নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হৃদয়ের অন্তরালে.....

হৃদয়ের অন্তরালে কিছু কথা মাঝে মাঝে ঘুরপাক খায়।সেই কথাগুলোই সবার মাঝে পৌছে দেবার চেষ্টায় নিয়োজিত আছি।

রিদওয়ান এইচ ইমন

নিজের সম্পর্কে এখনো ভাবছি। ভাবনা শেষে বলতে পারব।

রিদওয়ান এইচ ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লিপির জন্য........

১১ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৬





আমার রুমের জানালাটা বেশ প্রশস্থ।জানালাটা দক্ষিন দিকে হওয়ায় সবসময় বাতাস আসে।তাই সচরাচর অন্য জানালাগুলো বন্ধ রাখলেও এই জানালাটাই শুধু খোলা রাখি।সারা দুনিয়ার যত বাতাস আছে তার সব যেন এই জানালা দিয়েই প্রবেশ করে আমাতে মিলিয়ে যায়।



সেদিন বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছি।সাধারণত পরদিন পরীক্ষা থাকলে বেশী বেলা করে ঘুম থেকে উঠা হয়।এক কাপ চা বানিয়ে জানালার পাশে বসে আছি।চায়ে চুমুক দিতে দিতে বাতাস এসে গায়ে লাগছিল।মূহূর্তটা খারাপ কাটছিল না।



হঠাৎ চোখ আটকে যায় পাশের বিল্ডিং এর তৃতীয় তলার জানালাতে।একটা মেয়ে ঘর গুছাচ্ছে।সম্ভবত ঐ বিল্ডিংয়ের নতুন ভাড়াটিয়ে।ঘর গুছাতে গিয়ে চুলগুলো বারবার মুখের সামনে এসে পড়ছে বিধায় চেহারাটা ঠিক দেখতে পারলাম না।



এত সুন্দর করে রুম ঘুছায় কী করে মেয়েটা?ভাবতে ভাবতেই নিজের রুমের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম।অন্তত আমার রুমে কেউ প্রবেশ করলে বলবেনা এইটা ভদ্র ঘরের রুম।সবকিছুই অগোছালো আর গ্যাঞ্জামে ভরপুর।হঠাৎ করে কেউ এই রুমে ঢুকলে নির্ঘাত বেনসন সিগারেটের গন্ধ পাবে।



পরক্ষনেই তিন তলার জানালার দিকে আবার তাকালাম।এবার মেয়েটার চেহারা একটু আধটু দেখতে পাচ্ছি।মেয়েটার চেহারা দেখলে যে এভাবে চমকে যাব তা আগে ভাবিনি।আমি চমকে গেলাম।এ তো আর কেউ নয়, এ যে লিপি!!



লিপির সাথে আমার পরিচয় প্রাইমারি স্কুলে থাকতে।কথা তেমন একটা হতনা তার সাথে,তবে একদম যে হতনা তাও কিন্তু নয়।



দিন যত যায়,তার প্রতি দুর্বলতা তত বাড়ে।বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না এইরকম অবস্থা হতে হতে কবে যে দুজনেই ক্লাশ ফোরে উঠে গেলাম বুঝে উঠতেই পারলাম না।বুঝে উঠতে বড্ড দেরী করে ফেলেছি।তত দিনে লিপি অন্য স্কুলে ভর্তি হয়ে গেছে।মনের কথা মনেই রয়ে গেল,আর বলা হল না।



আজ বহু বছর পর লিপিকে দেখতে পেয়ে সত্যিই ভাল লাগছে।পুরাতন স্মৃতিগুলো অলস মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।কিছুটা বদলে গেছে লিপি।শৈশবের নাদুশ-নুদুশ চেহারায় যৌবনের ছাপ পড়েছে,কিন্তু সৌন্দর্য এতটুকু কমেনি।



এখনো সেই মিষ্টি গালে আগের মত টোল পড়ে,হাসিটাও আগে যেমনই ছিল এখনো তেমন আছে,তার হাসির প্রেমে পড়ে সেসময় নাম দিয়েছিলাম 'মায়াবতী হাসি'।মায়াবতী সেই হাসি আজো অক্ষয়ে বাঁচে..….…!



কিছুক্ষন পর লিপির রুমে একটা মাঝবয়সী ছেলে প্রবেশ করল।তা দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।বুঝতে পারলাম,লিপি বিয়ে করেছে।নতুন সংসার গোজগাজ করতেই এতসব আয়োজন তাহলে??মনটা খারাপ হয়ে গেল।খারাপ মন নিয়ে ওদিকে তাকানো উচিত মনে করলাম না।জানালার পাশ থেকে সরে গিয়ে জানালায় হূক মেরে দিলাম।সেদিনের পর থেকে জানালাটা আর খুলি না..…



সেদিন সকালে জগিং শেষে স্থানীয় একটা বাজার থেকে মুরগী,সব্জি এসব কিনছিলাম।কেনা শেষে বাসায় ফিরব অমনি ''রাশেদ না?'' বলে পেছন থেকে কেউ ডাকল।পেছন ফিরেই দেখি লিপি স্বয়ং দাড়িয়ে আছে।হালকা বেগুনী রঙের শাড়ি তার গায়ে।সেই বেগুনী রঙের শাড়িতে লিপিকে অপ্সরীর মত লাগছে!!এবারো তার প্রেমে পড়ে গেলাম।



আমি হা করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি লিপির দিকে,কী যেন ঘোরে ভীষণভাবে আটকা পড়েছি।সেই ঘোর থেকে বেরুতে মন যেন সাড়া দিচ্ছিল না…



-রাশেদ,কেমন আছ?



--এই তো ভাল।তুমি?



-এই তো,কেটে যাচ্ছে কোনরকম।



--অনেকদিন পর একসাথে দেখা.…



-অনেকদিন পর বলছ কেন,বল অনেক বছর পর দেখা।



--ও হ্যাঁ…অনেক বছর পরই তো।



-তা এত সকাল সকাল এখানে?



--বাসার জন্যে বাজার করছিলাম একটু।তা তুমি এখানে?



-পিচ্চিটাকে স্কুলে দিয়ে আসলাম।



--তুমি বিয়ে করেছ?



আমার প্রশ্ন শুনেই লিপি কী মনে করে হেসে দিল।সেই হাসির মর্মার্থ আমি উদ্ধার করতে পারলাম না.…



-হ্যাঁ,করেছি তো…কেন,তুমি করো নি?



--হুম..…।



বলে মাথা নাড়ালাম।বিয়ে করিনি বললে কেন করি নি,করলে কেমন মেয়ে লাগবে ব্লা ব্লা.…এসব জিজ্ঞেস করবে লিপি,সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছে করছিল না তাই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম।



একজন বিবাহিত মহিলার সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে এতক্ষন কথা বলা উচিত মনে করলাম না।তাই না চাইতেও লিপিকে ''আসি,একটু তাড়া আছে'' বলে চলে আসলাম।



বাড়ি ফিরেই মাথা ঠান্ডা করতে গোসল করলাম।গোসল সেরে কী মনে করে দক্ষিনের জানালাটা খুলে তিন তলার বাসার দিকে চোখ দেই।দেখি লিপি পিচ্ছি একটা বাচ্চাকে নিয়ে খেলছে।তা দেখে জানালাটা আবার বন্ধ করে দেই।



এভাবে দেখতে দেখতে অনেক দিন পেরিয়ে গেল।প্রায় রাস্তায় জগিং করতে গেলে লিপির সাথে দেখা হয়।দেখা হলেই মুখে মুচকি হাসি নিয়ে তাকে ফেইস করি।



সেদিন রুমে শুয়ে শুয়ে গান শুনছিলাম।মা এসে বলে,''পাশের বিন্ডিং এর ভাড়াটিয়ারা এসেছে,তুই যা একটু ওনাদের সাথে গল্প কর।ততক্ষনে আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি।'' কথাটা বলে মা রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন।



আমি কিছুটা দ্বিধায় পড়লাম।যাব কী যাবনা ভাবতে ভাবতে তাদের সামনে গিয়ে হাজির হলাম।মাঝারি বয়সের সেই ছেলেটা ঐ পিচ্চি বাচ্চাটাকে নিয়ে বসে আছে।তার পাশে বসে আছে আরেকজন ভদ্র মহিলা।তাকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম,মনের মধ্যে কিছু সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করলাম,কিন্তু পারলাম না।



-রাশেদ,কেমন আছেন?



--জ্বী ভালই।(মনে মনে ভাবতে লাগলাম ওনি আমার নাম জানলেন কী করে,লিপি কী আমার কথা তাকে কিছু বলেছে?কিন্তু লিপিকে দেখছিনা.…)



-ও,পরিচয় করিয়ে দেই,ইনি আমার স্ত্রী,নীলা।আর আমার বোন লিপি ও এসেছে।সম্ভবত আপনার মায়ের সাথে আছে।



মনে মনে ''পাইলাম,আমি ইহাকে এবার পাইলাম'' সূচক আনন্দে উদ্ভাসিত হতে লাগলাম।যে করেই হোক এবার লিপিকে মনের কথা বলবই।আর দূরে যেতে দেব না তাকে আমার কাছ থেকে।



দুপূরের খাবার শেষে সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দিচ্ছে।আমি নিজের রুমে এসে বসলাম।ভাবছি কী করে বলি লিপিকে মনের কথা।হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে মোবাইলে মেসেজ এল,''ছাদে এসো,অপেক্ষায় আছি।''



দুপুর গড়িয়ে বিকেল এল।রক্তিম আভা আকাশে ছড়িয়ে সূর্য বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে লাগল।দক্ষিনা হাওয়া গায়ে এসে লাগছে।সে হাওয়ায় বারেবারে বিমোহিত হচ্ছি।ছাদের কোনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির চুল সেই দক্ষিনা হাওয়ায় আকাশে উড়ছে।সূর্য্যের রক্তিম চন্দন মুখে মেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে।দেখে মনে হচ্ছে যেন স্বর্গের অপ্সরী মাটিতে নেমে এসেছে।আমার পায়ের শব্দ শুনে ফিরে তাকায় সে।



পরক্ষনেই ''হায়রে পুরুষ'' বলে হাসিতে ফেটে পড়ে লিপি।ঠিক 'যেন পদ্মা নদির মাঝি' এর কপিলার মত সে হাসি।লিপির সেই মায়াবী হাসি দেখে কিছুক্ষনের জন্য হলেও নিজেকে কুবের রুপে আবিষ্কার করলাম।ইচ্ছে হচ্ছে লিপিকে জড়িয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যায়।



-মিথ্যে বলেছিলে কেন?



--দেখতে চেয়েছিলাম,তুমি এখনো আমাকে আগের মত চাও কী না।তুমিও তো সত্য কথা বল নি।



-কে বলেছে তোমাকে আমি আগে তোমাকে চাইতাম?



--নারীর চোখ ফাকি দেওয়া সহজ না,বুঝলে পুরুষ??



বলে আবার হাসিতে মেতে উঠল লিপি।



--এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে আর কত দেখবে?



-বুঝলাম না?



--হয়েছে,সাধু সাজতে হবেনা আর।আমি এখানে আসার প্রথম দিন থেকেই তোমাকে দেখেছি লুকিয়ে লুকিয়ে জানালা দিয়ে আমাকে দেখতে যেভাবে স্কুলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে।



-তুমি সব জানতে?



--হুম।



-তবে বলনি কেন?



--তুমি আগে কী বল তা দেখতে চেয়েছিলাম তাই।



এবার লিপির কোমরে হাত দিয়ে এক ঝাটকায় নিয়ে আসি আমার কাছে।



-এখন যদি বলি,কী করবে?



--আগে বলেই তো দেখ।



-ভালবাসি তোমায়।



--আমিও অনেক অনেক ভালবাসি তোমায়।



বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে লিপি।আমি আলতো করে তার কপালে চুমু খেয়ে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করি।



আকাশ জুড়ে সন্ধ্যা নেমেছে।সবাই নীড়ে ফিরে গেছে।শুধু দুটি ছায়া একে অপরকে জড়িয়ে আকাশ জুড়ে লেপ্টে আছে..........

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৭

উৎকৃষ্টতম বন্ধু বলেছেন: চালিয়ে যান। প্লাস। ভালোবাসা যদি পবিত্র হয়, তবে তা চিরঅমর হোক, এই কামনাই করি।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৫

রিদওয়ান এইচ ইমন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.