নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্তুগালের অলিগলি-১, ২

২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:১৪



এলোমেলো কয়েক পাক ঘুরতেই ছোট্ট লিসবন বিমানবন্দরটা ফুরিয়ে গেল। ডিউটি ফ্রি শপে কেনাকাটা করার লোক নই। তারপরও এক-দুইটা পারফিউমের বোতল টিপেটুপে দেখলাম। অতি সুগন্ধে নাক বন্ধ হয়ে আসা ছাড়া আর কোনো লাভই হল না। মাথা ধরিয়ে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। আরো ঘন্টাখানেক কি করে কাটাই, চিন্তা লাগছে।

পর্তুগালের ফ্লাইট বাকিদের আগে এসে পৌঁছেছে। বাকিরা বলতে রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নানান ল্যাবের পিএইচডি ছাত্রছাত্রীরা। মিউনিখ থেকে প্রায় জনা দশেক এসেছি একটা কনফারেন্স ধরতে। সে কনফারেন্স আবার পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে অনেক দূরে। এস্তোরিল বলে কোন আরেক শহরে। ওরা এলে সবাই এক সাথে বাস বা ট্রেনে করে যাবো। তাই অনেকটা সময় হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে মাছি মারছি।

একঘেয়েমি কাটাতে শেষে এক রেস্তোরায় আশ্রয় নিতে হল। বাকি টেবিলগুলোতে অতিথি নেই। একমাত্র কাস্টমারের আগমনে ওয়েটার লোকটা তীরের মত ছুটে এল। তাকে দু’প্লেট সী ফুড আনতে পাঠিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসেছি। হেঁশেলে অর্ডার পৌঁছে দিয়ে ওয়েটার দেখছি আবার হাত ভাঁজ করে বিনীত দাঁড়িয়ে। অগত্যা তাকে এবার কোকাকোলার কথা বললাম। আলাদিনের দৈত্যের মত মুহূর্তেই সে বিশাল রূপালি থালায় টেলিস্কোপের মত সরু গ্লাস নিয়ে হাজির। কোক ঢেলে তাতে একটা রঙ্গীন ছাতা বসিয়ে দিল। গ্লাসের খাঁজে এক চাক লেবু বসে গেল খাপে খাপ। কারুকাজ করা কৃস্টালের বাটিতে আবার বরফ কুচিও আছে দেখছি।

আপ্যায়নের বহর দেখে অস্বস্তি লাগছে সামান্য। ‘মোমবাতি জ্বেলে দেই, ম্যাম? একটা মোলায়েম অ্যাট্মোস্ফিয়ার তৈরি হবে। বরফ শীতল পানীয়ে সুরুৎ সুরুৎ টান দিতে দিতে কোনোমতে বললাম,’উহু, ঠিক আছে, ঠিক আছে, ধন্যবাদ।‘ লোকটা এবার দৌড়ে গিয়ে পেল্লায় দু‘টো পেয়ালা নিয়ে এল। খাবার অর্ডারের হুকুম এত দ্রুত তালিম হতে আর কোথাও দেখি নি আগে। যাহোক, মাখনে হুঁটোপুটি খাওয়া চিংড়ি আর মচমচে কালামারির উষ্ণ মাতাল ঘ্রানে অলস সময়টাকে হঠাৎ খুব দরকারী মনে হল। গার্লিক সসে মুড়িয়ে গরমাগরম মুখে চালান দিতেই আবেশে চোখে বুজে এল। সময় কাটানোর এই অলস পন্থাটা নেহাত খারাপ না।


২.
ওদের আসার সময় হয়ে এসেছে প্রায়। উঠে পড়লাম বিল চুকিয়ে আর দরাজ হাতে বখশিস মিটিয়ে । উত্তরে ওয়েটার লোকটা সাবেকি কায়দায় একটা ‘বাউ’ ঠুকে দিল। নতুন দেশে নেমেই এমন ভিআইপি আদর পেয়ে নিজেকে ভারিক্কী গোছের কেউকেটা মনে হচ্ছে। হৃষ্টচিত্তে বাকিদের খুঁজতে ‘অ্যারাইভাল‘ গেটে দাঁড়ালাম। একে একে আট-নয়জনের দলটা বেরিয়ে এল। গরমে তারা ঘেমে নেয়ে হদ্দক্লান্ত। খেয়ে দেয়ে নধর হয়ে যাওয়া চিকচিকে চেহারার আমাকে দেখে প্রথমেই তারা ভারি ভারি পোস্টারের খাপ দু’টো গছিয়ে দিল। আপত্তি না করে সানন্দেই সেগুলো কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে এলাম সবার সাথে।

এয়ারপোর্টের ভেতরটা যেমন বদ্ধ, বাইরেটা তেমনি খোলা। কচি পাতার ফাঁকে মৃদুমন্দ বাতাসে চারিদিক ভেসে যাচ্ছে। ২০১২ সালের মার্চ মাসের পর্তুগীজ রোদ যেন এক গাল হেসে আমাদের বরন করে নিল। ভীষন চটপটে মেয়ে ফ্রান্সিসকা দারুন দক্ষতায় অটোমেটিক টিকিট বুথের বোতাম চেপে এক রাশ টিকিট কেটে জনে জনে হাতে ধরিয়ে দিল। এস্তোরিলের বাস এসে স্টেশনে দাঁড়াতেই হুড়ুমুড়িয়ে চেপে বসলাম। পয়সা দিয়ে টিকিট কাটলেও বাসে তিল ধারণের জায়গা নেই। অগত্যা বাদুড়ঝোলাই ভরসা।

অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মেড ইন জার্মানি মার্সিডিস বেঞ্জ মডেলের পুরানো বাসটা ক্যাঁচকোঁচ আর্তনাদ তুলে এগিয়ে চললো। চওড়া রাস্তা আর অট্টালিকা ফুরিয়ে যেতে সময় লাগলো না। বাকিটা শুধুই অলি গলি আর গায়ে গা ঘেঁষা ঘিঞ্জি বাড়ির সারি। আর দশটা ইউরোপীয় শহরের আভিজাত্য নেই তাতে। তবে আভিজাত্য নিয়ে মনে হয় এদেশের লোকের তেমন মাথাব্যথা নেই। যে যার মত উঁচু গলায় কথা বলছে বিরতিহীন। শিশুরা চ্যাঁওভ্যাও কাঁদছে তো মায়েরা কপট রাগ দেখিয়েই গল্পে ডুবে যাচ্ছে। তরুণেরা হাহা করে হাসছে তো বুড়োরা মোড়ের ক্যাফেতে হল্লা করে চুরুট টানছে। সব মিলিয়ে কথার কলেবরে আর হাসির কলোরবে দীনিহীন পর্তুগালের অলি গলিগুলো ভীষন রকমের উজ্জ্বল। কোন দেশের ট্যাঁকে কত কাগুজে নোট আছে, তা দিয়ে যে উন্নতি মাপা হয়, সেই হিসেবে পর্তুগাল ঠিক পড়ে না বটে তবে মাপকাঠিটা পয়সা-কড়ির বদলে যদি লোকের মুখের হাসি হত, তাহলে পর্তুগাল ঠিক পেনাল্টি খেলে গোল দিয়ে জিতে যেত। (চলবে)
ছবি সৌজন্যে, ইন্টারনেট

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:২৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



Messenger RNA (mRNA) 'এর উপর একটিপোষ্ট দেন।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সালাম নেবেন, স্যার। ইচ্ছে আছে। হাতের জমে থাকা কাজগুলো গুছিয়ে জানুয়ারির দিকে লিখবো, এমনই প্ল্যান করছি।

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:৩৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। টাকায় সী ফুড়ের দাম কত নিলো

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১২

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ, নেওয়াজ ভাই। দাম কি আর মনে আছে। সেই ২০১২ কি ১৩'র কথা। তবে পর্তুগালে খানা খাদ্য এই জার্মানির তুলনায় অনেক সস্তা।

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:১১

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: অন্যের পছন্দের খাবার নিয়ে পোষ্ট দেয়া (ছবি সহ) ঠিক না

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১৩

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: কপিরাইট ফ্রি ছবি। এমনি আগোছালো যে এই ভ্রমনের কোনো ছবিই নেই সংগ্রহে।

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভ্রমনের জন্য পর্তুগাল ভালো- এই কথাটা কি সত্য?

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১৪

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আমার আপনার মত লোকের কাছে পর্তুগাল আর পটুয়াখালী, সবই সমান। ঘুরতে পারলেই হল। আনন্দটাই বড়। কি বলেন?

৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

শায়মা বলেছেন: আপুনি একটা কথা বলি-

খাবার হোক যথা তথা খাবারের সজ্জা সুন্দর হলেই আমি বিষও খেয়ে ফেলতে পারবো।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১৬

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: নিজের বেলাতেও সমান খাটে। দেখতে সুন্দর হলেই হল। কি খাবার, কি লোকজন ইত্যাদি ইত্যাদি।

৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: রিম সাবরিনা জাহান সরকার,



আপনার লেখাগুলো মাখনে মাখানো হুটোপুটি চিংড়ি আর মচমচে ক্যালামারির উষ্ণ মাতাল ঘ্রানের মতোই সুবাস ছড়ানো।

যদিও পর্তুগালের অলিগলির দেখা এখানে মেলেনি তবে গার্লিক সসের স্বাদ মাখা চিত্তে কখন যে কোনও একটা অলিতে বা গলিতে ঢুকে পড়েন তার অপেক্ষায় রইলুম !

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১৭

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সামনের শুক্কুর কি শনিবার এলেই এয়ারপোর্ট ছেড়ে বাসে চেপে বসবো। অলি গলি ডিঙ্গিয়ে যেতে হবে অনেকটা পথ। সাথে থাকার নিমন্ত্রন রইল।

৭| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:



খেয়েদেয়ে কনফারেন্সে ঘুম দিয়েছেন, মনে হয়!

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:২০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: স্যার, আজকে সারাদিন একটা ওয়ার্কশপ ছিল। মন্তব্য দেখেছি, কিন্তু জবাবের সময় হয় নি। আমার জন্যে দোয়া/আশীবার্দ রাখবেন। কর্মজীবনের কর্মফলে ব্যক্তিজীবন ঘোলাটে হতে বসেছে। তাই তো সেটা রুখতে কলম চালিয়ে দিয়েছি। শুধু এইখানে একটুখানি মুক্ত বাতাস মেলে। দমটা ফেলে বাঁচি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.