নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাসেল মেহেদী পারভেজ। পরিচিত হতে: web.facebook.com/rmparves

র ম পারভেজ

স্বপ্নময় পথিক। দেখা, শোনা ও জানাগুলিকে ব্লগের পাতায় রেখে যেতে চাই।

র ম পারভেজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওয়েস্টফালিয়া থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ: আধুনিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সূচনা

৩১ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ২:৩২


আমরা আজ যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বাস করি, তার শেকড় কোথায়? "সার্বভৌমত্ব", "সীমান্ত", "রাষ্ট্রের স্বার্থ" — এসব শব্দ আমাদের কাছে আজ স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু এগুলো চিরকাল এমন ছিল না। এর পেছনে রয়েছে শত শত বছরের যুদ্ধ, রাজনৈতিক চুক্তি, আর ক্ষমতার খেলা। এই পর্বে আমরা জানব কীভাবে ইউরোপের ইতিহাস ধীরে ধীরে একটি বৈশ্বিক কাঠামো তৈরি করেছে—যেখানে প্রতিটি রাষ্ট্র নিজেকে স্বতন্ত্র ভাবে পরিচালনার অধিকার পায়। কিন্তু সেই কাঠামোই আবার একদিন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল যুদ্ধের ময়দানে।

ওয়েস্টফালিয়া চুক্তি (১৬৪৮): রাষ্ট্র ব্যবস্থার সূচনা
এই গল্পের শুরু ১৬৪৮ সালে, ওয়েস্টফালিয়া চুক্তির মধ্য দিয়ে। তখন ইউরোপ জ্বলছিল ত্রিশ বছরের এক যুদ্ধে। এই চুক্তি যুদ্ধ থামাল, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল — এটি প্রথমবারের মতো বলল: প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব এলাকা, শাসন ব্যবস্থা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে।
এই ধারণাগুলোই আজকের আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভিত্তি:
• রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব
• ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা
• এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা
এই ধারণাগুলো সেই সময় একেবারেই নতুন ছিল।

সাম্রাজ্য গড়ে উঠল, কিন্তু সবাই সমান ছিল না
ওয়েস্টফালিয়ার পর ইউরোপ নিজেদের ভিতরে শান্তি আনতে পারলেও, তারা বাইরে শুরু করল সাম্রাজ্য বিস্তার। উনিশ শতকের আগেই ইউরোপীয় শক্তিগুলো সারা বিশ্বে উপনিবেশ গড়ে তোলে—আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা—সবখানে তারা ছড়িয়ে পড়ে।
এখানেই একটা বড় বৈপরীত্য দেখা যায়—ইউরোপে যেখানে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা হচ্ছিল, সেখানে অন্য জাতিগুলোর স্বাধীনতা ও অধিকার চাপা পড়ে গেল উপনিবেশবাদের নিচে।

শক্তির ভারসাম্য: যুদ্ধ এড়ানোর এক কৌশল
ইউরোপে যেন আর কোনো একক শক্তি আধিপত্য বিস্তার না করতে পারে, তারা চালু করল “Balance of Power” পদ্ধতি। রাষ্ট্রগুলো একে অপরের সঙ্গে জোট বাঁধল, আবার ভাঙল—সবটা একটা ভারসাম্য রাখার জন্য। নেপোলিয়নের যুদ্ধ (১৮০৩–১৮১৫) ইউরোপ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। পরে Congress of Vienna (১৮১৫) আয়োজন করে সবাই মিলে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা করল। এরপর তারা Concert of Europe নামের একটি অঘোষিত চুক্তির মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখল। কিছুটা সময়ের জন্য, এটা কার্যকরও হয়েছিল।

শিল্পবিপ্লব ও জাতীয়তাবাদের উত্থান
এদিকে, শিল্পবিপ্লব ইউরোপের চেহারাই বদলে দেয়। যুদ্ধের উপকরণ তৈরি হয় দ্রুত, সেনাবাহিনী হয়ে ওঠে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী। তার পাশাপাশি উঠে আসে আরেক শক্তি—জাতীয়তাবাদ। জার্মানি ও ইতালির মতো দেশগুলো একীভূত হয় এই জাতীয়তাবাদী ভাবনার মাধ্যমে। আবার একই জাতীয়তাবাদ অন্য সাম্রাজ্যগুলোকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়, যেমন অটোমান বা অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য।জাতীয়তাবাদ একদিকে মুক্তির বার্তা বয়ে আনলেও, অন্যদিকে সেটা প্রতিযোগিতা, ঘৃণা ও আগ্রাসনেরও জন্ম দেয়।

উপনিবেশ, জোট আর প্রতিযোগিতা: যুদ্ধ আসন্ন
বিশ শতকের শুরুতে, ইউরোপ ছিল এক ধরণের বারুদের স্তূপ। রাষ্ট্রগুলো উপনিবেশ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, সামরিক প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়, আর জোটগুলো কঠিন ব্লকে রূপ নেয়। একটার আক্রমণ মানেই সবাই জড়িয়ে পড়া। ১৯১৪ সালে অর্চডিউক ফার্দিনান্দ হত্যাকাণ্ড যেন এই বারুদের আগুন ধরিয়ে দেয়। কিন্তু আসল আগুন অনেক আগে থেকেই জ্বলছিল—শক্তির ভারসাম্য, জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ—সব মিলেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনে।

কেন এই ইতিহাস এখনও গুরুত্বপূর্ণ?
আজকের আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখনও দাঁড়িয়ে আছে সেই ওয়েস্টফালিয়ান কাঠামোর উপর, যেখানে রাষ্ট্র মানে সার্বভৌম ক্ষমতা। কিন্তু ইতিহাস দেখিয়েছে, এই কাঠামো অস্থায়ী—এবং সহজেই ভেঙে পড়তে পারে। ১৯০০ সালে যে ইউরোপ অনেকেই “স্থিতিশীল” ভাবছিল, সেটা মাত্র ১৪ বছরের মধ্যেই ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধের মুখে পড়েছিল। কোনো ব্যবস্থাই চিরকাল থাকে না।

শেষ কথা
ওয়েস্টফালিয়া থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ—এই সময়ে গঠিত হয়েছিল আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। কিন্তু সেটার ভিতরে ছিল বৈষম্য, প্রতিযোগিতা, আর অবিশ্বাস। এটি আমাদের শেখায়—নৈতিকতা আর বাস্তবতার মাঝে দ্বন্দ্ব সব সময় ছিল, এখনো আছে। আর সেটা বোঝা জরুরি, যদি আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটি আরও ন্যায্য ও টেকসই বিশ্ব চাই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:৩০

কামাল১৮ বলেছেন: নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠছে।

০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:১৯

র ম পারভেজ বলেছেন: সহমত পোষণ করছি।

২| ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:২০

র ম পারভেজ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.