![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“দাদা, আজ তোর সাথে ঘুমাই?”
বিরক্তিতে ভুরু কোঁচকাল প্রীতম। আজকাল অতি অল্পতেই সে বিরক্ত হচ্ছে। কিংবা কে জানে, চোখমুখ কুঁচকে থাকতে থাকতে চেহারায় একটা বিরক্ত ভাব চলে এসেছে। অর্ধেক পড়ে শেষ করে ফেলা ‘দা লস্ট সিম্বল’ বুকের উপর শুয়ে ছিল। চোখ বন্ধ। ঐশী এবার গায়ে হাত দিয়ে অল্প একটু ধাক্কা দিল। বলল,
“ও দাদা, শুনছিস? আজ তোর সাথে ঘুমাই? তোর বালিশ লাগবে না। আমি আমার বালিশ নিয়ে এসেছি। একটুও বিরক্ত করব না তোকে। এককোণে শুয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে যাব!”
প্রীতম চোখ না খুলেই বলল, “বড়আপির কাছে যা।”
ঐশী আবার গায়ে ধাক্কা দিল। বলল,
“প্রতিদিন তো বড়আপির সাথেই থাকি। আজ তোর সাথে থাকবো। আমি বাথরুমও করে এসেছি। রাতে তোকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবো না!”
প্রীতম চোখ খুলে তাকাল। ভয়ংকর দৃষ্টি দেয়ার চেষ্টা করল। লাভ হল না। ঐশী বলল, “তুই এই পাশে আয় দাদা। আমি দেয়ালের পাশে শোব। নাহলে ঘুমের মাঝে মেঝেতে পরে যাই! আমি এর আগেও দুইদিন পড়েছি। সত্যি দাদা, তুই বিশ্বাস করলি না তো? বড়আপিকে জিজ্ঞেস কর। এখনই কর।”
প্রীতম বলল, “আর একটা কথা বললে রুম থেকে বের করে দিব। চুপচাপ ঘুমা।”
‘চুপচাপ’ ঘুমানোর কোন লক্ষণ ঐশীর মাঝে দেখা গেল না। সে তার দাদার উপর একটা হাত তুলে দিল।
“জানিস দাদা? আজ স্কুলে কি হয়েছে? ফুটবল খেলে ছেলেরা। এতো শয়তান পোলাপাইন। একটা আর একটার সাথে কি মারামারি! ছেলেরা এতো মারামারি করে কেন দাদা? বল তো?”
প্রীতম কটমট করে তাকাল, “আর একটা কথা বললে তোকে কিন্তু সত্যি সত্যি বড়আপির কাছে রেখে আসব!”
চোখের দিকে তাকিয়ে ঐশী চমকে গেল! টকটকে লাল! ভীত গলায় বলল,
“আবার মাথা ব্যাথা? বড়মাকে ডেকে আনবো?”
“তোকে বলেছি? চুপচাপ শুয়ে থাক।”
“মাথা টিপে দিই দাদা? আমি বড়আপির কাছ থেকে শিখেছি। দিই?”
“উহু।”
ঐশী এসব নিষেধে কখনও কান দেয় না। সে তার দাদার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া শুরু করল। ছোট তুলতুলে একটা হাত প্রীতমের কপালের উপর নড়াচড়া করছে! আবেশে প্রীতমের চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কি মায়াবতীই না হয়েছে তার বোনটা! একসময় হাতটা থেমে গেল। ঘুমিয়ে পড়েছে ঐশী। প্রীতম আলতো করে হাতটা সরিয়ে দিল। চা খেতে ইচ্ছা করছে। ইস! কেউ যদি এখন ওকে এক কাপ চা করে দিত! মাথা ব্যথা নিয়ে উঠতে ইচ্ছা করছে না।
চা বানিয়ে নিয়ে প্রীতম বাইরে এসে বসলো। খুব পরিচিত হয়ে যাওয়া তারাগুলোকে খুঁজে বের করল। এই তারাগুলো নিশ্চয়ই খুব জ্বলজ্বল করে জ্বলে। নাহলে তো দেখতে পাওয়ার কথা না। অবন্তির কথা মনে পড়ছে। মাঝে মাঝেই প্রীতম ওকে নিয়ে ভাবে। ভাবতে ভাল লাগে।
“কি করছ?”
“গান শুনি। তুমি?”
“চা খাই।”
“বারান্দায় বসে তোমার সেই উৎকট চা?”
“হুম। মাথা ব্যথা খুব।”
“আবার? আজও নিশ্চয় চোখে Drop দাও নি, তাই না?”
“মনে ছিল না বাবা।”
“মন কোথায় পরে থাকে তোমার?”
অনেকদিন হয়, অবন্তির ঠোট বাঁকানো দেখা হয়না। অভিমানে কেঁদে ফেলা দেখে প্রীতম হেসে ফেলে না। অনেকদিন শুনা হয়না, “আমার গাধা বর। তুমি জানো, তোমাকে খুব খুব ভালবাসি?”
ঐশী উঠেছে। ওর অসহায় গলা শুনা যাচ্ছে, “দাদা, ও দাদা। বাথরুমে যাব।”
কি মায়াবতীই না হয়েছে তার বোনটা! প্রীতম উঠে পড়লো। বাথরুমে নিয়ে গেল ঐশীকে। আবার শুইয়ে দিল। বেঁচে থাকার উৎসের তো অভাব হয়না কখনো। এই পৃথিবীতে! মানুষকে ভুলে যেতে হয়। বেঁচে থাকার স্বার্থেই। প্রকৃতির নিয়মই বোধহয় এটা। সবাইকে স্বার্থপর করে পাঠাবে। একটা উৎস ফুরিয়ে গেলেও এখানে সমস্যা নেই। উৎসের তো অভাব হবে না! মানুষ আর একটা অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরবে! বেঁচে থাকার স্বার্থেই! এবং, কি আশ্চর্য! বেঁচে থাকবে!
©somewhere in net ltd.