নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি প্রযুক্তি প্রিয় মানুষ; ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ভালোবাসি। এছাড়াও ভালোবাসি বই আর লেখালেখি পড়তে। মাঝে মাঝে লিখতেও ইচ্ছা করে। এখানে যোগ দিয়েছি হঠাৎ কোন কিছু লিখে ফেললে সেটা সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।

রিহানুর ইসলাম প্রতীক

রিহানুর ইসলাম প্রতীক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ ডাক এড়ানো অসম্ভব!

১০ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪০

'ওভাবে তাকাবেন না, লজ্জা করে।'
বিয়ের পর আমাকে বলা প্রথম কথা এটি অরণীর। বিয়েটা হয়েছে আমাদের পারিবারির ভাবেই। আমি অবশ্য এখনই বিয়ে করতে চাইনি, কিন্তু এক প্রকার জোর করেই আমাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রাজুয়েশনটা শেষ করে দুই বছর একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করে সবে মাত্র নিজের একটা আইটি ফার্ম খুলে বসেছি, আর এখনই কিনা আমাকে বিয়ে দিবে! অনেক আগে থেকেই শখ ছিল উদ্যোক্তা হবার, সেই শখেরই ফল নিজের একটা আইটি ফার্ম। অন্য একটা ফার্মে চাকরী করে সেখান থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের ফার্মটি দাড় করানোর চেষ্টা করছি। একজন উদ্যোক্তার জন্য শুরুর দিকটা অনেক কঠিন। এসময় নিজের জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা আর বিচক্ষণতার সদ্ব্যবহার করে সর্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়ে ধৈর্য্য ধরে লেগে না থাকলে সফলতা পাওয়াটা অনেক কঠিন। আর এই সময় এভাবে জোর করে বিয়ে দেওয়াতে আমি অনেক হতাশ হয়ে পড়ি। অনেক অনেক না করেছিলাম, কিন্তু মার মুখের দিকে তাকিয়ে আর জেদ ধরে বসে থাকতে পারিনি।
অরণী মার বান্ধবীর মেয়ে। ছোট বেলায় মা-বাবার সাথে ওদের বাসায় কয়েকবার গিয়েছিলাম, ওরাও এসেছিল কয়েকবার। সেখান থেকেই অরণীকে একটু একটু চিনতাম। আমার চেয়ে তিনবছরের ছোট। ছোটবেলায় আমি প্রচুর দুষ্টু ছিলাম। অরণীরা যখন আমাদের বাসায় আসতো তখনতো আমি একজন খেলার সাথী পেয়ে যেতাম। আমাকে আর আটকায় কে! প্রচুর দুষ্টুমি করতাম। অরণী শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতো। ব্যথা পাওয়ার মত কিছু করতে গেলে ও আমাকে বলতো, 'প্রলু, এটা করো না, ব্যথা পাবা।' আমি যখন না শুনতাম, ও তখন মাকে গিয়ে বলে দিত। একদিন অরণীরা চলে যাওয়ার পর মা আমাকে বলতেছে, 'তোকে অরণীর সাথে বিয়ে দেব। ও-ই তোকে দেখেশুনে রাখতে পারবে।' এটা শুনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে অন্য রুমে দৌড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসেছিলাম অনেকক্ষণ, সেদিন ঘুমানোর আগ পর্যন্ত লজ্জায় মার দিকে আর তাকাতে পারিনি। অবশ্য পরেরদিনই এটা ভুলে গিয়েছিলাম। আজ বাসর ঘরে অরণীর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেল কথাটা, মা শেষ পর্যন্ত অরণীর সাথেই আমার বিয়ে দিল! আজ প্রায় সাত-আট বছর পর অরণীকে ভালো করে দেখছি। কলেজে উঠার পর অরণীকে কখনো দেখছি বলে মনে পড়ে না। এই দীর্ঘ সময়ে ওরাও আর আমাদের বাসায় আসেনি, আমাদেরও যাওয়া হয়নি। মাকে অবশ্য প্রায়ই দেখতাম অরণীর মার সাথে ফোনে কথা বলতে, এর মাঝে আমার সাথেও কয়েকবার কথা বলেছিল আন্টি থুক্কু এখনতো শাশুড়ী হয়ে গেছে, মা ডাকতে হবে।
বউ নাকি অনেক প্যারা। কতিপয় বিবাহিত ফ্রেন্ডতো প্রায়ই বলে, দোস্ত জীবনে আর যাই করিস, বিয়ে করিস না। জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেলো। এসব শুনে আমি আরো বিয়ে থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া এখন জীবনের টার্নিং পয়েন্ট, এই সময় বিয়ে করে তাদের মত অবস্থা হলে সফল হওয়া আর কখনোই হবে না। কিন্তু মাতো আর বিয়ে না করে থাকতে দিল না। তবে আজ অরণীর দিকে চেয়ে ছোটবেলার কথাগুলো একেরপর এক মনে হচ্ছিল। এই মেয়ে অনেক শান্ত-শিষ্ট। ছোটবেলায় আমি দুষ্টুমি করতাম, ও চেয়ে দেখতো আর থামানোর চেষ্টা করতো। ব্যথা পাওয়ার উপক্রম হলে সাবধান করে দিত। তাই কেন যেন মনে হচ্ছে আর যাই হোক এই মেয়ের জন্য অন্তত জীবনটা তেজপাতা হবে না। কল্পনায় কেমন একটা শান্তির সুবাতাস অনুভব করলাম। আনমনেই মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। অরণীর ডাক শুনে সম্বিত ফিরে পেলাম,
'এই যে, এভাবে ডেবডেব করে তাকিয়ে হাসছেন কেন?'
'না এমনি।'
'এমনি কেউ হাসে নাকি!'
'জানি না।'
'জানেন না এখন জানলেন। বলুন কেন হাসছিলেন?'
'বাদ দাও না। বাসর ঘরে কেউ এভাবে জেরা করে নাকি! আচ্ছা, আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো। তুমি কি সত্যিই আমার বউ হয়ে এসেছ?'
'কেন, আপনার কি আরো ভালো কারো বউ হয়ে আসার কথা ছিল?'
'আরো ভালো বউ কি কেউ হতে পারে?'
'হইছে হইছে, বাসর ঘরেই তেল দিতে হবে না।'
'তেল না দিলেইওতো মনে হয় হবে না।' বলেই আমি মুচকি হাসি দিলাম।
'কী বললেন!!!' বলেই অরণী লজ্জা পেয়ে মুখ নিচে করে ফেললো।
সকাল আটটায় এক বন্ধুর ফোনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, 'হ্যালো।'
'কিরে এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি? অবশ্য না ভাঙ্গারই কথা। সারারাত জেগে জেগে অনেক পরিশ্রম করছিস কিনা। ভাবি বেঁচে আছেতো?'
এটা শুনেই আমি পাশ ফিরে দেখি অরণী বিছানায় নেই, বুকটা কেমন ধক করে উঠলো। সাথে সাথে উঠে বসলাম। দেখি যে অরণী ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে ভেজা চুল আচড়াচ্ছে।'
'ধুর ছাই, কি যে বলিসনা। আচ্ছা যাই হোক, তুই কানাডার ঐ ক্লায়েন্টকে কাজটা বুঝিয়ে দিয়ে দুপুরের মাঝেই বাসায় চলে আয়, একসাথে খাবো।'
আমার এই ফ্রেন্ডের নাম আরিয়ান। ভার্সিটিতে পরিচয়। খুব ক্লোজ আমরা। আমার ফার্মে ওকে নিয়েছি। বলতে গেলে আমরা দুজনই ফার্মটার সব দেখাশোনা করছি। ফোনটা রেখে আমি অরণীর দিকে তাকালাম। এমনিতেই ও আমার কাছে অপ্সরীর মত সুন্দর, এখন ভেজা খোলা চুলে ওকে আরো অপরূপ লাগছে। উঠে গিয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো, 'আরেহ কেউ দেখে ফেলবেতো, ছাড়ো প্লিজ।'
আমি হেসে হেসে বললাম, 'কেউ দেখবে না, দরজা লাগানো।'
ও বললো, 'দরজা আমি খুলে রেখেছি।'
এটা শুনেই আমি সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে দরজা লাগাতে গেলাম। কিন্তু একি! দরজা দেখি লাগানোই। পেছন থেকে ওর হাসির শব্দ পেলাম। ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম, 'আমাকে ধোঁকা দেওয়া! দাড়াও, আজ দেখাচ্ছি মজা।'
এটা বলে যেই ওকে ধরতে গেলাম ও ততক্ষণে উঠে রুমের এক কোণে চলে গিয়েছে। কিছুটা হুড়োহুড়ির পর অবশেষে ওকে হাতের নাগালে পেলাম। ততক্ষণে ও বিছানায় পরে গিয়েছে, আমিও ওর উপরে পড়েছি। মুখটা শক্ত করে বললাম, 'আমাকে ধোঁকা দেওয়ার শাস্তি আজ তোমাকে পেতেই হবে।'
ও জিজ্ঞেস করলো, 'কী শাস্তি?'
আমি মুখটা ওর কানের কাছে নিয়ে আস্তে আস্তে বললাম, 'তোমাকে আবার গোসল করাবো।'
এভাবেই আমাদের বিবাহিত জীবনের শুরু। জীবনে নতুন একটা আমেজ চলে আসলো। কাজ-কর্মে আমি নতুন একটা উদ্দীপনা খুঁজে পেলাম। মাসখানেকের মাঝেই আমি আমার কাজে নতুন একটা ক্ষিপ্রতা লক্ষ করলাম, সাথে সাথে ফার্মের উন্নতিতেও। সংসারটাকেও অরণী একদম নিজের মত করে গুছিয়ে নিয়েছে। মা-বাবা ভীষণ খুশি।
আমি সাধারণত সকাল নয়টায় বাসা থেকে বের হই অফিসের উদ্দেশ্যে মানে আমার ফার্মের উদ্দেশ্যে, আর বাসায় আসি ছয়টার মধ্যে। সেদিন বের হওয়ার সময় অরণীকে বললাম ১ টার মাঝেই চলে আসবো। আমি জানি ওকে না জানিয়ে আমি আধ ঘন্টা দেরি করে আসলেও ও রাগ করে বসে থাকবে। তবে সেদিন আমি ইচ্ছা করেই একঘন্টা দেরি করলাম এবং ওকে জানালামও না। বাসায় আসার আগে ওর জন্য ওর প্রিয় ফুল গোলাপ কিনলাম ৫০ টা। বাসায় এসে বেল চাপতেই ও এসে দরজা খুলে দিয়ে সাথে সাথে রুমে চলে গেলো, আমার দিকে ভালোভাবে ফিরেও তাকালো না। আমি এরকম পরিস্থির জন্য প্রস্তুত ছিলাম। দরাজাটা লাগিয়ে ওর পিছু পিছু রুমে ঢুকে রুমের দরজাও লাগিয়ে দিলাম। ও দেখি মাথাটা হাটুর উপর রেখে দুহাত দিয়ে পা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বেডের উপর বসে আছে। ওকে ডাক দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াতে বললাম, ও দাঁড়ালো। এবার আমার পেছনে থাকা ফুলগুলো থেকে একটা একটা করে ফুল ওকে দিতে শুরু করলাম। অভিমানী ও নিচ্ছে আর বেডে ছুঁড়ে ফেলছে। প্রথমে হয়তো ভেবেছিল ৪-৫ টা ফুল এনেছি। পরে যখন ৩৫ তম ফুলটা দিলাম, ও সেটা নিয়ে সাথেসাথে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। অভিমানি কণ্ঠে অভিযোগ করলো, 'আমাকে না জানিয়ে এমন দেরী করলে কেন? কতটা টেনশনে ছিলাম জানো?'
আমি আদুরে গলায় বললাম, 'তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। তুমি খুশি হওনি?'
'অনেক, অনেক খুশি হয়েছি। তবে এমন সারপ্রাইজ চাই না।'
আমি দুষ্টুমির সুরে বললাম, 'এবার আমাকে কী দিবে?'
'কিচ্ছু না, কিচ্ছু দিবো না। শুধু বলবো, ভালোবাসি তোমায় অনেক।'
'আমিও বাসি ভালো। ওই?'
'বলো।'
'বিছানার দিকে দেখো।'
'কী?'
'শয্যার উপরের ঐ ফুলগুলো।'
'কী হয়েছে?'
'আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।'
'কিসের ডাক?'
'ফুলশয্যার।'
ও লজ্জা পেয়ে আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুখটা আমার বুকে লুকালো। আমি শুধু কানে কানে বললাম, 'এ ডাক এড়ানো অসম্ভব!'

লিখায়: রিহানুর ইসলাম প্রতীক

লেখাটি প্রথমে লেখকের ফেসবুক টাইমলাইনে প্রকাশিত। মূল লেখাটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ফেসবুকে লেখক: Rihanoor Protik

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: 'কিরে এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি? অবশ্য না ভাঙ্গারই কথা। সারারাত জেগে জেগে অনেক পরিশ্রম করছিস কিনা। ভাবি বেঁচে আছেতো?' :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.