নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অতোঃপর একটি প্রশ্ন ??
লেখকঃ তানজীর আহমেদ সিয়াম
পর্বঃ০১
সকাল ৭টা। প্রিয়ন্তি ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোচ্ছে। রান্নাঘরে যেতে হলে ড্রয়িংরুম হয়ে যেতে হবে। প্রিয়ন্তি ড্রয়িংরুম এ পা রাখতেই চমকে উঠলো ! ড্রয়িংরুম এ একজন আগুন্তক বসে আছে, যাকে প্রিয়ন্তি কখনোই দেখেনি। ছেলেটি অত্যান্ত সূদর্শন , লম্বায় ৫ ফিট দশ ইঞ্চি হবে। পরিপাটি করে মাথা আঁচড়ান। প্রিয়ন্তি ঘরে প্রবেশ করতেই আবিদ বসা থেকে উঠে দাড়ালো এবং সালাম দিলো...
প্রিয়ন্তিঃ কে ! কে আপনি ?
আবিদঃ জ্বী, আমার নাম আবিদ, আমি ঢাকা থেকে এসেছি।
প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা ! কার কাছে এসেছেন?
আবিদঃ আমি মিসেস মেহেরুন্নেসা’র এর সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম, আমি উনার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। উনার সাথে আমার গতকাল রাতে ফোনে কথা হয়েছে।
প্রিয়ন্তিঃ ওহ! মা তো ঘুমাচ্ছে, আপনি বসুন, আমি মা’কে ডেকে দিচ্ছি।
আবিদঃ জী খালামনি, আমি অপেক্ষা করছি।
খালামনি শব্দটা শুনেই প্রিয়ন্তি;র মেজাজ বিগরে গেলো। তার প্রায় সমবয়সী একটি ছেলে তাও আবার অচেনা , তাকে খালামনি করে সম্বোধন করছে।
প্রিয়ন্তিঃ এই ছেলে, তুমি আমাকে কি বললে। ( রাগী রাগী কন্ঠে )
আবিদঃ হুম ! আপনি সঠিক শুনেছেন, দয়া করে আপনি কি একটু উনাকে ডেকে দিবেন, আমার হাতে সময় খুব কম।
প্রিয়ন্তি আর কথা না বারিয়ে মা’র রুমের দিকে পা বাড়ালো। মিসেস নেসা’র রুমে ন’ক করতেই দরজা খুলে গেলো, দেখলো মা জানালা ধরে দাঁড়িয়ে আছে, মনে হচ্ছে মা রাতে ঘুমায় নাই।
প্রিয়ন্তিঃ মা ......
মিসেস মেহেরুন্নেসা’র কনো সাড়াশব্দ নেই, মনে হচ্ছে তিনি এই এই জগতে নেই।
প্রিয়ন্তি মিসেস মেহেরুন্নেসা‘র সামনে গিয়া আবার ডাক দিলো “মা”।
হঠাৎ ডাকে মেহেরুন্নেসা চমকে প্রিয়ন্তি’র দিকে তাকালো। প্রিয়ন্তি মা’র এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে জিজ্ঞাসা করলো...
প্রিয়ন্তিঃ মা, তোমার কি হয়েছে, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
মেহেরুন্নেসাঃ কই নাতো ! আমার কিছু হয়নি।
প্রিয়ন্তি; তাহলে তোমার চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন !!
মেহেরুন্নেসাঃ রাতে ঘুম হয় নি , তাই হয়তো! এত্তো সকালে তুই আমার রুমে , কনো সমস্যা ।
প্রিয়ন্তিঃ না তেমন কিছু না, তোমার কাছে একজন দেখা করতে এসেছে... কি জানি নাম
মেহেরুন্নেসাঃ এতো সকালে !!
প্রিয়ন্তিঃ হুম ! আবিদ না কি যেনো নাম ....
আবিদ নামটি শুনতেই মেহেরুন্নেসার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো..........
#২
বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে মিসেস মেহেরুন্নেসা ড্রয়িং রুম এ প্রবেশ করলো। আবিদ সোফা থেকে উঠে কদমবুচি করলো।
আবিদঃ কেমন আছেন ?
মেহেরুন্নেসাঃ বেশী ভালো না। বয়স হয়েছে তো !!
আবিদঃ আমি আপনার বেশী সময় নষ্ট করবো না, কাল বিকালে আমার ফ্লাইট। ফোনে তো আপনাকে সব বলেছি, আমি শুধু একটা বার আমি উনাকে দেখবো।
মেহেরুন্নেসাঃ ফোনে তোমাকে এতো বার মানা করলাম , তারপরেও তুমি শুনলে না ?এতো জিদ তোমার, ঠিক মায়ের মতো !
আবিদঃ সরি, আমি আমার মায়ের মতো হতে চাই না।
মেহেরুন্নেসা আবিদ এর দিকে তাকালেন, দেখলেন আবিদ রাগে ফুসছে কিন্তু চোখের কোনে পানি...
কিছুক্ষন পরে আবিদ কথা বলল...
আবিদঃ আমি শুধু একবার তাকে দেখবো, শুধু একবার....
মেহেরুন্নেসাঃ তবে আমার একটি শর্ত আছে?
আবিদঃ কি শর্ত ?
মেহেরুন্নেসাঃ তোমাকে তোমার পরিচয় গোপন রাখতে হবে। যদি তুমি রাজি থাকো তাহলে আমি ...........
কথা টা শেষ করার আগেই আবিদ বলল....
আবিদঃ আমি আপনার সব শর্তে রাজী আছি, আমি শুধু একটি বার উনাকে দেখবো আর.....
মেহেরুন্নেসাঃ আর কিছু না । শুধু দেখার অনুমতি দিচ্ছি। এতে তোমার আর আমাদের সবার মঙ্গল। যদি তুমি নিজের বা আমাদের ক্ষতি না চাও তাহলে.....
আবিদঃ ক্ষতি যা হবার তো আমার হয়েছে, সেটা কি আপনি বা আপনার মেয়ে পূরণ করতে পারবেন.... পারবে না।
ঠিক আছে , আমি আপনার শর্তে রাজি আছি।
মেহেরুন্নেসাঃ ঠিক আছে আমি ওকে খবর দিচ্ছি। তুমি দূপুরে খেয়ে যেও।
আবিদঃ না । আমার হাতে সময় কম, আমি দুপুর ২টার গাড়িতে ঢাকা ব্যাক করবো।
প্রিয়ন্তি চা এবং নাস্তা হাতে ড্রয়িং রুম এ প্রবেশ করতেই মিসেস মেহেরুন্নেসা প্রিয়ন্তি কে বলল “অবন্তি”কে ফোন করে আসার জন্য।
প্রিয়ন্তিঃ কেন?
মেহেরুন্নেসাঃ প্লিজ কথা বাড়িয়ো না। যা বলছি তা করো, বলো আমি তাকে দেখতে চেয়েছি এবং আমার শরীর খারাপ। আর আবিদ এর কথা ভূলেও উচ্চারন করবে না।
মিসেস মেহেরুন্নেসা। ছোট্ট সংসার তার, অবন্তি ও প্রিয়ন্তি। প্রিয়ন্তি জন্ম নেবার বছরেই প্রিয়ন্তির বাবা এক রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। অবন্তি তখন কলেজে ভর্তি হয়েছে।
প্রিয়ন্তির বাবা মারা যাবার পর মিসেস নেসা সংসার এ একটু ও সময় দিতে পারেন নি, কারন প্রিয়ন্তির বাবা’র ব্যাবসা দেখতে হয়েছে তার। আর এই সুযোগে অবন্তি কিছুটা নষ্ট হয়ে যায় এবং আবিদ সেই নস্ট জীবনের ফলাফল.........
পার্ট-০৩ ( শেষ পর্ব )
আবিদ ড্রয়িংরুম এ বসে প্রিয়ন্তির সাথে কথা বলছিল। এমন সময় অবন্তি ঘরে ধুকে।
ঘরে ঢুকেই মিসেস নেসা’র রুমে পা বারাতে যাবে এমন সময় প্রিয়ন্তি ডাক দেয়... প্রিয়ন্তিঃ আপু, এই দিকে আসো তো ।
অবন্তিঃ এক্টু , মা’র কি অবস্থা, আগে মা’র সাথে দেখা করে আসি।
প্রিয়ন্তিঃ মা ঘুমাচ্ছে, তুমি পরে দেখা করো তো, আগে এখানে একটু আসো, দেখো ঢাকা থেকে আমার এক বান্ধবীর ভাগ্নে এসেছে। তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
আবিদঃ স্লামুয়ালাইকুম... আ...ন্টি
আবন্তিঃ ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছো বাবা...
অবন্তির কেনো যেনো মনে হছে এই ছেলেটা তার অনেক পরিচিত, কোথায় যেনো দেখেছে, তবুও চিনতে পারতাছে না, তার মনের ভিতর কেমন কেমন জানি করতাছে।।
এমন সময় মিসেস নেসা রুমে প্রবেশ করলেন.... অবন্তি ঊঠে গিয়ে মা’কে ধরলো
আবন্তিঃ তুমি উঠে এলে কেন? আমি তো তোমার রুমে ই যাচ্ছিলাম, প্রিয়ন্তি ডাক দেয়াতেই না আমি এখানে বসলাম...
মিসেস নেসাঃ না তুমি এখানেই বসো, আমার রুমে ভালো লাগছিলো না তাই....
অবন্তই বার বার ছেলেটির দিকে তাকাচ্ছে, কেনো যেনো ছেলেটিকে তার খুব আপন মনে হচ্ছে.... তার মনটা খুব খুত খুত করতেছে। হঠা’ত খেয়াল করলো ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে আর তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
অবন্তিঃ এই ছেলে তুমি কাদছো কেন?
আবিদ থতমত খেয়ে বলল
আবিদঃ কই নাতো, মনে হয় চোখে কিছু পড়েছে.....
অবন্তিঃ কই দেখি , দেখি.....
আবিদ নিজেকে সামলে নিয়ে একটু একটু কড়া ভাষায়, না না না , আমি ঠিক আছি, আপনাকে আর দোয়া দেখাতে হবে না...
অবন্তি অবাক হয়ে গেলো ছেলেটির ব্যাবহারে কিন্তু ছেলেটির ব্যাবহারে তার এতোটুকু রাগ হচ্ছে না, এটা ভেবে সে আরো অবাক হচ্ছে.......
এমন সময় প্রিয়ন্তি আবিদ কে বলে উঠলো...
প্রিয়ন্তিঃ আবিদ , তোমার বাসের সময় হয়ে গেছে, বাস মিস করলে তোমার কালকের ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে.....
আবিদঃ ও! হ্যা, আমার যাবার সময় হয়েছে ( ধরা ধরা গলায় কথাটি বলল )
আবিদ সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো কিন্তু অবন্তির কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি আবিদ ফিরে এসে অবন্তির হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল
আবিদঃ আমি যাবার পর এই খামটা খুলে দেখবেন, যাবার পর কিন্তু।
রাতের সময় হাতের সব কাজ শেষ করে অবন্তি রিলাক্স হয়ে খামটা খুললো,
প্রিয় নাবিলা রায়হান,
প্রথমেই মনে হয় আপনাকে একটা বড় রকমের ঢাক্কা দিলাম। আমার নাম আবিদ রায়হান।
মনে হয় আপনি আমাকে চিনে ফেলেছেন। আমি হোচ্ছি আপনার গল্পের সেই চরিত্র যাকে পনি নিজ হাতে আপনার গল্প থেকে মুছে ফেলেছেন।
আর আপনি হোচ্ছেন আমার গল্পের কুখ্যাত চরিত্র যে কিনা আমাকে তার আয়েশি জীবনের জন্য ত্যাগ করেছে।
ভালো থাকবেন
ইতি
আবিদ রায়হান
https://www.facebook.com/shishir.siam/posts/10153534532704792
[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/rj_sam/rj_sam-1469858370-3c16c40_xlarge.jpg
©somewhere in net ltd.