নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবাউট ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স্,স্পেশালি মিনা রিজিয়ন। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কিছুই বিশ্বাস করি না।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন

দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনের সত্য: পশ্চিমের নীতি আর পুতিনের প্রতিক্রিয়া।

২১ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০২

ইউক্রেন যুদ্ধ একটি বহুমাত্রিক বিপর্যয়, এবং আগামী দিনগুলোতে এটি আরও অনেক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যখন কোনো যুদ্ধ সফল হয়, তখন তার কারণ নিয়ে খুব একটা মনোযোগ দেওয়া হয় না, কিন্তু যখন ফলাফল বিপর্যয়কর হয়, তখন বোঝা অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে যে এটা কীভাবে ঘটল। মানুষ জানতে চায়: আমরা এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে কীভাবে এলাম?গত ৬০-৭০ বছরে এরকম ঘটনা দুইবার ঘটেছে।—প্রথমে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, দ্বিতীয়বার ইরাক যুদ্ধের সময়। উভয় ক্ষেত্রেই আমেরিকানরা এবং দুনিয়ার মানুষ জানতে চেয়েছিল তাদের আমেরিকা এত বড় ভুল কীভাবে করল। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমি তৈরির ঘটনাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে—এবং এখনও এই যুদ্ধ পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে—তাই এই বিপর্যয়ের জন্য পশ্চিমের দায়িত্ব মূল্যায়ন করা সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত।
১৯৯০ সালে জার্মান পুনঃএকত্রীকরণের সময় গর্বাচভকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বেকার, জার্মান চ্যান্সেলর কোহল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট মিতেরঁ সবাই আশ্বাস দিয়েছিলেন ― “ন্যাটো এক ইঞ্চিও পূর্ব দিকে বাড়বে না” (ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস, National Security Archive, ২০১৭)। কিন্তু ১৯৯৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ন্যাটো ১৪টি দেশ ন্যাটোতে যুক্ত হয়েছে।
১৯৯৭ সালে আমেরিকার ৫০ জন প্রাক্তন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (যার মধ্যে জর্জ কেনান, রবার্ট ম্যাকনামারা) ওয়াশিংটন পোস্টে খোলা চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছিলেন ― “ন্যাটো সম্প্রসারণ রাশিয়ার সাথে নতুন শীতল যুদ্ধ শুরু করবে”।
২০১৪: মার্কিন-সমর্থিত অভ্যুত্থান
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিয়েভে মাইদান অভ্যুত্থান। ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের লিক হওয়া ফোনালাপে শোনা যায় তিনি কাকে প্রেসিডেন্ট বানাবেন তা ঠিক করছেন (“Yats is the guy”) এবং “Fuck the EU”। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন ― আমেরিকা ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ইউক্রেনে ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে। অভ্যুত্থানের পর:
• ক্রিমিয়া রাশিয়ার সাথে যোগ দেয় (গণভোটে ৯৭%)
• ডনবাসে গৃহযুদ্ধ শুরু (১৪,০০০+ মৃত্যু, OSCE রিপোর্ট)
• ওডেসায় ২ মে ২০১৪: ফার-রাইট গ্রুপগুলো ৪৮ জনকে ট্রেড ইউনিয়ন হাউসে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে যেটা নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া একেবারে চুপ ছিলো।
মিন্সক চুক্তি ছিল প্রতারণা
২০১৫ সালের মিন্সক-২ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু ২০২২-২৩ সালে:
• অ্যাঞ্জেলা মার্কেল (Die Zeit, ডিসেম্বর ২০২২)
• ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ (২০২৩)
• পেত্রো পোরোশেঙ্কো সবাই স্বীকার করেছেন ― “মিন্সক চুক্তি ছিল রাশিয়ার সাথে স্পষ্ট প্রতারনা।এই চুক্তির পিছনে ইউরোপ-আমেরিকা ইউক্রেনকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে।অথচ পুতিন বার বার এই চুক্তি বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছিলেন।
প্রথম, ইউক্রেন সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রই প্রধানত দায়ী।এর মানে এই নয় যে পুতিন যুদ্ধ শুরু করেছেন এটা অস্বীকার করা।এটাও অস্বীকার করা নয় যে আমেরিকার মিত্রদের দায় আছে, কিন্তু তারা মূলত ওয়াশিংটনের নেতৃত্ব অনুসরণ করে। আমার মূল কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন সম্পর্কে এমন নীতি এগিয়ে নিয়ে গেছে যা পুতিন ও তার সহকর্মীরা তাদের দেশের জন্য অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখেন—এই কথা তারা বহু বছর ধরে বারবার বলে আসছেন। আমি বিশেষভাবে বলছি ইউক্রেনকে ন্যাটোয় নিয়ে আসার এবং রাশিয়ার সীমান্তে একটি পশ্চিমা ঘাঁটি বানানোর প্রতি আমেরিকার চরম আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। বাইডেন প্রশাসন কূটনীতির মাধ্যমে এই হুমকি দূর করতে অস্বীকার করেছে এবং ২০২১ সালে ইউক্রেনকে ন্যাটোয় আনার প্রতিশ্রুতি আবারও নিশ্চিত করেছে। পুতিন তার জবাবে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করেন।
দ্বিতীয়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিগুণ আক্রমণাত্মক হয়েছে। ওয়াশিংটন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনে রাশিয়াকে নিশ্চিতভাবে পরাজিত করতে এবং ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রাশিয়ার শক্তিকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলো।যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানে আন্তরিকভাবে আগ্রহী ছিলো না বরং যুদ্ধ মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর চলতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ইউক্রেন, যে ইতিমধ্যেই ভয়ানক ক্ষতির শিকার হয়েছে, আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটাকে তারা কনসিডার করলেও আমলে নেয়নি ।মূল কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে ধ্বংসের পথে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
প্রচলিত ধারণা (Conventional Wisdom)
পশ্চিমে এটা ব্যাপকভাবে এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয় যে ইউক্রেন সংকট এবং নিশ্চিতভাবে চলমান যুদ্ধের জন্য পুতিনই একমাত্র দায়ী। বলা হয়, তার সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে, অর্থাৎ তিনি ইউক্রেন এবং অন্যান্য দেশ দখল করতে চান—সবই একটি মহান রাশিয়া তৈরির জন্য যা পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো হবে। অর্থাৎ ইউক্রেন তার প্রথম লক্ষ্য, কিন্তু শেষ নয়। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদান এবং পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সৈন্যবৃদ্ধি এই কারণেই সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত বলে মনে করা হয়।
কিন্তু এই বর্ণনার সমর্থনে কোনো প্রমাণ নেই। পুতিনের বক্তব্য থেকে যেগুলো উদ্ধৃত করা হয় (যেমন ইউক্রেন “কৃত্রিম রাষ্ট্র”, রাশিয়ান-ইউক্রেনীয়রা “এক জাতি”, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন “শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়” ইত্যাদি), সেগুলো তার আগ্রাসনের উদ্দেশ্য প্রমাণ করে না। তার ২০২১ সালের ১২ জুলাইয়ের বিখ্যাত প্রবন্ধে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন: “তোমরা নিজেদের রাষ্ট্র গড়তে চাও—সেটা করলে তোমাদের আমরা সহযোগিতা করবো!” এবং “ইউক্রেনে কী হবে, তা তার নাগরিকদের সিদ্ধান্ত”। তিনি কখনোই ইউক্রেনকে রাশিয়ার অংশ করার কথা বলেননি।এমনকি আক্রমনের ৪ দিন পরই রাশিয়া আলোচনা শুরু করে—যাতে দেখা যায় তারা পুরো ইউক্রেন দখলে নিতে চায়নি।পুতিনের উদ্ধেশ্য ছিলো ইউক্রেনকে চাপে রেখে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা।আলোচনা ভালোই চলছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চাপে ইউক্রেন আলোচন থেকে সরে যায়।
যুদ্ধ শুরুর আগে এবং পরে পুতিন বারবার বলেছেন যে তার উদ্দেশ্য ইউক্রেন দখল করা নয়, বরং তা যাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য “স্প্রিংবোর্ড”না হয় সেটা নিশ্চিত করা।রাশিয়া শুরু থেকেই সীমিত যুদ্ধের লক্ষ্যের কৌশল নিয়েছে, পুরো ইউক্রেন দখল করার মতো যুদ্ধ কৌশলে পুতিন যায়নি। কারণ তার সৈন্যসংখ্যা (১,৯০,০০০) এবং জাতীয়তাবাদের যুগে দখলদারি রাষ্ট্র পরিচালনার অসম্ভবতা তিনি জানেন।ইউক্রেনের তৎকালীন সেনা প্রধান বলেছিলেন রাশিয়া,ইউক্রেন আক্রমনে ১ লক্ষ্য সৈন্য ব্যাবহার করেছে।যেটা পুরু ইউক্রেন দখলের ধারে কাছেও ছিলো না। উল্লেখ্য ১৯৩৯ সালে জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমনে ১৫ লাখ সেনা মোতায়েন করেছিলো।
২০২২: শান্তি চুক্তিতে আমেরিকা-ইউরোপের বাধাঃ
মার্চ-এপ্রিল ২০২২, ইস্তানবুলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিলো।চুক্তির শর্ত সমুহ নির্ধারন করা হয়েছিলো। নিরপেক্ষ ইউক্রেন, ডনবাসের স্বায়ত্তশাসন, ক্রিমিয়ার স্ট্যাটাস কোয়ো বজায় রাখা। কিন্তু ৯ এপ্রিল বরিস জনসন কিয়েভে গিয়ে জেলেনস্কিকে বলেন “যুদ্ধ চালিয়ে যাও, পুতিনকে পরাজিত করতে হবে”। পরে ডেভিড আরাখামিয়া (ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান) স্বীকার করেন (২০২৩): “জনসন বলেছিলেন ― কোনো চুক্তি নয়”। প্রাক্তন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও বলেছেন ― “পশ্চিম চুক্তি ভেস্তে দিয়েছে”।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির আগে কেউ বলেনি পুতিনের সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। ২০০৮ সালের ন্যাটো সম্মেলনে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল যেখানে ইউক্রেন-জর্জিয়াকে ন্যাটোয় নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৪-র পরেই হঠাৎ “সাম্রাজ্যবাদী পুতিন” বর্ণনা শুরু হয়—যার উদ্দেশ্য ছিল দোষ পুরোপুরি পুতিনের ঘাড়ে চাপানো।
প্রকৃত কারণ
সংকটের মূল কারণ হলো আমেরিকা-নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টা যাতে ইউক্রেন রাশিয়ার সীমান্তে একটি পশ্চিমা ঘাঁটি হয়ে ওঠে। এই কৌশলের তিনটি দিক:
১. ইইউ-তে ইউক্রেনের একত্রীকরণ
২. ইউক্রেনকে পশ্চিমা উদার গণতন্ত্রে রূপান্তর
৩. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তি।
এই কৌশল শুরু হয় ২০০৮ সালের এপ্রিলে বুখারেস্ট ন্যাটো সম্মেলনে যেখানে ঘোষণা করা হয় ইউক্রেন ও জর্জিয়া “ন্যাটোর সদস্য হবে”। রাশিয়া তৎক্ষণাৎ এটাকে অস্তিত্বের হুমকি বলে প্রতিক্রিয়া জানায়। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদুত উইলিয়াম বার্নস (পরে সিআইএ প্রধান)কন্ডোলিসা রাইসকে লিখেছিলেন: “ইউক্রেনের ন্যাটোতে প্রবেশ রাশিয়ান এলিটের (শুধু পুতিন নয়) জন্য সবচেয়ে বড় রেড লাইন”। এঞ্জেলা মার্কেল ও সারকোজি এর বিরোধিতা বিরোধিতা করেছিলেন কারণ তারা জানতেন পুতিন এটা মেনে নেবেন না। কিন্তু বুশ প্রশাসন চাপ দিয়ে ঘোষণাটি পাস করিয়ে নেয়।
চার মাস পরেই (আগস্ট ২০০৮) জর্জিয়া-রাশিয়া যুদ্ধ বেধে যায়। তবুও পশ্চিমা পরিকল্পনা চলতে থাকে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে মার্কিন-সমর্থিত অভ্যুত্থানের পর ক্রিমিয়া দখল ও ডনবাসে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০১৪-২০২২ পর্যন্ত ন্যাটো ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়েছে, ইউক্রেনকে ডি-ফ্যাক্টো ন্যাটো সদস্যে পরিণত করেছে। ২০২১ সালে বাইডেন ও জেলেনস্কি উভয়েই ন্যাটো সদস্যপদের প্রতি আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন।
রাশিয়া ২০২১-২২ সালে সীমান্তে সৈন্য জড়ো করে এবং ডিসেম্বর ২০২১-এ লিখিত গ্যারান্টি চায়:
- ইউক্রেন ন্যাটোয় যাবে না
- আক্রমণাত্মক অস্ত্র রাশিয়ার সীমান্তে মোতায়েন হবে না
- ১৯৯৭-এর পর পূর্ব ইউরোপে আসা ন্যাটো সৈন্য ফিরে যাবে।
ব্লিঙ্কেনের জবাব ছিল: “আমাদের পলিসিতে কোনো পরিবর্তন নেই এবং হবেও না।” পুতিন তখনই ইউক্রেন আক্রমণ করেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন কনফ্লিক্ট কোন দিকে যাচ্ছে?
১. ইউক্রেনের জন্য যুদ্ধটি সম্পূর্ণ বিপর্যয়। ২৫% ভূমি রাশিয়া দখল করে নিয়েছে, ১৪ মিলিয়নের বেশি শরণার্থী/অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত, অর্থনীতির ৫০% সংকোচন।
২ রাশিয়া চায় নিরপেক্ষ ইউক্রেন, আমেরিকা তা মানবে না। ইউক্রেনের চরম জাতীয়তাবাদীরা কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। দখলকৃত ভূমির প্রশ্ন সমাধান অসম্ভব।
কিন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিলো ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা।তিনি প্রথমে সে পথে হাঁটলেও মার্কিন যুদ্ধবাজ লবি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপে সেখান থেকে সরে আসেন। Axios রিপোর্ট অনুযায়ী প্রকাশ্যে সরে আসলেও তিনি উইটকপকে দিয়ে গোপনে আলোচনা চালান রাশার সাথে।তারই ফলশ্রুতিতে রাশার ২৮ দফার একটা চুক্তিতে একমত হন,যদিও সেটা এখনো চূড়ান্ত নয়।এই আলোচনায় ট্রাম্প ইউরোপ এবং ইউক্রেনকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি।দুইদিন আগে এটা ফাঁস হবার পরেই এটা সবাই জানতে পারে।অন্যদিকে জেলেন্সকির ভয়াবহ দুর্নীতিকে সামনে নিয়ে এসে তাকেও এই চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করার পথে হাঁটছেন ট্রাম্প।
ইউক্রেনের দুর্ভাগ্য যে সব কারনে রাশা ইউক্রেন আক্রমণ করেছিলো কিংবা আক্রমনের আগে রাশিয়া যে সব শর্ত আরোপ করেছিলো তাঁর সব কিছুই এই চুক্তিতে মেনে নেওয়া হয়েছে।মাঝখান দিয়ে মার্কিন যুদ্ধবাজ লবির উস্কানিতে পা দিয়ে একজন অযোগ্য প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দিলো।শুধু ধ্বংস নয়, খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেন হারালো।
২০২৫-এর বাস্তবতা
• রাশিয়া এখন ইউক্রেনের প্রায় ২৫% দখল করেছে (১,১৮,০০০ বর্গকিলোমিটার)।
• ইউক্রেনের জনসংখ্যা ৪০ মিলিয়ন থেকে ২০-২৫ মিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে।(UN, World Bank)।
• অর্থনীতি ৫০% সংকোচিত।
• জেলেনস্কির মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ (যুদ্ধের কারণে নির্বাচন হয়নি) ― তার বৈধতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
নিম্নে ইউক্রেন রাশিয়া চুক্তি যেটা ফাঁস করেছে সেটার ২৮ দফাঃ
১. ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হবে।
২. রাশিয়া–ইউক্রেন–ইউরোপের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ অ-আক্রমণ চুক্তি হবে।
৩. নাটোর আর কোনো সম্প্রসারণ নয় এবং রাশিয়া প্রতিবেশী দেশে আক্রমণ করবে না—দুই পক্ষই নিশ্চয়তা দেবে।
৪. সব নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে রাশিয়া–নাটো সংলাপ পুনরায় শুরু হবে (মার্কিন মধ্যস্থতায়)।
৫. ইউক্রেনকে মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়া হবে।
৬. ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখে সীমাবদ্ধ করা হবে।
৭. ইউক্রেন তার সংবিধানে নাটোতে না যোগ দেওয়ার নিশ্চয়তা যুক্ত করবে; নাটোও ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে না নেবে।
৮. ইউক্রেনে কোনো নাটো সৈন্য মোতায়েন থাকবে না।
৯. ইউক্রেনের সুরক্ষায় ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডে মোতায়েন করা হবে।
১০. যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনে জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহার করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়ার যৌথ বিনিয়োগ তহবিল গঠন করা হবে।
১১. রাশিয়াকে পুনরায় জি–৮ দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
১২. যুদ্ধকালীন সকল পক্ষকে সাধারণ ক্ষমা (আমনেস্টি) দেওয়া হবে।
১৩. শান্তি চুক্তি হবে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক, এবং একটি “পিস কাউন্সিল” এটি তদারকি করবে।
১৪. দুই পক্ষ নির্দিষ্ট সীমায় পিছু হটার পর অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
১৫. দোনেৎস্কের কিছু এলাকা হবে বাফার জোন/অসামরিক অঞ্চল এবং বাস্তবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাবে।
১৬. যে সীমানা চুক্তিতে নির্ধারিত হবে, ভবিষ্যতে বলপ্রয়োগে পরিবর্তন করা যাবে না।
১৭. ইউক্রেনের দ্নিপ্রো নদী ও কৃষ্ণ সাগর পথ বাণিজ্যিক ব্যবহারের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে (শস্য রপ্তানি)।
১৮. বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের জন্য একটি মানবিক কমিটি গঠন হবে।
১৯. ইউক্রেনকে ১০০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।(এর মানে হলো জেলেনেস্কিকে মাইনাস করা হলো)
২০. ইউক্রেনে রাশিয়ান ভাষা আংশিক সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি ও রুশ অর্থোডক্স চার্চের অধিকার স্বীকার করার প্রস্তাব রয়েছে।
২১. ইউক্রেনকে কিছু দূর-পাল্লার ক্ষেপনাস্র বা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির অস্ত্র ত্যাগ করতে হতে পারে।
২২. রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করা হবে।
২৩. যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া যৌথ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে (AI, খনিজ, জ্বালানি অবকাঠামো)।
২৪. চুক্তি কার্যকর হলে উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে অভিযোগ বা দাবি উত্থাপন করবে না।
২৫. পিস কাউন্সিল বাস্তবায়ন তদারকি করবে এবং লঙ্ঘন করলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে।
২৬. রাশিয়াকে আবার বিশ্ব অর্থনীতির মূলধারায় ফেরানো হবে (বিনিয়োগ, আংশিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইত্যাদি)।
২৭. ইউরোপের জন্য নতুন নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করা হবে যাতে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ের উদ্বেগ সমাধান হয়।
২৮. ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরপেক্ষ অবস্থান বা আইনি নিরাপত্তা-ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
উক্রেন আজ যে ভয়ংকর মূল্য দিচ্ছে ― লাখ লাখ মৃত্যু, কোটি কোটি শরণার্থী, ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি, ভূখণ্ড হারানো ― তার বেশিরভাগই পশ্চিমের ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং রাশিয়াকে “স্ট্র্যাটেজিক ডিফিট” দেওয়ার অলীক স্বপ্নের ফল। পুতিন যুদ্ধ শুরু করেছেন ঠিকই। কিন্তু পশ্চিমই তাকে যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো পথ রাখেনি। এবং তারপর যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
এটাই ইতিহাসের কঠিন সত্য। যারা এই সত্য অস্বীকার করে, তারা হয় অজ্ঞ, নয়তো মিথ্যাবাদী।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩৭

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: কিন্তু ১৯৯৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ন্যাটো ১৪টি দেশ ন্যাটোতে যুক্ত হয়েছে।
........................................................................................................
জবান দেয়া এবং তা বরখেলাপ করা
বেঈমানের আচরন
তাই, বিশ্বের সকল জনগন এই দুর্দশা ভোগ করছে ।

২| ২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ২:১৯

শ্রাবণধারা বলেছেন: ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনের কারণ ব্যাখ্যায় আপনার লেখাটি খুব ভালো হয়েছে। যদিও লেখাটি প্রচুর বুলেট পয়েন্টে সাজানো এবং তথ্য-ঠাসা, তাই পড়তে গেলে কিছুটা বেগ পেতে হয়। তবে আপনি যে মূল কারণগুলো তুলে ধরেছেন, যেমন ন্যাটো এবং ন্যাটো-নির্দেশিত পশ্চিমা ঔপনিবেশিক আধিপত্য, সেগুলো বেশ স্পষ্ট।

কোল্ড ওয়ারের পর ন্যাটোর ভূমিকা আমেরিকার মিলিশিয়া বাহিনীর মতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.