নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১)
পড়ার টেবিলের পাশে হঠাৎ দেখি খানিক ঘূর্ণি মত! টুকরো কাগজ, ঝুল কি চুল মিলে একটা ঘূর্ণি মত! আমি খুব খেয়াল করিনা, ভাবলাম মাঝে মাঝে ইলেক্ট্রিক পাখার বাতাসে ঘরের কোনের দিকে এমন আগেও হতে দেখেছি। ঘূর্ণি ঝরের বনসাই মডেল। কিন্তু পাখা বন্ধ, হয়ত কোন চিপাচাপা দিয়ে বাতাস আসছে। আমি আবার কাজে মনযোগ দিলাম, রাতের মাঝেই রিপোর্টটা শেষ করতে হবে। কিন্তু কোথায় যেন একটু কিন্তু রয়ে গেল বুঝি মনে।
খাটো ট্রাউজারের নিচের দিকের খোলা জায়গায় একটু যেন বাতাস মত লাগলো। মশা বেড়ে গেছে খুব, শীত প্রায় শেষ, আমাদের পুরনো বাড়ী, তাই শীতটা খানিক আটকে থাকে, চুন সুরকির মোটা দেওয়ালে। বসন্তের বাতাস ছেড়ে দিয়েছে,বিকেলে ছাদে উঠলে আকাশ ভরা ঘুড়ি দেখা যায়। যদিও আগের চেয়ে অনেক কম। তবুও চৈত্র সংক্রান্তির পর থেকেই ঘুড়িরা উড়তে থাকে, এর বাড়ীর ওর বাড়ির ছাদ থেকে। প্রাচীন এ নগরে। গায়ের চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে টেবিল থেকে উঠে, রান্না ঘরের দিকে গেলাম, মা যেখানে কয়েল রাখে, আমার জানা আছে, একটা ধরাতেই হবে। কয়েলের গন্ধে আমার কষ্টই হয়, কিন্তু মশার চেয়ে এ অনেক ভালো! কিন্তু মনে হল ঘূর্ণিটা বুঝি ঘুরে ঘুরেই আসছে। কাজে আর মনযোগ দিতে পারছি না! দুশশালা! একটা মুভি দেখি। দরজাটা চেক করে একটা সিগারেট ধরাই, যদিও মা জানেন কিন্তু মা উঠে আসলে লজ্জা পাবো। ল্যাপটপটা বিছানায় নিয়ে চাদরখানা পায়ের উপর বিছিয়ে আধশোয়া হয়ে আয়েশ করে, সিগারেটে দম দিতে দিতে মুভি দেখতে থাকলাম! আহ দিস ইজ কল্ড লাইফ! ভাবতে না ভাবতেই ধুপ সাউন্ডে কাটাওউট টা গেলো, ইন্টারনেট টাও গেল, উঠে আর কিছু করতে মন চাইল না। সিগারেট খানা জানালা দিয়ে গায়েব করে চাদর টেনে ঘুমিয়ে গেলাম! কিন্তু কেন যেন একটা ডিস্কম্ফোর্ট রয়েই গেল, ঘুমের মাঝে বার বার মনে হচ্ছিল কে যেন আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখছিল।
সকালে যখন ঘুম ভাঙলো খানিকটা অবাক হলাম ঘরের আলো জ্বলছে দেখে, আমার মনে আছে স্পষ্ট, রাতের বেলায় ফিউজটা জ্বলবার শব্দটা আমি ঠিক পেয়েছিলাম, আর আমি ছাড়া এ বাসায় কেউই আর এসব সারাই ফারাই এর কাজ করবার মত নেই, থাকবে কোথা থেকে, আমি আর মা দুটি মাত্র প্রাণী আর মার ডান হাত মজনুর মা। মা’কে জিজ্ঞেস করলে মা ও অবাক হলেন। ভেবে নিলাম কোথাও কোন ভুল হয়েছে আমারই। আর ভাবাভাবির সময় কম, দেরী হয়ে যাচ্ছে, বেরুতে হবে। কিন্তু নিচে কলঘরে যাবার আগে একটা জিনিষ আরও অবাক করল, আমার ছেড়ে রাখা শার্টটি অতি অবশ্যই যা আমি দরজার পিছের হুড়কোতে ঝুলাই তা চেয়ারে, তাও সামনে থেকে লটকে আছে, দুই হাত চেয়ারের দুই হাতলের উপর দিয়ে ঝুলে আছে, আমি ভুলেও এ কাজ করবার লোক নই। অত ভাববার সময় নেই ছুটতে হবে, সেই বনানী। প্যারিদাস রোডের এই প্রাচীন বাড়ীর ছায়া ছেড়ে ছুটতে হবে, বাসে গাড়ীতে রিকশায় যে জট লেগে থাকে তা খুলতে খুলতে।
দিনমান কাজ, ক্লায়েন্ট, মিটিং, প্রিচিং প্রেজেন্টেশন। দম ফেলবার ফুরসৎ নেই, শুধু লাঞ্চ এর পর একটু সময় পাই, একটু ধোঁয়ায় দম দেবার, অফিসের খোলা টেরেসে আসি, আর জানি এই সময়টাতেই লুনাও আসবে, আমার কাছ থেকে ম্যাচটা ধার চাইবে খানিক অনভস্ত্য হাতে ওর সিগারেটটা ধরাবে, পনি টেইলটা হাত মুঠো করে সামনে আনবে একবার, আবার হয়ত সামনের কাটা চুল গুলি হাতটা ছড়িয়ে পিছে নিবে, চশমার ফ্রেমের ভিতর থেকে গভীর দৃষ্টিতে তাকবে, কিছু কথা কাজের ও কাজের, কিছুটা শব্দহীনতা, তারপর আবার। না-বলা কথা গুলো ওর চোখে ঠিক পড়ে নেই, কিন্তু সাহস হয় না, সে কথার উত্তর দিতে। লুনা আসলে কেমন মিষ্টি একটা ঘ্রান আসে। মেয়েলি শ্যাম্পু কি পারফিউমের, কিন্তু অন্য কেউ কাছে আসলে তো এমন কিছু ঘটে না। বুকটা ক্যামন ডিপ ডিপ করে। আমার বুক ভরে শ্বাস নিতে ইচ্ছে করে, ডুবে থাকতে ইচ্ছে করে সে ফেনিল ঘ্রানে, অতলান্তিক এক সবুজ ঘ্রানে। মনে হয় দু হাতে জড়িয়ে রাখি তার সবুজ উড়না খানি। নাক মুখ ঢেকে ডুবে যাই, অতলান্তিক এক সবুজে, কিংবা নীলে, কখন হালকা হলুদে, ফিকে কমলায়। আর ঘোরগ্রস্থ আমার মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মত, মুভিতে দেখা ফ্ল্যাশ ব্যাকের মত একটা দৃশ্য এল, আমার ঘর, আমার ছেড়ে রাখা লিনেনের খয়েরি শার্ট, চেয়ারে, কেউ গভীর আবেগে জড়িয়ে আছে, আমার মত ডুবে যাচ্ছে, খয়েরি গাঢ়, ফেনিল খয়েরি রঙ্গে। হঠাৎ আমার শরীরটা কেঁপে উঠে।
অফিস শেষে ফিরবার সময় খানিক গল্প হয় রোজ, গেইটের বাইরে কিংবা ওকে রিকশা পর্যন্ত তুলে দিতে দিতে, আজো তাই হচ্ছিল, তারপর রিকশায় উঠে হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ল এমন ভঙ্গীতে বলল, “ওহ হো! তোমার জন্য একটা বই কিনেছিলাম, দিতে মনে নেই।“ বলে ব্যাগ থেকে একটা র্যাপ করা ছোট্ট একটা প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে চলে গেল, আমার কিছু বলবার আগেই। আমি র্যাপটা খুলে দেখি পড়া একটা বই, নীললোহিতের “ভালোবাসা নাও, হারিয়ে যেও না”। খুব প্রিয় একটা বই, কিন্তু বুঝলাম বইটা নয়, নামটাই মুখ্য, ভিতরে সুন্দর হাতের লিখায় লেখা, ভালোবাসা নাও, ভালোবাসা নাও, ভালোবাসা নাও। লুনা স্মার্ট, ডাকা বুকো মেয়ে, এজেন্সির প্রমিজিং কপি রাইটার, ওর এই কথা ক’টি বলতে এত কিছু করতে হয়?! আসলে আবেগ খুব অদ্ভুত জিনিষ! একটা ভাবনা মাথায় দানা বাঁধতে যাচ্ছিল এর মাঝে এক কলিগ, পিছন থেকে কাঁধে ইয়া এক থাবা মেরে বলে “মাম্মা কি হচ্ছে?! ফুল দিও, চিঠি দিও! হা হা হা, এই যুগে?!” তার উৎকট হাসি শুনে আরও জনা দু’এক হাজির, সেলিব্রেশন করতেই হবে। কিছু ভালুক তাদের মারতেই হবে এত সুসংবাদ তারা নাকি কেউ কখন পায়নি, বহু যুগ আগে নাকি শিরি, ফরহাদ কে লিখেছিল এমন তারপর সব শুধু টেক্সট আর চ্যাট। আসল কথা আমার পয়সায় বারের অন্ধকারে, একটু হা হা হি হি করবে। গান করবে “ফুল দিও, কলি দিও...”
(২)
শুধু নির্নিমেষ দেখে যাওয়া। বড় সাধ হয়, চুল গুলোতে একটু হাত বুলিয়ে দেই। নিষ্পাপ শিশু ঘুমে ছোট্ট একটা চুম এঁকে দেই। চোখটা ছুঁয়ে দেই। এক অনন্ত তৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়ে থাকি। ঘুরে ঘুরে দেখি, ছেড়ে যাওয়া কাপড়ের ঘ্রান নেই অশেষ, পৌরষ, পারফিউম আর ধোঁয়াটে সিগারেট কড়া। চেয়ারে বসে আমার সারা গাঁয়ে ছড়িয়ে রাখি সে নীল, ফেনিল উচ্ছল নীল। স্বেদগন্ধ বাহু মূলের, কলারে চুলের, সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি আমার অস্তিত্বহীনতায়! আমার অনুপস্থিতিতে! কি বিষাদ, কি বিপুল বিষাদ আমার!! আমার ইচ্ছে হয় আদি মানবীর মত হয়ে যেতে, ভুল পথে নিয়ে যেতে। আমার ইচ্ছে হয় সরীসৃপ হয়ে যেতে, বিপুল বিশাল ময়াল সাপের মত, জড়িয়ে জড়িয়ে আমার অস্তিত্বহীনতায় বিলীন করে দিতে, কিংবা আমাকে তার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে, কোষে কোষে মিলিয়ে দিতে, দ্রবীভূত করে দিতে! নিজেকে সীসের মত গলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে, কামে, তাপে, অন্তহীন পাপে।
আমি ঘূর্ণি হয়ে তার পায়ে পায়ে চলি, কখন আঁধার করে সব, তার নিঃশ্বাস ছুঁয়ে থাকি। তার না থাকায় আমি আরও বেশী থাকি আমার না-থাকায়, তার ছেড়ে যাওয়া বিছানায় অলস গড়িয়ে যাই একলা একা। তার কল ঘরের ভিজা তাওয়াল নিংড়ে নিংড়ে পানি ঝরাই অসময়, বুড়ি মজনুর মা সে শব্দে ভয় পায়, ঘুরে দেখে যায় কল খোলা কিনা। কিংবা টান টান বিছানা এলোমেলো দেখে বুকে থুক দিয়ে, দৌড়ে পালায়, মাকে জিজ্ঞেস করে , বিড়াল টিড়াল ঢুকে ছিল কিনা। আমি তখন নিকষ কালো বিড়াল, কোমল, মখমল, কমনীয়, কার্নিশে বসে মিয়াঁও শব্দে আমার অস্তিত্ব জানাই, কালো লেজ খানা খানিক ঝুলিয়ে দেই। মজনুর মা চিৎকার করে বলতে থাকে “হুস বিলাই, হুস”! ফিকে সবুজ খড়খড়িওয়ালা জানালা, ধাপ ধুপ বন্ধ করে। আমি নিরবে খড়খড়ি গলে ঢুকে যাই ঘাড়ে শিরশির বাতাস হয়ে ছুঁয়ে যাই মজনুর মার ঘাড় গলা। মজনুর মা বুকে থুক দেয়। আল্লাহ্ রসুলের নাম পড়তে পড়তে ঘর ছেড়ে বের হয়ে যায়। ফের আমি একান্ত একা, আমার ভালো লাগে। আমার ভালো লাগে, আধখোলা বই এর পৃষ্ঠা এলো মেলো করে, আমার অস্তিত্ব জানাতে। জুতোর মোজা গুলো উল্টো পাল্টা করে দিতে। আর লাল পুরনো ডাইরীটার শেষ পাতায় যেখানে একটি চিঠি স্কচটেপ দিয়ে আটকে রাখা তার পিছের পাতায় লিখতে, ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি... কত অজুত নিরবুত বার লিখে চলেছি, একটার পর একটা লেখা, পৃষ্ঠা প্রায় কালো হয়ে এসেছে। খুব ভাবী পুরো পৃষ্ঠাটা কালো হবার আগেই যেন সে আমাকে বুঝে নেয়, আমার অশরীরী উপস্থিতি যেন ভয় না পায়, একবার শুধু বলুক, আমি চাই, “ভালবাসি”, তারপর আমি আমার না থাকা নিয়ে না হয় নাই হয়ে যাবো চির কুহকের দেশে। চির ধুপ ছায়ায় মিলিয়ে যাব, কুয়াশা-কুয়াশা সন্ধ্যায় সহসা!
খুব ছোট থেকেই কেন যে মনে হত এই ছেলেটি আমার, খুব আমার! মেজ ভাইয়ার সাথে বাসায় আসলেই, ফ্রক পরা আমি ইচ্ছে করে আশপাশ ঘুরঘুর করতাম, খুব চাইতাম একটু কথা বলি। একদিন আমার খুব জ্বর ছিল গায়ে, তবু আমি ঠিক ওর স্কুলে ফেরার সময় গেইটের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম, গতরাতে মামা এসেছিলেন একগাদা বিদেশী ক্যান্ডি, চকলেট দিয়ে গেছেন, আমি তার থেকেই ভালো কিছু নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম, ওকে দিব। ঠিক সময় দেখলাম গলির মাথায়, এক কাঁধে ব্যাগ কেমন হেঁটে আসছে, একটা কোমল মায়ার মত, আমার কেন যেন কান্না পায়, আমি ডাক দেই কাছে আসতেই হাতে ধড়িয়ে দেই চকলেট গুলো, আমার হাতের একটু স্পর্শেই বুঝে নেয় আমার গায়ে অনেক জ্বর। বলে “সেকিরে পাগলি তোর তো ওনেক জ্বর”! আমার কপাল স্পর্শ করল, ঠাণ্ডা একটা হাত, চির শীতল, তখন বুঝিনি আমার বুকের ভিতরটা পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। আমি ভিতরে ঢুকে গেইট আটকে দেই। বাইরে থেকে কিশোর কন্ঠের ভঙ্গুর আওয়াজে আমার নাম ধরে ডাকে, আমি গেইটে পিঠে ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি বিবস, অনড়, নিস্পন্ধ। তার চলে যাওয়ার শব্দ শুনি, মিলিয়ে যাওয়া পায়ের আওয়াজ শুনি। বুক ভেঙ্গে কান্না আসে, গেইট থেকে বাসার বারান্দা পর্যন্ত পথটুকু মনে হয় অনেক লম্বা, শেষই হচ্ছে না, আমি দৌড়তেই থাকি, হলুদ বড় বড় পিলার, ঝুকে থাকা জবা ফুল, শরতের ঝরা বাসি শিউলি, অবাক মেঘেদের লটকে থাকা সন্ধ্যা সব ছাড়িয়ে আমি দৌড়তে থাকি, এক সময় নিজেকে খুঁজে পাই, মায়ের বুকে, মাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকি, নিজেকে মনে হয় খুব পাকা একটা মেয়ে, খুব খারাপ আমি। মা ভয় পেয়ে যান, ‘কি হয়েছে সোনা” বলে আদর করতে করতে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দেন। আমি বুঝে নেই, এই আমার নিয়তি, আর সেদিনই সহসা আমি উষ্ণ লালে পরিপূর্ণ হই। সন্ধ্যার হঠাৎ নিরবতায় আমি বুঝে নেই, যা বোঝার। এর নামই বোধ হয় ভালোবাসা! এক বোধহীন বোধে আমি গভীর আক্রান্ত হই, সেই তখন; কোন এক শ্রাবণের মেঘলা বিকেল কি সন্ধ্যায়। আকাশে গাভিদের মত মেঘেরা আমার কান্না হয়ে ঝুলেছিল।
(৩)
ফিরতে ফিরতে বেশ রাতই হয়ে গেল আমার। সদর দরজা বন্ধ। পাশের সরু গলি দিয়ে ঢুকে উঠোনে ঢুকার দরজাটা খুলি, ওটা বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখি যেন আমি রাত বিরাতে ঢুকতে পারি। দরজার খুট খাট শব্দে মা তাঁর দোতলার জানালায় এসে দাঁড়ান, আমি না আসা পর্যন্ত মা জেগে থাকবেন, জানতাম, যদিও আগেই ফোনে জানিয়ে দিয়েছিলাম, দেরী হবে আর খেয়ে আসবো, তবু জেগে, শুধু দেখে নিশচিন্ত হবার জন্য। আমি নিচ থেকেই একটা থাম্বস আপ, দেখিয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেই। মা ঘুরে বিছানায় চলে গেলেন, হালকা আলোতেও মা’র গালে হাসির আঁক গুলো দেখতে পেলাম। মনে মনে মাকে লাভ ইউ বলে, এক তলায় তালা খুলে ঢুকে গেলাম।
পিছনে শূন্য উঠান, হাতের বামে পাকঘর, দরজা খুললে মা ব্যাটার খাবার ঘর, একপাশে বড় একটা খাট পাতা তারপর খাঁড়া প্যাঁচানো সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায়। ঘরটার এক ধারে, বড় আলমিরাতে বাবার যত বই, থরে থরে, থিয়েটার, নভেল, সায়েন্স, ফিলসফি এইসব। আজ মনটা খুব উড়ু উড়ু তাই একটা কবিতার বই খুঁজে পাশে নিজের ঘরে চলে গেলাম, সেটি যেমন আমার ঘর তেমনি আবার আমাদের বৈঠকখানাও, আজকাল অবশ্য লোকরা ড্রয়িং কিংবা লিভিং রুম বলে। আমরা এখনো বেশ একটা প্রাচীন সময়ে আটকে আছি এই পুরনো শহরে, তাই এখনো বৈঠক খানাই বলি। পোশাক ছেড়ে দিনের শেষ সিগারেটটা ধরাতে গেলে ম্যাচটা ধপ করে নিভে গেল, হঠাৎ মনে হল বুঝি কেউ ফু দিল, জানালাটা দেখলাম, নাহ ঠিকই তো আটকানো। আমার গাঁয়ে হঠাৎ কাঁটা দিয়ে উঠে।
দ্বিতীয় চেষ্টায় ধরালাম, উঠে জানালা খুলে দিলাম। দূরে থেকে কিছু বিষণ্ণ গান ভেসে আসছে, মনটা অকারনেই ভার ভার হয়ে উঠল। এমন সময় হঠাৎ লুনার কথা মনে হল, ব্যাগ থেকে বইটা বের করলাম, ভালো লাগছে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে, খুব ভালো লাগছে। পৃষ্ঠা উল্টে যে পাতাটায় ওর লেখা সে পাতাটা বের করি, লেখা গুলি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি প্রতিটা অক্ষর আঙুল ছুঁয়ে যাচ্ছি, বল পয়েন্টে লেখার ক্ষীণ রেখা গুলো, তাদের খুব অল্প গভীরতা শ্বেত শুভ্র পাতায় আমি খুব বুঝতে পারি, আমি চোখ বুজে লেখা গুলি আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়তে থাকি, নাহ অনুভব করতে পারি। লুনা নামটা এসছে লেখা গুলার নিচে। একটা ভালোলাগা, একটা মন ক্যামন করা ভালো লাগা গ্রাস করে, চোখ বুজেই নামটাতে ঠোঁট ছুঁয়াই, যেন ডুবে যাই, ডুবে যাই।
কিছু বুঝবার আগেই ঠাস করে বইটা হাত থেকে পরে গেল, যেন কিছু একটা ধাক্কা দিল ভারি কিছু, আমি চোখ মেলে দেখি মিশমিশে কালো একটা বিড়াল, অন্ধকারের মত, গভীর দুঃখের মত, জানালা গলে অর্ধেক শরীর গলিয়ে বাইরে থেকে শরীর মুচড়িয়ে আমায় দেখছে, তীব্র হলুদ চোখ, যেন কোন নিঃসঙ্গ লাইট হাউজের তীব্র সার্চ লাইট, সে কি হলুদ! এ বিড়াল পাড়ায় আগে দেখেছি বলে মনে পড়ে না! স্কটিশ ফোল্ড ব্রিড মনে হল, আগে পাড়ায় ছিল, সে বাড়ী তো এখন ফাঁকা শূন্য, স্মৃতির ঝুলে ঝাপসা হয়ে আছে। সে বিড়াল তো কবে “নেই” হয়ে গেছে। মিলিয়ে গেল আঁধারে মনে হল যেন পিক্সেলের মত, ডটস অ্যান্ড বিটস এর মত গুড়ো গুড়ো হয়ে ছড়িয়ে গেল আমি বিছানা ঘুড়ে জানালার কাছে যেতে যেতে দেখি কিছু নেই, কিচ্ছু নেই, সব ফাঁকা, খানিক আঁধার উঠোন, ঘোলাটে নোনা ধরা সীমানা দেওয়াল এ বাড়ীর, পাশের বাড়ীর দোতলার বন্ধ জানালা আর কোথাও কেউ নেই, কিচ্ছু নেই, কোন স্পন্দন যেন জীবনের নেই, একটা বিকট শূন্যতা চারিধারে। আমি জানালার কপাট বন্ধ করে দেই, শিরশির একটা দীর্ঘশ্বাসের মত বাতাস আমার গলা ঘাড় ছুঁয়ে যায়, একটা বাসি শিউলির গন্ধ যেন ঘরটা ভারী করে ফেলে। এই বসন্তে শিউলি! সব আমার ঘোলাটে লাগছে, গভীর একটা ঘুম আমাকে আচ্ছন্ন করে দিচ্ছে। একটা মিহি চাদর যেন আমার সারা গায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে! সুক্ষ প্রায় অস্তিত্বহীন এক অবশ করা, চারিধার আঁধার করা, বিভাতের বিষাদে, আমি ডুবে যাই, ডুবে যাই!
(৪)
এমন উথাল পাথাল জ্বর ছিল সে। সারা রাত মা নাকি পানি ঢেলে গেছেন। জানিনা জ্বরের ঘোরে কিছু বলেছিলাম কিনা, মেজ ভাইয়া ঠিক ওকে ধরে এনেছিল, আমার কাছে। আমি আর ভাইয়া দুজন পিঠাপিঠি ছিলাম আমি নাইনে আর ওদের এস,এস,সি দেবার সময় চলে এসছে তখন, আগে এই ক্লাসটাকে ওল্ডটেন বলত। সামান্য সাধারণ দু’চারটা কথা, কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখা, এতটুকুই। আমার মনে হচ্ছিল আমি বুঝি ভালো হয়ে যাচ্ছি, গরম কাঁথার ভিতর ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যাচ্ছে, আমার একটা ভালোলাগা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল খুব। যাবার সময় একটা “ফেলুদা” পড়তে দিয়ে গেল। আমি সেদিন আর স্কুল যাইনি, দোতলায় আমার ঘরের জানালার চওড়া চৌকাঠে বসে সারা দুপুর বইটা পড়ি, আর একটু পর পর নিচ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আচার নিয়ে আসি, মা ঘুমাচ্ছেন, কিন্তু জানি মা ঠিক টের পাচ্ছেন, আমার শরীরটা ভালো নেই, তাই কিছু বলছেন না!
বিকেলে কি যেন হয়, খুব একটা দুঃখ দুঃখ ভাব, কান্নার একটা দলা ভার হয়ে বুকে আটকে থাকে, কিছু না ভেবেই খাতার পাতা ছিঁড়ে লিখতে থাকি, “সিবালোভা” অর্থহীন ছেলে মানুষী, পাতা জুড়ে শুধু লিখতে থাকি, লিখতেই থাকি, একই কথা। তারপর আমার তালা দেয়া একটা গোপন ডাইরি আছে, সেখানে ভাঁজ করে রেখে দেই। মন খারাপ হলে খুলে খুলে পড়ি। খুব যে কিছু হয়েছিল সে সময়, তা নয়, শুধু একটা ভালোলাগা প্রচন্ড আর একটা একগুঁয়ে অধিকারবধের মত কিছু, যা প্রকাশ করবার খুব কোন উপায় জানা ছিল না, শুধু মনে হত, এই ছেলেটি আমার, খুব আমার।
এমনি এমনি কেটে যাচ্ছিল সব, মাঝে মাঝে ছুটির দিনে সবাই মিলে, ক্যারম কি লুডু খেলতাম, মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে মা’র সাথে ও বাসায় যেতাম আমার প্রিয় “কৃষ্ণকলি”, কালো স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালটিও যেত, মা’র খুব গা’ধরা ছিল, নামটাও মার দেয়া মিশমিশে কালো, তাই রবিঠাকুর এর গান না কবিতা থেকে যেন মা নামটা দিয়েছেন, খুব গম্ভীর আর মসৃণ, ও বাসায় গেলে দু’জনেই বিড়ালটাকে আদর করতাম, হলুদ চোখে দেখত ও আমাদের, বিড়ালের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে একটু হয়ত ওর আঙুল কি হাতের ছোঁয়া লাগত, সারাটা শরীর ক্যামন ঝিম ঝিম করে উঠত, কি নরম আর ভেজা ভেজা একটা হাত, লম্বা লম্বা আঙুল, আমার খুব ইচ্ছে করত হাতটা ধরে বসে থাকি, সারাদিন, সারাদিন। হাত দিয়ে কালো কালো এলোমেলো হাতের রোম গুলি শুইয়ে দেই, খুব ইচ্ছে করত, আঙুল গুলো মটকে মটকে ফুটিয়ে দেই ঠাস ঠুস । এমন কথা মনে আসলে লজ্জাও লাগত ভয়ও লাগত কিন্তু ভালো লাগাটা এমন ছিল, না ভেবে পারতাম না! ভাইয়া বিটলসের একটা গান শুনত তখন, “আ ওয়ানা হোল্ড ইউর হ্যান্ড, আ ওয়ানা হোল্ড ইউর হ্যান্ড”, গানের এ কথা গুলি মগজে ঢুকে গিয়েছিল, আমি গুন গুন করে একই কথা বলতাম, যেন আমার কথা গুলিই গানটায় বলছে।
আমার পড়াশুনো গোল্লায় যাচ্ছে, শুধু তাই না, শরীরটাও যেন দু’দিন পর পর খারাপ হতে থাকে, কিছু না তেমন কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই প্রচন্ড জ্বর আসে দু’একদিন থাকে, আবার সব ঠিক। টেস্ট ফেস্টে কিছু ধরা পরে না। কিন্তু আমার খুব কান্না পায়, মনে হয় আমি যেন হারিয়ে যাবো। বাবা, মা একটু বেশীই আদর করছেন আজকাল অসুখ বিসুখ লেগে থাকে বলে, বোধ হয়। আমার একটা বাজে সন্দেহ হয়, আমার বুঝি খারাপ কিছু হয়েছে, সবাই জানে আমাকে শুধু জানাচ্ছেন না আমার যদি মন খারাপ হয়। কে জানে প্রায় দিনই দেখি মা আমার প্রিয় খাবার রান্না করে, চালতার টক এখন রোজ হচ্ছে বাড়ীতে। মা’র কষ্ট হত বলে, অনেক সাধ্য সাধনা করে আগে রাজি করাতাম।
মাঝে মাঝে বোকাটাও আসে বই, গান এসব আলাপ হয়। একদিন ওর স্ট্যাম্প বুক নিয়ে এলো, সেদিন আমরা ছাদে উঠেছিলাম, আমার হাতে লাল চুড়ি ছিল অনেক গুলো। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলাম, ভাইয়াও ছিল শেষ পর্যন্ত মা’কে এসে ডেকে আমাদের নামাতে হল। কি যে গল্প হত, তিন জনে। এর ভিতরে আবার দুজনেরও গল্প হত নিরবে। কি সুন্দর যে দিন গুলি ছিল সেই কৈশোরে। আমার বোকা কৈশোরে।
“কৃষ্ণকলিটা” আজকাল আমার গায়ের সাথে লেপ্টে থাকে, আমি শুলে চুপ করে আমার গায়ে গা লাগিয়ে জুলজুলে হলুদ চোখে তাকিয়ে থাকে, ওর চোখের হলুদে একটা দুঃখ আমি বুঝি। আমি আরও বুঝি সময় খুব দুদ্দাড় করে চলে যাচ্ছে। সেদিন আবদার করে মা-বাবার সাথে ঘুমেয়েছি, মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি, মা আমার সারা শরীরে হাত বুলাচ্ছেন আর কেঁপে কেঁপে কান্না আটকাচ্ছেন, আমি তো অনেক বড় এখন, ঠিক বুঝতে পারি, আমি ঘুমের ভান করে আরও জড়িয়ে ধরি মাকে। আহ কি সুন্দর গন্ধ! আমার মা’র মত এমন আর কারুর না, ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যাই। কিন্তু বুঝি সময় খুব দুদ্দাড় ছুটছে।
(৫)
ঘুম ভাঙ্গে, এক বিচ্ছিরি বিস্বাদ ঘুম, সারা মাথা ভোঁতা যন্ত্রণা করছে, আমার শরীর বিছানায় আর পা দু’টো বিছানা থেকে বাইরে ঝুলছে, পিঠে ঘাড়ে মনে হচ্ছে যেন বিশাল ভারী কোন বোঝা চেপে আছে। শরীরটা টেনে টেনে নিয়ে যাই। ঘড়িতে দেখি, অনেক বেলা। কি ব্যাপার মা ডাকে নি কেন? দরজা খুলে দেখি সব শুন শান, অন্ধকার প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় মা’র ঘরে যেয়ে দেখি, মা, মজনুর মা দুজনেই ঘুম, গভীর ঘুম। আমি ডেকে তুলি ওদের। সবাই অবাক। মজনুর মা বিলাপ জুড়ে দেয় “মাথা বিষে মইরা যাইতাসি গো আম্মা ! চুরে মনে হয় সব নিসে গা গো, আমার যে পাতলা ঘুম, পিঁপড়া হাঁটলেও টের পাই, চুর বেডায় মনে হয়, বান মারসে, মাথা বিষে মইরা যাইতাসি গো আম্মা”! নাহ সব ঠিক ঠাক! কোন কিছু খোয়া যায়নি, জানালার গরাদ কি কোন দরজার ছিটকিনি কোন কিছুই ভাঙ্গা নয়।
অবশেষে আমাদের দিন শুরু হয়। বসকে ফোন করে জানিয়ে দেই, শরীর খারাপ, আসতে পারছি না। দু’চারটা কথা অবশ্য উনি শুনালেন। “ওয়ার্কিং ডে-তে ফুরতি কর, হ্যাং ওভার কাটে নাই মিয়া সেটা বল, সব খবরই পাই, কি হচ্ছে, না হচ্ছে!” আমি আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি “রাখছি বাই” বলে ফোন ছাড়ি।
আমাদের নাস্তা সারতে সারতে এগারোটা বেজে যায়, কড়া করে একটা চা বানিয়ে নিজের ঘরে আসি, জানলা টানালা খুলে ঘরটা আলো করি। সিগারেট টা, জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ধরাই, চায়ে চুমুক দিতে দিতে, টেবিলে আসি, লুনার বইটা হাতে নিতে ইচ্ছে করে। চেয়ারটা টেনে বসি। ডান হাতে সিগারেট আর চায়ের কাপ দুইই ধরে ছোট্ট বইটা খুলে হাতে নিয়ে ওপরে তুলি, অবাক হয়ে দেখি বইয়ের ভিতর থেকে কি যেন সরু সরু বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে, আমি আঁতকে উঠি, কাপের চা ছলকে পড়ে।
আমি ভয় আর অবাক দৃষ্টিতে দেখি, কে যেন বই এর প্রতিটিপাতা কুঁচি কুঁচি করে রেখেছে। যেন ধারালো কোন ছুঁড়ি কি তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে ফালি ফালি করে রেখে গেছে। কারো যেন গভীর ক্রোধ, ঈর্ষা, বই টার উপর ঝেড়েছে। আমার হাত পা কাঁপতে থাকে, আমার হাতে ধরা বই এর শক্ত কভারটা ছাড়া প্রতিটি পাতা ঝুর ঝুর করে ঝরে গেল, লুনার “ভালোবাসা নাও, ভালোবাসা নাও, ভালোবাসা নাও” এতটুকুও আর নেই। আমি থরো-থরো হাতে, বিস্ফোরিত চোখে দেখি, শেষ মলাটের ভিতরে গায়ে লেখা , অনেক শক্তি দিয়ে কলম দাবিয়ে নৃশংস ভাবে লেখা বড় বড় করে একটা শব্দ “সিবালোভা”, আমার খুব চেনা এ লেখা, গভীর বিষাদময় অতীত থেকে যেন উঠে এসেছে, একটা বদ্ধ কুঠুরির আটকে থাকা বাতাসের মত। আমার গোপন ডাইরিতে স্কচটেপ দিয়ে একটা খাতার পাতা আটকে রেখেছি, সে পাতাজুড়ে শুধু লিখা, “সিবালোভা”, সেই কোন বোকা বোকা কৈশোরের ভালোলাগা। আমি বিবস মথের মত পরে থাকি। হঠাৎ মিয়াঁও শব্দে ফিরে চাই। মিশমিশে কালো একটা স্কটিশ ফোল্ড বিড়াল, ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে আমার কোলে এসে বসে, ঘাড় ঘুড়িয়ে আমায় দেখা, গভীর হলুদ চোখে, যেন নিঃসঙ্গ কোন বাতি ঘরের সার্চ লাইট। আমি চুপ বসে থাকি। একটা বাসি শিউলির গন্ধ বাতাসে টের পাই খুব! আমার কোথাও যাবার নেই আর!
০৬/০৩/১৮
০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:২৫
রবাহূত বলেছেন: মন্তব্যটি কিছুই বুঝলাম না! বিশাল ( বোরিং) লিখা? কাট ছাট (পড়বার আনন্দ না থাকায়?) এক মিনিটে শেষ ( উতকন্ঠা দ্রুত নিয়ে গেল? খুবই অস্বচ্ছ মন্তব্যটি! ভালো বললেন না খারাপ বুঝলাম না!
২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:২১
অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: প্রথম কয়েক লাইন পড়লাম তাতে লেখার ধরণ দেখে মনে হয়েছে লেখাটি চমৎকার হয়েছে কিন্তু এতো বড় লেখা সময় নিয়ে পড়তে পারলাম না। দুঃখিত!
০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯
রবাহূত বলেছেন: হা হা হা! ধন্যবাদ সত্যি কথা বলবার জন্য! পরে সময় পেলে, পড়েন!
৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:২৮
ইরিবাসের রাত বলেছেন: বিশাল লেখা। অভিযোগ নয়, কমপ্লিমেন্ট কিন্তু।
কারণ এই লেখাটা এর চেয়ে ছোট হলে মানাত না। প্রথম অধ্যায়ে বেশ খানিকটে রহস্যের আবেশ পাচ্ছিলাম, কিন্তু দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে অদ্ভুত এক ঘোরে পড়ে গেলাম, যেমন ঘোরে জয়েসের বা বর্হেসের লেখা পড়তে গিয়ে হয়। তারপর ঘোরেই পুরোটা এগিয়ে গেল।
অদ্ভুত সুন্দর লিখেছেন ভাই, একদম অন্যরকম, একটা স্যুরিয়াল দ্যুতিতে ভরপুর, চরিত্র দের সাথে আত্মীয়তাকরণে একেবারেই আটকায় নি। তবে সবচেয়ে ভাল্লেগেছে সমাপ্তিটা। গল্পের একদম কাটছাট'হয়ে গেল" টাইপ সমাপ্তি একদম পছন্দ না, 'আমার কোথাও যাওয়ার নেই আর'- পুরো গল্পেরই একদম নিখুঁত গন্তব্যপথ।
শুভকামনা নয় শুধু, শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন। আরো এমন লেখা চাই, এমন পরিপূর্ণ অন্যরকম আবেশের গল্প চাই।
০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪২
রবাহূত বলেছেন: ডিয়ার ইরিবাসের রাত, আপনার মন্তব্য পরে, খুব আনন্দ লাগলো, নিজের লেখার ভালো কথার জন্যই শুধু না, বড় লেখা পড়ে মন্তব্য করবার জন্য। ইউ মেইড মাই ডে!
৪| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৫২
শায়মা বলেছেন: সিবালোভা!
মন দিয়েই পড়লাম ভাইয়া!
০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫১
রবাহূত বলেছেন: থ্যাঙ্ক ইউ প্রিয় শায়মা! আচ্ছা আপনি কি আমার বইটা পেয়েছেন? আপনি কিন্তু প্রথম বই এর কথা বলেছিলেন, মনে পড়ে?
৫| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫৩
লিন আহমেদ বলেছেন: WoW!! very nice & interesting. Read it couple of times already. the sequence are very dramatic.
Speechless for a moment.
Keep up your great writing.
০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০৬
রবাহূত বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
৬| ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭
শিখা রহমান বলেছেন: অনেকদিন পরে এখানে লেখা দিলে। গল্পটা আগেই পড়েছি। আবারো পড়লাম। গল্পের প্লট সুন্দর। কিন্তু তোমার লেখা যখনই পড়ি ভাষার যাদুতে আটকে যাই। কিছু কিছু শব্দ বিন্যাস, বর্ণনা অনেকদিন মাথায় ঘুরতে থাকে।
শুভকামনা যাদুর শহরের যাদুকর।
০৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:২৮
রবাহূত বলেছেন: কি যে বলেন আপা! তবে আপনার মত কেউ যদি আমার লেখার ভালো কিছু বলে খুব ভালো লাগে। খুব ভালো থাকেন প্রিয় আপা!
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বিশাল লেখাটা কাটছাট করে এক মিনিটে শেষ করলাম।