নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাঁশী

বাঁশী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঁশি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২১ শে জুন, ২০০৮ ভোর ৪:১৩

কিনু গোয়ালার গলি।

দোতলা বাড়ি

লোহার-গরাদে-দেওয়া একতলা ঘর

পথের ধারেই ।

লোনাধরা দেয়ালেতে মাঝে মাঝে ধসে গেছে বালি,

মাঝে মাঝে স্যাঁতাপড়া দাগ ।

মার্কিন থানের মার্কা একখানা ছবি

সিদ্ধিদাতা গনেশের

দরজার 'পরে আঁটা ।

আমি ছাড়া ঘরে থাকে আর একটা জীব

এক ভাড়াতেই,

সেটা টিকটিকি ।

তফাৎ আমার সঙ্গে এই শুধু,

নেই তার অন্নের অভাব ।



বেতন পঁচিশ টাকা,

সদাগরি আপিসের কনিষ্ঠ কেরানি ।

খেতে পাই দত্তদের বাড়ি

ছেলেকে পড়িয়ে ।

শেয়ালদা ইস্টিশনে যাই,

সন্ধ্যেটা কাটিয়ে আসি,

আলো জ্বালাবার দায় বাঁচে ।

ইঞ্জিনের ধস ধস,

বাঁশির আওয়াজ,

যাত্রীর ব্যস্ততা,

কুলি-হাঁকাহাঁকি ।

সাড়ে-দশ বেজে যায়,

তার পরে ঘরে এসে নিরালা নিঃঝুম অন্ধকার ।



ধলেশ্বরী-নদীতীরে পিসিদের গ্রাম ---

তাঁর দেওরের মেয়ে,

অভাগার সাথে তার বিবাহের ছিল ঠিকঠাক ।

লগ্ন শুভ, নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেল ---

সেই লগ্নে এসেছি পালিয়ে ।

মেয়েটা তো রক্ষে পেলে,

আমি তথৈবচ ।

ঘরেতে এল না সে তো, মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া ---

পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর ।



বর্ষা ঘনঘোর ।

ট্রামের খরচা বাড়ে,

মাঝে মাঝে মাইনেও কাটা যায় ।

গলিটার কোণে কোণে

জমে ওঠে, পচে ওঠে

আমের খোসা ও আঁঠি, কাঁঠালের ভূতি,

মাছের কান্‌কা,

মরা বেড়ালের ছানা ---

ছাইপাঁশ আরো কত কী যে ।

ছাতার অবস্থাখানা জরিমানা-দেওয়া

মাইনের মতো,

বহু ছিদ্র তার ।

আপিসের সাজ

গোপীকান্ত গোঁসাইয়ের মনটা যেমন,

সর্বদাই রসসিক্ত থাকে ।

বাদলের কালো ছায়া

স্যাঁত্‌সেঁতে ঘরটাতে ঢুকে

কলে পড়া জন্তুর মতন

মূর্ছায় অসাড় ।

দিনরাত, মনে হয়, কোন আধমরা

জগতের সঙ্গে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে আছি ।



গলির মোড়েই থাকে কান্তবাবু ---

যত্নে-পাট-করা লম্বা চুল,

বড় বড় চোখ,

শৌখিন মেজাজ ।

কর্নেট বাজানো তার শখ ।

মাঝে মাঝে সুর জেগে ওঠে

এ গলির বীভৎস বাতাসে ---

কখনো গভীর রাতে,

ভোরবেলা আলো-অন্ধকারে,

কখনো বৈকালে

ঝিকিমিকি আলো-ছায়ায় ।

হঠাৎ সন্ধ্যায়

সিন্ধু-বারোয়াঁয় লাগে তান,

সমস্ত আকাশে বাজে

অনাদি কালের বিরহবেদনা ।

তখনি মুহূ্র্তে ধরা পড়ে

এ গলিটা ঘোর মিছে

দূর্বিষহ মাতালের প্রলাপের মতো ।

হঠাৎ খবর পাই মনে,

আকবর বাদশার সঙ্গে

হরিপদ কেরানির কোনো ভেদ নেই ।

ছেড়া ছাতা রাজছত্র মিলে চলে গেছে

এক বৈকুন্ঠের দিকে ।



এ গান যেখানে সত্য

অনন্ত গোধূলী লগ্নে

সেইখানে

বহি চলে ধলেশ্বরী,

তীরে তমালের ঘন ছায়া ---

আঙ্গিনাতে

যে আছে অপেক্ষা ক'রে, তার

পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:১৩

রুবেল শাহ বলেছেন: ভাল লাগলো .....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.