নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি!!!

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:৫৭

গতকাল বইমেলায় গেছি শিল্পী শেখ শাহেদ আলী আর আমি একসাথে পায়ে হেঁটে। আর বইমেলায় ঢুকতেই সাতটা বেজে গেছে। প্রথমে গেলাম স্টুডেন্ট ওয়েজে। স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে এবার প্রকাশ পেয়েছে শাহেদ ভাই'র দ্বিতীয় বই 'মালেকা রোকযানা অ্যালবামের গল্প'। গতবছর একই প্রকাশনা থেকে শাহেদ ভাই'র প্রকাশ পেয়েছিল প্রথম বই 'আত্মজীবনী লেখা যায় না' যা বইমেলায় বেস্ট সেলার বই ছিল। এবারের বইটিও বেস্ট সেলার তালিকায় আছে।

বইমেলায় আমরা গতকাল শুরু করেছিলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে। কিছুক্ষণ আড্ডা হলো বন্ধু সাইমন জাকারিয়ার সাথে। স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে শাহেদ ভাই আর আমি গেলাম বিদ্যাপ্রকাশের স্টলে। সেখানে যথারীতি মোহিত ভাই নাই! কিন্তু পেলাম লেখক জুলফিয়া ইসলামকে। কিছুক্ষণ পর আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন লেখক-অনুবাদক সোহরাব সুমন। বইমেলা'র প্রথম বই উপহার পেলাম বন্ধু জুলফিয়া'র কাছ থেকে। জুলফিয়াকে ধন্যবাদ। যথারীতি আমরা বিদ্যাপ্রকাশের ঐতিহ্যবাহী পিয়াজু আর নাস্তা খেয়ে মেলায় ঘুরতে বের হলাম।

বাংলাপ্রকাশের স্টলের সামনে দেখা হলো রমনী বেষ্টিত লেখক হুমায়ুন কবীর ঢালী'র সাথে। আমরা এলোমেলো ঘুরছিলাম। একপর্যায়ে গেলাম বাতিঘর স্টলে। এ বছর বন্ধু শিল্পী শাহীনূর রহমান একটি মাত্র স্টলের নকশা করেছেন। বাতিঘর-এর। শাহীনের কাজটি দেখার মত। যে কোনো বইপ্রেমী বাতিঘরের স্টলে ঢুকে নিজের পছন্দ মত বই নিয়ে কাউন্টারে টাকা দেবার সুযোগ গোটা বইমেলায় আর দ্বিতীয়টি নজরে পড়েনি। সত্যি এবার যদি স্টল সজ্বায় কোনো পুরস্কার থাকে তাহলে বাতিঘর কঠিন প্রতিদ্বন্ধিতা করবে! বাতিঘরের প্রকাশক বন্ধু দীপংকরকে পেলাম না। দীপংকর চট্টগ্রাম গেছে। ফিরলে নিশ্চয়ই আড্ডা হবে। বাতিঘরের সামনে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল বন্ধু সাংবাদিক-লেখক নজরুল কবীর।

তারপর এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে গেলাম শ্রাবণ প্রকাশনীতে। সেখানে দেখা হলো আমার প্রকাশক বন্ধু রবীন আহসান, বিপ্লবী বাবুদা, সাইদুর, নারীবাদী লেখক সাদিয়া নাসরিন প্রমুখের সাথে। সাইদুর আমার 'ফিদেল দ্য গ্রেট' বইতে অটোগ্রাফ নিল। ধন্যবাদ সাইদ। বইটি পড়ে তোমার মতামত জানিও। কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে শাহেদ ভাই আর আমি আলাদা হলাম। আমি চলে আসলাম বাংলা একাডেমি'র লিটল ম্যাগ চত্বরে। দেখা হলো আড্ডা হলো শারমিনা আপা, তুলা ভাবী, নীল সাধু, উপমা, রুদ্র খড়, ফারাহ নাজিয়া, শিমুল কিবরিয়া, অয়ন আবদুল্লাহ, কবি শাফি সমুদ্র, লেখক ঋষি এস্তেবান, লেখক কাওসার মাসুম, কবি মাহমুদুল হাসান মাসুম, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, আয়ুষী ঘোষ, নওরীন ওশিন, সেরা বন্যা, শিল্পী শতাব্দী ভব, শতাব্দী সানজানা, ফায়েজুস সালেহীন, কবি অমিতাভ পাল, কবি মাহবুব আলম, মেঘ সম্পদক কবি লতিফ শাহীন, কবি ও সম্পাদক শরীফ খিয়াম আহমেদ ঈয়ন সহ অনেকের সাথে।

আজ লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে দ্রষ্টব্য থেকে প্রকাশ পেয়েছে কবি কামরুল হুদা পথিকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মাতাল শহরের গল্প'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। কামরুল হুদা পথিক একদিকে সম্পাদক, অত্যন্ত শক্তিশালি গদ্যলেখক, গল্পকার এবং কবি। তিনি বাংলা ভাষায় প্রতিষ্ঠান বিরোধি ছোট কাগজ দ্রষ্টব্য এবং করাতকলের সম্পাদক। অভিনন্দন পথিকদা। আপনার কাব্যযাত্রা শুভ হোক।
আজ লিটলম্যাগ চত্বরে অনেকক্ষণ আড্ডা হলো গাণ্ডীব সম্পাদক তপন বড়ুয়ার সঙ্গে। তপনদা সুন্দরবন ঘুরতে যেতে চান নদীপথে, ফিরতে চান সড়ক পথে। আমি যতটুকু চিনি সেভাবে তপনদাকে রুট বলার চেষ্টা করেছি। রামপাল ও সুন্দরবন এলাকার কোনো বন্ধু যদি আমার এই লেখা পড়েন, প্লিজ কমেন্ট বক্সে তপনদাকে সুন্দরবন ও রামপাল যাবার ডিটেইল ও সহজ পথ বলে দেবেন।

গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে প্রকাশকদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বই বিক্রি হবে। কিন্তু বইমেলায় প্রচুর দর্শক আসলেও তারা ফুল ও অন্য জিনিসে যে অর্থ খরচ করেছে, তারচেয়ে বই কেনার প্রতি তাদের ছিল যথারীতি অনাগ্রহ। বইমেলায় যত মানুষ গেছে তার শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষ আসলে ঘুরতে গেছে, সেলফি তুলতে গেছে। কেউ বই কেনেনি। যারা বইয়ের প্রকৃত পাঠক, কেবল তাদের হাতেই বই দেখা গেছে। বাংলাদেশে বইমেলা এখন ঘোরাঘুরি আর সেলফি তোলার একটা জায়গা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বইমেলার খাবারের দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সেখানে তারা অনায়াসে গোগ্রাসে খাবার গিলেছে মাগার বই কেনার প্রতি তাদের তেমন আগ্রহ নজরে পড়েনি।

বরং অনেকে ফ্রি বই পাওয়ার লোভে বইমেলায় ভিড় করছে। কী জানি সেই ফ্রি বই এরা নীলক্ষেতের পুরান বইয়ের মার্কেটে বিক্রি করে বিড়িয়ানী খায় কিনা, কে জানে! বাঙালির প্রধান কাজ এখন দুটি। একটি ঘুম থেকে উঠেই মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুকে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া। দ্বিতীয়টি হলো বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেলফি তোলা। এটা এখন একটা সংক্রামক রোগের পর্যায়ে চলে গেছে। দুনিয়ায় আর কোথাও হয়তো ফেসবুক এত জনপ্রিয়তা পায়নি, যতটা পেয়েছে বাংলাদেশের অকর্মন্য বাঙালির কাছে। এরা আর কিছু পারুক আর না পারুক, ফেসবুক চালাতে শিখেছে। সেলফি তুলতে শিখেছে।

বইমেলায় দেখা গেছে সেলফি তোলার ক্যামেরা স্ট্যান্ড ঘাড়ে নিয়ে এক ফেরিওয়ালাকে ঘুরতে। তার বিক্রি যে কোনো লিটলম্যাগ প্রকাশকের চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি। দুনিয়ায় সবচেয়ে খারাপ যত জিনিস আছে, তা বাঙালি সবার আগে গ্রহন করে আর ভালো জিনিসটা দিনদিন ভুলতে চায়। বাংলাদেশের এখন প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ বই পড়ে না। কিন্তু তাদের অনেকেই ফেসবুক চালায়।
তবে এই হতাশার মধ্যেও কিছু ভালো লক্ষণ দেখা গেছে, যদিও তা প্রত্যাশার তুলনায় খুবই নগন্য। এবারের বইমেলায় বড়দের বইয়ের চেয়ে শিশুদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। মা-বাবারা হয়তো ভাবছেন নিজেরা যতই ফাঁকিবাজি করি না কেন, নিজের সন্তানের জন্য বই কিনি। এই সদিচ্ছার কারণে এখনো হয়তো শিশুদের বই বিক্রি হচ্ছে।

বইমেলায় আজ নিরাপত্তা পরিস্থিতি ছিল খুবই ঢিলেঢালা। আজকে মানুষের উপস্থিতি বেশি অথচ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এত ঢিলেঢালা, ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। গেট থেকে বইমেলায় প্রবেশ পথে অনেককেই পুলিশ তল্লাশি করেনি। আমি নিজের চোখে দেখেছি এটা। যে কারণে বইমেলায় নিরাপত্তাহীনতা এখন সবচেয়ে বড় আতংকের জায়গা। চারদিকে প্রচুর পুলিশের উপস্থিতি। কিন্তু তল্লাশিতে এত ঢিলেঢালা ভাব, এটা কাদের জন্য আমার মাথায় আসে না!

বাংলা একাডেমির উচিত পুলিশের জন্য বইমেলার মাঠের বাইরে কঠোর তল্লাশি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এটা দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি এবং গোটা বইমেলা প্রাঙ্গন জুড়েই খুব জরুরী। এর আগে ডক্টর হুমায়ুন আজাদ সন্ত্রাসীদের হাতে বইমেলা থেকে বের হবার সময় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে পুলিশের সামনেই। লেখক বন্যা আহমেদকে কুপিয়ে জখম করেছে। বইমেলা যতই শেষের দিকে আগাচ্ছে, পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ততই রহস্যময় গাছাড়া ভাবটা আমার ভারী সন্দেহ হচ্ছে। নতুন কোনো অঘটনের ঘটনা ঘটলে, তা যে পুলিশের এই দায়িত্বহীনতার কারণেই ঘটবে, তা আজকের বইমেলার চেহারা দেখে আন্দাজ করা যায়।

বন্ধুদের অনেকেই বইমেলা অলরেডি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেই বইমেলায় আসে না এই নিরাপত্তাহীনতার কারণেই। আমরা একটি নিরাপদ ও সফল বইমেলা দেখতে চাই। বাংলা একাডেমি এই বই মেলার আয়োজক। তাই প্রথমেই সকল দায় গড়াবে একাডেমির উপর। আর পুলিশের দায়িত্বহীনতা আজ যেমন চোখে পড়েছে, বাস্তবে এটা আরো কত ভয়াবহ বা রহস্যময় তা কেবল পুলিশ-ই বলতে পারে!

বইমেলায় পুলিশের রহস্যময় ঢিলেঢালা আচরণ সত্যি সত্যিই বড় চিন্তার বিষয়। বইমেলার নিরাপত্তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। নইলে সরকারও এর দায় থেকে নিজেদের এড়াতে পারবে না। বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। অমর একুশে বইমেলা নিরাপদ ও সফল হোক। প্রকাশকদের মধ্যে অলরেডি বই বিক্রি না হবার কারণে এক ধরনের হতাশার চেহারা সুস্পষ্ট দেখা গেছে। আশা করি বইমেলার বাকি দিনগুলোতে এই চিত্র বদল হবে। বইমেলায় আগত বইপ্রেমীরা বই কেনায় উৎসাহী হবে। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন।

................................
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:২৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


বইমেলা নিয়ে কিছু সঠিক ধারণা পেলাম, ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৫১

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: চাঁদগাজী বলেছেন: বইমেলা নিয়ে কিছু সঠিক ধারণা পেলাম, ধন্যবাদ।

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:২৫

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: প্রযুক্তির সহজলভ্যতা আর বাঙালির হুজুগেপনায় বই পড়া ব্যাপারটা বাংলাদেশে দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে বা গেছে। আগে মানুষ ফেভারিট পাসটাইম বলত বই পড়া। এখন বলে ফেসবুকিং, চ্যাটিং।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.