নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবাহূত

রবাহূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেউ নেই সেখানে

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৪:০৮



(১)
টিয়ানা প্রথম অফিস করতে এসেই একটু অবাক হয়ে গেল। একটু হকচকিয়েই গেল বলা যায়। বনানীর এই বাইশ তলা বিল্ডিং এর লবি, কন্সিয়ার্জ, লিফট, লিফট লবি, সব এমন ঝাঁ চকচকে আর ওয়েল মেইন্টেইন্ড হবে তা তার কল্পনাতেও ছিল না।

ষোল তলায় তার অফিস, নিঃশব্দ লিফট দিয়ে উঠে আসে। প্রশস্ত করিডোরের দুই পাশে সব অফিস সুইট গুলো। নাম্বার দেখে দেখে এগিয়ে গেল। ওয়ান সিক্স জিরো এইট এর দরজার সামনে এসে থামলো। তার বস নাভেদ ভাই তাকে ঠিক দশটায় আসতে বলেছিলেন, ও দুই মিনিট আগেই এসে গেছে, কলিং বেল দিবে কি দিবেনা ভাবছে যখন ঠিক এমন সময় দরজা খুলে দিলেন নাভেদ ভাই, টিয়ানা আবার একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল! কি বলবে , সালাম দিবে না গুড মর্নিং বলবে ভাবতে ভাবতে, স্মার্টলি নাভেদ ভাইই বলে উঠলেন “গুড মর্নিং এন্ড ওয়েল কাম টু দ্য হেল”!

“গুড মর্নিং স্যার”! একটু ধাতস্ত হবার চেষ্টা, এর মাঝে নাভেদ ভাই এর হা হা হাসি! আবার ফিউজ বেচারা টিয়ানা! “না, আমাকে স্যার ডাকতে হবে না, ভাইয়াই ডেকো, সারা জীবন যা ডেকে এসছো, গত রাতেও টফির সাথে কথা হয়েছে, এখানে কাজ শুরু কর তারপর ইনশাল্লাহ, ভালো কোথাও ঢুকিয়ে দিব, লেটস গেট স্টার্ট”।

টফি টিয়ানার বড় ভাই, হিউস্টন থেকে, নাভেদ ভাই আর টফি ভাইয়া, ছোট বেলার বন্ধু, সেইন্ট গ্রেগোরি, নটর ডেম আর বুয়েট এক সাথে কাটিয়েছেন। তারপর নাভেদ ভাই চলে যান ইউরোপ আর টফি ভাইয়া ইউ এস, যা হয় ট্যালেন্টেড লোকেদের। ভাইয়া ইউ এস স্যাটেল্ড করলেও নাভেদ ভাই দেশে এসে বেশ কয়েকটা বড় বড় মাল্টি ন্যাশানাল, ন্যাশানালের খোল নালচে পালটে, এখন নিজেই এই কন্সাল্টিং ফার্মটি দিয়েছেন। টিয়ানা ঠিক মত জানেও না এই অফিসের কাজ কি, তাকে কি করতে হবে। ওর গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হতেই ওর ভাইয়া ওকে নাভদের সাথে যোগাযোগ করতে বলে। আর এভাবেই এখানে জয়েন করা। চেনা শোনা মানুষ, প্যাকেজ, ফ্যাসিলিটিজ মোর দ্যান এক্সপেক্টেশন, ও আর ঘাটায়নি, নাভেদ ভাই স্মার্ট লোক নিশ্চয়ই বুঝে শুনেই ওকে নিয়েছেন অফিসে।

অফিসে ঢুকেই ওর মনটা খুশি খুশি হয়ে গেল। “ইশ কি সুন্দর অফিস”! নিজের অজান্তেই বলে ফেলল! “থ্যাঙ্ক ইউ” নাভেদ ভাই এর উওর। “আসো অফিস ঘুরে, তোমাকে তোমার ডেস্ক দেখিয়ে দেই”। আসলে ডেস্ক দেখানোর কিছু নাই, খুব বড় কোন অফিস নয়, কিন্তু স্মার্ট আর কোজি। দরজা খুলে ঢুকতেই অফিস শুরু, একটা বড় হল ঘরের মত, ঠিক দরজার বরাবর একটা ইনফরমেশন ডেস্ক ব্যাক ওয়ালটা স্মুদ গ্রে কালার এর মাঝে একটা এবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং, ছাদের কোথাও থেকে হলদে আলো পড়ছে ছবিতে, ডান দিকে একসেট সোফা এক দেয়ালে আর আরেক দেয়ালে শেলফ ভর্তি বই, লো হাইট কফি টেবল আর ছিম ছাম ল্যাম্প শেড দেখে মনে হয় না কোন অফিস এর অংশ এটা। আর এর ঠিক উলটো দিকে ওরগানিক এরেঞ্জমেন্টে কয়েক জনের বসবার জায়গা, আর নিচু নিচু স্মুদ রিভ্লভিং চেয়ার, সব সাদা শুধু ডেস্কের চিকন পা গুলি গ্রে, আর চেয়ার এর কুশন গুলি গ্রে, কোথাও এতটুকু বাড়াবাড়ি নেই। আর ইনফোরমেশন ডেস্কের দুই পাশ দিয়েই যাওয়া যায় একটা ছোট্ট স্পেইস সেখানে থেকে কাঁচ ঘেরা একটা মিটিং রুম আর আরেক পাশে নাভেদ ভাই এর রুম।

নিজের ডেস্কে বসে ভাবলো ক্যামন অফিস, লোকজন কিচ্ছু নাই। তবে ওর ডেস্কটা ভালো লেগেছে। এন্ট্রি থেকে একটু আড়াল আছে এক সারি গাছের একটা স্ক্রিন মত। ওর ডেস্কের সোজা সোজি একটা কফি স্টেশন, ঝকঝকে কফি ম্যাশিন, ফ্রেশলি ব্রুড কফির এরোমা পুরো অফিস জুড়ে, বিদেশ টিদেশ গেলে বড় বড় শপিং মল গুলোতে ঢুকলেই এমন গন্ধ পেত, ভাবলো টিয়ানা, আর এই কফি কফি এরমাটা ওর খুব প্রিয়। ও রাবীন্দ্রিক চা প্রিয় কোমল বাঙালী মেয়ে না বরং হার্ড রক, কফি লাভার বাংলাদেশী। শুধু একটাই একটু বিরক্তিকর জিনিষ, ওর ডেস্ক থেকে টয়লেটের দরজাটা দেখা যায়। বিগ ডিল না! সুন্দর অফিস পেয়ে, মনটা ফুর ফুরে হয়ে যায়।


একটু পরে নাভেদ ভাই ওর ডেস্কে আসেন। এক গাদা জার্নাল রিপোর্ট আর ম্যাগাজিন নিয়ে। এগুলোর কি কি পড়তে হবে, পড়ে কি করেতে হবে বুঝিয়ে দেন আর ল্যাপটপ ট্যাপটপ চালু করে, সার্ভার এক্সেস দিয়ে ওকে ফুল সুইং অন করে গেলেন। আরো বললেন এটা দেশি অফিস না ডাকলেই পিয়ন বেয়ারা এসে চা-পানি দিবে না, নিজেকে উঠে সব করতে হবে, প্রিন্ট, ফটোকপি, সব নিজে করতে হবে, নিজের ডেস্ক নিজেকে টাইডি রাখতে হবে।


নাভেদ ভাই এর কথায় একটু একটু বুঝতে পারছে, নাভেদ ভাই ক্লাইমেট চেঞ্জ, সাস্টেইন্যাবলিটি, এনার্জি এসব নিয়ে কাজ করছেন। টিয়ানাকে এখন উনাকে এসিস্ট করতে হবে, প্রোপোজাল, প্রেজেন্টেশন এসব নিয়ে। আরো মাস তিনেক লাগবে লোকজন সবার জয়েন করতে করতে। ডোনার, ফান্ডিং এসব জড়িত তাই বিদেশী অফিসের মত ফুল কমপ্লাই অফিস করতে হয়েছে। অফিসটা নিতে হয়েছে যেখানে ফায়ার এস্কেইপ আর ফাইটিং দুইই ফাংশনাল, ঢাকার অন্য দম বন্ধ হয়ে মরবার ফাঁদ ওয়ালা বিল্ডিং হলে চলত না। আর অফিসে সব তাই সুন্দর করে সাইনেজ আর লেভেলিং করা যেন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ লোকেরাও এখানে এসে যে কোন কাজ করতে পারেন বা সার্ভিস পেতে পারেন।

সব বুঝিয়ে টুঝিয়ে নাভেদ ভাই বললেন “আমি এখন বেরুবো, একটা মিটিং আছে। আমার ফিরতে দেরী হলে তুমি জাস্ট দরজা টেনে চলে যেও, তবে কনফার্ম কর কোন লাইট যেন না জ্বলে থাকে।আফটার অল আমরা এনার্জি নিয়ে কাজ করছি। ভয় পেয় না, অফিস ফুললি সিকিউরড, ওয়াশ রুম ছাড়া পুরো অফিস আমি রিয়েল টাইম মনিটর করতে পারি, আমার ফোনে। লাঞ্চ অন টাইম চলে আসবে, নো ওরিস, তুমি যতটুকু পার, তোমার স্টাডিটা কমপ্লিট কর, কালকে সারা দিন আমি আছি, আমরা ড্রাফটটা শুরু করতে পারব। কফি টফি খেলে, খেয়ে নিও। ভয় পেও না! গুড লাক!” বলে নাভেদ ভাই টয়লেটের দিকে গেলেন!

“পিউ”... একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, সামনের জার্নাল গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলো, সুন্দর অফিসের আনন্দটা একটু যেন ফিঁকে হয়ে আসছে। কোথা থেকে শুরু করবে, ভাবছে। এমন সময় নাভেদ ভাই এর দরজা খুলার শব্দ পেল, নাভেদ ভাই “বাই” বলে লম্বা লম্বা পা ফেলে বের হয়ে গেলেন । সুন সান অফিস! একটু ক্যামন যেন লাগলো। পাত্তা দিল না ও। টান দিয়ে একটা রিপোর্ট নিতে গেল, আর তখনই চোখে পড়ল ভাইয়া তাড়াহুড়োতে টয়লেটের লাইট অফ করেন নাই!

“আফটার অল আমরা এনার্জি নিয়ে কাজ করছি।“ নাভেদ ভাই এর কথাটা রিপিট করতে করতে উঠলো লাইটটা অফ করতে, দরজার কাছে যেয়ে বাইরে কোন সুইচ পেল না সে, ভারি দরজা টেনে বাইরের দিকে খুলতে হয়, এটাও একটু অবাক অবার মত, দরজা টেনে খুলে ভিতরে ঢুকতেই হাতের ডান দিকে সুইচটা দেখতে পেল, সাধারণত যেই হাইটে সুইচ থাকে তার চেয়ে নিচে সুইচ, বুঝল হুইল চেয়ারে চলাচল করা লোকদের জন্য এমন। বেশ বড় টয়লেট কোন জানালা নেই ছাদে মেকানিক্যাল এক্সোস্ট ফ্যান চলছে, ডান দিকে কমোড আর এর উল্টো দিকে বেসিন আর মিরার। টয়লেটে ঢুকে ঘুরে ও লাইট টা অফ করলো আর একই সাথে দরজা টাও আপনি বন্ধ হয়ে গেল! উফফ কি ঘুট ঘুটে অন্ধকার টিয়ানার গা টা ছমছম করে উঠলো, তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেরিয়ে এল। কোন জানালা না থাকায় দিনের বেলাতেই এই কবরের অন্ধকার!

তারপর কাজে ডুবে গেল, এর মাঝে মার সাথে কথা হল। লাঞ্চ দিয়ে গেল জসিম নামে একটা ছেলে, এই পুরো অফিসে ক্যাটারিং এরাই চালায় ছাদে ওদের রেস্টোরেন্ট আর কিচেন। লাঞ্চ টাঞ্চ করে, ভাবছিলো কফি খাবে নাকি একটা! আর তখন কফি স্টেশনটার দিকে তাকাতেই চোখ পড়লো টয়লেটের দরজাটার দিকে। ওমা দরজাটা এক চিলতে ফাঁকা হয়ে আছে, আর সেই ফাঁকা দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে।

আশ্চর্য! আমি কি লাইট অফ করিনি, দরজা আটকাইনি! উফফ আমি! নিজের উপর বিরক্ত হয়ে চেয়ার থেকে উঠলো দরজাটা লাগাতে কফি স্টেশনটা ঘুরে ওকে টয়লেটের কাছে যেতে হয়। ও দরজার কাছাকাছি যেতেই দরজাটা টুক করে আটকে গেল! আরে অদ্ভুত!

দরজার নব ঘুরাতেই দরজা খুলে গেল, ভিতরে সেই অন্ধকার! আলো বন্ধ! অবাক হল, চোখে ভুল দেখলো? আর দরজা বন্ধ হবার একটা চপ্‌ আওয়াজও তো শুনলো। এনিওয়ে আলো না জ্বললেই হল, “আফটার অল আমরা এনার্জি নিয়ে কাজ করছি“, নাভেদের ভাই এর কথাটা মনে মনে আউরে কফি নিয়ে ও ডেস্কে এসে গেল।

কখন যে পাঁচটা বেজে গেল টের পায়নি, জার্নাল গুলো পড়া আর ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুদের সাথে স্ন্যাপ চ্যাট আর ইন্সটাতে ছবি, কথা চালাচালিতেই সময় চলে গেলো কখন। নাভেদ ভাইকে ট্যাক্সট পাঠালো, “মে আই গো?” লিখে। ফিরতে ম্যাসেজ পেল, “হোয়েন এভার ইউ ওয়ান্ট”। সব গুছিয়ে ও উঠে পড়লো ও।
প্রথম দিনের অফিস, নাহ খুব মন্দ নয়!


(২)
পরদিন যেন ঝড় গেল। নাভেদ ভাই কাজ পাগলা মানুষ, প্রচন্ড আইডিয়া বাজ আর পজেটিভ। টফি ভাইয়ার বন্ধু ভাবটা আর নাই পুরা যেন গুরু শিষ্য, সব ধরে ধরে শিখাচ্ছেন, বুঝাচ্ছেন আর টিয়ানা অবাক হয়ে ভাবছে, একটা লোক এত জানে কিভাবে, ওর প্রফেসররাও এত জানেন কিনা ওর সন্দেহ হচ্ছে। ভাইয়া থাকায় ওরা ছাদের রেস্টোরেন্টে কুইক লাঞ্চ করে, আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

তেমন বলবার মত কিছু ঘটেনি শুধু সেই একই ঘটনা আজকেও, সেই টয়লেটের দরজা, সেই ফাঁকা, সেই আলো, কাছে যেতেই বন্ধ হয়ে যাওয়া। সে ধরে নিল, কাছাকাছি গেলে কোন সেন্সর টেনসর বুঝি কাজ করে দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়! ভাইয়া তো পুরাই বিদেশী, হাইটেক অফিস অনেক কিছুই হয়তো এখনো ও জানে না।

পরে এক সময় নাভেদ ভাইকে ও জিজ্ঞেস করেছিল, কোথাও কোন সেন্সর আছে কিনা টয়লেটের দরজা বন্ধ করার, ভাইয়া অবাক হয়ে বল্ল “না তো, কেন?”। ভাইয়া সব শুনে হাসল, “ভুতের মুভি দ্যাখ না ভুত এফ এম শুনো? এসব ভাববার সময় নাই আমাদের, ভুত ব্যাটা যদি আসে, ওকেও কাজে লাগিয়ে দাও প্লিজ, সাবমিশানের টাইম একদম নাই”। উনার কথার ভঙ্গিতে না হেসে থাকা গেল না। সব হালকা হয়ে গেল।

আজকে বেরুতে বেরুতে ওর সাড়ে ছ’টা বেজে গেল, ভাইয়া আরো কাজ করবেন, উনি রয়ে গেছেন।

তারপর! সেই দশটা ছ’টা অফিস, কাজ, বন্ধুদের সাথে চ্যাট, মায়ের সাথে কথা। জীবনটা মন্দ নয়! একটা ছন্দ এসে গেছে জীবনে।

সেদিন আবার ভাইয়ার মিটিং। টিয়ানা অফিসে একা। অফিসে নতুন প্রজেক্টর এসেছে। মিটিং রুমে লাগানো হয়েছে। প্রেজেন্টেশনটা প্রজেক্টরে দেখছে আর নিজের যা বলবার তা বলে বলে প্র্যাকটিস করছে। কাজটা গুছিয়ে নিজের ডেস্কে ফিরে এলো। নোটবুকটা ডেস্কে রেখে টয়লেটে গেল সে।

যা হয় টয়লেটে সব্বাই আগে আয়নায় নিজেকে দেখে, টিয়ানাও তাই করছিলো। এর মাঝে লাইটটা একটু ব্লিঙ্ক করলো, মাথা ঘুড়িয়ে ও লাইটটার দিকে তাকালো আর লাইট টাও স্থির হয়ে গেল। আবার আয়নায় তাকাতেই আলোটা ব্লিঙ্ক করলো। বিরক্ত হয়ে টিয়ানা আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকলো। এই ফ্র্যাকশান অফ সেকেন্ডের আলো যাওয়া আসার মাঝেই নিজের রাগ রাগ চেহারাটা দেখছে সে। অনেকটা এমন আলো আসলেই রাগি মুখ, আর আলো চলে গেলেই ঘুটঘুটি অন্ধকার! এর মাঝে হঠাৎ এক ঝলক আলো আসলো কিন্তু মনে হল আয়নায় যেন কেউ নেই। আয়নার ভিতরটা বুঝি শুন্য। বুকটা ধড়াস করে উঠলো। মুহূর্তেই লাইট স্পষ্ট জ্বলে উঠলো। এই তো সে টিয়ানা, কাজল দেয়া চোখ, চুল, বিরক্ত মুখ, সব স্পষ্ট।

কি দেখতে কি দেখলো আর ভয় পেল। এবার আয়না ছেড়ে ঘুরতে যাবে এবার লাইটটা টুং শব্দে কেটে গেল, যেন পুরানা দিনের টাঙ্কস্টেন লাইট। হতাশ চোখে আয়নার দিকে তাকালো, এক জোড়া সবুজ জ্বল জ্বলে চোখ চোখে পড়লো। ভয় পাওয়ার কিছু নেই সে জানে এদুটো এমারজেন্সি লাইটের ইন্ডিকেটর, পাওয়ার ফেইল করলে জ্বলে উঠবে আলো, কিন্তু এখন তো লাইটটা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই আলো জ্বলল না।

কিন্তু অদ্ভুত একটা কান্ড যেন শুরু হল। আলো গুলো যেন সংখ্যায় বাড়তে লাগলো, আর সবুজ থেকে নীলচে হয়ে যাচ্ছে আস্তে, আস্তে, দুটো থেকে চারটা, ছ’টা, বারোটা, বিন্দু বিন্দু আলো, একটা আরেকটারে উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে, আয়নায় আর কেউ নেই, সেখানে কেউ নেই, এক অদ্ভুত ধোঁয়াশা আর সেই নীল আলোরা।

টিয়ানার মাথা কাজ করছে না, গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না, নিশপলক তাকিয়ে আছে, আয়নায়, যেখানে শুধু এই বিন্দু বিন্দু আলো।

কালো, নিকশ কালো, তরল এক কালো, যেন ইনক পটের কালির মত গাঢ় তরল এক কালো তার চারদিকে আর তাইতেই আলো গুলো যেন ভেসে ভেসে, একে অপরের কাছে আসছে, জমাট বাধঁছে, একটা নারী মূর্তি বুঝি হচ্ছে। টিয়ানা জানে না, কত সময় সে দাঁড়িয়ে আছে! সে জানে না সে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে! হঠাৎ বুঝি জৈবিক তাড়না তাকে জাগ্রত করে সে চিৎকার দিয়ে বের হয়ে আসতে চায়, ছুটে দরজার নবটা ধরে দরজাটা খুলতে চায়।

কিন্তু কোথায় দরজার নব! কিচ্ছু নেই সেখানে ঠাণ্ডা অপার্থিব দেয়ালে ওর হাত ঠেকে। সে বুঝতে পারে ভয়ে ওর মাথা গুলিয়ে গেছে, ও নব বরাবর হাইটে হাত ঘেশটে ঘেশটে নবটা খুঁজতে থাকে কোথায় কি! নিরেট ঠান্ডা দেয়াল, খড় খড়ে গা, ওর হাতের ছাল বুঝি ছিলে যাচ্ছে। ও ঘার ঘুরিয়ে দেখে আয়নায়। আয়নায় অন্ধকার, সেখানে কেউ নেই। পাগলের মত সে দরজা খুঁজতে থাকে সে , কিন্তু কোথাও কিচ্ছু নেই। আলো গুলি একটা আরেকটার সাথে জুড়ে যাচ্ছে, কিছু একটা অবয়ব বুঝি হচ্ছে। টিয়ানা নবটা খুঁজেই যাচ্ছে!

৩১/১২/২০২১


মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব গল্প।
কর্পোরেট দুনিয়া বড় কঠিন ।

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৩৫

জ্যাকেল বলেছেন: এইটা যদি সমাপ্তি হয় তাহইলে বলতে হয় গল্প লিখতে আরো হাত পাকাতে হবে। আপনার পোস্টে বাংলিশ শব্দ অনেক, এইগুলা আসলে ফ্লো নস্ট করে। এই যে ফ্লো বলে ফেললাম এটাও ঠিক না। প্রবাহ লেখা উচিত। কিন্তু বুঝাইতে গিয়ে লিখে রেখে দেওয়া লাগল।

৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫১

কল্পদ্রুম বলেছেন: শুরুর দিকে গল্পের আবহটা বেশ সফলভাবে ফুটে উঠেছিলো। এজন্য আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। তবে কিছু ইংরেজি শব্দের বাংলা লিখলেও চলতো। ভালো থাকবেন।

৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:০৮

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: ভালো লাগলো কিন্তু আরো পড়ার অতৃপ্তিটা থেকে গেলো। অনেক ভালো লিখেছেন, পর্ব ১, পর্ব-২ করে চালিয়ে যাওয়া যায় না?

৫| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:১০

রবাহূত বলেছেন: ভাই ছোট গল্প তো এমনই হলে ভালো হয়, এই আরেকটু পড়বার ইচ্ছাটা জিয়ে রাখতে চেয়েছি। অনেক ধন্যবাদ ভাই।

৬| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:১৭

রবাহূত বলেছেন: কোন বাংলিশ শব্দ নেই পরিস্কার ইংরেজি শব্দ সচেতন ভাবে ব্যবহার করেছি, সমাজের ঠিক যে অংশটার ছবি এখানে আছে তাঁদের ক্যারেক্টারটা এভাবেই আসে। পাঠক হিসাবে আপনি বলতেই পারেন আপনার মন্তব্য লেখক হিসাবে আমাকেও বলতে হবে, সব লেখা সবার জন্য নয়, এটা একটা ফ্যান্টাসি/ সুপার ন্যাচারাল ছোট গল্প এটার সমাপ্তি এমনই হবে, আরো অনেক পড়তে হবে ভাই।
আর আপনার বাংলাটাও আরেকটু সুন্দর করতে হবে।
এই এক প্যারায় এত ভুল কাম্য নয়।
তবু আমার এলেবেলে লেখা পড়েছেন অনেক ধন্যবাদ। আমার অন্যলেখা গুলোও পড়ে একটু সমালোচনা দিন, এতে আমার আপনার দুজনেরই লাভ।

৭| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:২৫

রবাহূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আমি সচেতন ভাবেই ইংরেজিটা নিয়ে এসছি, সমাজের যে অংশের চিত্র আঁকতে চেয়েছি সেখানে কিন্তু এমন শব্দ গুলিই ব্যবহার হয়।
আমি জোর করে পরিভাষা ব্যবহারের ঘোর বিরোধি।
কথার কথা আমরা "সান গ্লাস" বলি সেখানে "রোদ চশমা" গল্পের গতি নষ্ট করবে। অথবা "ইন্টেরিয়র" আমি নিজে স্থপতি কিন্তু আমি কোনদিন অন্দর-সজ্জা বা এই জাতীয় কোন কিছু ব্যবহার করি নাই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি ভাষায় নতুন শব্দ সংযোজন ভাষাকে আরো গতিশীল করে।
দেখেন এখানে এত বড় মন্তব্যে একটাও ইংরেজি শব্দ পাবেন না। আমার অন্য গল্প গুলিও পড়ে দেখতে পারেন, আবহের উপর আমি ভাষাটা বসাই।
অনেক ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান মন্তব্যের জন্য।

৮| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:২৬

রবাহূত বলেছেন: ভাই রাজীব পুরাটা পড়ুন এটা কোর্পোরেট গল্প না কিন্তু!

৯| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪৫

রবাহূত বলেছেন: কোন বাংলিশ শব্দ নেই পরিস্কার ইংরেজি শব্দ সচেতন ভাবে ব্যবহার করেছি, সমাজের ঠিক যে অংশটার ছবি এখানে আছে তাঁদের ক্যারেক্টারটা এভাবেই আসে। পাঠক হিসাবে আপনি বলতেই পারেন আপনার মন্তব্য লেখক হিসাবে আমাকেও বলতে হবে, সব লেখা সবার জন্য নয়, এটা একটা ফ্যান্টাসি/ সুপার ন্যাচারাল ছোট গল্প এটার সমাপ্তি এমনই হবে, আরো অনেক পড়তে হবে ভাই।
আর আপনার বাংলাটাও আরেকটু সুন্দর করতে হবে।
এই এক প্যারায় এত ভুল কাম্য নয়।
তবু আমার এলেবেলে লেখা পড়েছেন অনেক ধন্যবাদ। আমার অন্যলেখা গুলোও পড়ে একটু সমালোচনা দিন, এতে আমার আপনার দুজনেরই লাভ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.