানে সেকেন্ড স্লিপে আতাপাত্তুকে ক্যাচ দেন। ক্রিজে আসেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। ব্লিওয়েট-ল্যাঙ্গার এরপর মাত্র ৬ ওভার অবিচ্ছিন্ন ছিলেন। এবার আঘাত হানেন প্রথম ইনিংসের সেই বিধ্বংসি পেসার চামিন্দা ভাস। ২৩ তম ওভারের তৃতীয় বলে ল্যাঙ্গার এলবিডব্লিউ'র ফাঁদে পড়েন। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ২ উইকেটে ৪৯ রান। অর্থ্যাৎ শ্রীলংকার ৪৬ রানের লিড টপকে অস্ট্রেলিয়ার পকেটে তখন মাত্র ৩ রান।
এবার আবার শেষ বিকালে খেলার চিত্র দারুণভাবে পাল্টে গেল। ২৫তম ওভারে ভাসের ফিরতি ওভারের দ্বিতীয় বলে মার্ক ওয়াহ শূন্য রানে বোল্ড। আবারো চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৪৯। স্টিভ ওয়াহ ও জেসন গিলেস্পি হাসপাতালে থাকায় অস্ট্রেলিয়ার মাত্র ৯ জন ব্যাটসম্যান ব্যাট করার সুযোগ পাবেন। সুতরাং ক্রিজে আসেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইয়ান হিলি। কিন্তু খেলায় শ্রীলংকা ভয়ংকর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। অস্ট্রেলিয়ার রান ৪৯-এ আটকে থাকে পরবর্তী ৪টি ওভার। ২৮তম ওভারের শেষ বলে এবার মুরলিধরনের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হন অসি ওপেনার ব্লিওয়েট। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখনো ৪৯। উইকেট নাই ৪টি। অর্থ্যাৎ অস্ট্রেলিয়ার পকেটে তখনো মাত্র ৩ রানের পুঁজি। ৪টি উইকেট নাই। আবার দল পরিনত হয়েছে নয়জন ব্যাটসম্যানে। বুঝুন অবস্থা!!!
এবার দলকে আবার বিপদ থেকে উদ্ধারের দায়িত্ব চাপে রিকি পন্টিং-এর উপর। ইয়ান হিলিকে সাথে নিয়ে দিনের অবশিষ্ট ১০টি ওভার কাটিয়ে দেবার ইচ্ছে ছিল পন্টিং-এর। কিন্তু ৩৪তম ওভারের তৃতীয় বলে হিলিকে মুরলিধরন তৃতীয় শিকারে পরিনত করলে অস্ট্রেলিয়ান শিবিরে আবারো আতংক শুরু হয়। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ৫ উইকেটে ৫৮ রান। পন্টিং-এর সঙ্গে যোগ দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অসি-ক্যাপ্টেন শেন ওয়ার্ন। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের চরম নাটক শেষ হতে তখনো আরো বাকি। ৩৮ তম ওভারের খেলা শুরু হল। ৬টি বল শেষ করতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার ভয়ংকর কঠিন দিনের অবসান ঘটে। এবার লংকান ক্যাপ্টেন জয়সুরিয়ার বলে নন-স্ট্রাইক এন্ডে দিনের শেষ ওভারের প্রথম বলে অসি ক্যপ্টেন শেন ওয়ার্ন রানআউট। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৬ উইকেটে ৭৫। স্টিভ আর গিলেস্পি হাসপাতালে থাকায় তখন পন্টিংকে সাপোর্ট করার মত ব্যাটসম্যান রয়েছে মাত্র মিলার ও ম্যাকগ্রা।
এই সুযোগে শ্রীলংকার ক্যাপ্টেন জয়সুরিয়া মাঠের দুই আম্পায়ারকে আরো কয়েকটি বাড়তি ওভার খেলানোর অনুরোধ করেন। কারণ অস্ট্রেলিয়া যদি ৭৫ রানেই অলআউট হয়ে যায়, তাহলে শ্রীলংকার জয়ের জন্য প্রয়োজন হবে মাত্র (৭৫-৪৬)+১=২৯ + ১=৩০ রানের। তাই খেলার সময় বাড়ানো হল। খেলায় তখনো চরম উক্তেজনা। অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয়ে গেলে শ্রীলংকা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামবে। মাত্র দুই দিনেই টেস্ট ম্যাচের রেজাল্ট দেখার জন্য দুই আম্পায়ার শ্রীলংকার পক্ষেই চরম বিতর্কিত সেই সময় বাড়ালেন। পন্টিং বাহিনী তখন ক্যান্ডির আসগিরিয়া স্টেডিয়ামে বড় অসহায় অবস্থায়। কিন্তু আরো চার ওভারে আর কোনো অঘটন না ঘটায় শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ৪২ ওভারে ৬ উইকেটে ৮৯ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে। পন্টিং ২২ রানে আর মিলার শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন। ক্যান্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার লিড তখন ৮৯-৪৬=৪৩ রানের।
১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯। ক্যান্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন। স্টিভ ওয়াহ হাসপাতাল ত্যাগ করে ব্যাট করার জন্য মাঠে হাজির হলেন। স্টিভের নাকে বিশাল ব্যান্ডেজ। শেন ওয়ার্ন স্টিভকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু স্টিভ এভাবে টেস্টের তৃতীয় দিনেই পরাজয় মানতে চান না। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান টিম ম্যানেজমেন্ট স্টিভকে শান্ত করতে সক্ষম হল। তৃতীয় দিন সকালে দলের ৮৯ রানের সঙ্গে আর মাত্র ১০ রান যোগ হতেই মিলারকে ভাস বোল্ড করলেন। কার্যত তখন পন্টিংকে সঙ্গ দিতে নামলেন অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটসম্যান ম্যাকগ্রা। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ৭ উইকেটে ৯৯।
ম্যাকগ্রাকে সঙ্গে নিয়ে এখান থেকেই একা পন্টিং শ্রীলংকার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেলেন। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ? শেষ পর্যন্ত দিনের ২১তম ওভারের উপল চন্দনার করা দ্বিতীয় বলেই পন্টিং লং অনে জয়সুরিয়ার হাতে ক্যাচ দিলেন। পন্টিং আউট হওয়ার আগে করেছিলেন ৫১ রান। স্টিভ ওয়াহ ও জেসন গিলেস্পি রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস ১৪০ রানেই গুটিয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে শ্রীলংকার লিড ছিল ২৩৪-১৮৮=৪৬ রানের। সুতরাং জয়ের জন্য শ্রীলংকার প্রয়োজন হল (১৪০-৪৬)+১=৯৪+১=৯৫ রানের।
তৃতীয় দিনের লাঞ্চের আগেই ৯৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে শ্রীলংকা তাদের দ্বিতীয় ইনিংসের আবার ব্যাটিং শুরু করল। কিন্তু খেলার তৃতীয় ওভারেই ম্যাকগ্রা সাফল্য এনে দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। শ্রীলংকার দ্বিতীয় ইনিংসের তৃতীয় ওভারের ম্যাকগ্রা'র প্রথম বলেই আতাপাত্তু শূন্য রানে ক্যাচ দিলেন ব্লিওয়েটকে। শ্রীলংকার স্কোর তখন ১ উইকেটে ১২ রান। লংকান ক্যাপ্টেন জয়সুরিয়া তখন ১০ রানে অপরাজিত। এই অবস্থায় দুই আম্পায়ার লাঞ্চের বিরতি দিলেন।
লাঞ্চের পর জয়সুরিয়ার সঙ্গে ব্যাট করতে নামেন রাসেল আরনল্ডের বদলে কালুভিথারানা। সকালে ফিল্ডিং করার সময় রাসেল আরনল্ড ইনজুরিতে পড়েন। লাঞ্চের পর দিনের খেলার ষষ্ঠ ওভারে এবার মিলার শিকার করলেন লংকান অপর ওপেনার ক্যাপ্টেন জয়সুরিয়াকে। জয়সুরিয়া কট সাব-ফিল্ডার হেইডেন বোল্ড মিলার ১৮। শ্রীলংকার স্কোর তখন ২ উইকেটে ২৪।
দশম ওভারে আবার মিলারের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হলেন ব্যাটিং অর্ডারে রাসেল আরনল্ডের জায়গায় নামা কালুভিথারানা। ওভারের তৃতীয় বলে ৫ রানে কালুভিথারানাকে সরাসরি বোল্ড করেন মিলার। শ্রীলংকার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৩৯। এবার ডি-সিলভার সঙ্গে যোগ দেন মহেলা। খেলার ১৬তম ওভারে আবার মিলারের আঘাত শ্রীলংকান শিবিরে। এবার মিলারের শিকার হলেন মহেলা। থার্ড স্লিপে মহেলা স্লাটারকে ক্যাচ দেন। শ্রীলংকার স্কোর তখন ৪ উইকেট হারিয়ে ৬০।
চরম নাটকীয়তায় ভরা ক্যান্ডি টেস্ট কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা দেখার জন্য লাঞ্চের আগে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হবার পর ক্যান্ডির আসগিরিয়া স্টেডিয়ামে দর্শক সমাগম বাড়তে শুরু করল। এবার দর্শক সামলাতে স্টেডিয়ামে পুলিশের লাঠিপেটা। কিন্তু দর্শক এই টেস্টের শেষ না দেখে বাড়ি যাবে না বলে ফ্রন্টলাইনে পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকান পুলিশ দর্শকদের এই নাটকীয় টেস্ট খেলার শেষ অংশ বিনা বাধায় দেখাতে বাধ্য হল। লাঞ্চের পরপর শ্রীলংকা ৪ উইকেটে ৬০ হবার পর, মাঠে তখন নতুন আতংক অস্ট্রেলিয়ান শিবিরের নিরাপত্তাহীনতা। মোটামুটি তখন খেলায় অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা আবারো প্রবল প্রতিক্রমে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে দর্শকরা মাঠে অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডারদের ঢিল ছুড়তে শুরু করেন।
এ অবস্থায় খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকল। তারপর মাঠে ডি-সিলভার সঙ্গী হন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। কিন্তু মিলারের প্রথম বলেই জোড়ালো এলবিডব্লিউ'র আবেদন করেন ১১ জন অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডার। কিন্তু আম্পায়াররা সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি। যদিও রিপ্লে তে দেখা যায় রানাতুঙ্গা স্পষ্টভাবেই আউট। রানাতুঙ্গা তখনো রানের খাতা খোলেন নি। মিলারের করা চতুর্থ বলে রানাতুঙ্গা স্লিপে ক্যাচ দিলেন। কিন্তু সেই ক্যাচ মিস করলেন মাইকেল স্লাটার। শেষ পর্যন্ত ডি-সিলভা আর রানাতুঙ্গা মিলে ২৬.৫ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৯৫ রান তুলে নিলে চরম নাটকীয় ক্যান্ডি টেস্টে ৬ উইকেটের জয় পায় লংকানরা।
ডি-সিলভা ৩১ রানে ও রানাতুঙ্গা ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। কিন্তু ক্যান্ডি টেস্ট কি কোনো ধরনের নাটক ছাড়াই শেষ হতে পারে? দিনের ২৭তম ওভার করতে আসেন অসি ক্যাপ্টেন ওয়ার্ন। ওয়ার্ন প্রথম তিনটি বল ডট দেন। চতুর্থ বলে রানাতুঙ্গা একটি চার মারেন। পঞ্চম বলে রানাতুঙ্গা আরো এগ্রিসিভ। লংকানদের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৮৯। রানাতুঙ্গা ওয়ার্নের পঞ্চম বলটি সরাসরি গ্যালারির দর্শকদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। ৬ উইকেটের জয় পেল লংকানরা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডাররা প্যাভেলিয়ানে ফেরার আগেই মাঠে দর্শক ঢুকে পরলো। জয়সূচক সেই বল নিয়ে লংকান দর্শকদের মধ্যে কাড়াকাড়ি!
তিন টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট জিতে শ্রীলংকা ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে গেল। ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান দুই দলের দু'জন। শ্রীলংকার অরবিন্দ ডি-সিলভা ও অস্ট্রেলিয়ান রিকি পন্টিং। ম্যান অব দ্য ম্যাচের বেলায়ও আবারো সেই নাটকীয়তা। কারণ গোটা তিন দিন খেলা মূলত নিয়ন্ত্রণ করলেন দুই দলের বোলাররা। কিন্তু ম্যাচ সেরা হলেন দুই দলের দুই সফল ব্যাটসম্যান। ক্যান্ডি টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি অস্ট্রেলিয়ার কলিন মিলার ৭টি ও শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরলিধরন ৭টি। শ্রীলংকার চামিন্দা ভাস ৬টি ও অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন ৫টি, শ্রীলংকান জয়সা ৩টি ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকগ্রা ২টি। ক্যান্ডি টেস্ট নিয়ন্ত্রণ করেছেন মূলত উভয় দলের বোলাররাই।
সেই হিসাবে ম্যাচ সেরার দাবিদার চামিন্ডা ভাস, মুত্তিয়া মুরলিধরন ও কলিন মিলার। কিন্তু বোলিং সাফল্যের এই চিত্রকে নাটকীয় ভাবে বাদ দিয়ে এই অবস্থায় কে কে ভালো ব্যাটিং করলেন, সেই বিবেচনায় ডি-সিলভা আর পন্টিংকে দেওয়া হল ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তাই ক্যান্ডি টেস্ট হল চরম নাটকীয়, চরম জঘন্য আম্পায়ারিং এবং সরাসরি ফিল্ডারদের সংঘর্ষের এক চরম বিভিষিকাময় ভূতুরে টেস্ট হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। যে কোনো অস্ট্রেলিয়ানকে জিজ্ঞেস করলে ক্যান্ডির সেই ভয়ংকর ভূতুরে টেস্টের খবর জানা যাবার কথা। সিরিজের অবশিষ্ট দুই টেস্ট থেকে অসি ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ ও ফাস্ট বোলার জেসন গিলেস্পি ইনজুরির কারণে আউট।
বি. দ্র.
১৮ জুন ২০১৫ সালে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ভারত বনাম বাংলাদেশ প্রথম একদিনের ক্রিকেটে ভারতীয় ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি বাংলাদেশের তরুণ পেসার মুস্তাফিজকে যে কনুই দিয়ে ইচ্ছাকৃত গুতা মারলেন, সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে আমার ক্যান্ডি টেস্টের অসি ফিল্ডারদের সেই ঐতিহাসিক সংঘর্ষের কথা মনে পড়ে গেল। যদিও ক্যান্ডি টেস্টের সেই চরম বিভিষিকাময় সংঘর্ষে স্টিভ আর গিলেস্পি হাসপাতালে গেলেন। তিন টেস্টের সিরিজ থেকে ছিটকে পড়লেন তারা। কিন্তু তাদের কোনো জরিমানা হয়নি। কারণ তারা মাঠে স্পোর্টসম্যানশিপ দেখিয়েছিলেন। জীবনের বাজি ধরে ক্যাচ ধরতে ছুটেছিলেন। যে কারণে ক্যান্ডি টেস্টে অস্ট্রেলিয়া হারলেও ওই টেস্টে নাকে ব্যান্ডেজ নিয়ে খেলতে নামার যে দুঃসাহসিকতা সেদিন অসি ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ দেখিয়েছিলেন, সেদিন থেকেই স্টিভ ওয়াহ আমার অন্যতম ফেবারেট খেলোয়াড়ে পরিনত হন।
ভারতের ওয়ানডে ক্যাপ্টেন এমএস ধোনিও আমার পছন্দের খেলোয়াড়। কিন্তু মুস্তাফিজকে ধোনি যে কনুই দিয়ে ইচ্ছাকৃত গুতা মারলেন, সেটি আমি ভিডিও দেখে এখন পর্যন্ত মন থেকে মানতে পারিনি। ধোনির মত একজন অমায়িক ভদ্রলোকের কাছ থেকে ক্রিকেটে এটা প্রত্যাশা করা যায় না। এমন কি মুস্তাফিজের ওই বলে ধোনির রানআউটের মত কোনো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়নি। সুতরাং ধোনি ইচ্ছে করেই মুস্তাফিজকে ধাক্কা দিয়েছেন। ফলে দ্বিতীয় সংঘর্ষের ঘটনাটি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হলেও দুইটি চিত্র বিশ্লেষণ করার লোভ সামলাতে পারলাম না। যাতে পাঠক ধোনি'র বিচার আইসিসি যা করেছে, তা কতোটা সঠিক, নিজেরাই বিবেক দিয়ে যাচাই করতে সুযোগ পাবেন।
ছবির ক্যাপসন: ক্যান্ডি টেস্টের একটি মাত্র ছবি পেলাম। ছবিতে অসি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইয়ান হিলি'র লেগ স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছেন লংকান স্পিন জাদুকর মুত্তিয়া মুরলিধরন।
..................................
২০ জুন ২০১৫
ঢাকা
থা
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। তবে মূলঘটনা বলতে একটু বেশিই সময় নিয়ে ফেলেছেন।