নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
নতুন করে আবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এবারের উক্তেজনার নেপথ্যে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে (এ.এ.) দায়ী করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে তাঁরা কেউ কোনো নাম উদ্ধৃত করতে চাননি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বা বিজিবির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুল ইসলাম বলেছেন, এ.এ. নামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে, এমনটি তাঁরাও শুনেছেন। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরও তদন্তের জন্য বলা হয়েছে। বান্দরবানের থানচির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্তচৌকি (বিওপি) ও টহল দলের ওপর গুলি চালিয়েছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এ.এ.)। গতকাল বুধবার সকালে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী থানচির বড়মদক এলাকায় হামলার এ ঘটনা ঘটে। হামলার পর সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে থানচি সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি ও সেনাসদস্য পাঠানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ওই হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বিজিবির সদস্য জাকির হোসেন। বিজিবির প্রতি-আক্রমণে সন্ত্রাসীরা পিছু হটলে তাঁকে উদ্ধার করে হেলিকপ্টারযোগে গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটাল (সিএমএইচ)-এ পাঠানো হয়। তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে বিজিবি জানিয়েছে। এছাড়া ওই হামলায় আহত হয়েছেন সিপাহি আবদুল গনি।
জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালেও বড় মদক বিওপি থেকে বিজিবির সদস্যরা টহলে বের হন। টহল দলটি বাতংপাড়ার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছলে তাদের ওপর আরাকান আর্মির অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে জবাব দেয়। এরপর থেকে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে টহল দলের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পাশাপাশি বিমানবাহিনীর এফ-৭ যুদ্ধ বিমান ঘটনাস্থলের উপর টহল দেয়া শুরু করে। বিমানটি দুর্গম এলাকার ওপর দিয়ে উড়তে থাকলে আক্রান্ত টহল দলটি সন্ত্রাসীদের ওপর পাল্টা আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে টহল দলটি নিরাপদে ক্যাম্পে ফেরত আসে। মঙ্গলবার রাতে বিজিবির টহল দল বড় মদক এলাকা থেকে দশটি এরাবিয়ান ঘোড়া উদ্ধার করে। এই ঘোড়াগুলো আরাকান আর্মি চোরাচালানে ব্যবহারের জন্য নিয়ে এসেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা স্থানীয় নীরিহ মানুষকে বিপথগামী করার লক্ষ্যে নিষিদ্ধ পপি চাষসহ নানামুখী অপকর্ম চালাতেও বাধ্য করছে। বিজিবির টহল দলের তৎপরতায় সন্ত্রাসীরা নিরীহ মানুষের ওপর চাপ দেয়া থেকে কিছুটা পিছু হটে। এনিয়ে বিজিবির ওপর আরাকান আর্মির ক্ষোভ আছে। পপি চাষে বাধা দেয়ার ক্ষোভ এবং ঘোড়া আটকের জের ধরেই সন্ত্রাসীরা বিজিবির টহল দলের ওপর হামলা করে। রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মালিরাম ত্রিপুরা এবং সিংগাফা মৌজা হেডম্যান জানান, বুধবার সকালে বড়মদক বিজিবি ক্যাম্পে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে গুলি বর্ষণের পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে অজানা শংকা ও আতংক দেখা দিয়েছে।
গত রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আক্রান্ত হওয়ার পর বিওপি ও টহল দলকে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী ছাড়াও বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিমান থানচির দুর্গম ওই এলাকায় টহল দিয়েছে। সেখানে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর কম্বিং অপারেশন (সমন্বিত অভিযান) শুরু করা হয়েছে। এর আগে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিজিবির বান্দরবান সেক্টরের উপ-অধিনায়ক সৈয়দ জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, জেলা সদর থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে বড়মদক সীমান্তচৌকিতে এবং দলিয়নপাড়া সীমান্তচৌকির একটি টহল দলের ওপর গতকাল সকাল নয়টার দিকে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। এ সময় বিজিবির সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালান এবং মর্টার শেল ছোড়েন। বিজিবির তীব্র প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা কয়েকবার পিছু হটে গেলেও আবার সংগঠিত হয়ে আক্রমণ চালাতে থাকে। এভাবে বেলা একটা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। বড়মদক ও দলিয়নপাড়া সীমান্তচৌকি যোগাযোগবিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকায় হওয়ায় পাল্টা আক্রমণের জন্য দল পাঠিয়ে দ্রুত সাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ১০-১২ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে পাল্টা আক্রমণের পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তে সন্ত্রাসীদের হামলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বিকেলে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এ জন্য যে ধরনের অভিযান প্রয়োজন, তাই চালানো হবে। সেটি কম্বিং (চিরুনি) অভিযান কিংবা যৌথ অভিযানও হতে পারে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি আর তৈরি না হয়, সে জন্য আরাকান আর্মি (মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী) দমনে অভিযান চালানো হবে।’ বিজিবির ওপর হামলার বিষয়ে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করতে বিজিবি অভিযান চালাবে। দলিয়নপাড়া বিওপি থানচির রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে পড়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান মালিরাম ত্রিপুরা বলেন, বিজিবির সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গুলিবিনিময়ের সময় বড়মদক বিওপির পাশের বড়মদক বাজার, বাজারপাড়া ও নাসালংপাড়ার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা বলছেন, বড়মদক ও তিন্দু এলাকায় সম্প্রতি দুই দফায় ১০টি ঘোড়া আটক করে বিজিবি। এসব ঘোড়া এ.এ. বিদ্রোহীদের। ঘোড়া আটকের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বিজিবির ওপর আক্রমণ করেছে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বা বিজিবির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুল ইসলাম ১০টি ঘোড়া আটকের কথা গণমাধ্যমে স্বীকার করেন। তবে এসব ঘোড়া কারা এনেছিল, তা এখনো জানা যায়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটকও করা যায়নি। কী কারণে বিজিবির ওপর হামলা হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে বাংলাদেশের রাঙামাটির একটি উপজেলা থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্য সন্দেহে একজন যুবককে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অং ইউ ইয়াং রাখাইন (২০) নামের ওই যুবককে আটক করা হয়। রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, রাজস্থলীর একটি খামার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি তালাবন্ধ কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে কয়েকটি আরাকান আর্মির পোশাক, পোশাকের কাপড়, তিনটি ল্যাপটপ ও ক্যামেরা পাওয়া গেছে। বুধবার বান্দরবানের থানচিতে বিজিবি এবং মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির মধ্যে গোলাগুলির পর ঐ এলাকায় বিজিবি ও সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এরপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ধানে পার্বত্য জেলাগুলোয় অভিযান শুরু করা হয়।
বান্দরবান সীমান্তে গোলাগুলির পর পাশের জেলা রাঙামাটিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে মিয়ানমারের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সংগঠন আরাকান আর্মির এক ‘সহযোগীকে’ আটক করা হয়েছে। আটক অং ইউ ইয়াং রাখাইনের (২০) জিম্মায় দুটি ঘোড়া, আরাকান আর্মির তিন সেট পোশাক, পোশাকের ৩০ গজ কাপড়, তিনটি ল্যাপটপ, দুটি ডিজিটাল ক্যামরা, একটি হ্যান্ডিক্যাম, মোটর সাইকেলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনীর ৩০৫ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, দুই জেলার মধ্যবর্তী রাজস্থলী উপজেলার তাইদং পাড়ায় বুধবার রাত ১০ থেকে ২টা পর্যন্ত এই অভিযান চলে। ব্রিগেডের জিএসও-২ মেজর তসলিমের সই করা ইমেইলে বলা হয়েছে, ডা. রান নিন শৈ মার্মা নামে একজনের বাড়ির বন্ধ একটি কক্ষে অং ইউ ইয়াং রাখাইন নামের ওই যুবককে পাওয়া যায়। অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে রাজস্থালী থানার ওসি ওয়াহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকে জানান, গোপন খবর পেয়ে নেদারল্যান্ডস প্রবাসী ডা. রান নিন সোয়ে মারমার বাসায় অভিযান চালানো হয়। এসময় বাড়ির মালিক পালিয়ে গেলেও তার সহযোগী অং ইউ ইয়াংকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অং ইউ ইয়াং নিজেকে আরাকান আর্মির সহযোগী বলে স্বীকার করার পাশাপাশি তার বাড়ি আরাকানে বলে জানিয়েছেন। আটক যুবককে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে। ব্রিগেডের জিএসও-২ মেজর তসলিমের সই করা ইমেইলের সঙ্গে পাঠানো ছবিতে দেখা গেছে আটক যুবকের দুই হাত নেই। তার শরীরে স্প্লিন্টারের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দুর্গম সীমান্ত আছে ২৮৪ কিলোমিটার। যার মধ্যে প্রায় ২৩০ কিলোমিটারই অরক্ষিত। এ সীমান্ত অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। যার অধিকাংশ স্থানে হেলিকপ্টার ছাড়া পৌঁছানো সম্ভব নয়। কোনো বিওপি না থাকায় সেখানে অবাধে সন্ত্রাসীরা আসা-যাওয়া করে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে ২৮৪ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৫০ কিলোমিটার আমরা কভার করেছি। আগে সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। এখন সেখানে বিওপি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাকি অংশে বিওপি বসানোর প্রস্তাবে আছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সেখান থেকে একেকটি বিওপি বসানোর প্রশাসনিক আদেশ পাই, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করি। মিয়ানমার সীমান্তের পুরোটাই নজরদারিতে আনার জন্য পর্যায়ক্রমে আরও অনেকগুলো বিওপি বসানো হবে।’
ওদিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে বিজিবির সঙ্গে চোরাকারবারীদের গোলাগুলি হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্সকর্তা মহসিন রেজা যুগান্তরকে জানান, বিজিবির সদস্যরা শাহপরীর দ্বীপে অভিযান চালিয়ে ১৫টি সোনার বার উদ্ধার করে। এ সময় সংঘবদ্ধ চোরাকারবারীরা বিজিবির ওপর আক্রমণ ও গুলি করে। বিজিবি পাল্টা গুলি করেছে। এ বিষয়ে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, হামলায় কেউ আহত হয়নি। বিজিবি সদস্যরা নিরাপদে আছেন।
যুগান্তরের বান্দরবান প্রতিনিধি এনামুল হক কাশেমী জানান, গোলাগুলির খবর পেয়ে বিজিবির বান্দরবান সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এসএম অলিউর রহমান এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ বিজিবির রুমা, থানছি এবং আলীকদম ব্যাটালিয়নের বিপুলসংখ্যক সদস্য ও সেনাবাহিনীর ২টি টিম সেনা ও বিমানবাহিনীর ২টি হেলিকপ্টারে ঘটনাস্থলে যান। এছাড়া সীমান্ত এলাকার বিজিবি ক্যাম্পগুলোতে বিজিবি সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ঘটনাস্থল বান্দরবান জেলা সদর থেকে ১৬০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে। আকাশ ও নৌপথ ছাড়া সেখানে সরাসরি এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। বিজিবির বান্দরবান সেক্টর জেনারেল স্টাফ অফিসার-২ মেজর জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর জানান, জেলার দুর্গম ও সীমান্ত এলাকার কাছে স্থাপিত বিজিবি ক্যাম্পগুলোতে হেলিকপ্টার ছাড়া যোগাযোগ রক্ষা করা খুবই কঠিন। পাহাড়ি পথে হেঁটে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে যাওয়া-আসা করতে কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। প্রায় ২ বছর আগে বিজিবির বান্দরবান সেক্টর গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত পাহাড়ের অর্ধশত কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত এলাকা সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। এখনও প্রায় ১৫০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আরাকান আর্মি বা অন্য যে কোনো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থান করতে পারবে না। তাদের আটক করতে সেনাবাহিনীসহ বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য তৃণমূল পর্যায়ে অভিযান চালাচ্ছেন।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এ.এ.) ছাড়াও নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী জঙ্গী গোষ্ঠীর অনেক ঘাঁটির খবর মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে আসলেও এখন পর্যন্ত ওই অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর বিস্তারিত কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায় না। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের অভিযানে অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ, গ্রেনেড ও বোমা আটকের খবর জানা যায়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এই অঞ্চল গুলোতে সন্ত্রাসীদের যে একটি নিরাপদ অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিষয়টি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর কাছে এখনো পার্বত্য অঞ্চলের ওই দুর্গম এলাকায় কারা ঘাঁটি করছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নাই। এমন কি খোদ গোয়েন্দা সংস্থার ভেতরেই এসব সন্ত্রাসী জঙ্গী গোষ্ঠীর কোনো সহযোগী রয়েছে কিনা, সে বিষয়টি এখন খুব গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। কারণ বিভিন্ন সময়ে নানান কিসিমের অভিযানের সময় এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিরাপদে পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। কখনো কখনো অভিযানরত সেনাদল বা বিজিবি'র সঙ্গে গুলি বিনিময় হচ্ছে। কিন্তু এসব সন্ত্রাসী জঙ্গী গোষ্ঠী সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা কেন এখনো আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে থাকবে না, সেই প্রশ্নটি এখন তোলাই যায়।
মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া, লিবিয়া ও ইরাকে যুদ্ধরত ইসলামী স্টেট বা আইএস সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও আল কায়েদার সঙ্গে বিভিন্ন মুসলিম দেশে জঙ্গী সংগ্রহ ও জঙ্গীদের প্রশিক্ষণের যে উড়ো খবর জানা যায়, তার সঙ্গে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের এসব জঙ্গী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কোনো যোগাযোগ রয়েছে কিনা, বা এরা আইএস-এর কোনো সহযোগী জঙ্গী গোষ্ঠী কিনা, সেটি এখনই খতিয়ে দেখা উচিত। কেবলমাত্র মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এ.এ.) কথা বলে জঙ্গীদের গোটা তৎপরতা আড়াল করা হচ্ছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখার সময় এখন। কারণ এসব জঙ্গী গোষ্ঠী ধর্মের নামে টাকার বিনিময়ে সারা দেশ থেকে সদস্য সংগ্রহের অভিযান চালায়। ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত অনেক জঙ্গী গোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরনের পোস্টার কিন্তু এখনো দেখা যায়। দেশের অভ্যন্তরে কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী গোষ্ঠীর কোনো তৎপরতা নেই বলে সরকার মুখে যতোই দাবি করুক না কেন, ভেতরে ভেতরে এসব জঙ্গীদের নেটওয়ার্ক যে অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, সেটা থানচির হামলার ঘটনাই প্রমাণ করে। এ বিষয়ে সরকারকে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স শুধু বক্তব্যে নয়, এটার বাস্তবে কার্যকারিতাই আমরা প্রত্যাশা করি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এটাকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার সুযোগ নাই।
....................................
২৭ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:১১
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: দেশের সক্ষমতা বাড়লে সুরক্ষিত হবে। সম্পূর্নভাবে করা কখনোই সম্ভব না। এই জায়গায় গেলে বুঝতেন মানুষের যাতায়াত কতটা দুরুহ। প্রায় ৩০০ কিলো দুর্গম সীমান্ত যা কিনা আবার অনেকটা জনশুন্য, তা কাভার করা আসলেই দুঃসাধ্য একটা কাজ। পপি ফুল দেখার ইচ্ছা থাকলে দুই চারদিনের জন্য হারাইয়া যাইয়েন, জায়গায় যায়গায় বাগান দেখতে পারবেন। খুবই সুন্দর দেখতে।