নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি প্রযুক্তি প্রিয় মানুষ; ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ভালোবাসি। এছাড়াও ভালোবাসি বই আর লেখালেখি পড়তে। মাঝে মাঝে লিখতেও ইচ্ছা করে। এখানে যোগ দিয়েছি হঠাৎ কোন কিছু লিখে ফেললে সেটা সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।

রিহানুর ইসলাম প্রতীক

রিহানুর ইসলাম প্রতীক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অহনার ধর্ষণ

০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২৮

প্রিয় বৌদি,
কেমন আছো সেটা জিজ্ঞেস করবো না। কারণ তোমার মত একজন মানুষ কখনো খারাপ থাকার কথা নয়। তাছাড়া ভাইয়ার সাথে আমার কয়েকদিন আগে ফোনে কথা হয়েছিল, সবাই ভালো আছে বলেই জানিয়েছিল।

প্রায় বছরখানেক যাবৎ তোমার সাথে আমার দেখা হয় না। সেই যে বেড়াতে এসেছিলে, আর এর মাঝে একবারও সুযোগ হলো না তোমার আসার। এই আধুনিক যুগেও তোমার আর আমার মাঝে পত্র চালাচালি হয়, ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও আমার কাছে কেমন যেন স্বাভাবিকই লাগে। পত্রে আমি তোমাকে সবকিছু যতটা খোলাখুলি বলতে পারি তা সামনে বলতে পারতাম না কখনো। সামনাসামনি আমি তোমাকে ভাবী বলে ডাকলেও পত্রে কেন যেন তোমায় আমার বৌদি বলে ডাকতেই ভালো লাগে। বৌদি ডাকটার মাঝে কোথায় যেন আলাদা একটা গাম্ভীর্যপূর্ণ ভাব আছে। তেমনি আছে শ্রদ্ধা এবং অন্যরকম এক মায়া। অনেকদিন থেকেই জিজ্ঞাসা করে আসছিলে আমি কেন তোমাকে বৌদি বলে ডাকি, আজ তার উত্তর দিয়ে দিলাম। আজ এই পত্রটি মূলত লিখছি তোমাকে বিশেষ কিছু জানানোর উদ্দেশ্যে।

মাস দুয়েক হলো অহনা নামের একটা মেয়ের সাথে আমি ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়েছি। ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় একটা হসপিটালে। ভয় পেয়োনা, আমার কিছু হয়েছিল বলে হসপিটালে যাইনি। একজন রোগীকে রক্ত দিতে গিয়েছিলাম। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রলিং করতে করতে একজন সেলিব্রেটির পোস্টে চোখে পড়ে যায় যেখানে উনি একজন মুমূর্ষ রোগীকে বাঁচানোর জন্য রক্ত দিতে বলেছিলেন। রোগীর রক্তের গ্রুপের সাথে আমার রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় এবং হসপিটাল আমাদের বাসা থেকে খুব কাছে হওয়াই খুব দ্রুতই চলে যাই সেখানে। যাওয়ার পর জানতে পারি রোগীর চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন ছিল এবং ইতোমধ্যে তিন ব্যাগ জোগাড় হয়ে গিয়েছে। বাকী এক ব্যাগ রক্ত দেওয়ার জন্য সেসময় মানুষ ছিলাম আমরা দুইজন, আরেকজন অহনা। ও আমার যাওয়ার মিনিটখানেক আগেই উপস্থিত হয়েছিল। ওর রক্ত নেওয়ার তোড়জোড় চলছিল, তখন আমি রোগীর আত্মীয়দের বললাম আমারটা নিতে। কিন্তু অহনা ওরটাই দিতে চাচ্ছিলো। একপর্যায়ে উনাদের এবং অহনাকে বুঝিয়ে আমার রক্ত নিতেই রাজি করানো হয়। তারপর অহনাকে বললাম চলে যেতে, কিন্তু ও বলছিল, আপনি আমার কথা এতোটা চিন্তা করলেন সুতরাং আপনাকে এভাবে রেখে চলে যাওয়া উচিৎ হবে না। আপনি বরং রক্ত দিন, রক্ত দেওয়ার পর যদি আপনার শরীর খারাপ লাগে তো আমি আপনাকে আপনার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবো। আমি অনেকবার বলেছিলাম তার কোনো দরকার নেই, কিন্তু অহনা শেষ পর্যন্ত শোনলই না। তবে রক্ত দেওয়ার পর আমার শরীর যথাযথ শক্ত-সামর্থ থাকায় অহনাকে শেষ পর্যন্ত আর আমার বাসা পর্যন্ত আসতে হয়নি। অবশ্য বাসায় চলে আসার আগে অনেকক্ষণ আমাদের মাঝে কথা হয়েছিল। আমার ফোন নাম্বারটাও নিয়ে রেখেছিল ও। এতক্ষণে ওকেও আমার অনেক ভালো লেগেছিল, কিন্তু ফোন নাম্বার চাওয়ার সাহস করে উঠতে পারিনি। কয়েকদিন ওর কথা মাঝে মাঝে মনে হলেও প্রায় সপ্তাহখানেকের মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম। এই ঘটনার ঠিক দশদিন পর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে, রিসিভ করে জানতে পারি ওটা অহনা। ওর কোন এক আত্মীয়ের জন্য নাকি রক্তের প্রয়োজন ছিল, রক্তের গ্রুপ আমার গ্রুপের সাথে মিল ছিল। আমার গ্রুপের রক্ত হওয়াও ও ভেবেছিল এই গ্রুপের রক্তের আমার পরিচিত কেউ হয়তো থাকবে যারা রক্ত দিতে পারবে। তাই ওর ফোন করা। পরে আমি আমার এক মামাকে নিয়ে যাই রক্ত দেওয়ার জন্য। রক্ত দেওয়া হয়ে গেলে চলে আসি, অহনার সাথে সেদিন তেমন কথা হয়নি, ও অনেক ব্যস্ত ছিল কিনা তার মুমূর্ষ রোগীকে নিয়ে। কিন্তু সেদিন রাতে ও ফোন দেয় কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য। পরে কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিই। ওহ! তোমাকে বলা হয়নি। ও এবার ইডেনে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। দেখতে তেমন ফর্সা নয়, কিন্তু অনেক মায়াবী চেহারা। সবচেয়ে বড় কথা মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ, যা আমার অনেক ভালো লাগে। যাহোক, এরপর প্রায় সপ্তাহখানেক পর হঠাৎ ফোন দিয়ে বলে, আপনি এতো কিপটা কেন? একটা মিনিট ফোন দেওয়ার টাকা হয় না বুঝি!

আমাকে আর পায় কে! এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। এরপর থেকে আমাদের নিয়মিতই কথা হতে শুরু করে। কিছুদিনের মাঝেই আমরা ফিল করতে থাকি যে একজন আরেকজনকে ভালোবেসে ফেলেছি। ও অনেকবার আকার ইঙ্গিতে আমাকে ব্যাপারটা বুঝাতে চাইতো, কিন্তু তোমার লাজুক দেবর বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকতো। আর আমার নিজে থেকে বলাতো দূরে থাক। ওকে সরাসরি প্রস্তাবটা দেওয়ার সাহস যদি আমার থাকতই তাহলে ততদিনেও আমি কি আর সিঙ্গেল থাকতাম বলো? এভাবেই বলতে চেয়েও বলতে না পারার একটা ব্যর্থতা নিয়েই আমাদের দিন এগুচ্ছিল। একদিন রিকশায় করে আমরা পার্ক থেকে ফিরছিলাম। হঠাৎ একটা লোককে পিচ্চি বাচ্চাদের একটা দোলনা কিনে নিয়ে যেতে দেখি আমরা দুজনই। ও দোলনা দেখেই হঠাৎ আমাকে বলে উঠলো, আমাদের বাচ্চার জন্যেও ওরকম একটা দোলনা কিনবো। আমি বললাম, হুমম, ভালোই হবে। এটা বলেই আমি স্তম্ভিত হয়ে ওর দিকে তাকাই, ওইও দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে আছে, অনুভব করলাম আমার অবস্থাও তার ব্যতিক্রম নয়। সাথেসাথেই মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম আমি। ও কী করেছিল জানি না। সেদিন সারা রিকশায় আর একটাও কথা হয়নি আমাদের। ও ওর বাসার সামনে চুপিসারে নেমে গিয়েছিল, আমার দিকে ফিরে তাকিয়েছিল কিনা জানিনা। আমিও লজ্জায় ওর দিকে ফিরে তাকাতে পারছিলাম না, কোনো কথাতো দূরে থাক। জানো বৌদি, সেদিন বাসায় আসার পর কোথা থেকে যেন আমার মাঝে অনেক সাহস চলে আসে। আমি রাতে খেয়েদেয়ে ওকে একটা মেসেজ লিখলাম, তুমি আমার হবু সন্তানের মা হবে? মা হয়ে আমার হবু সন্তানকে দোল খাওয়াবে দোলনায়? ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরেও ওর কোনো রিপ্লাই পাচ্ছিলাম না। বিশ্বাস করো বৌদি, সেই সময়টাও আমার মাঝে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে থাকতে না পেরে ফোন দিই, নাম্বার বন্ধ। আমার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হচ্ছিলো। নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য হাতের কাছের একটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বই হাতে নিই পড়ার জন্য। কিন্তু একটা লাইনও পড়তে পারছিলাম না। পনেরও মিনিট পর হঠাৎ মেসেজের শব্দ পাই। ওপেন করে দেখি ওর মেসেজ, লিখেছে, তোমার হবু সন্তানের মা অন্য কাউরে বানালে তোমার সব রক্ত শুষে পান করবো। মেসেজটা দেখে আনন্দে আমি মিনিট খানেক আত্মহারা ছিলাম। তারপর যখন খেয়াল হয় তখন সাথে সাথে ওকে আমি ফোন দেই। কেটে যাওয়ার একদম আগ মুহূর্তে ও রিসিভ করে, বলে, ওই প্লিজ ওভাবে তাকাবে না। আমার লজ্জা লাগে না বুঝি!
আমি হা হা করে হেসে উঠে বলি, ওরে আমার হবু বউটা, উনি ফোনের ভেতর দিয়েও দেখতে পায় বুঝি?
ও আহ্লাদী হয়ে বলে, হুমম! আমি আমার বরকে সবসময় দেখতে পাই। ও এখনো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
আমি মুচকি হেসে বলি, তোমার বর এতই ভদ্র? তোমার সামনে থেকেও চুপ করে কেবল দাঁড়িয়েই আছে বুঝি?
ও বলে, দাঁড়িয়ে থাকবে নয়তো কী করবে, হুমম?
না থাক বৌদি, তোমাকে আর বলা যাবে না তারপর আর কী কথা হয়েছিল। তবে পরদিনই আমরা দেখা করি। ও খুব সুন্দর একটা লাল শাড়ি পরে এসছিল। কী যে সুন্দর লাগছিল ওকে সেদিন তা কোনো কবি কিংবা সাহিত্যিক কেবল তাদের লেখনি দাড়াও কোনোদিন প্রকাশ করতে পারবে না। আর আমি নিতান্তই তোমার গোবেচারা দেবর কিভাবে প্রকাশ করবো বলো? জানো বৌদি, সেদিন আমরা প্রায় চারঘন্টা একসাথে কেবল রিকশাতেই ঘুরেছিলাম।
এর সপ্তাহখানেক পর হঠাৎ একদিন বিকাল থেকে আমি ওর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। রাত হয়ে যাওয়ার পরেও ওর কোনো খবর নাই। মেসেজ দিচ্ছি, ফোন ঢুকছে কিন্তু ওর কোনো রিপ্লাই পাচ্ছিলাম না। অথচ এমনিতে এই সময়ের মাঝে আমাদের অন্তত পাঁচবার ফোনে কথা হতো আর মেসেজতো অহরহ ছিলই। পরদিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাওয়ার পরেও ওর কোনো খবর না পেয়ে আমি ওদের বাসার সামনে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসে থাকি। ওদের বাড়ির কারো সাথে আমার পরিচয় না থাকায় খবর নেওয়ার কাউকে না পেয়ে শেষে ভাবলাম যে ওখানে ঐ দোকানে বসে ওয়েট করবো, বাসা থেকে বের হতে দেখলেই গিয়ে ধরবো। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেলেও ওর কোনো দেখা পেলাম না। উঠতে যাবো এ সময় দেখি দোকানে চা খেতে আসা একজন লোক পাশের জনকে বলছে, ফারহান সাহেব মনে হয় মেয়েকে আর কোথাও বিয়েও দিতে পারবে না। ওর বাবার নাম ফারহান আহমেদ, হঠাৎ এ নাম শুনে চমকে যাই এবং বিস্তারিত শুনতে পাওয়ার লোভে একটা কেক নিয়ে আবার বসে পড়ি। লোকটা তার কথা চালিয়ে গেলো, শালার জানোয়ারগুলা বুঝি আর মানুষ পাইনি দুনিয়াতে, অহনার মত একটা ভদ্র ভালো মেয়ের সাথেই শেষ পর্যন্ত এরকম করতে হলো! আমি একটু সাহস নিয়ে বিস্তারিত জানতে প্রশ্ন করি, আঙ্কেল কেউ খুনটুন হয়েছে নাকি? লোকটি আমাকে কিছুক্ষণ নিবিড় চোখে পর্যবেক্ষণ করে বলে, খুন হলেও হয়তো তারচেয়ে ভালো ছিল। খুন হয়নি, ধর্ষিত হয়েছে। এটাতো ধর্ষণ নয়, বলতে গেলে একটা পুরো পরিবারকে খুন করে ফেলেছে। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমার অহনা ধর্ষিত হয়েছে? এ কী করে সম্ভব! ওর মত একটা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয় কিভাবে! ভেতরটা আমার ভেঙ্গে যাচ্ছিলো। তবুও কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে আবার জিজ্ঞেস করলাম, একি বলছেন আঙ্কেল! ধর্ষণ! কিভাবে কী হলো জানতে পারি? লোকটি প্রথমে একটু দ্বিধা করেও শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললো, গতকাল মেয়েটার নাকি কলেজে থাকাকালীন শরীর একটু খারাপ লাগায় ছুটি নিয়ে বের হয়ে সিএনজি ঠিক করেছিল বাড়ি আসার জন্য। তারপর নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিল সিএনজিতেই। এরপরে কী হয়েছিল উপরওয়ালাই ভালো জানেন। কিন্তু রাত সাড়ে নয়টার দিকে মেয়েটিকে এই রাস্তার ঐ মাথায় একটা মাইক্রোবাস ফেলে রেখে সাথে সাথে চলে গিয়েছিল। আশেপাশের কিছু লোক এটা দেখে সাথেসাথে ধরাধরি করে বাসায় পৌঁছে দেয়। মেয়েটির অবস্থা খুব খারাপ ছিল না বটে, কিন্তু বুঝা যাচ্ছিলো ওকে কিছু জানোয়ার খুবলে খুবলে খেয়েছে। ওর বাবা ডাক্তার নিয়ে এসেছিল বাসায়। ডাক্তার দেখে বলেছে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি, কয়েকদিন রেস্টে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে নাকি। কিন্তু শরীর ঠিক দিয়ে আর কী হবে বলো। পুরা পরিবারটাতেই এখন শোকের মাতম চলছে। এলাকায় ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়ের এক জায়গায় বিয়ের কথা চলছিল, তারাও নাকি আজ ফোন করে না করে দিয়েছে বলে শুনলাম।

আমার ভেতরটা কুকড়ে যাচ্ছিলো এসব শুনে। কোনো রকমে সেদিন সেখান থেকে চলে এসেছিলাম বাসায়, তারপর সারারাত কান্না করেছি আমি। ওর এই মানসিক অবস্থায় ওকেও ফোন দেওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। আবার ভাবছিলাম ফোন দিয়ে কিছু সাহস দেওয়ার প্রয়োজন ওকে। ওর ধর্ষণের কারণে যে আমি ওকে ছেড়ে কখনো যাবো না এটাও জানানো প্রয়োজন। কিন্তু না, কোনোভাবেই ফোনটা হাতে নিতে পারছিলাম না। ওভাবেই কান্না করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সেদিন। অফিসেও যাইনি পরেরদিন। দুপুরের দিকে ওকে একটা মেসেজ লিখে সেন্ড করলাম, "অহনা, আমি তোমার সব ঘটনাই জানতে পেরেছি। তোমার মানসিক অবস্থা যে কী তা আমি বুঝতে পারছি। আমি জানি না তুমি বিষয়টাকে কিভাবে নিয়েছো, কিন্তু এটা নেহাতই একটা দূর্ঘটনা বৈকি কিছুই নয়। তুমি এই ঘটনার পর থেকে আমার সাথে একবারও যোগাযোগ করনি। আমার যে কতটা কষ্ট হচ্ছে তা তুমি বুঝবে না। বা বুঝলেও সেটা হয়তো তোমার কষ্টের তুলনায় কিছুই নয়। তুমি হয়তো ভাবছো এই তোমাকে আর আমার সাথে কখনো জড়াবে না। কিন্তু অহনা, এটাতো আমার কাছে নেহাতই একটা দূর্ঘটনা ব্যতিত কিছুই মনে হচ্ছে না। আজ যদি আমার কোনো দূর্ঘটনা হয়ে আমি পঙ্গু হয়ে যেতাম, তুমি কি তারপরেও আমাকে ছাড়া থাকতে? আমি তোমাকে যতদূর চিনি তাতে তুমি কখনোই থাকতে না। তবে আমি কেন তোমাকে ছাড়া থাকবো। বিশ্বাস করো, এই ঘটনার আগেও যেমন তুমি আমার কাছে ছিলে, এখনো ঠিক তেমনই আছো। বিন্দু পরিমাণ পরিবর্তন হওনি। আর আমিতো তোমার দেহকে ভালোবাসিনি, বেসেছিলাম তোমাকে, তোমার মনকে। তবে ঐ দেহের কারণে কেন আমি তোমাকে পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবো? প্লিজ, দ্রুত সব ভুলে যোগাযোগ করো।"

জানো বৌদি, এরপরে সারাদিন বাদে সন্ধ্যায় ও আমাকে রিপ্লাই দিয়েছিল, "ভুলে যাও আমাকে, ভুলে যাও অহনা নামে কেউ তোমার জীবনে ছিল।" জাস্ট এটুকুই। এরপরে অনেক মেসেজ দিয়েছি, ফোন দিয়েছি, কোনো রিপ্লাই পাইনি। এ ঘটনার আজ সাতদিন হতে চললো। এখনো আর কোনো রিপ্লাই দেয়নি ও।

বৌদি, দুনিয়াটা বুঝি এমনই? কেউ সুখে থাকলেই বুঝি তার সুখটাকে যেকোন উপায়ে কেড়ে নেওয়া হয়? মাঝে মাঝে আমার না গলা ছেড়ে চিৎকার করে করে কাঁদতে ইচ্ছা করে। এই চিঠিতে যতটা লাইন আছে তারচেয়ে বেশি বার আমি আমার চোখের জল মুছেছি এই চিঠিটি লিখতে গিয়েই। কয়েকফোটা জলতো চিঠিতেই পড়ে গেলো। হয়তো একটু ভালো করে খেয়াল করলে জলের দাগটা তুমিও দেখতে পাবে বৌদি। চিঠিটা হাতে পাওয়ার পর যখন তুমি পড়তে পড়তে এটুকু আসবে তখন মনে হয় তুমিও আর চোখের জল আটকাটে পারবে না। হায়! আমি তোমার এমনই এক অভাগা দেবর, যার কারণে তোমার চোখে জল আসছে। জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটা গানের লাইন খুব মনে পড়ে যাচ্ছে- বধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায় বিনা কারণে।

দুঃখিত বৌদি তোমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য। লোকে বলে দুঃখ শেয়ার করলে নাকি কমে, তাই বললাম এ কথাগুলো। তবে আর বেশি কিছু বলবো না। তোমার কাছে আজ একটা আবদার নিয়ে মূলত চিঠিটি লেখা। তুমি এক সপ্তাহের মাঝে ভাইয়াকে সাথে নিয়ে যেভাবে হোক আমাদের বাসায় চলে আসো। বাবা-মাকে রাজি করিয়ে যেভাবেই হোক ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও। আশা করি ওরা অমত করবে না। আর এদিকটা নিয়েও তোমাকে ভাবতে হবে না। গত চারদিন আগে মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল পছন্দ-টছন্দ আছে কিনা। আমি কিছু বলিনি। তুমি এসে মাকে বলো এবং রাজি করিয়ে মাকে সাথে নিয়ে ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাও।

আমি জানি, এই চিঠিটি পাও্য়া মাত্রই তুমি যত দ্রুত সম্ভব এসে পড়বে। আর ওর ধর্ষিত হওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে যে তোমারও বিন্দু পরিমাণ আপত্তি থাকবে না তা আমি জানি। তোমাকে এই ক বছরে খুব ভালোভাবেই চিনেছি। তোমার মত মানুষ হয় না বৌদি। ভালো থেকো এবং ফারদিনকে আমার ভালোবাসা দিও।

ইতি,
তোমার স্নেহের দেবর
প্রলু।

লিখায়: রিহানুর ইসলাম প্রতীক

[লেখাটি নিমাই ভট্টাচার্যের 'মেমসাহেব'-এর আদলে লেখা। তবে গল্প বা কাহিনীতে কোনো মিল নেই। কেবল এই লেখাটি চিঠি হিসাবে লেখা হয়েছে এটুকুই।]

লেখাটি প্রথমে লেখকের ফেসবুক টাইমলাইনে প্রকাশিত। মূল লেখাটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ফেসবুকে লেখক: https://www.facebook.com/rihanoorislam

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:০৭

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: ফেসবুক লিংক দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:০৫

রিহানুর ইসলাম প্রতীক বলেছেন: ঠিক আছে জনাব।

২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৩:১৩

রিফাত হোসেন বলেছেন: mobile a bangla font ashche na. tai english a typ korlam.

--------


facebook id ta profile a rakhun. face book lakhok hola blog a ki korchen?

----

ar golpota chomokprodo hoyache.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.