![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখ মুছে আকাশের দিকে তাকাই।আমার আকাশ তাঁরা শূন্য।
(বিংশ শতাব্দীর ছেলেমেয়েরা আর যাই জানুক ভালোবাসার অর্থ জানে না।আমিও নিজেও অবশ্য জানি না।জানা উচিত,একদিনের জন্য হলেও প্রকৃত ভালোবাসা নিজের বুকে ধারন করতে পারা উচিত নাহয় মনুষ্যজন্ম বৃথা।)
সাল ১৯৬৫।যাত্রাবাড়ির শহীদ ফারুক রোডে (বর্তমান) ১১/৩ বাড়িটার নাম হাসনাহেনা।বাড়িতে লম্বা বেণী করা যে মেয়েটা প্রত্যেক সকালে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ভার্সিটি যায় সেই মেয়েটার নাম মধুমিতা।মেধাবী এই তরুণী অন্যান্য মেয়েদের তুলনায় আসলেই একটু ভিন্ন ছিল।সর্বদা মাথানিচু করে হাটা মেয়েটা যেদিন প্রথম চশমা পরল সেদিন বিকেলে বাবাকে গিয়ে বলল "বাবা আমার এখন চারটা চোখ,চার চোখের সুবিধা কি জানো?আমি জানি!চার চোখে সেই মানুষটাকেও ভালোবাসা যায় যেই মানুষটাকে আমি কোনদিন দেখিনি,হা হা!"
চার চোখের মৃদুভাষী মেয়েটা ছয় বছর পর বাবার হাত ধরে চুপিসারে বর্ডার ক্রস করে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়।কোন এক বিকেলে রেডিওতে তাজউদ্দীন আহমেদের ভাষণ প্রচারিত হয়।তাজউদ্দীন একফাকে বলে ওঠে 'আমার মুজিব আর স্বাধীনতা দুটোই চাই" সাথে সাথে মধুমিতাও বলে ওঠে "আমার মুজিব,স্বাধীনতা আর **** তিনটাই চাই হা হা"।
মধুমিতার বাবা তৃতীয় ব্যক্তিটার নাম শুনে খানিক ভ্রূ কুঁচকিয়ে ছিল শুধু,মেয়ের সাময়িক মোহ ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলো সেদিন।
২৬মার্চ,১৯৯০!খুলনা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জাতীয় সঙ্গীত শেষ হওয়ার পর মেয়েরা আরেকটা দেশাত্মবোধক গান কোরাস করে,কোরাসের নেতৃত্ব দেয় ৪৫বছর বয়সী এক চার চোখা মৃদুভাষী সুন্দরী।গানের সাথে সাথে সুন্দরীর গলা ভারী হয়ে আসে,সে কেঁদে ওঠে।মেয়েটার নাম মধুমিতা।
১২আগষ্ট,২০১২!খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে একটি বাস ছেড়ে যায়।বাসে ৬৭বছর বয়সী অশ্রু সিক্ত চার চোখা মৃদুভাষী দোদুল্যমান অবিবাহিত এক সুন্দরী।তাঁর নাম মধুমিতা।
১৩আগষ্ট,২০১২।ভোর সাড়ে ছয়টা।বনানী কবরস্থানের বাহিরে ছোট খাটো একটা জটলা।জটলায় উপস্থিত সুধিজনরা মনেকরছে বৃদ্ধ এক মহিলা পাগল হয়ে গেছে।কবরস্থানে ঢুকতে না পেরে সে বাহির থেকে গান গেয়ে যাচ্ছে।পাগল মহিলাটার নাম মধুমিতা।
"বর্ণমালার শাড়ি পরালাম,কৃষ্ণচূড়ার টিপ পরালাম
হাঁসতে শেখালাম তোমায়,কাঁদতে শেখালাম
আমি বুকের মাঝে লিখে নিলাম নাম।
তোমায় আর কখনো ভেঙ্গে যাওয়া বাঁশি হতে দেবো না
তোমার মাথার খোঁপারই ফুল বাসী হতে দেবো না,
তোমায় মাগো কারো ঘরের দাসী হতে দেবো না"
দীর্ঘ ৪৭বছর মধুমিতা নামে চার চোখা পাগল মেয়েটা যেই মানুষটার জন্য ভালোবাসা জমা করে রেখেছিলো সেই মানুষটার নাম কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিল (বীর বিক্রম)।এই ৪৭বছরে এক মুহূর্তের জন্য সে শাফায়াত জামিলকে চোখে পর্যন্ত দেখেনি।তবুও ৭১এর প্রত্যেকটা সকালে সে শরণার্থী শিবিরে বসেও "আহারে শাফায়েত আহারে! করে গেছে।অচেনা একটা মানুষের জন্য সে গভীর ভালোবাসা ধারন করেছে বুকে।সেখানে ব্যক্তি স্বার্থের ওপরে উঠে গেছে দেশ আর বঙ্গবন্ধু।তাই তো প্রথম চশমা পরার পর খেলার ছলে বাবাকে বলে ফেলেছিল চার চোখে না দেখেও ভালোবাসা যায়।
ভালোবাসাকে জীবন্ত রাখতে অন্য পুরুষের সাথে আবদ্ধ হননি,অভিমান ভরা ভালোবাসা নিয়ে চলে গেছেন দৃশ্যপটের আড়ালে।৪৭বছর পর যখন ভালোবাসার কথা জানালেন তখন তাঁর সুপারম্যান বেঁচে নেই।
আমার আশ্চর্য লাগে,নিজেকে তুচ্ছ লাগে।এই মেয়েগুলোকে সৃষ্টিকর্তা কি দিয়ে সৃষ্টি করে?ভালোবাসার ক্ষমতা অত্যাধিক জানতাম,তাই বলে এতটা?
©somewhere in net ltd.