নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবাহূত

রবাহূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রিকেটবোধন

২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:১০

অভিন্দন আমাদের ক্রিকেট বীরদের।

অনেক না পাওয়া, আনেক আক্ষেপের বিপরীতে এই বিজয় আমাদের আপ্লুত করে, থর থর করে কেঁপে ওঠার মত আবিষ্ট করে।ইন্ডিয়ার কাছে নতজানু রাষ্ট্রনীতি, চাক্ষুষ বঞ্চনা, বিরামহীন আগ্রাসনের এক মাত্র জবাব।বিরামহিন আনন্দের উতস!উগ্র জাতিওতাবাদ, ধর্মীও বিদ্বেষ সেও উপস্থিত দন্ত নখর বের করে।সব কিছুই যেন ওই বাইশ গজ শক্ত জমিনে ফায়সালা হবে।
“মালয়েশিয়ার কিলাত কিলাব মাঠ” “চৌধুরী জাফর উল্লাহ শারাফাত” “সেই মহাম্মাদ রফিক থেকে এই মহাম্মাদ মুস্তাফিজ” সব যেন আমদের মুক্ত হাওয়া নেয়ার জানালা।এই দম বন্ধ মধ্যবিত্ত জীবনে আটকে থাকা মানুষ গুলি একটু যেন বিনোদিত হয়, একটু আনন্দ ভাগ করে নেয়। গম্ভীর কর্তা সেদিন হয়তো একটু আগেই ফিরেন অফিস থেকে, উঠতি বেয়ারা ছোঁরাটাও সেদিন আড্ডা ফেলে বাসায় বসা চোখ “বকা বাক্সে” বন্দী!অফিসের জাঁদরেল বস পিওন কে ডেকে খোঁজ নেয় কত বলে কত রান!বাসা বাড়ীর টিভিগুলি অনর্থক নরদন কুর্দন থেকে রেহায় পায় ঘণ্টা কতকের জন্য, খনিক পরেই আবার “জিবন মানে জী বাংলা”। তাইতো ক্রিকেট এক ভালবাসার নাম, এক আবেগের নাম।

কিন্তু দিন শেষে এ একটি খেলা বই কিছু নয়। খেলা শেষে আমাদের আবার ছুটতেই হবে , রুটি রুজি করতেই হবে। বাসে বাদুড়ঝোলা, বাজারের লম্বা ফর্দ, গিন্নীর মুখ ঝামাটা, বাচ্চার স্কুল ফিস, গাড়ি বাসের অবিরাম হট্টগোল; এই তো, এর বেশি তো নয় একরত্তি, কাগজে দেখলাম হাতুরে সিংজি আটাত্তর লক্ষ টাকা বোনাস পাচ্ছেন, কত টাকায় “অত টাকা” হয় কে জানে আমাদের ভালোই লাগে যদিও আগুয়ান কনডাক্টরকে বাস ভাড়া গুনে দিতে কষ্ট হ্য়। এই তো নিত্তদিনের চালচিত্র।
আমরা যতদিন না এগুই, আমাদের ক্রিকেট টিম আর ওয়াসিফের শৃঙ্গে উঠার আনন্দ শুধুই সাময়িক পুলটিস। ক্ষত শুকাবে না আরো আরও বাড়বে, তোমার সাথে আমার তফাৎ যোজন যোজন বাড়বে। আমরা বাস করছি এক বিভাজনের সমাজে, অর্থ মুখ্য নয়, রাজনিতি, ধর্ম, লিঙ্গ –এর বিভাজন ক্রমশ প্রকটতর হচ্ছে। আমার এ খাপ ছাড়া লিখার উৎসও তাই। আমরা যেন বুজতে শিখি কার ব্যাক্তিগত অর্জন সমষ্টির নয়!

নিউজিল্যান্ড কে দিয়ে শুরু “বাংলাওয়াস”, কি টিভি, কি কাগজ, রাষ্ট্রের হর্তা কর্তা তাঁরাও জপছেন, সৌজন্য বোধের গুষ্টি কিলাই, পাকিস্তান বধ আহা যেন যুদ্ধ জেতার আনন্দ; আর জেই না চেংরা ছোঁড়ার ইউটিউবে বানানো মওকা ভিডিও এল, সে আর কহতব্য নহে, কে না কে কোথায় না কোথায় কি উৎপাটন করলো আর এদিকে আমাদের রাতের ঘুম হারাম। শুরু হোল শুম্ভ নিশুম্ভের লড়াই, এই ফাঁকে যার যা ফায়দা লুটে নিলো, বাঙ্গালী পুঙ্গবরা টের টীও পেলেন না। “ইন্ডিয়া” আমার আইডল “ইন্ডিয়ান আইডল”; তারা যা যা করবে আমাদের তাই তাই করতে হবে, তারা “ফিনালে” শব্দখানা জার্মানি ওয়ার্ল্ড কাপ থেকে লব্জ করেছে আমাদের আরজে ভিজে (শুখনা খটখটে) দেরও তাই বলতে হবে। তারা বলেন “সাংসদ” আমাকেও বলতে হবে তারা বলেন “পর্ষদ” আমাকেও বলতে হবে। তারা কাছা খুলে লাগলেন তো আমার কৌপীনও থাকবে না। তারা মাঠে স্ল্যাজিং করবেন গুঁতবেন, আমারা গ্যালারিতে খিস্তী খেঁউড় করব ফেইসবুকে নিজেদের বাপদাদাদের আসল পরিচয় প্রকাশ করবো, না হলে কিসের দেশপ্রেম কিসের পৌরুষ। তারই ধারাবাহিকতা, “সুধীর” কান্ডের জের আমদের সিরজ জেতার আনন্দটাই মাটি করে দিল। কেউ সময় নিয়ে জাবর কাটছে, কেউ “বেশ করেছে” বলে রগ ফুলিয়ে তর্ক করছে, আমরা প্রমান করার চেষ্টা করছি আসলে মার খায়তা, ওই যাকে বলে “ফিজিক্যালি অ্যাসল্ট” সেটা হয়নি, উত্তেজনায় খেলাধুলায় একটু এমন হতেই পারে, রেলের কামরায় তো আর ধর্ষণ নয়। ভাবুনতো একটা বৈরি সময়ে, বৈরি বলয়ে একগাদা ছেলে পুলে আপনাকে আমাকে ঠ্যালা ধাক্কা দিচ্ছে, আকথা কুকথা কইছে কেমন লাগবে তখন, যাই হউক লাশ বানিয়ে তো কাঁটা তারে ঝুলায় নি। আমার পরিচিত মহল সবাই জানেন আমি ভারত বিদ্বেষী, এই বিদ্বেষ ভারতের রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি, এই বিদ্বেষ তাদের রাষ্ট্রনীতির প্রতি কোনও ব্যক্তি বিশেষের প্রতি তো নয়, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমকে অপছন্দ করি গুটি কয়েক খেলয়ারদের অ্যাটিচিউড প্রব্লেমের জন্য, দ্রাবিড়, টেন্ডুল্কার, সৌরভ, আজহার, জাদেজা, রবিন সিং কত্ত খেলয়ারকেই তো ভালো লাগে, কিন্তু “টিম ইন্ডিয়া” ... নো ওয়ে। তাই বলে টিভি বিজ্ঞাপনে বাঁশের ব্যাবহার আমি সাপোর্ট করব না।এখানে রুচির প্রশ্ন আছে, কালচারের প্রশ্ন আছে। আমার নিজেকে বড্ড ছোট মনে হয় আমি লজ্জিত হই।

আমরা তো হাভাতে নই, জেতার অভ্যাস আমাদের হয়ে গেছে, এই আস্ফালন তাই বালখিল্য মনে হয়।এ গুলো আমাদের কে আরও ছোটোই করে। খেলার ফাঁকে ধর্মীও বিষোদ্গার শুধু বিবমিষাই তৈরি করে আমার, আয়েশাদের পাশে অর্চনাদের আর থাকতে দিব না আমরা। মরুক সব! ফালানি মরুক, তিস্তা মরুক, পদ্মা শুকাক কি বা যায় আসে। আমরা বর্ষ বরণে ধর্ষকামী হব, মাউস পিষে রাজা উজির মারবো, নায়েক রাজ্জাক মার খেয়েছে তো কি হয়েছে, আমরা করিডোর দিচ্ছি বিনিমাগ্নায় তো কি হয়েছে, আমরা সিরিজ জিতেছি, আমরা বাঁশ দিয়েছি, আমরা হ্যাপির বাপের শ্রাদ্ধ করেছি (রুবেল তো উইকেট নেয় দু একটা এমন কাণ্ড করতেই পারে নাকি!), মারিয়া নুরের সাথে কেন মুস্তাফিজের ছবি অবদমিত বাসনার বিষ উগ্রে দিয়েছি ফেইসবুকে আমার চেয়ে কে আর ক্রিকেট ভালোবাসে! কে আর দেশকে ভালো বাসে। জয়তু বাঙ্গালী! জয়তু ক্রিকেট প্রেম! সাধে কি আর কবিগুরু লিখেছিলেন “ রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি”... সাধে কি আর খান আতা বলেছহিলেন “আবার তোরা মানুষ হ!”

ভাগ্যিস আমি বাংলাদেশী।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০০

ফরিদ আলম জুনিয়র বলেছেন: লেখক যেন আমার মনে ঘটে যাওয়া এই সমাজ কে নিয়ে রাগ,অনুরাগ,কষ্ঠ,সুখ,আনন্দ এর কথাগুলি তার গদ্যর ভাষায় রূপ দিলে।
ভালো লিখেছেন অনেক

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫১

রবাহূত বলেছেন: ধন্যবাদ ফরিদ আলম জুনিয়র ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.