নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগে এসেই যখন পড়েছেন একটু পড়ে দেখুন।মন্দ লাগবে না।

সবুজ দ্বীপের রাজা

অরিন্জয়

আমার ফেইসবুক id তে যোগাযোগ করুন। https://www.facebook.com/rinjurock2009?ref=tn_tnmn

অরিন্জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

লালবাঈ (একটি গল্প)

১৪ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:১০

[কিছু কথা: প্রথম গল্প লিখছি।কোথাও ভুল হলে মাফ করে দেবেন। গল্পটি কিঞ্চিত ১৮+ নিজ দায়িত্বে পড়বেন। গল্পের প্রেক্ষ্যাপট ৭ বছর আগের। তখন পশ্চিমবঙ্গের শাসনভার ছিল বামফ্রন্ট সরকারের হাতে।]



নতুন চাকরীতে বহাল হয়ে আরামবাগে পোস্টিং হয়েছি। পুলিশের চাকরি,পদ-সাব ইন্সপেক্টর। সে দিনটা ছিল সম্ভবত রবিবার।স্বভাবতই কাজে ঝিমঝিম ভাব লেগে আছে।কিছু পুরাতন কেসের ফাইল আলতো ভাবে নাড়াচাড়া করছিলাম। সদ্য এক ভাঁড় গরম চা খেয়ে সংবাদে মুখ রেখেছি কি রাখিনি,একজন নারী এলেন কেস লেখাতে।ভদ্রমহিলা একটু দ্রুততার সাথে এগিয়ে এলেন দেখে হতচকিত হলাম।ভাবলাম,ইভটিসিং বা ধর্ষণের ঘটনা। কেস লেখাতে এসে এরকম....একটু চমকেই গেলাম।বললাম,“যা বলার আপনি সবার সামনেই বলুন।এখানে লজ্জার কিছু নেই।আপনার নাম?”আমার কথা শেষ হওয়ার পরেই ভদ্রমহিলা কাতর কন্ঠে বললেন,”না না,অফিসার এ কথা সবার সামনে বলা যাবে না,একটু আড়ালে চলুন,একথা একান্ত গোপনীয়,প্লিজ,একটু বুঝুন!”

ভদ্রমহিলার মতিগতি ঠিক বুঝলাম না।কোনো এক গ্রন্থে পড়েছিলাম,আয়ুর্বেদচর্যরা নাকি বলেছিলেন,কোনো এক নারীর চিকিত্সা করতে গেলে অন্য তিন নারীর উপস্থিতিতেই করতে হয়। সে যাই হোক,ওনাকে বললাম,“একটু বসুন।” উঠে এসে মধুবতী কে খুলে সব বললাম,মধুবতী এখানে মহিলা অফিসার.মধুবতী বলল,“দেখুন ,একজন SI হওয়ার

দৌলতে আপনি গোপনীয়তা নাও রাখতে পারেন তবে একজন মহিলা যখন গোপনে বলতে চাইছে,তখন না হয়..” ইঙ্গিতটা স্পষ্ট.বললাম, “তা হলে,তুমি অন্তত থাকো।” মধুবতী অনেকটা দোনামনা করেও ঘাড় নাড়ল।আমি চলে এলাম।

মধুবতী ভদ্রমহিলাকে নিয়ে অন্য ঘরে এলো,জিগ্গেস করলো, “আপনার নাম..”

মহিলা খুব শান্ত ভাবে শুরু করলেন, “চুমকি রায়,ওরফে আরামবাগ বেলতলার লালবাঈ, ১৭ নং বেড।”

শুনে বজ্রাহত হয়ে গেলাম,একজন দেহ ব্যবসায়ীনী এখানে,আমার ক্ষুদ্র চাকরি জীবনে এই ঘটনা প্রথম।

“আমার কেস নেওয়ার আগে আমার জীবনটা সংক্ষ্যেপে জানতে হবে,বাবু.” চুমকি ওরফে লালবাই বললো। একজন দেহ ব্যবসায়ীনীর জীবনচরিত. ইন্টারেস্টিং। রবিবারের সকালে হাতে কোনো কাজ নেই,তাই দৃঢ় সংযত ভাবে বললাম,“বলুন”

আরো অনমনীয় শান্ত ভাবে সে শুরু করলো,“জানেন,লালবাই একদিন লালবাই ছিল না,সে ছিল চুমকি রায়। বাড়িটা!বাড়িটা ঠিক মনে করতে পারছি না,হয়ত হাওড়া র কোনো বস্তিতে।খুব ছোটবেলা থেকেই রূপসী ছিলাম,বস্তির আর পাঁচটা লোকে বলত,”এ রূপ এখানে নাকি বেমানান।”তাতে অবশ্য আমার কাকা-কাকিমার খুব একটা সুখ ছিল নাভ একে পরের মেয়ে,তাকে আবার খাওয়ানো,বড় করে তোলা বাবাকে ঠিক মনে করতে পারিনা,আমাকে জন্ম দিয়েই নাকি মা মারা যায়. তারপর কয়েক মাস বাদেই বাবা ধূপ বিক্রি করতে গিয়ে একটা বাস এক্সিডেন্ট মারা যায়। কাকা-কাকিমা বলত অলুক্ষুনে মেয়ে।কয়েক বছর মিউনিসিপ্যালিটি র স্কুলে পড়েছিলাম। কাকা মদ খেয়ে নেশা করত,সব সময় পয়সা জুত না। এরে মাঝে আমাকে পোষার পয়সা সত্যিই একদিন ফুরোলো। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হলো।”

একটু দম নিয়ে আবার শুরু করলো,“তখন আমার বয়স বছর পনেরো।আমার বিয়ে হলো,পাশের বস্তির আরেক মাতালের সাথে। সে রিক্সা টানত,রাতে ভরপেট মদ খেয়ে আসত আর আমায় চ্যালাকাঠ দিয়ে...এসব প্রথমে সহ্য হত না,কিন্তু তাও তো ঠিক চলে যাচ্ছিল..কিন্তু..!!” খেয়াল করলাম গলার সেই দৃঢ় ভাবটা নেই,গলাটা কেমন যেন কেঁপে উঠলো তার,চোখটা ছলছল করে উঠলো।

আমি জিগ্গেস কলাম, “তারপর?”

“তারপর!”একটা দির্ঘ্যস্বাস ফেলে একটু উদাস হয়ে বলল, “তারপর একদিন আমার ইজ্জতটুকু নিল।”

“মানে?” মধুবতী জিজ্ঞাসা করলো।

“আর পাঁচটা দিনের মত কুড়োনো বাড়ানো জিনিস দিয়ে রান্না করে,অপেক্ষ্য়ায় বসে আছি। সে ফিরল। অন্যান্য দিনের মত সেদিনও মাতাল হয়ে ফিরেছিল,সঙ্গে তার এক বন্ধুকে এনেছিল।তারপর সেই রাতেই সে নিজে দাড়িয়ে থেকে তার ওই বন্ধুর সাথে আমায় সহবাসে বাধ্য করলো।আমি ভুলবো না,কিছুতেই ভুলবনা,সেই রাত,পাশবিক জৈবিক পিপাসায় আমার দেহ জ্বলে পুড়ে গেছিল....”কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল চুমকি।

সহানুভুতিতে মধুবতী তার কাঁধে হাত রাখল।কান্নার রেশ কাটতে,সে বিনা ভূমিকায় বলে চলল,”সে পাষন্ড স্বামীর তাতেও হল না,শুনেছিলাম,দু হাজার তাকে আমি নাকি সে রাতের জন্য বিক্রি হয়ে গেছিলাম। পরদিন সে বস্তিতে রতাল,আমি নাকি সেচ্ছায় পরপুরুষের সাথে রাত কাটিয়েছি।

সমগ্র বস্তি আমার গায়ে থুতু দিল,বস্তির মেয়েদের টিটকিরি তে পথে বেরোনো দায় হলোভ কলে জল আনতে গেলেও নানারকম কথা আমার উদ্দেশ্যে ভেসে আসত। কিছু মনিবের ঘরে ঘর মুছতাম,সেগুলোও বন্ধ হলো। আমি প্রতিবাদ জানাতে গেলে সুনতে হলো,”শয়তানের চলের অভাব হয় না।”শেষমেষ সিদ্ধান্ত যা হলো...” হটাত থেমে যাওয়ায় ভাব তন্ময়তা ছিন্ন হলো,বললাম,”কি হলো বলুন?”

“কাতর কন্ঠে সে বলল,”কি করে বলব,বলতে বুক শিউরে ওঠে,তবু আমায় বলতে হবে,হটাত করে দৃঢ় গলায় বলল।”“শেষমেষ সিদ্ধান্ত হলো আমায় বস্তি ছেড়ে চলে যেতে হবেভ্চলে যেতাম,কিন্তু তারা যেটা করলো,তা চরম পাশবিক,তাদের ভিতরকার একটা হিংস্র কামনার বিকৃত প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।তারা আমার মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে দিল। গলায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো লালবাই এর,যেন অবরুদ্ধ আগুনে আজ হওয়া লাগল।“সেই পাষন্ড তা আমার অথে সকল সম্মন্ধ অস্বীকার করলো”,আমি বললাম,“অন্তত আমার ভরণ পোষণের দায় টুকু নাও!”

হটাত স্মিতহাস্যে ঠোঁট দুটো থরথর করে কেঁপে উঠলো। তার চকে দেকলাম ক্রোধের আগুন,অবরুদ্ধ কান্নাটা যেন ব্যঙ্গ করে গহেসে উঠলো,কাঁপিয়ে দিল তার ঠোঁট> কাঁপা কাঁপা গলায় সে বলল, “সেই কালামুখী ন্যাড়া মুন্ডি সে নিয়ে গিয়ে ফেললো রেন্দিপল্লী তে,তার নিজের ভরণ পোষণের ব্যবস্থ্যা তাকে নিজেকেই করে নিতে হবে।”

“তারপর শত শত রাত পেরিয়ে শত শত লোকের কামনার আগুনে পুড়ে,লাজ-লজ্জা সম্মান বিসর্জন দিয়ে একটা পিতৃপরিচয়হীন ছেলে জন্ম দিয়ে আজ আমি লালবাই”

একটু নিস্তব্ধতা।তারপর সংযত ভাবে জিজ্ঞাসা করলাম ,“তা,আপনার সমস্যাটা.....”

স্মিতহাস্যে লাবণ্যময়ী বলল,“বলছি সেটা বলতেই যখন আসা,তখন একশবার বলব।

অসুবিধে ছিল না,এসবই বিধির বিধান বলে মেনে নিয়েছিলাম।কিন্তু গত পরশু আমার জীবনে এক নতুন মোড় এলো। আপনাদের যারা দেশকে রক্ষা করেন,তাদের মাথা নাকি বড় উন্নত!কিন্তু দেখলাম উগ্রপন্থীদের মাথা আরো তাড়াতাড়ি চলে,লোকে যা ভাবে না,আপনাদের কাছে যে চিন্তাধারা দুর্লভ সমাজবিরোধীদের কাছে তা এসে গ্যাছে।”

ঘটনার আকস্মিকতায় ও উগ্র তিরস্কারে বিভ্রান্ত হয়ে প্রশ্ন করলাম, “কেন বলুন তো?”

“গত পরশু” শুরু করলো চুমকি, “ দুজন ফ্রেঞ্চকাট দাড়িওয়ালা আমায় প্রস্তাব দিয়েছে আমার ছেলেটার থুড়ি বেশ্যার ছেলেটার ভবিষ্যতের পরিচয় দান,শিক্ষ্যা দানের বিনিময়ে আমায় আত্মবিসর্জন দিতে হবে। জানেন নিশ্চয়,আগামী বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী এখানে ।আসছেন কি বেশ একটা উদ্বোধন করতে,আসছেন আরো অনেক মন্ত্রী।” আমি সন্ক্ষ্য়েপে বললাম “হ্যা”

“সেখানে আমায় মাল্যদানের মালা যোগান দিতে হবে। বলা ভুল,সেখানে আমার নিজের TNT বাঁধা দেহটা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিতে হবে।”

আমি শুনে চমকে উঠলাম,মধুবতির সাথে একবার দৃষ্টি বিনিময় হলো। মাথা ঝুকিয়ে লালবাই বলে চলল, “আমি পারব না,কিছুতেই পারব না দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেআমাদের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের জন্য অনেক করেছেন,সুপার মার্কেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিস্ফোরণ ঘটলে শত-শত লোক মরবে,কোটি কোটি টাকা নষ্ট হবে। না আমি একাজ করতে পারব না। আমি বেশ্যা হতে পারি,সমাজের সবচেয়ে ঘৃণিত পদদলিত জীব হতে পারি,কিন্তু আমি ভারতীয়,এ দেশে জন্মেছি,এ দেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে উঠেছি,তার সাথে আমি গদ্দারী করতে পারব না। একাজ করলে আমার পাপের বোঝা বাড়বে বই কমবে না।কিন্তু অস্বীকার করলে তারা আমার ছেলে আর আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দায়। যতই হোক বাপের পরিচয়হীন ছেলে সেত আমারই,আমি মা হয়ে তার মৃত্যু দেখতে পারব না। তাই রাজি হয়ে যাই ওদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিই ওদের কথানুযায়ী ওরা ছেলেটাকে পড়াবে,ভালো খেতে দেবে,কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করি না,ওরা ওকে উগ্রপন্থী বানিয়ে দেবে।”

তাইত আমি,হটাত করে ব্যাগ থেকে একটা ট্যাবলেট বের করে মুখে দিতে দিতে বলল, “ডাক্তারবাবুর দেওয়া শেষ ওষুধ,দেহের সব জ্বালা জুড়বে।” মুখে দেওয়ার পর জল খেয়ে বলল, “তাই শেষ রাতে ছেলেটাকে গলা টিপে মেরে ফেলেছি। আমি বেঁচে থাকতে যেমন দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবনা,আমার ছেলেও যার দেহে আমার রক্ত বইছে,সেও ধরবে না। ঘরেতে তার লাশটা পরে আছে এই নিন ওদের দেওয়া টাকাগুলো,দেখুন এর থেকে ওদের ধরতে পারেন কিনা! আমি আসি অফিসার,আর হয়ত কোনদিন দেখা হবে না,না কাঠগড়ায়,না সাক্ষী দিতে,না বেলতলার ১৭ নং বেডে। চিরদিনের জন্য মুছে যাবে লালবাই।”

কথাগুলো বলে যেমন দ্রুততার সাথে এসেছিল তেমনি বেরোতে গেল,পারল না,কিছুটা এগিয়েই টলে পরে গেল।ওষুধ তা আর কিছুই নয় বিষ ছিল।







এতকিছু ঘটনা চোখের সামনে দেখে কেমন থতমত খেয়ে গেলাম।চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম,একটু পরে ধাতস্থ হয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মধুবতী কে বললাম “বডিটা পোস্ট মর্টেম এ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো” তারপর বহুকাল কেটে গাছে,আজও ভাবি,এমন দেশপ্রেমিক,এমন মা কেন ঘর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে না?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: পড়লাম। ভালোই লাগলো। তবে প্রচুর বানান ভুল আছে। ঠিক করে নিয়েন। গল্প লেখা চলুক।

১৪ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩২

অরিন্জয় বলেছেন: আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। সত্যি,প্রুফ রিডিং তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দেকছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.