নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“নারী দিবস” পালনেই নারি মুক্তি নেই! আর যতদিন না নারীর যথার্থ মুক্তি হচ্ছে ততদিন এই “নারী দিবস” খুব অর্থবহ কিছু নয়!
বেশ আগে যৌনকর্মীদের শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি এনজিওর জন্য কিছু মেটেরিয়াল ডিজাইন করতে হয়েছিল, তখন দৌলদিয়ার রেড লাইট এলাকায় আমাকে যেতে হয়েছিলো একদিনের জন্য, সেই এনজিওর লোকেদের সাথে। সেখানে আমি প্রথম দেখলাম নারীরা নিঃসংকোচে চলছেন আমাদের দেশে, রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন, বেঞ্চিতে বসে চা খাচ্ছেন। আমরা যেমন ভাবি তেমন, ছেলেদের মত চলাফেরা করছেন, ইউরোপ আর আমেরিকার শহর গুলোতে আমি এমনই দেখেছি। কোন ভয় নেই, শঙ্কা নেই, নিজের খরচ নিজেই করছেন, পকেট বা পার্স থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন। সে অভিজ্ঞতা থেকে আমার একটা ধারণা তৈরি হয়, আমার মনে হয় নারী মুক্তির দুটি শর্ত,
১। নারী যেন তাঁর শরীর বা নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত না হয়।
২। তাঁর অর্জিত আয়ের পুরো অধিকার যেন তাঁরই থাকে মানে টাকাটা যেন নিজের মত করে খরচ করতে পারেন। নিজে আয় না করলেও, সংসারের টাকা যেন প্রয়োজনে কোন জবাবদিহিতা ছাড়া ব্যয় করতে পারেন।
আমি যাদের দেখেছিলাম সেখানে তাঁরা এই দুটি সমস্যা থেকেই মুক্ত। হাজারো সমস্যা সেখানে আছে, সে আলোচনা এখানে করছি না। কিন্তু আমি তাঁদের দেখেছি অনেক স্বাধীন মানুষ হিসাবে, যে স্বাধীনতা বেগম রোকেয়া থেকে শুরু করে আজকের মালালা খুঁজছেন। সে স্বাধীনতার দুটি পরম শর্ত এ দুটি! এর বাইরে যেসব রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ইত্যাদি নারী-পুরুষের সবার সমান অধিকার রয়েছে তাতে।
বাসে ট্রেনে ভীরে এ শহর কিংবা এদেশে মেয়েদের কে হাজারো ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ বা হয়রানি, কুৎসিত বাক্য বা শব্দ এগুলোর হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে। নিজের শরীর আর “আমি নারী” এই চিন্তাই যখন তাকে করতে হবে না তখনই মুক্তি পাবে নারী। এই মুক্তি ঠিক তাসলিমা নাসরিন যে মুক্তি চেয়েছেন তা নয়। নারী অবয়ব নিয়ে তাকে যেন চিন্তা করতে না হয়। একজন পুরুষ যেমন নিশ্চিন্তে চলতে পারে, বাসে, ট্রেনে চড়তে পারে একজন নারীও যেন তাই করতে পারে। এখন কিভাবে এ পরিবেশ তৈরি হবে সেটি বিশাল জিজ্ঞাসা বা বিরাট কর্মযজ্ঞ, কিন্তু শুরু তো করতেই হবে। শুধু নারী দিবসে রেস্তোরায় খেলাম, কেক কাটলাম বউকে, মাকে , বোন কে গিফট দিলাম এটা নারী দিবসের উদ্দেশ্য হতে পারে না! নারীর সম্পূর্ণ সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে কি ঘরে কি বাইরে। ব্যক্তি রাষ্ট্র সবাইকে কাজ করতে হবে।
নারীকে মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে বাধ্য করতে হবে “মেয়ে-ছেলে” নয়! কি পোশাক পড়বেন সেটি বড় নয়, যে পোশাকই পরুক আমরা যেন তাকে একজন “মানুষ” বলেই চিন্তা করি শুধু মাত্র নারী নয়। তবে জানি এ এতো সোজা নয়! আঁটকে যাওয়া বয়ামের মুখ খোলার মাঝেও আমরা পৌরুষ খুঁজে বের করে ফেলি, সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন তবে অসম্ভব নয়!
আমি অনেক চাকুরীজীবী মেয়েদের দেখেছি যাদের মাইনার পুরো টাকা বাবা বা স্বামীর কাছে তুলে দিতে বাধ্য, কিংবা নিজের ইচ্ছেমত খরচ করলেও জবাবদিহি করতে করতে জের বার হবার যোগার! এর উল্টো অবশ্যই আছে, আমরা জানি। কিন্তু বাস্তবতা হল এখনো মেয়েদের কাছে তাঁদের উপার্জিত আয়ের পুরো টাকা খুশী মত ব্যয় করবার স্বাধীনতা নেই। ঢাকা শহরে ব্যাংক, টেলকো বা এড ফার্ম বা অন্যান্য জায়গায় যে সব নারীরা কাজ করছেন তাঁদের সংখ্যা আমার মনে হয় না পুরো কর্মজীবী নারীর সংখ্যার তুলনায় খুব তাৎপর্যপূর্ণ কোন সংখ্যা হবে।
আর হাউসমেকারদের কথা তো কহতব্য নয়। খুব কম স্বামী নিজের টাকাকে পুরো সংসারের বা দুজনের টাকা হিসাবে চিন্তা করেন। খুব উদার স্বামীরা আবার হাত খরচ দেন, যেন স্ত্রীর পারিশ্রমিক দিচ্ছেন। যেখানে একজন উপার্জন করছেন সেখানে সেই আয়ের উপর দুজনের অধিকারই সমান ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, সেটা পুরুষ বা নারী যে কোন ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়া উচিৎ। হাত খরচ যদি মেয়েটি নেয় তাহলে ছেলেটিকেও গুনে গুনে তাঁর হাত খরচ নিতে হবে, বাকিটাকা সংসারের হবে, আমার মোটা মাথার হিসাব এটাই! টাকাটা ছেলেটার একার নয় যে সে আপার হ্যান্ড হয়ে মেয়েটিকে মাসকাবারি হাত খরচা দিয়ে মহান সাজবে।
একজন নারী তাঁর বরের জন্মদিনে একটা গিফট কিনতে গেলেও বরের কাছে হাত পাততে হয়, অনুমতি নিতে হয় তারপর কিনতে হয় সে উপহার। এ তো হতে পারে না। সময় পাল্টে গেছে, অনেক ভাবেই আমরা এর সমাধান করতে পারি।
আশ্চর্য হলেও সত্যি প্রবাদের মত একটা কথা চালু আছে, জানি না পাঠক জানেন কিনা, অনেকেই বলেন, “ছেলেরা আয় করলে গোটা সংসার চলে, আর মেয়েরা আয় করলে তাঁদের লিপস্টিক আর ড্রেসের পিছেই নাকি ব্যয় হয়”। কি ভয়ংকর অবমাননাকর চিন্তা!
আমার স্ত্রী যখন চাকরী করতেন আমরা একটা ড্রয়ারেই সব টাকা রাখতাম, দুজনেই খরচ করতাম, ভালো মন্দ যাই হউক এসব নিয়ে আমরা কখনই চিন্তা করি নাই। আমার কাছে সংসার একটা টিম ওয়ার্ক! কে আয় করছে তা মুখ্য নয় একদমই! আয় যারেই হউক নিঃসংকোচে যেন নারী সে টাকা খরচ করতে পারেন। এখানে খরচ মানে খরছই, উড়ানো নয়, এখনো এই দেশের ষাট থেকে সত্তর ভাগ মানুষকে হিসেব করেই চলতে হয়! এর মাঝেই বন্ধুর সাথে আড্ডা, মায়ের হঠাৎ প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো, বা নিজের শখের কোন জিনিষ (বিলাস পণ্য বিবেচিত নয়), বা স্কুল ফেরত বাচ্চার হঠাৎ বার্গার খেতে চাওয়ার বায়না যেন একজন নারী পূর্ণ করতে পারেন এইটুকু অর্থ নৈতিক স্বাধীনতা তাঁর চাই, এটা তাঁর অধিকার!
এ দুটি শর্ত পূরণ করতে পারলেই “নারী দিবস” সত্যিকার অর্থেই অর্থবহ কিছ হবে! এ ছাড়া আর দশটা দিবসের মত কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারিতে হিন্দি গান ছেড়ে পার্টি করবার মতই কিছু হবে!
জগতের সকল নারী তাঁর সম্মান নিয়ে, সমমর্যাদা নিয়ে সমাজে অধিষ্ঠিত হউক!
২| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:০৬
আহমেদ জী এস বলেছেন: রবাহূত,
সুন্দর লেখা হয়েছে।
যে দু'টো শর্তের কথা বললেন মনে হয় সে দু'টিই নারীর আসল মুক্তি, মানসিক মুক্তি! এই মুক্তিটুকু না পেলে নারী অরক্ষিতই থেকে যাবেন। সমাজের কল্যানেই নারীর জন্যে ঐ সুযোগ অবারিত করতে হবে যাতে একজন নারী সমাজের মূলস্রোতের সাথে মিশে গিয়ে নিজের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে পরিবারে নিজের যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন, নিজের মনন-মেধা মিশিয়ে সংসারে নির্ভীক এক যোদ্ধা হয়ে উঠতে পারেন, সমাজে সুস্থ্যতার-শালীনতার ছবি এঁকে যেতে পারেন, রাষ্ট্রের একজন পরিশীলিত নাগরিক হয়ে উঠতে পারেন, কর্ম দক্ষতায় অসংখ্য কর্মীর হাতের সাথে নিজের হাত মেলাতে পারেন...................
৩| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: কোমল মেয়েটি ঘাড় টানটান করে ঘুরে দাঁড়ালেই পাঁঠার মতো ছোঁক-ছোঁক-করা পুরুষগুলি ভ্যাবাচেকা মেষদলে পরিণত হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ ভোর ৪:২৬
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: