![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রকৃতি মানুষের আচরণের প্যাটার্ন তৈরি করে দেয়
জন্মের পর থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামে বাস করা সত্ত্বেও
প্রকৃতির আলো বাতাসের সাথে খুব একটা সন্ধি করতে পারিনি।
জীবনযাত্রা ছিল কিছুটা বইয়ে আলোচিত শিশুদের জীবন যাত্রার মত,
কয়েকটা চাচা বাসায় ছিল, তারা সবাই পড়াশোনা করত,
এক জনের শাসন শেষ হওয়ার সাথে আর একজনের শাসনের বলি হতে হত,
অনেক গুলা ভাল অভ্যাসের পাশাপাশি কিছু খারাপ দিক বয়ে যেত আমার জীবনে
জীবনের প্রথম ইংরেজি রিডিং পড়া আমি স্কুলে যাওয়ার আগেই শিখি।
খেলার সাথী হিসেবে ছিল কয়েকটা খরগোশ,
কখনও আমার প্রিয় কুকুরটা
কখনও টিয়া পাখি, মাঝে অল্প সময়ের জন্য একটা ছাগলছানাও ছিল।
আমার ব্যস্ততায় ভরা দিনগুলির সমস্ত ভাবনা গুলি ছিল ওই অবলা প্রানিগুলা নিয়ে
কখন বাঘের বাচ্চাগুলার থাবা ফাকি দিয়ে ওদের সাথে মনের সকল কথা শেয়ার করব।
দেখতে দেখতে বেড়ে উঠলাম, চাচারাও চলে গেল পড়াশোনার জন্য শহরে
শুরু হল আমার আনাড়ি জীবনের নতুন অধ্যায়,
সেই সমাজের কাছে আমি এতটাই বোকা ছিলাম যে সামনে অথবা পেছনে অনেকের
হাসির পাত্রও হয়েছি।
আমার বেড়ে ওঠার সমাজটায় মূল্যবোধের চরম ঘাটতি ছিল,
সেখানে যার যার ছেলেমেয়েকে প্রয়োজনে অনৈতিক কাজ ও শেখানো হত
কিন্তু অন্যের ছেলেমেয়েকে সবসময় বিভিন্নভাবে হেয় করা হত।
কিন্তু বাবা মায়ের কাছে এ ইস্যু গুলি নিয়ে ভাবার সময় ছিলনা
তাদের একমাত্র কথা থাকত যেওনা ওদের সাথে,
যেন এই একটা সমাধানই পৃথিবীর বুকে অবশিষ্ট ছিল আমার জন্য।
দিন যায় বেড়ে উঠতে থাকি, আমার আচরণ গুলি যেন সবার থেকে একটু আলাদা,
আমার বন্ধুদের বলাবলি করতেও শুনেছি আমাকে নিয়ে ওরা কনফিউসড আমি আসলে কি??
প্রশ্নটা আমার মনেও মাঝে মধ্যে আসত কিন্তু ভাবতে পারতাম না
কোন কাজ করতে গেলে আশেপাশের মানুষের বিচ্ছিন্ন মনোভাবে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতাম,
যার প্রভাব এখনও মাঝেমাঝে আমাকে পীড়া দেয়।
নিজের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে কিছু করার জন্য যখন দৃঢ়চেতা হই,
ঠিক সেই সময় যেন অচেনা একটা সত্ত্বা এসে পথ আগলে দেয়।।
আর দশটা বাবা মায়ের কাছে তাদের সন্তান যেন অপরিসীম ম্যাচিউরড
আর আমি ছিলাম কিছুটা বোকা।
আমার বোকা মা টা শুধু তার সন্তানের পাশে ছিল
জানিনা আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নাকি তার আত্মিক দূরদর্শিতা দিয়ে
ভবিষ্যৎদ্বানী করত ঠিক জানিনা।
তবে শিশু বয়সে দুরারোগ থেকে মুক্তির পর ডাক্তারের ভাষ্য অনুযায়ী
পরিবারের প্রত্যাশা ছিল শুন্যের কিছুটা কাছাকাছি।
আরেকটা মানুষ কে পাশে পেয়েছি
সে আমার বয়সি ছিল কিন্তু সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত জ্ঞানে সে প্রচলিত সমাজের
সাধারণ মানুষ থেকে জ্ঞ্যানে এবং ধ্যানে কিছুটা এগিয়ে ছিল।
ভাবনার রাজ্যে প্রবেশ হয় তার হাত ধরে,
যখন এসএসসি পাশ করে বাইরে আসি পড়তে
জীবনের সবথেকে কঠিন সময়গুলি তখন পার করতে থাকি,
মাঝে মাঝে মনে হত এই সমাজ কথিত ফ্রিকি দের জন্য
আমার মত সহজ চিন্তা দিয়ে এ সমাজে পথ চলা বোধহয় হবেনা।।
তবুও সহজ পথ ছাড়তে পারিনি,
হেটে চলেছি গন্তব্যহীন, মাঝে মাঝে হোঁচট খেয়েছি আবার উঠে দাঁড়িয়েছি
নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজে খোজার চেষ্টা করেছি নিজের মত করে।
কখনও উত্তর পেয়েছি, কখনও অন্য প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে আগের প্রশ্ন ভুলে গিয়েছি
হয়ত সে ভুলে যাওয়াটা নিতান্তই সাময়িক ছিল,
তাইতো মাঝে মাঝে যখন সেই প্রশ্নের উত্তরের সামনে দাঁড়িয়েছি
ঠিক প্রশ্ন গুলি মনে পড়ে গেছে।
প্রস্নগুলির ধারাটা সবসময় একটা বিন্দুকে আবর্তে ঘুরে ফিরেছে
জীবন কি??? পথ চলার সহজ উপায় গুলি কোথায় পাওয়া যায়???
আজ নিজেকে কিছুটা পরিনত মনে হয়
পথ চলতে বিশেষ কষ্ট হয় না।
সেদিন যখন মাকে নিজের আয় করা টাকা থেকে ২০০০ টাকা দিলাম
মা কেদেছিল, কেন কেদেছিল সে প্রশ্নের উত্তর হয়ত সে দেয়নি কিন্তু
এখন আমি বুঝি।।
এখন আমার পথচলার চলকগুলির সমর্থন নিতে শিখেছি
পথের গুরুত্ব অল্পবিস্তর অনুধাবন করতে শিখেছি,
বেশিরভাগ সময় এখন আমার সহজ সমীকরণ মিলে যায়
হয়ত আমার মত করে মেলায়।
ভাল থাকতে আমার খুব বেশি কাঠখড় পোহাতে হয় না
আমার প্রাপ্তিগুলার পাল্লা ভারী হয় এখন,
যদিও তা ক্ষুদ্র তবুও তা আমার সম্পত্তি।।
শুধু মাঝে মাঝে সেই পুরনো কিছু অসামঞ্জস্যতা আমাকে জটিলতায় ফেলে
মানবীয় সত্ত্বার কিছু সীমাবদ্ধতা আমার কাছের মানুষ গুলার সাথে
মাঝে মাঝে কিছুটা দুরত্ব তৈরি করে দেয়।
চেষ্টায় আছি এগুলাকে দূরে ঠেলে মানুষ হওয়ার সত্ত্বায়,
আজ মাঝে মাঝে মনেহয় আমি ওই বোকাতেই পারফেক্ট।
পৃথিবীতে যদি আবার আসার সুযোগ থাকত তবে আমি এমন বোকা
হয়েই জন্ম নেওয়ার প্রার্থনা করতাম সৃষ্টিকর্তার কাছে,
কারণ বোকারা মানুষের কাছে ভুল করতে পারে
সেই সাথে ক্ষমা চাওয়াটাকেও ব্রত হিসেবে নিতে পারে।।
©somewhere in net ltd.