নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘটকপুরাণ- ২

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৬

দিনোর মা'র পাঠশালার একটা নিয়ম খুব ভালো। ছুটির সময় সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়া। চিৎকার করে পড়া। সবাই একসাথে কণ্ঠ মিলিয়ে পড়া। এই পদ্ধতিতে পড়লে মনে থাকে ভালো। বাড়িতে এসে আর পড়া লাগে না। আর এই দলবেধে পড়ায় একটা আনন্দ থাকে সবার মনে। কারণ এই পড়া শেষ হলেই ইশকুল ছুটি।

ছুটির আগে উঠোনে আমরা কয়েক সারিতে লাইন করে দাঁড়াই। সাধারণত একজন একেবারে লাইনের সামনে দাঁড়ায়। সে সামনে থেকে এই কোরাস পড়ায় নেতৃত্ব দেয়। একেক জন মাত্র একটি বিষয়ে নেতৃত্বে দেয়। কে কোন বিষয়ে নেতৃত্ব দেবে, এটি দিদিমণি ঠিক করেন। যদি কেউ একের ঘরের নামতায় নেতৃত্ব দেয়, দেখা গেল দুইয়ের ঘরের নামতায় অন্য একজন নেতৃত্ব দিচ্ছে। এভাবে ঘুরে ঘুরে আসে।

এই কোরাস পড়ার সময় সবাইকে একসাথে গলা মেলানোর নিয়ম। কে কোন ক্লাশে পড়ে, তা এখানে বিবেচিত হয় না। সবাইকে সব বিষয়ে গলা মেলাতে হয়। যে নেতৃত্ব দেয়, তার পাশেই দিদিমণি হাতে বেত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। যদি কেউ ভুল করে, তাহলে সাথে সাথে তার পাছায় বেতের বাড়ি পরে।

পাঠশালায় ভর্তি হবার পর নতুন একটা বিষয় শিখেছি। কেউ কাউকে ডাক দিলে 'আজ্ঞে' বলার নিয়ম। আগে আমরা কী, কেডা, কেন, জি, অ্যা, এসব বলতাম। এখন ইশকুলের সময় আমরা আজ্ঞে বলি। ইশকুলের বাইরে অবশ্য আজ্ঞে বলে একে অপরকে ভেংচি কাটি। 'আজ্ঞে' এখন ইশকুলের বাইরে আমাদের একটা খেলার অংশ হয়ে গেছে। নানান বাহারি সুরে আমরা আজ্ঞে বলতে পারি।

ইশকুল ছুটি হলে আমরা যারা তালপাতার ক্লাশের, তারা সবাই বাড়ির দিকে একটা ভো দৌঁড় লাগাই। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে এ-ওর দিকে তাকিয়ে কয়েকবার নানান সুরে 'আজ্ঞে' বলি। এই নিয়ে পথে কয়েক দফা মারামারি করাটাও আমাদের খেলার অংশ হয়ে গেছে। মারামারি করতে গিয়ে আবার পক্ষ প্রতিপক্ষ হচ্ছে।

মারামারিতে হারু পার্টি আবার পরদিন দিদিমণি'র কাছে নালিশ করার হুমকি দিচ্ছে। এসব করতে করতে যে যার বাড়ির পথে আলাদা হচ্ছি। একেবারে বাড়ির কাছাকাছি এসে দোয়াতের অবশিষ্ট কালি দুই গালে আর প‌্যান্টের পাছায় ঘষে নিচ্ছি। ইশকুলে যে খুব পড়াশুনা করেছি তা প্রমাণ করার জন্য এই একটা কৌশল।

মুখে আর প‌্যান্টের পাছায় কালি মাখাতে পারলে দুইটা লাভ হয়। এক হলো খুব পড়াশুনা করেছি তা প্রমাণ করা যায়। দ্বিতীয়ত এই অছিলায় পুকুরে ইচ্ছামত কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার সুযোগ। পুকুরে আবার আমাদের একটা খেলা চলে। মাথা ছোঁয়ার খেলা। একজন মাঝ পুকুরে গিয়ে এক-দুই-তিন বলার পর, তাকে সবাই মিলে ধাওয়া করা। জলের উপরে যে আগে মাথা ছুঁইতে পারবে, সে হবে পরবর্তী নেতা। তখন সবাই আবার তাকে তাড়া করবে।

যে যত ডুবিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে, এই খেলায় সে তত বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারে। দেখা গেল চারপাশ থেকে সবাই তাকে ঘিরে ফেলেছে। কিন্তু সে ডুবিয়ে কোনো ফাঁক দিয়ে দূরে গিয়ে আবার জাগলো। এই খেলার সুবিধা হলো গোটা পুকুর জুড়ে আমরা মাতিয়ে বেড়াতে পারি।

আর অসুবিধা হলো, বড়োরা কেউ স্নান করতে আসলেই ঘোলা জলের কারণে আমাদের লিলিপুট ডুবুরিদের বকাঝকা করে। তবে সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে বাবাকে নিয়ে। বাবা এসে আমাদের এভাবে দেখলেই সোজা ধাওয়া করেন। সেই ধাওয়ায় যে ধরা পরে তার পাছা লাল হয়ে যায়। সাধারণত গোটা পুকুরের জল ঘোলা হতে আমাদের এই খেলা মিনিমাম আধঘণ্টা চালাতে হয়। আর কোনো কারণে এক ঘণ্টার উপরে এই খেলা হলে পুকুরের জলকে আর জল মনে হয় না। পুরোটা তখন কাদামাটি গোলানো জলকাদায় পরিণত হয়।

যেদিন বাবা বাড়িতে না থাকেন, সেদিন আমাদের এই খেলা চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে। এতে সবার ঠোঁঠের উপর প্রলেপ পড়ে একটা আলাদা সেফ তৈরি হয়। আর প্রত্যেকের চোখ হয় কোকিলের চক্ষুর মত লাল। একসময় যখন চোখ পোড়ানো শুরু করে তখন নিজেরাই এই খেলায় আমরা ইতি টানি।
-------------------------চলবে-------------------------

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক দাদা।

২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৩০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুপাঠ্য,

৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:৪৮

মা.হাসান বলেছেন: খুব ভালো চলছে।

৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৫৮

সোনালি কাবিন বলেছেন: ভাল লেগেছে

৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫১

হাসান৭৩ বলেছেন: বলেছেন: ভাল লেগেছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.