নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব-৩
মৃতের সংখ্যা সরকারিভাবে ৩০। আগুন শুরু হওয়ার পর রিয়েক্টর প্লান্টে থাকা কয়েকজন আর ফায়ার সার্ভিসের কিছু লোক যারা সাথেসাথে মারা গেছে কেবল তাদেরই ধরা হয়েছে।
বেসরকারি হিসেবে মৃত্যু কমপক্ষে ছয় লাখ। এই ছয় লাখ প্রত্যক্ষ মৃত্যু। মানে তেজস্ক্রিয়তায় কতজন ক্যান্সার বা অন্যরোগে মারা গেছে বা কতজন শিশু মৃত জন্ম নিয়েছে পরবর্তী বছরগুলোতে সেটার কোন হিসেব নেই। প্রিপেত নামক ছোট জায়গা ছাড়িয়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়েছিল অনেক অনেক দুর পর্যন্ত।
এক ফায়ার অফিসারের স্ত্রী তখন প্র্যাগন্যান্ট ছিল। কারো কথার পরোয়া না করে রেডিয়েশনে আক্রান্ত স্বামীর পাশেই ছিল মৃত্যুর সময়। অথচ মহিলাটাকে কোন রেডিয়েশন ছোঁয়নি। জন্ম দিয়েছিল মৃত বাচ্চার। ডাক্তাররা বলেন মহিলা স্বামীর পাশে থাকাকালীন যত রেডিয়েশন ইনহেইল করেছে তা পেটের বাচ্চা শুষে নিয়েছে তাই মা ঠিক আছে কিন্তু বাচ্চা মরে গেছে।
রেডিয়েশনে মানুষ মারা যায়, যেন মানুষটার ভেতরে কেউ এসিড ঢেলে দিয়েছে। ভেতর থেকে পোড়া শুরু হয়। দেহে ফোস্কা পড়ে, পরে সারাদেহ পুড়ে যায়।
স্বাভাবিক এলাকায় রেডিয়েশন লেভেল থাকে বড়জোর ০.০৫ মাইক্রোসিভেত। ২ পর্যন্ত মানুষের জন্য নিরাপদ। কিন্তু চেরোনোবিলে তখন ৩০০,০০০ মাইক্রোসিভেত হয়েছিল।
হেলিকপ্টার দিয়ে যারা বিভিন্নভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে তারাও মারা গেছে। মেঘ, আকাশ-বাতাস সব ছিল বিষাক্ত।
আমি আমার কাউন্টারে সর্বোচ্চ রিডিং পেয়েছি ৫২ মাইক্রোসিবেতস। একটা কুপের কাছে। আমার জন্য সেটা ক্ষতিকর নয় কারন আমি সেখানে কয়েক সেকেন্ড মাত্র ছিলাম। কিন্তু ব্যাপারটা এক্সাইটিং ছিল। কোন আওয়াজ নেই, গন্ধ নেই, রং নেই! অথচ মানুষের তৈরি ঘাতক বসবাস করছে ঠিকই যুগযুগ ধরে।
মানুষের জন্য পরিবেশের যা কিছু ক্ষতিকর তা শুষে নেয় গাছ। গাছ আমাদের নিরাপদ রাখে নিজেরা বিষ টেনে নিয়ে।
চেরনোবিলের সব গাছ পুড়ে গিয়েছিল। এখনো সামান্য কিছু জায়গার অনেক গাছ বিকলাঙ্গ হয়ে বাড়ছে। দেখলে মনে হয় কিছুক্ষণ আগে বুঝি এখানে আগুন লেগেছিল। এসব এলাকায় ট্যুরিস্টদের গাড়ি থেকে নামতে দেয়া হয়না। ছবি উঠিয়েছি গাড়ি থেকে।
আমার কাউন্টারে হাই রিডিং পেয়েছি বড়বড় গাছের গোড়ায় শিকড়ে। অথচ শরতের এইদিনে পাতাঝরার রঙিন রং মাখানো গাছগুলো দেখলে কিছুই আন্দাজ করা যায় না যে প্রতিটা গাছ প্রতিটা পাতা মানুষের সৃষ্ট কতটা বিষ বহন করে যাচ্ছে যুগেযুগে। নতুন অনেক গাছ জন্মাচ্ছে বিকলাঙ্গ হয়ে। দেখলে মনে হয়ে এইমাত্র বুঝি পুড়েছে, অথচ জন্মাচ্ছে এবং বড় হচ্ছে বিকলাঙ্গ হয়ে।
সীমাহীন কষ্ট পেয়েছি সেদিন এতকিছু দেখে একইসাথে প্রশান্তি আর ভক্তিতেও মাথা নত করেছি প্রকৃতির কাছে। আমি যেন মানুষগুলোর কষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম দিব্য চোখে। আকাশে বাতাসে যেন এখনও নিস্পাপ মানুষের কান্না, এই এলাকায় গিয়ে আমি কথা বলিনি, শুধু অনুভব করেছি ধ্বংসস্তুপ।
আবার বিস্মিত হয়েছি প্রকৃতির অদ্ভুত শক্তি দেখে। যেন মানুষের তৈরী ধ্বংসস্তুপে দাড়িয়ে গাছগুলো পৃথিবী নামক সন্তানকে মায়ের মত আগলে ধরে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে।
গাছগুলোর জন্য আমার কান্না পাচ্ছিল। মনে হয়েছে এত ক্ষতবিক্ষত হয়েও টিকে আছে, টিকে থেকে যেন মানুষের কাজের প্রায়শ্চিত্ত করছে। তেত্রিশ বছর ধরে প্রায়শ্চিত্ত করছে, আরও কত বছর করতে হয় কে জানে! কিন্তু কি অদ্ভুত অসাধারণ ক্ষমতায় টিকে যাচ্ছে!
চলবে...
#লেখাঃ Shanjida Roman
#Ukraine_Diary
#Chernobyl_Disaster
#Travel_Diary_Of_SR
২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১০
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: প্রকৃতি প্রকৃতই চায় প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে চায় কিন্তু মানুষ তা চায় না
পর্ব চার প্রকাশ করা হয়েছে
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: আহারে-----
২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১০
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: আপনার মন খারাপের জন্য দুক্ষিত
৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০৬
ঘুটুরি বলেছেন: লেখা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল, আপনি তো দেখে এসেছেন , আন্দাজ করতে পারছি কতখানি খারাপ লেগেছে।
২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪২
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: আপনার মন খারাপের জন্য দুক্ষিত
৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭
ফয়সাল রকি বলেছেন: অথচ ইচ্ছা হলেই আমরা গাছ কাটি!
২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৩
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: আমরাই দায়ী
৫| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:২৩
করুণাধারা বলেছেন: খুব ভালো লাগছে পড়তে। আমি আমার একটা লেখায় এর লিঙ্ক দিতে পারি? প্রতি পর্বে আগেরটার লিঙ্ক দিলে ভালো হয়।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৩৩
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: হমম
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মনটা বিষন্ন হয়ে যায়!!
আহা
সত্যিই প্রকৃতি যেন মাযের মতোই আগলে রাখছে দুষ্ট ছেলের অপকর্ম আড়াল করতে
নিজে বিষ শুষে নিয়ে বাঁচাতে চাইছে মানুষকে।
দারুন সিরিজে +++
অপেক্ষায় রইলাম